ভাত পৃথিবীর কোন কোন দেশের প্রধান খাদ্য?

ভাত যেমন আমাদের প্রধান খাদ্য অন্য দেশেও কি তাই? এক্ষেত্রে ভাত পৃথিবীর কোন কোন দেশের প্রধান খাদ্য? তা জানতে নিচের লেখাটি পড়ুন।
বর্তমানে পৃথিবীর মোট ৬০ ভাগ মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। তবে এর মধ্যে সবথেকে বেশি ভাত খায় এশিয়া মহাদেশের মানুষ। তাই, আমাদের জানাটা খুবই জরুরী যে, ভাত পৃথিবীর কোন কোন দেশের প্রধান খাদ্য?

পোস্ট সূচিপত্র: ভাত পৃথিবীর কোন কোন দেশের প্রধান খাদ্য? (Rice is the staple food of which countries in the world?)

পবিত্র কুরআনে কোন কোন শস্যের কথা বলা আছে:

পবিত্র কুরআনে ‘শস্য’ শব্দটি তের বার উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থাৎ যা পৃথিবীতে মানুষের জন্য ঈশ্বর-এর বিধানের আশীর্বাদের প্রতি মানবজাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। মূলত শস্য বলতে গমের পাশাপাশি চাল, যব, মসুর ইত্যাদিকেও বুঝিয়ে থাকে। যেমন-মিশরে, রুটিকে ‘আইশ’ বলে, অর্থাৎ এর অর্থ হলো-‘জীবন’,‘জীবিকা’।

ভাত কি কুরআনে বর্ণিত আছে?

৫৫:১২ )। حَبُّ হাব শব্দের অর্থ হলো শস্য। যেমন: গম, ছোলা, চাল, 'এক ধরণের ভেচ', 'মসুর ডাল' ইত্যাদি। তবে عَصْفِ `আসফ শব্দটি হল চাল বা গমের খোসার মতো কিছু ধরণের শস্যের বাইরের আবরণ, যা মহান আল্লাহ তাঁর শক্তি এবং পরিপূর্ণ প্রজ্ঞা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।

ভাত পৃথিবীর কোন কোন দেশের প্রধান খাদ্য?

ভাত পৃথিবীর কোন কোন দেশের প্রধান খাদ্য? হিসেবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, যেখানে ভাত প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। নিম্নে যে সমস্ত দেশেরে একটি তালিকা বর্ণিত হলো:
ভাত প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে, যেমন-চীন, ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতমান, জাপান, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে শীর্ষ ১০টি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান

এ ছাড়াও আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কিছু দেশে ভাত প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে, যেমন-মিশর, নাইজেরিয়া, ঘানা, কেনিয়া, অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিকি ইত্যাদি।
ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশে ভাতকে প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকে, যেমন-ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরু, ইকুয়েডর ইত্যাদি।

কোন কোন দেশের প্রধান খাদ্য ভাত নয়:

পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে ভাতের পরিবর্তে গম, বার্লি, ভুট্টা, কুইনো, রাইয়ের মত খাদ্যগুলি প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে,  নিম্নে একটি তালিকা প্রদত্ত হলো:
সাধারণত ভাত খায়না বা যে সমস্ত দেশের প্রধান খাদ্য ভাত নয়, এরকম দেশগুলির বেশিরভাগই ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশেই বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউক্রেন, ফিনল্যান্ড, কানাডা, সুইজার‌ল্যান্ড, ফ্রান্স, তুরস্ক, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, সুইডেন, নরেওয়ে, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড উল্লেখযোগ্য।
তবে আফিক্রা মহাদেশের অন্তর্গত বেশ কিছু দেশ, যেমন-ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়াতে ভাতের চেয়ে বেশি খাওয়া হয়ে থাকে টেফ, বাজরা, জোরা, ইয়াম ইত্যাদি।
এ ছাড়াও পেরু, বলিভিয়া এবং ইকুয়েডর এর দেশগুলির প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে আলু, কুইনো, ভুট্টা ইত্যাদি।

বিশ্বে মাথাপিছু চাল খরচ এবং জনসংখ্যানুযায়ী বার্ষিক চাল খরচের পরিমাণ:

