শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত?

সংসার জীবনে অনেক কাজের মধ্যে একটি অন্যতম কাজ হচ্ছে বাচ্চাকে খাওয়ানো। শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত? অথবা কি করলে শিশুটি খাবে তা নিয়ে একটা জটিলতা থেকেই যায়।
দিন বদলের হাওয়াই সবকিছুতেই যেমন পরিবর্তন ঘটছে, ঠিক তেমনি শিশুদের খাদ্যাভাসে অথবা খাবার খাওয়ানোতেও পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত? তা নিয়েই মোটামুটিভাবে একটি সমস্যাই তৈরি হয়, যা নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে শিশুকে খাওয়ানোর ব্যাপারে জানতে পারবেন।

পোস্ট সূচিপত্র: শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত?
(How should a baby be fed?)

ভূমিকা
যে প্রক্রিয়াগুলো ফলো করে শিশুদের খাওয়াতে পারেন
শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত? - শেষ কথা

ভূমিকা:

আমাদের সংসার জীবনে যে কঠিন কাজগুলো সমাধা করতে হয় তার মধ্যে অন্যতম শিশুকে খাওয়ানো। অর্থাৎ, সবথেকে এই কঠিন কাজটি সমাধা করেন আমাদেরই সংসার জীবনের সাথে ওতঃপ্রোতভাবে আবদ্ধ নারীরা, হোক সে অর্ধাঙ্গিনী, হোক সে মা, হোক সে বোন। অর্থাৎ, তাঁরাই পারেন একটি শিশুকে কিভাবে ধীরে ধীরে বড় করে তোলা যায়। শিশুকে খাওয়ানোর জন্য মায়ের হাজার প্রচেষ্টা, ভাল ভাল রান্না, কিন্তু শিশু খেতে কিছুতেই খেতে চায় না। আধুানিক মায়েরা শিশুকে খাওয়ানোর এই জটিল সমস্যাকে সমাধানের পথ হিসেবে ইউটিউব, মোবাইলে গেম, প্রয়োজনে টিভিতে কার্টুন এবং সর্বোপরি প্রচণ্ড বকাঝকা বা মারধোরও করে থাকেন। কিন্তু শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত? বা কৌশল অবলম্বন করে যদি খাওয়ানো যায়, তাহলে এত কিছুর বিড়ম্বনা সইতে হয়না। নিম্নে কিছু টেকনিক বা কৌশল বর্ণিত হলো, যাতে করে আপনি আপনার শিশুকে অনায়াসেই খাওয়াতে পারেন। 

যে প্রক্রিয়াগুলো ফলো করে শিশুদের খাওয়াতে পারেন:

  • আপনার সন্তান কোন ধরণের খাবার খেতে পছন্দ করে আগে সেটা পর্যবেক্ষণ করুন। অর্থাৎ আপনার পছন্দের খাবারই যে তাকে খেতে হবে এমন কথা নয়, সে কোন খাবারের প্রতি আগ্রহ পোষণ করছে এবং সেই খাবারের মধ্যে ভিটামিন, প্রোটিন বা খনিজ আছে কি না সেদিকে খেয়াল করুন।
  • প্রতিদিন শিশুকে একই ধরণের খাবার না দেওয়ায় ভালো, কারণ এতে তারা খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
  • শিশু যদি খেতে না চাই, তাহলে তাকে জোর করে খাওয়াবেন না। মনে রাখবেন, শিশুদের পাকস্থলী আকারে বেশ ছোট থাকে।

