শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ - নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে (Causes of excessive sweating in the body - What can be done to control it)
বর্তমানে আমরা দৈনন্দিন জীবনে সবাই কমবেশী ঘেমে থাকি। হোক সেটা গরমে অথবা শারীরিক পরিশ্রমের কারণে, কুচ পরোয়া নেহি। আসলে এই ঘেমে যাওয়াটা খুবই একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই আজকে আমরা শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ - নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে
গরমের কারণে যদি শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তাহলে তো আমাদের ঘামতে হবেই। আপনারা জানেন তো, মানুষের শরীরে অ্যাক্রিন ও অ্যাপোক্রিন গ্ল্যান্ড নামক দুই ধরনের ঘাম গ্রন্থি থাকে। রোদের কারণে শরীরের তামপাত্রা বেড়ে যায়। তাই তাপমাত্রা স্বাভাবিক করে আনার জন্য ঘাম হয়। সেইসঙ্গে এই ঘামের সাথে সাথে শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদানও বের করে দেওয়ার মাধ্যমে শরীরের ‘প্রটেকটিভ মেকানিজম’ হিসেবে কাজ করে ঘাম। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে অনেকেই আছেন, যারা অতিরিক্ত ঘেমে থাকেন। আমরা শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ - নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো :
পোস্ট সূচিপত্র: শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ - নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে
শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ :
- শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ হিসেবে গরম ছাড়াও পরিশ্রম, মানসিক উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, ভয়, রাগ ইত্যাদি কারণেও ঘাম হতে পারে।
- ঠাণ্ডা পরিবেশে এবং অতি উদ্বেগের কারণেও অনেকের হাত ও পায়ের তালু ঘামার সমস্যা দেখা যায়।
- শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ হচ্ছে যারা থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে এর সঙ্গে ওজন হ্রাস, ডায়রিয়া, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি অন্যান্য উপসর্গগুলিও দেখা দেয়।
- নারীদের মেনোপজ পরবর্তী সময়ে শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ হিসেবে দেখা যায়। একে হটফ্লাশ বলা হয়। হটফ্লাশের সুচিকিৎসা আছে।
- শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে বিভিন্ন ওষুধের প্রভাব। কারও কারও ক্ষেত্রে কফি-চা পান করার পরেই ঘাম শুরু হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: গরমে মাথাব্যথা কেন হয় সমাধানে যা করবেন
- শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ হিসেবে বলা যায়, যারা দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিসের রোগী তাদের স্নায়ুজনিত সমস্যা হলেই খাবার সময় বা পরে মাথা, কপাল, ঘাড় বেশি ঘামতে পারে।
- শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ কি বা তা নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে সেটা হলো দুঃস্বপ্ন দেখা বন্ধ করা। অর্থাৎ অনেকেই আছেন, যারা রাত্রে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে থাকেন। মজার বিষয় হলো, এই দুঃস্বপ্নগুলো দেখতে দেখতে তারা ঘেমে যান বা ঘেমে বিছানাও ভিজে যায়। এর ফলে সকালে শরীর ম্যাজ মাজ করে এবং গায়ে জ্বর জ্বর ভাব দেখা দেয়। এ ধরণের সমস্যা হয়ে থাকলে অবশ্যই তা সাবধান হওয়া উচিত।
- যক্ষ্মা বা লসিকাগ্রন্থির ক্যানসারে রাতে শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ হয়।
- মাথায় টিউমার, খিঁচুনির মতো যে কোনো নিউরোলজিকাল সমস্যাজনিত প্রাথমিক উপসর্গ হিসাবেও অনেক সময় শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে।
- হঠাৎ মাথার যন্ত্রণা, শরীরে প্যারালাইসিসের মতো অনুভুতি অথবা বেন স্ট্রোকের কয়েকদিন পূর্বে শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে।
শরীরে অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে :
- শরীরে অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে হিসেবে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- শরীরে অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে তা হলো ফলের শরবত, গুলুকোজ, স্যালাইন পানি খাওয়া যেতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ ঘাম নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে তা হলো তৈলাক্ত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।
- অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে হিসেবে অতিরিক্ত চা, কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- শরীরের ঘাম নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে অর্থাৎ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার বেশ কার্যকরী। যা ত্বকে ব্যবহার করে ঘাম নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপশি অ্যাপল সাইডার ভিনিগার নিয়মিত খাওয়ার ফলে ত্বকের পিএইচ স্তর ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
- এ ছাড়া বেকিং সোডাও শরীরকে অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। আপনি যদি পরিমাণ মতো পানির সঙ্গে ১ টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে একটু ঘন পেস্ট তৈরি করুন। পরবর্তীতে উক্ত পেস্টের সঙ্গে ৩ - ৪ ফোটা সুগন্ধী তেল মিশাতে হবে। এরপর মিশ্রিত পেষ্টটি আপনার শরীরের যে সমস্ত জায়গাতে বেশি ঘাম হয়, সেইসব জায়গাতে লাগাতে হবে এবং অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর উক্ত জায়গাটা ধুয়ে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত তামাক গ্রহণ কি ফুসফুসের ক্যান্সারের জন দায়ী
- অতিরিক্ত ঘামার কারণ হচ্ছে ওজন। এটা নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে তা হলো আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- যারা অতিরিক্ত ধুমপান ও অ্যালকোহল সেবন এবং ক্যাফেইন নিয়ে থাকে, তাদের শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয়, এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে তা হলো যতটা সম্ভব এগেুলো কমাতে বা এড়িয়ে যেতে হবে।
- শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণে নাইলন বা পলিয়েস্টার কাপড় পরা যাবে না। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে তা হলো ঘাম শুষে নেয় এমন কাপড়, যেমন-সুতি ও সিল্কের তৈরি পোশাক পরতে হবে।
- অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণও ঘামের কারণ। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে তা হলো যতটা সম্ভব মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করাই শ্রেয়।
- যাদের শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয় তা নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে হিসেবে টমেটো খেতে পারেন। অর্থাৎ টমেটোতে এক ধরণের অ্যাস্ট্রিনজেন্ট থাকে, যার দ্বারা শরীরের ঘামের গ্রন্থিগুলি সংকুচিত করে এবং এর ফলে শরীরে ঘাম কম হয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি নিয়মিত ফ্রেশ টমেটো কাঁচা বা এর রস এক কাপ করে খেতে পারেন, তাহলে তা অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে আনে।
সর্বোপরি উপরোক্ত পরামর্শ ছাড়াও অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ - নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে-শেষ কথা:
শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ - নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে হিসেবে চেষ্টা করবেন বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই সাদা রঙের পোশাক পরিধান করতে। কারণ সাদা রঙে পোশাকে সূর্যের তাপ বিকিরণ করে অর্থাৎ তা গায়ে লাগেনা। তবে অবশ্যই প্রচন্ড গরমে সুতি কাপড় পরার চেষ্টা করবেন। এ ছাড়াও বিকল্প হিসেবে আপনি গা মোছার জন্য অতিরিক্ত কাপড় সাথে রাখতে পারেন, যা দিয়ে অতিরিক্ত ঘাম মোছা যায়।
আরও পড়ুন: সারা শরীর ব্যথা করে কেন - সারা শরীর ব্যথা হলে করনীয়
আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ - নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণ - নিয়ন্ত্রণে যা করা যেতে পারে আলোচনায় থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url