মাসিক অনিয়মিত কেন হয় - চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি?
প্রতিটা নারীরই মাসিক বা পিরিয়ড একটা নিয়মিত স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই মাসিক অনিয়মিত কেন হয় বা এর চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি? তা জানাটা অত্যন্ত জরুরী।
আসলে পিরিয়ডের একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। সাধারণত ২৩ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে একটা পিরিয়ড থেকে আরেকটা পিরিয়ড ফেরত আসে। তবে পিরিয়ড সাধারণত ২৮ দিন পর পর হয়ে থাকে। আর এই পিরিয়ড থাকে ৩-৭ দিন পর্যন্ত। যদি কোন কারণে এর ব্যতায় ঘটে, তা অবশ্যই অনিয়মিত হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে। সুতরাং, আজকের আলোচনায় আমরা মাসিক অনিয়মিত কেন হয় - চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি? তা জানার চেষ্টা করবো, তো চলুন জেনে নেয়া যাক:
পোস্ট সূচিপত্র : মাসিক অনিয়মিত কেন হয় - চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি? (Why are menstruation irregular - what are the medical procedures or home remedies?)
অনিয়মিত পিরিয়ড কী
মাসিক অনিয়মিত কেন হয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি কী?
অনিয়মিত মাসিকের কারণ
চিকিৎসা পদ্ধতি কী?
ঘরোয়া প্রতিকার
মাসিক অনিয়মিত কেন হয় - চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি? - শেষ কথা :
অনিয়মিত পিরিয়ড কী
অনিয়মিত পিরিয়ড, সহজ কথায় বলা যায় মাসিক বা স্বাভাবিক ঋতুস্রাবের মধ্যে যদি ব্যবধান পরিবর্তিত হতে থাকে, তবে তা অনিয়মিত পিরিয়ড। তবে অনেক সময় একটু তাড়াতাড়ি বা দেরিতে হওয়াটা স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেয়া হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন : বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান
অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের আগে অথবা দেরিতে হওয়া, যেমন-২৩ দিনের আগে হলে, প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ বার হলে, আবার ৩৫ দিন পর বা দেড় থেকে দুই মাস অথবা তার চেয়েও বেশী সময় পর পিরিয়ড হলে অবশ্যই তা অনিয়মিত পিরিয়ড। আবার দুই পিরিয়ডের মাঝখানে যদি ব্লিডিং হয় বা ১২, ১৬ অথবা ২০ দিন পর, অর্থাৎ সারা মাসেই একটু ব্লিডিংসহ পিরিয়ড হলে তা অনিয়মিত পিরিয়ড। তবে পিরিয়ড শুরু হলে তা ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত চলতে থাকে, তাহলে তা অনিয়মিত পিরিয়ড। আবার ৫-৭ দিনই পিরিয়ড থাকছে, কিন্তু অতিরিক্ত ব্লিডিং, ব্যথা বা চাক চাক রক্ত পড়লে তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলা হয়ে থাকে।
মাসিক অনিয়মিত কেন হয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি কী?
সাধারণত নারীর পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ করে থাকে হাইপোথ্যালামো পিটুইটারি ও ভারিয়ান অ্যাক্সিস। হাইপোথ্যালামাস মানে মস্তিস্ক আর পিটুইটারি হলো মস্তিস্কের একটি গ্রন্থি এবং ওভারি হচ্ছে ডিম্বাশয়। অর্থাৎ এই তিনটির সমন্বিত প্রভাবের ফলে হরমোন তৈরি হয় এবং জরায়ুর উপর কাজ করে পিরিয়ডকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই সমস্ত ফাংশানগুলিতে যখন কোনো তারতম্য ঘটে থাকে ঠিক তখনই অনিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ড হয়ে থাকে। এ ছাড়াও অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে নিম্নোক্ত কারণে-
- জরায়ুতে কোন ধরনের অসুখ থাকলে তা হতে পারে।
- পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের কারণে
- অল্প বয়সে হিমফিলিয়াসহ কিছু রক্তরোগের কারণে হতে পারে।
- গর্ভপাত হওয়ার পরে অনিয়ন্ত্রিত পিরিয়ড হতে পারে।
- সন্তান জন্মদানের পর কিছুদিন হতে পারে।
- অনেক সময় সন্তানকে স্তন্যদানের ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে ফিজিওলজিক্যাল কারণেও অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে।
- জরায়ুর ভেতর পলিপ থাকলে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে।
- আয়াট্রোজেনিক ওষুধ জনিত কারণে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে।
- চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ নিয়ম মেনে না খাওয়ার কারণেও তা হতে পারে।
অনিয়মিত মাসিকের কারণ :
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা, ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গ্রহণ, স্ট্রেস নেয়া, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করা, অপরিচ্ছন্ন থাকা, মদ্যপান বা ধুমপান করা ইত্যাদি।