আরও পড়ুন: জামরুল ফল এর পুষ্টিগুণ ও খাবারের উপকারিতা

  • আপনি যখন নিজে খেতে বসবেন, তখন অবশ্যই শিশুকে সঙ্গে নিয়েই বসুন। মনে রাখবেন শিশুরা খুব অনুকরণপ্রিয় হয়ে থাকে, তাই সে যদি দেখে তার বাবা-মা-দাদা-দাদিরা আনন্দ করে খাবার খাচ্ছে, তখন সে এক সময় খেতে শুরু করবে। এছাড়াও আপনার শিশু খেতে বসতে যাতে ভয় না পায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • শিশুদের খাওয়ানোর সময় মোবাইল ফোন বা টিভি চালু করবেন না। এই সময়টাতে তার সাথে নানরকম গল্প বলে ব্যস্ত রাখুন। অর্থাৎ সে সারাদিন কী করলো, কার সঙ্গে খেলাধুলা করলো, কোন খেলাটা তার ভালো লেগেছে এবং সর্বোপরি তার প্রশংসা করুন।
  • অনেক সময় মায়েরা বিভিন্ন তরকারি বা ডাল দিয়ে ভাত মাখিয়ে শিশুকে খেতে দেয়। এক্ষেত্রে শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত? হিসেবে অবশ্যই এটা করবেন না। আপনি সব খাবারই অল্প অল্প করে প্লেটে সাজিয়ে নিন, এতে দেখতেও ভাল লাগবে এবং শিশুদের খাবার খাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ জন্মাবে।
  • খাবারের প্রতি শিশুদের আগ্রহ তৈরি করতে চাইলে সবকিছুতেই তাকে সঙ্গে রাখতে হবে, যেমন-বাজার করা, তরকারি কাটা ও ধোয়া-মোছা করা, প্লেটে সাজানো ইত্যাদি সমস্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গেই শিশুকে যুক্ত রাখুন। এছাড়া কোন খাবার খেলে কী উপকার হয় তা গল্প করুন, যেমন ধরুন ডিম খেলে কোন ধরণের শক্তি হয়, চোখের পাওয়ার বাড়ে আবার কলা খেলে দুই হাতে শক্তি বাড়ে, তাহলে সে বড় হয়ে ব্যাডমিন্টন বা ক্রিকেট খেলতে পারবে ইত্যাদি।
  • বাজার করার সময় শিশুদের কাছে মতামত নিন, সে কোন সবজি বা কোন ফলটি খেতে চাই। 
  • শিশুদের বাইরের খাবারের প্রতি কোনমতেই যেন আগ্রহ না জন্মায় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখুন। যেমন-চকলেট, চিপস, জুস, ললিপপ ইত্যাদি। আসলে এইসব খাবারগুলি মূলত শিশুর খাওয়ার রুচি নষ্ট করে ফেলে। আপনার শিশু সমস্ত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে সে বাড়ির খাবার আর খেতে চাইবে না। অর্থাৎ শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত? হিসেবে বাইরের খাবারের পরিবর্তে ঘরোয়া খাবারের প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে।
  • শিশুকে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে আপনাকে কৌশলী হতে হবে। যেমন আপনার শিশু যদি ডিম ও দুধ একেবারেই খেতে না চায়, সেক্ষেত্রে ডিম ও দুধ দিয়ে পুডিং বানিয়ে দিতে পারে।
  • শিশুর মধ্যে ক্ষুধা তৈরি হওয়ার সময় দিতে হবে। আর এতে করে সে নিজেই খাবার খেতে আগ্রহী হবে। মাঝে মাঝে তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তার কী খেতে ইচ্ছা করছে। এতে করে তার ওই খাবারের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে।
  • খাবার টেবিলে সম্ভব হলে রঙ-বেরঙয়ের খাবার রাখার ব্যবস্থা করুন, যাতে করে শিশুরা খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়।  

আরও পড়ুন: স্ট্রবেরি ফলের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা

  • মনে রাখবেন শিশুরা সাধারণত চঞ্চল ও দুরন্ত প্রকৃতির হয়। খাবারের চেয়ে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ থাকে তাদের বেশি। খেলাধুলা করলে শিশুর মন যেমন ভালো থাকবে, তেমনি ক্ষুধাও পাবে। শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত? অর্থাৎ আপনার শিশু যদি খেলতে খেলতে খেতে চাই, তাহলে তাতে বাধা দেওয়া ঠিক নয়।
  • মনে রাখবেন সব শিশুই সমান নয়। একজনের শিশু বেশি খাচ্ছে বলে আপনি আপনার বাচ্চাকে বেশি খাওয়াবেন এমনটা ঠিক নয়। আমাদের বড়দের যেমন ভিন্নতা আছে, শিশুদের মধ্যেও ভিন্নতা আছে। অর্থাৎ শিশু যদি একেবারেই কম খায়, সেক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পর পর ভুলিয়ে-ভালিয়ে, গল্প বলে অল্প অল্প করে তাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত? - শেষ কথা

শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত? হিসেবে নিজেদেরকেও একটু আধুনিক হতে হবে। আগেকার দিনে মা আমাদের কোলে করে বাইরে নিয়ে এসে পাখি, কুকুর, বিড়াল, ছাগল, গরু ইত্যাদি দেখিয়ে মুখের মধ্যে খাবার গুঁজে দিত। কিন্তু এখনকার বাচ্চারা পেটে থাকতেই ডিজিটাল, সুতরাং এক্ষেত্রে প্রচুর ধৈর্য্য, সহ্য এবং সর্বোপরি উপস্থিত বুদ্ধি মাথায় নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হবে। আসলে সবকিছুই নির্ভর করে পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর। অনেকেই আছে, যারা অতি ব্যস্ততার কারণে সন্তানের প্রতি সময় দিতে পারে না। ফলে তাদের সেই শিশু সন্তানটি নিঃসঙ্গতা অনুভব করে সেটা আমরা অনেকেই জানি। আসলে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পর সে প্রথম তার মাকে দেখে এবং ধীরে ধীরে বাবা ও মা দুটি মানুষ সবথেকে তার কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন: বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান

আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত? বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ শিশুকে কিভাবে খাওয়ানো উচিত? বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url