জেনে রাখা ভালো যে, চীন বিশ্বের মধ্যে চাল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে। তবে বিশ্বে সবথেকে বেশি পরিমাণে মাথাপিছু চাল খরচের পরিমাণ এবং জনসংখ্যা অনুযায়ী সেই দেশের বার্ষিক চাল খরচের পরিমাণ সম্পর্কিত একটি তালিকা নিম্নে বর্ণিত হলো:
  • নেপালের প্রধান খাদ্য হলো ভাত। এখানে গড় মাথাপিছু চাল খরচ হয় ১৫৫.৮ কেজি করে, আর এই দেশের মোট জনসংখ্যা অনুযায়ী বার্ষিক চাল খরচের পরিমাণ ৪.৬৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
  • বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষেরই প্রধান খাদ্য ভাত। এখানে একজনের মাথাপিছু চাল লাগে ২৫০.২ কেজি করে এবং মোট জনসংখ্যা অনুযায়ী বার্ষিক চাল খরচের পরিমাণ ৩৮.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
  • কলোম্বিয়ায় মাথাপিছু জনগণের জন্য চাল খরচ হয় ২৫০.২ কেজি, আর জনসংখ্যা অনুযায়ী এ দেশের বার্ষিক চাল খরচ হলো ৪.১৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
  • লাওস-এর জনগণের মাথাপিছু চাল খরচের পরিমাণ হলো ২৬২.৬ কেজি। যার জনসংখ্যা অনুযায়ী বার্ষিক চাল খরচের পরিমাণ হলো ১.৯৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট

  • ভিয়েতনামের প্রধান খাদ্য ভাত। তাই এদেশের জনগণের মাথাপিছু চাল খরচের পরিমাণ ২২১.৬ কেজি এবং ভিয়েতনামের জনসংখ্যা অনুযায়ী বার্ষিক চাল খরচের পরিমাণ ২১.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
  • আফ্রিকা মহাদেশের গুয়ানা-এর বছরে গড়ে মাথাপিছু চাল খরচের পরিমাণ হলো ২১৭.৫ কেজি, তবে এদেশের জনসংখ্যা অনুযায়ী বার্ষিক চাল খরচের পরিমাণ হলো ০.১৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
  • মায়ানমার এর প্রধান খাদ্য হলো ভাত। বর্তমানে মায়ানমারের বছরে মাথাপিছু চাল খরচের পরিমাণ হলো ১৯১.৫ কেজি এবং বছরে চাল খরচের পরিমাণ ১০.৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
  • আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে একটি দেশ হলো গিনি। যেখানে বছরে গড়ে মাথাপিছু চাল খরচের পরিমাণ হলো ১৮৪.৭ কেজি, আর এদেশের মোট বার্ষিক চাল খরচের পরিমাণ ২.৫০ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
  • এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অবস্থিত থাইল্যান্ডের বছরে মাথাপিছু চাল খরচের পরিমাণ ১৭৭.৪ কেজি এবং এখানকার জনসংখ্যা অনুযায়ী বার্ষিক চাল খরচের পরিমাণ ১২.৭০ মিলিয়ন মেট্রিক টন।

ভাত পৃথিবীর কোন কোন দেশের প্রধান খাদ্য? - শেষ কথা:

পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বেশী পরিমাণে ভাত খেয়ে থাকে এশিয়া মহাদেশে বসবাসকারী মানুষজন। অর্থাৎ ৯০% মানুষ, যাদের প্রধান খাদ্যই ভাত। আর কথায় বলে, মাছে-ভাতে বাঙালী। সুতরাং আজকের আলোচনায় ভাত পৃথিবীর কোন কোন দেশের প্রধান খাদ্য? তা উপরোক্ত আলোচনা ও তথ্য থেকে আশাকরি জানতে পেরেছেন। আসলে চালের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে এবং সেই অনুযায়ী ভাতেরও স্বাদ, গন্ধ আলাদা হয়ে থাকে। বর্তমানে অনেক চাইনিজ রেস্তোরাতে রাইস বলতে বাসুমতি চালের ভাত প্রদান করে থাকে।

আরও পড়ুন: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাম, রাজধানী ও মুদ্রার নামসমূহ 

যাইহোক পরিশেষে ভাত পৃথিবীর কোন কোন দেশের প্রধান খাদ্য? এবং কোন কোন দেশের প্রধান খাদ্য নয় এবং পবিত্র কুরআনে ভাত সম্পর্কে বর্ণিত তথ্যগুলি আপনাদের উপকারে আসবে। সবশেষে ভাত পৃথিবীর কোন কোন দেশের প্রধান খাদ্য? এর আলোচনায় দীর্ঘক্ষণ থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url