ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনে

ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনে কিভাবে দেয়া যায় তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই একটি বিভ্রান্তি কাজ করে। অথচ ঘরে বসেই পৃথিবীর যে কোন স্থান থেকেই বর্তমানে অনলাইনে জমির খাজনা প্রদান সম্ভব।
আপনার জমির খাজনা ভূমি অফিসের ওয়েবসাইট লগ ইন করে মোবাইল বা কম্পিউটার (অবশ্যই ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হতে) এর মাধ্যমে প্রদান করতে পারেন, যা একেবারেই সহজ। সুতরাং ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনে কিভাবে দেয়া যায় সেটা জানতে নিচের লেখাগুলো পড়তে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনে (Land development tax payment online)

ভূমিকা

ভূমিকা:

আসলে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনে প্রদানের ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে কয়েকটা বিষয় মাথায় নিতে হবে। এক. যে জমির খাজনা দিবেন সেটা কার নামে খারিজ করা আছে? দুই. জমির খাজনা দিতে গেলে ভূমি অফিসের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, সেটা কার নামে করবেন বা কে খাজনা দিবে? তিন. মনে রাখবেন, একই ব্যক্তির নামে যদি একাধিক জমি থাকে, তাহলে তিনি একটি রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমেই একাধিক জমির খাজনা দিতে পারবেন। চার. অনলাইনে ডকুমেন্ট হিসেবে জমির খারিজের কপি, দাগ নম্বর, মৌজা, খতিয়ান নম্বর ইত্যাদি ঠিক আছে কিনা সেটা আগে যাচাই করে নিন। পাঁচ. প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র রেডি করে তারপরে রেজিস্ট্রেশন করুন।

ইউনিয়ন/উপজেলা পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন:

প্রথমেই আপনি যে এলাকায় বসবাস করেন বা যে এলাকায় আপনার জমি আছে সেখানকার ইউনিয়ন/উপজেলা/সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন সেন্টারে যোগাযোগ করতে হবে এবং জমির হোল্ডিং রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে সংশ্রিষ্ট কাজগপত্রগুলি নিয়ে যেতে হবে, যেমন- এক/ রেকর্ড/খারিজ খতিয়ানের কপি; দুই/ পূর্ববর্তী দাখিলার কপি; তিন/ ১ কপি ছপি (পিপি সাইজের); চার/ জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি; পাঁচ/একটি সচল মোবাইল ও ফোন নম্বর।

ভূমি অফিসের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন/নিবন্ধন:

ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনে করতে হলে, আপনাকে ভূমি অফিসের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। অর্থাৎ গুগল সার্চ বারে টাইপ করুন https://ldtax.gov.bd/ বা ldtax.gov.bd।
এরপর নিচে বর্ণিত ছবি-১ এর মত ডান কোণায় লগইন-এ ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশনে ক্লিক করুন।

নিম্নে বর্ণিত ছবির মত একটি ডায়ালগ বক্স আসবে, সেখানে আপনার নাম (ইংরেজিতে) টাইপ করুন; এরপর একটি সচল মোবাইল নম্বর প্রদান করুন এরপর ইংরেজিতে যে ক্যাপচাগুলো আছে তা সঠিক ভাবে টাইপ করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
 এরপর আপনার মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি (কোড) আসবে, সেটা নির্ধারিত ওটিপি বক্সে টাইপ করার পর সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। এরপর পাসওয়ার্ড প্রদান করার জন্য আরেকটি বক্স আসবে, (যেখানে পাসওয়ার্ড হতে হবে ৮ ডিজিটের), অর্থাৎ ৮ ডিজিটের পাসওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ১টি অক্ষর, ১টি সংখ্যা, ১টি বিশেষ অক্ষর থাকতে হবে। যেমন-D123456a@ বা Da@123456, অর্থাৎ পাসওয়ার্ড টাইপ করার পর সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।

আরও পড়ুন: ব্যথানাশক ঔষধ দীর্ঘদিন খাওয়া যাবেনা

এবারে নিচে বর্নিত পেজটি প্রদর্শিত হলে, এখানে প্রোফাইল বাটনে ক্লিক করুন।
 
কেননা যতক্ষণ আপনার প্রোফাইল সম্পন্ন না হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত আপনার এ্যাকাউন্ট স্বয়ং সম্পূর্ণ হবে না। এরপর উপরের ডানকোণায় প্রোফাইল আপডেট করুন বাটনে ক্লিক করে আপনার নাম, ইমেইল, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, ধর্ম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা সহ সমস্ত তথ্যাদি দিতে হবে, তবে সর্বোপরি এনআইডি নম্বর অবশ্যই সঠিক ভাবে দিতে হবে। বর্ণিত স্থানগুলিতে সমস্ত তথ্যাদি সঠিক ভাবে পূরণ করে হালনাগাদ বাটনে ক্লিক করুন।
মনে রাখবেন আপনার ব্যক্তিগত প্রোফাইল যতক্ষণ না সম্পন্ন হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত আপনি অনলাইনে খাজনা প্রদান করার জন্য জমির কাগজপত্র অত্র ওয়েবসাইটে জমা দিতে পারবেন না।

