হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
পোস্ট সূচিপত্র : হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা (Causes, symptoms and treatment of asthma)
হাঁপানি হলে যে উপশমগুলি হয়ে থাকে:
সাধারণত হাঁপানি আক্রমণের সময় নিম্নলিখিত তিনটি জিনিস ঘটতে পারে:
ব্রঙ্কোস্পাজম: শ্বাসনালীকে ঘিরে থাকা পেশীগুলি সংকুচিত (আঁটসাঁট করে) হয়ে যায়। যখন তারা সংকুচিত হয় তখন শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়। সংকীর্ণ শ্বাসনালীগুলি বায়ুকে অবাধে প্রবেশে বাধা দিয়ে থাকে।
প্রদাহ: শ্বাসনালীগুলির আস্তরণ ফুলে যায়। ফোলা শ্বাসনালীগুলি ফুসফুসে প্রবেশ করে আবার প্রস্থানও করে, এমন বাতাসের পরিমাণকে সীমাবদ্ধ করে।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত তামাক গ্রহণ কি ফুসফুসের ক্যান্সারের জন দায়ী
শ্লেষ্মা উৎপাদন: শরীরে হাঁপানির আক্রমণের সময় আরও শ্লেষ্মা তৈরি করে। শ্লেষ্মা শ্বাসনালীগুলিকে ব্লক করে থাকে। তখন শ্বাস নেওয়ার সময় একটি শ্বাসকষ্টের শব্দ তৈরি হয়, যা আমরা শুনে থাকি। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এটি ঘটে।
হাঁপানি রোগের লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ:
সাধারণত হাঁপানি অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ থাকে। আর এই লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি অনেক শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের অনুরূপ, যেমন:
- হাঁপানি রোগ বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভব করা যায়।
- হাঁপানি হলে কাশি হয়ে থাকে বিশেষ করে রাতে।
- নিঃশ্বাসের দুর্বলতা তৈরী হয়।
- হাঁপানি হলে ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণগুলি সব সময়ই অনুভব করতে পারবেন না। দীর্ঘস্থায়ী হাঁপানি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপসর্গ এবং সূচক সৃষ্টি করতে পারে। হাঁপানির আক্রমণের মধ্যে লক্ষণগুলিও পরিবর্তিত হতে পারে।
কাশি সাময়িকভাবে কমানোর উপায়সমূহ:
হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে, হাঁপানি হলে অ্যালার্জিস্ট দ্বারা নির্ধারিত হাঁপানির ওষুধগুলি কাশির আক্রমণ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে৷ এর মধ্যে রয়েছে ব্রঙ্কোডাইলেটর ইনহেলার, যা ফুসফুসে শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে এবং দ্রুত রিলিফ দেয় অথবা একটি কর্টিকোস্টেরয়েড ইনহেলার, যা প্রতিদিন ব্যবহার করলে প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয়। প্রায়ই উভয় ধরনের প্রয়োজন হয়।
হাঁপানি হলে যে খাবারগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:
- সাধারণত হাঁপানি রোগীদের বেশি করে ভিটামিন ডি জাতীয় খাদ্য বেশী খেতে হবে। এক্ষেত্রে সকালের সূর্য ওঠা থেকে মোটামুটি ১০টার এর আগে পর্যন্ত (যে কোন সময়) সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি সংগ্রহের প্রচেষ্টা করে দেখতে পারেন।
- হাঁপানী রোগীদেরকে ভিটামিন-ই জাতীয় খাদ্য-খাবার বেশী করে খেতে হবে। কারণ ভিটামিন-ই জাতীয় খাবার খেলে তা অ্যাজমার অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
- হাঁপানী রোগীদেরকে টমাটো সিজিনের সময় রান্না করা টমেটো যদি প্রতিনিয়ত খেতে পারেন তাহলে তা অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
হাঁপানি রোগের জরুরী ওষুধ পত্রাদি:
দীর্ঘমেয়াদী হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের ওষুধগুলি হাঁপানির চিকিৎসার মূল ভিত্তি এবং সাধারণত প্রতিদিন গ্রহণ করা হয়। হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে দৈনিক ভিত্তিতে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হাঁপানির আক্রমণের সম্ভাবনা কমায়। দীর্ঘমেয়াদী নিয়ন্ত্রণের ওষুধের প্রকারের মধ্যে রয়েছে:
- শ্বাসনালী শিথিল করার ক্ষেত্রে ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েড নামক ওষুধটি ব্যবহার করতে পারেন, তবে, এতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঝুঁকির প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। মনে রাখবেন, এই ওষুধটি সমস্যা শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।
- শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে দ্রুত শ্বাস নিতে সহায়তা করে থাকে লিউকোট্রিন মডিফায়ার নামক ওষুধটি। এটি অ্যাজমা বা অ্যালার্জির মতো রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- দ্রুত-মুক্তিলাভ ওষুধ (Quick-relief (rescue) medications): দ্রুত এবং স্বল্পমেয়াদী উপসর্গ উপশমের জন্য এই ওষুধটি ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এই ওষুধগুলি সাধারণত হাঁপানি হওয়ার পর প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করা হয়।
- খুব দ্রত শ্বাসনালী শিথিল করার ক্ষেত্রে অ্যান্টিকোলিনার্জিক এজেন্ট (Anticholinergic agents) নামক ওষুধটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখানে মনে রাখতে হবে যে, অ্যান্টিকোলিনার্জিক এজেন্ট ওষুধটি বেশিরভাগই দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিসের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: সজনে পাতার উপকারিতা গুণাবলী ও ঔষধী শক্তি
- Oral and intravenous corticosteroids নামক এই ওষুধটি হাঁপানির শ্বাসনালীর প্রদাহ উপশম করতে সাহায্য করে। তবে, এই ওষুধগুলির কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে, সেজন্য শুধুমাত্রই গুরুতর হাঁপানির লক্ষণগুলি চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- যদি অ্যাজমা ফ্লেয়ার-আপ হয়ে যায়, তাহলে অবশ্যই quick-relief inhaler টি ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণত quick-relief inhaler ব্যবহারে চলমান উপসর্গগুলিকে খুব তাড়াতাড়ি কমিয়ে দিতে পারে। তবে, অবশ্যই খেয়াল করতে হবে, যদি পূর্বে ব্যবহৃত কোন দীর্ঘমেয়াদী নিয়ন্ত্রণের ওষুধগু ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং তা যদি সঠিক ভাবে কাজ করে থাকে, তাহলে অবশ্যই quick-relief inhaler টি ব্যবহার করার দরকার নেই।
হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা-শেষ কথা:
যদিও হাঁপানি একটি দীর্ঘস্থায়ী (চলমান) অসুস্থতা, তারপরেও এর ক্ষেত্রে হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ এবং সর্বোপরি সতর্কতাই হলো একমাত্র সঠিক পথ। আসলে কর্মের বিবেচনায় অনেককে অনেক কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। তবে সবক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করাই যুক্তিসংগত। এ ছাড়াও হাতের কাছে ইনহেলার থাকাটা বাঞ্ছনীয়।
আরও পড়ুন: গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুনাগুণ
আসলে উপরোক্ত আলোচনায় এ্যাজমা বা হাঁপানি রোগের লক্ষণগুলি যেমন সুস্পষ্ট ঠিক তেমনি এর থেকে ভাল থাকার জন্যে যে খাবারগুলি প্রয়োজন তা নিয়মিত খাওয়াটার অভ্যাস করাটাও শ্রেয়। তবে নিয়মিত ঔষুধ সেবন এবং ডাক্তারের পরামর্শটাও জরুরী। হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা হিসেবে অবশ্যই ধুমপান পরিত্যাগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে হাঁপানি রোগীদের সচেতন থাকাই উত্তম। আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url