মাসিক অনিয়মিত কেন হয় - চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি? বলতে আসলে, টিনেজার ও মধ্যবয়সী নারীদের মধ্যে হরমোনের অভাবজনিত কারণে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার অনেক সময় লম্বা স্ট্রেসে থাকলে অনেকেরই মাসিক দেরিতে হয়ে থাকে। আবার ওজন কম হলেও সময়মতো মাসিক হয় না। যারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন, সাধারণত তাদেরও অনেক সময় পিরিয়ড দেরিতে বা পরিবর্তন হয়ে থাকে। এ ছাড়াও যাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে, বিশেষ করে মনোনিউক্লিওসিস, ঠান্ডা, সর্দি, গলার ইনফেকশন ইত্যাদি সমস্যায় পড়লে অনেক সময় দেরিতে পিরিয়ড হতে পারে। এ ছাড়াও অনিয়মিত মাসিকের আরও অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে-
প্রাকৃতিক হরমোনের পরিবর্তন : প্রাকৃতিক হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। সাধারণত মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণকারী প্রধান হরমোনগুলি হলো-ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন, প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন। অর্থাৎ এই হরমোনগুলির স্বাভাবিক উত্থান ও পতনের ফলে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। এ ছাড়াও, অত্যধিক ব্যায়াম, ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য অবস্থা, অর্থাৎ কখনও কখনও, অনিয়মিত পিরিয়ডগুলি একটি অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যের অবস্থার ইঙ্গিত দেয়।
চিকিৎসা পদ্ধতি কী?
মাসিক অনিয়মিত কেন হয় - চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি? এর ক্ষেত্রে অনিয়মিত পিরিয়ড অনেকগুলো রোগের লক্ষণ। তাই পিরিয়ডের সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসকই পারেন রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে। যেমন-অনিয়মিত পিরিয়ডে রক্তশ্যন্যতা দূর করার জন্য হিমোগ্লোবিন লেভেল দেখে মুখে খাওয়ার আয়রন ট্যাবলেট, আয়রন ইনজেকশন বা প্রয়োজনে শরীরে রক্ত দিতে হয়। আবার ব্লিডিং বন্ধ করার জন্য উচ্চ মাত্রার প্রোজেস্টেরন হরমোন এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ট্যাক্সিল বা ট্র্যানক্সামিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, জাঙ্ক ফুড পরিহার করতে হবে, সুষম খাদ্য, ফল-শাকসব্জি খেতে হবে।
আরও পড়ুন : ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে জেনে নিব প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়সমূহ
সাধারণত মাসিক অনিয়মিত হওয়ার বেশিরভাগ প্রাকৃতিক কারণ যেমন-পেরিমেনোপজ এবং প্রসবের জন্য কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে সাধারণত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল, প্যাচ বা আইইউডি-র কারণে অনিয়মিত হওয়ার জন্যও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে যদি ৪০ বছরের কম হয় এবং ক্রমাগত অনিয়মিত পিরিয়ড হতে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ঘরোয়া প্রতিকার :
মাসিক অনিয়মিত কেন হয় - চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি? এর মধ্যে নিয়মিত পিরিয়ড পেতে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন-
- একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা;
- চর্চা
- ডায়েটে দারুচিনি এবং আদা যোগ করা
- পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ
মাসিক অনিয়মিত কেন হয় - চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি? - শেষ কথা:
আশা করছি, মাসিক অনিয়মিত কেন হয় - চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি? যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। মাসিক অনিয়মিত কেন হয় - চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি? ইত্যাদি বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। সুতরাং, এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট অর্থাৎ, মাসিক অনিয়মিত কেন হয় - চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি? সম্পর্কে তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমরা সবাই জানি, এই পিরিয়ড বা মাসিক নারীদের এমন একটি বিষয়, যার
ফলশ্রুতিতেই একজন নারী মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করে থাকে। তবে অনেক নারীরই এই
পিরিয়ড বা মাসিক নিয়মিত হয় না? এই কারণে আমরা মাসিক অনিয়মিত কেন হয় - চিকিৎসা প্রক্রিয়া বা ঘরোয়া পদ্ধতি কি? সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url