অনলাইন পোর্টালে যেভাবে কাগজপত্র জমা দিবেন:

আপনার প্রোফাইল সম্পন্ন হলে এরপর খতিয়ান বাটনে ক্লিক করুন। এখানে নিচে প্রদর্শিত পেজের উপরের ডানদিকে কর্ণারে দেখবেন “নতুন খতিয়ান তথ্য প্রদান করতে ক্লিক করুন” এ ক্লিক করুন।
 
এরপর পদত্ত তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করুন। যেমন-বিভাগ, জেলা, উপজেরা, মৌজা, খতিয়ান নং, হোল্ডিং নং এবং আপনার জমির সত্যতা বা ডকুমেন্ট হিসেবে খারিজের কপি বা ভূমি অফিস হতে প্রদত্ত নামজারী অথবা খতিয়ানের কপি স্ক্যান করে জেপিজি মুডে সেভ করে তা এখানে এ্যাটাচমেন্ট হিসেবে জমা দিতে হবে। এরপর নিচে বর্ণিত মালিকের ধরণ উল্লেখ করুন। অর্থাৎ আপনি যে জমিটার খাজনা দিতে চাচ্ছেন তা নিজস্ব মালিকানা না উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত তা টিক বক্সে ক্লিক করে সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করুন।

আরও পড়ুন: পোশাক অনেকদিন যত্নে রাখার ঘরোয়া উপায়

মনে রাখবেন, জমির তথ্য প্রদান করার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু খাজনা জমা দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে আপনি আপনার মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিং করে হোল্ডিং নং-এ ক্লিক করলেই দেখতে পাবেন আপনার আবেদনটি ‘অপেক্ষমান’ না ‘সৃজিত’ লেখা রয়েছে। যদি অপেক্ষামান থাকে তাহলে আপনার আবেদনটি অনুমোদন হয়নি, আর যদি সৃজিত লেখা থাকে তাহলে আপনি তখনই খাজনা দিতে পারবেন।

সাধারণত জমির তথ্য প্রদান করার পর অন্ততপক্ষে ৭২ ঘন্টা সময় লাগে অনুমোদনের জন্য। আর ভূমি অফিস যদি আপনার নিকটস্থ হয়, তাহলে অনলাইনে আবেদন করার পর ভূমি অফিসে খারিজ/খতিয়ানের কপি নিয়ে গিয়ে যদি বলেন, আমি অনলাইনে কাগজপত্র জমা দিয়েছি, আমরা আবেদনটি অনুমোদন করে দিন, আমি খাজনা দিব। কারণ কাগজপত্র অনলাইনে জমা দিলেই খাজনা দেয়া যায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না ভূমি অফিস থেকে তা অনুমোদন করে দেয়।

আপনার আবেদন অনুমোদন হয়েছে কি না কিভাবে বুঝবেন?

অনলাইনে কাগজপত্র জমা দেয়ার পর তা অনুমোদন হয়েছে কি না, তা বোঝার জন্য আপনাকে ভূমি অফিসের ওয়েবসাইটে ঢুকে লগইন বাটনে ক্লিক করতে হবে, এখানে আপনার মোবাইল নম্বর (যে নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন সেই নাম্বার) এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে নিচের ক্যাপচা সঠিকভাবে পূরণ করার পর লগইন করুন বাটনে ক্লিক করুন। এরপর ভূমি উন্নয়ন কর বা ldx tax-এ ক্লিক করার পর হোল্ডিং তালিকা বাটনে ক্লিক করলেই দেখতে পাবেন উপরের ডানকোনায় স্ট্যাটাসে কি লেখা আছে, ‘সৃজিত’ না ‘অপেক্ষমান’।
উপরোক্ত ছকে মৌজা-হোল্ডিং নং-খতিয়ান-সর্বশেষ কর পরিশোধের সাল-স্ট্যাটাস-পদক্ষেপ নং হেডিং-এ আপনার প্রদেয় তথ্যগুলি প্র্রদর্শিত হবে এবং শেষে লেখা থাকবে ‘সৃজিত’ বা ‘অনুমোদন’। যদি সৃজিত লেখা থাকে তাহলে আপনি খাজনা দিতে পারবেন আর যদি ‘অপেক্ষমান’ লেখা থাকে তাহলে আপনার আবেদনটি ভূমি অফিস কর্তৃক অনুমোদিত হয়নি, অথবা সংযুক্ত কাগজপত্রজনিত কোন সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে আপনি সরাসরি ভূমি অফিসে গিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস বা জানতে পারেন যে, কেন আপনার আবেদনটি অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না।

