রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন
সূচিপত্রঃ রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন
- রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন
- আদর্শ রক্তদাতা কারা
- রক্ত দেয়ার পর কি করতে হবে
- যাদের রক্ত নেয়া যাবে না
- শেষ কথা
রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন
রক্ত যেমন আমাদের জীবন রক্ষা করে থাকে, ঠিক তেমনি সঠিক ও আদর্শ একজন রক্তদাতা নির্বাচস না করেই রক্ত নেয়াটা একেবারেই ঠিক নয়। এক্ষেত্রে জীবন বিপন্ন বা মৃত্যু্র ঝুঁকি থাকে অনেক বেশী। তাই সঠিক রক্তদাতা বা একজন একজন আদর্শ রক্তদাতা নির্বাচন, নির্ভরযোগ্য স্ক্রিনিং এবং রক্তের উপাদানের সঠিক ব্যবহারের ওপরে। এছাড়াও রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন সেগুলো সঠিকভাবে জানতে হবে। নিচে রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন সেগুলো উল্লেখ করা হলো-
আরো পড়ুনঃ এইডস রোগ প্রতিরোধে আক্রান্ত রোগীদের যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে
- আদর্শ রক্তদাতা কারা।
- রক্ত কাকে দেয়া যাবে।
- রক্ত কত দিন পর পর দিতে পারবেন।
- রক্ত দেবার পর সাধারণত কি কি করতে হয়?
- নারীদের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা।
আদর্শ রক্তদাতা কারা
রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন তা হলো রক্তদাতা ব্যক্তি একজন আদর্শ গুণাবলী সম্পন্ন কি না? অর্থাৎ একজন আদর্শ রক্তদাতা হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে, যে ব্যক্তি একজন সুস্থ্য, সবল, শারীরিক সমস্যাবিহীন এবং সর্বোপরি মানসিক ও দৈহিকভাবে সুস্থ্য মানুষকে। নিম্নে একজন আদর্শ রক্তদাতার সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়াবলী বর্ণিত হলো:
- রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন, তাহলো অবশ্যই রক্তদাতার বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে। মনে রাখবেন, ১৮ বছরের নীচে এবং সর্বোচ্চ ৬০ বছরের মধ্যে অবস্থিত ব্যক্তিদেরই শুধুমাত্র রক্ত দেয়া-নেয়া যাবে।
- এক্ষেত্রে রক্তদানকারী ব্যক্তির ওজন কমপক্ষে ১০০ পাউন্ড বা ৪৫ কেজি এর মধ্যে হতে হবে। কারণ কম ওজন সম্পন্ন মানুষের শরীর থেকে কোনমতেই রক্ত নেয়া যাবে না, এক্ষেত্রে রক্ত প্রদানকারী ব্যক্তির শারীরিক সমস্যা তৈরী হতে পারে।
- সাধারণত রক্ত প্রদানকারী ব্যক্তির অবশ্যই মানসিক ও দৈহিকভাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে এবং সর্বোপরি তিনি স্ব-ইচ্ছায় রক্ত প্রদান করতে আগ্রহী কি না, তা জানাটা খুবই জরুরী।
- অবশ্যই রক্ত প্রদানকারী বক্তির নাড়ির গতি অন্তত পক্ষে প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকতে হবে।
- রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন তা হলো রক্তদানকারী ব্যক্তির তাপমাত্রা ন্যুনতম ৯৯.৬ ডিগ্রি ফারেনাইটের মধ্যে হতে হবে। মূল সমস্যা হলো যাদের কাছ থেকে রক্ত গ্রহণ করা হয়, অনেক সময় তারা তাদের অসুস্থ্যতা গোপন করে রাখতে পারে যা আপনার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সুতরাং রক্তদানকারী ব্যক্তির অবশ্যই রক্ত নেয়ার আগে শরীরের তাপমাত্রা চেক করে নিতে হবে।
- ওষুধ ছাড়া স্বাভাবিক মাত্রার ভিতরে রক্তচাপ থাকতে হবে।
- একজন আদর্শ রক্তদাতার ন্যূনতম ৭৫% হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা থাকাই লাগবে। বিশেষ করে পুরুষের ক্ষেত্রে যা ১২.৫ গ্রাম/ডিএল এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১১.৫ গ্রাম/ডিএল।
- খেয়াল রাখবেন, যে ব্যক্তি রক্ত দিবে তার দেহে কিন্তু কোন প্রকার অসুখ-বিসুখ একেবারেই থাকা যাবে না। এক্ষেত্রে বলতে পারেন-হৃদরোগ, রক্তচাপ, ফুসফুসজনিত সমস্যা, ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস বি ও সি, সিফিলিস এবং এইচআইভি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
- রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন, তা হলো সাধারণত রক্তদানকারী ব্যক্তি যাতে কোন প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকে। এক কথায় নেশাগ্রস্ত না হয়। যদি এরূপ প্রমাণিত হয় বা কোন মাধ্যমে আপনি জেনে থাকেন, তাহলে অবশ্যই সেই ব্যক্তির নিকট থেকে রক্ত নেয়া যাবে না।
রক্ত দেয়ার পর কি করতে হবে
রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন তা হলো রক্ত দেয়ার পর প্রয়োজনীয় কাজগুলি কি কি তা নিম্নে বর্ণিত হলো:
-
রক্ত দেয়ার এক থেকে চার ঘন্টা আগে এবং অন্তত ৫০০ মিলি পানীয় গ্রহণ করতে
হবে। ক্ষুধার্ত অবস্থাতে রক্ত দিলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- আবার রক্ত দেয়ার পরেও ন্যূনতম ২৪ ঘন্টার মধ্যে রক্তদানকারী ব্যক্তিকে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অন্তত ৩-৪ গ্লাস পানি বেশি করে খেতে হবে।
- রক্ত দেয়ার পর ১০-১৫ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে।
- যে ব্যক্তি রক্ত দান করছে, অবশ্যই তাকে ভারী বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলি থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন-ব্যায়াম করা, গাড়ি চালানো ইত্যাদি।
- যদি রক্ত দেয়ার পরে শরীরে কোন ধরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তাহলে অবশ্যই রক্ত সংগ্রহকারী কেন্দ্রে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে হবে।
যাদের রক্ত নেয়া যাবে না
- মানসিক ভারসাম্যহীন এমন ব্যক্তির নিকট থেকে কোনমতেই রক্ত নেয়া যাবে না।
- হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে রক্ত নেয়া যাবে না।
- যারা হিমেফেলিয়াতে ভুগছেন।
- ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে রক্ত নেয়া যাবে না।
- মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত নেয়া যাবে না।
- সাধারণত অতিরিক্ত শ্বাসকষ্টজনিত ব্যক্তি বিশেষ করে যাদের হাঁপানি, এ্যাজমা রয়েছে এমন ব্যক্তির নিকট থেকে রক্ত নেয়া যাবে না
- রক্ত নেয়ার ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারী বা গর্ভবতী থাকাবস্থার কোন নারীর নিকট থেকে রেক্ত নেয়া যাবে না।
- আবার নারীদের ঋতুচক্র চলমান অবস্থায়ও কোন নারীর নিকট থেকে রক্ত নেয়া যাবে না।
- এ ছাড়াও সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার অন্তত ১ বছর বা এর ১ বছরের পর্যন্ত কোন নারীর নিকট থেকে রক্ত নেয়া যাবে না।
- যাদের এইচআইভি পজিটিভ রয়েছে।
- এমন কোন ব্যক্তির নিকট থেকে রক্ত নেয়া যাবে না, যাদের ওজন প্রতিনিয়ত কমের দিকে যাচ্ছে অথবা বিগত দুই মাসের মধ্যে যাদের ওজন অন্ততপক্ষে ৪ কেজি কমে গেছে।
- এ ছাড়াও রক্তদানকারী ব্যক্তি যদি বিগত ৬ মাসের মধ্যে বড় কোন দুর্ঘটনার শিকার হোন অথবা তার হার্ট অপারেশন হয়েছে, এমন ব্যক্তির নিকট থেকে কখনোই রক্ত নেয়া যাবে না।
শেষ কথাঃ রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন
রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন রক্ত দেয়ার পর কি করতে হবে বা যাদের রক্ত নেয়া যাবে না সে সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোস্টটি ভালোভাবে পড়ুন, আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন সে সম্পর্কে সবার আগে জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।
আজ আর নয়, রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন সে সম্পর্কে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করি আমরা আপনার উত্তরটি দিয়ে দেবো। তাহলে আমাদের আজকের এই রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন সে সম্পর্কে পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url