অনলাইনে খাজনা কিভাবে দেয়া যায়:

ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনে দেয়ার ক্ষেত্রে উপরোক্ত সবগুলো কাজ সঠিক ভাবে সম্পূর্ণ হলে আপনি এখন খাজনা দেয়ার জন্য গুগল সার্চ বারে:
lsg-land-owner.land.gov.bd/landing বা https://lsg-land-owner.land.gov.bd/login-লিখে এন্টার চাপুন অথবা মোবাইল থেকে করলে ‘গো’ বা ‘এ্যারোতে’ ক্লিক করুন। নিচের চিত্রের মত একটি বক্স আসবে
 
 যেখানে আপনার ইউজার এ্যাকাউন্ট নম্বর (মোবাইল নম্বর), পাসওয়ার্ড টাইপ, আপনার মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে নিচের ক্যাপচাটা সঠিক ভাবে পূরণ করে লগইন বাটনে ক্লিক করতে পারেন।
 
উপরে প্রদর্শিত ভূমি উন্নয়ন কর অপশনে ক্লিক করুন। এরপর বামদিকে প্রদর্শিত হোল্ডিং তালিকা-বাটনে ক্লিক করুন।
 
এরপর উপরের ডানকোনায় সৃজিত লেখা থাকবে এবং এর পার্শ্বে চোখের মত স্থানটিতে ক্লিক করতে হবে। নিচের প্রদর্শিত পেজের মত এখানে আপনাকে কর পরিশোধের সাল, বকেয়া, জরিমানা, হাল দাবি, সর্বমোট দাবি ইত্যাদি প্রদর্শিত হবে। 
আপনি নিচে ‘পেমেন্ট’ অপশনে ক্লিক করুন।
পেমেন্ট অপশনে ক্লিক করার পর
পরবর্তী পেজে পেমেন্ট করার জন্য বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিংগুলো দেখাবে। সেখান থেকে আপনি কোন পেমেন্টে খারিজের অর্থ পরিশোধ করতে চান তা সিলেক্ট করে নিচে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার মোবাইল এ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে হবে, অর্থাৎ রকেট, বিকাশ, নগদ এ্যাকাউন্টটি কোন মোবাইল নাম্বার দিয়ে করে রেখেছেন, এখানে সেই নাম্বারটি টাইপ করার পর সংশ্লিষ্ট বিকাশ, নগদ বা রকেটে একটি কোড যাবে। উক্ত কোডটি এখানে টাইপ করে আপনার পিন নম্বর টাইপ করলেই খারিজের অর্থ পরিশোধ হবে এবং একটি পিডিএফ রশিদ আসবে। আপনি ইচ্ছে করলে খাজনার রশিদটি সঙ্গে সঙ্গে প্রিন্ট দিতে পারেন, আবার প্রয়োজনে তা ডাউনলোড করে পরেও প্রিন্ট দিতে পারেন। খাজনা প্রদানের কাজ সম্পন্ন হলে লগআউট করে বেরিয়ে যান।

ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনে-পরিশেষে:

আসলে ছোটখাট অনেক কাজ আছে, যা আমরা করতে চাইনা, বাড়তি ঝামেলা মনে করি, অথবা সময়ের অজুহাত দেখিয়ে তা বাড়তি টাকা-পয়সা খরচ করে থাকি। কিন্তু একবার ভাবুন তো, আপনার জমি যদি ৫ বা ১০টি বা একাধিক হয়ে থাকে, তাহলে যখন আপনি কোন কমার্শিয়াল কম্পিউটার সেন্টার থেকে খাজনা পরিশোধ করবেন, তখন সেই প্রতিষ্ঠান আপনার খাজনা দিয়ে দেয়ার জন্য বাড়তি কিছু চার্জতো অবশ্যই নিবে। অথচ আপনি যদি নিজে ঘরে বসেই তা করতে পারতেন, তাহলে বাড়তি খরচ বেঁচে যেত এবং আপনার নিজের শেখা হতো ও অন্যজনকেও আপনি তা দেখিয়ে দিতে পারতেন। অর্থাৎ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনে কিভাবে প্রদান করা যায়, তা উপরোক্ত বর্ণনা থেকে আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাম, রাজধানী ও মুদ্রার নামসমূহ 

সুতরাং, আজকের আর্টিকেলে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনে বিষয়ক আলোচনায় যদি কোন মন্তব্য থাকে বা কোন পরামর্শ থাকে, তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং সেইসঙ্গে অনলাইনে কিভাবে খাজনা দেয়া যায় বিষয়ক আলোচনায় দীর্ঘক্ষণ যুক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url