গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুনাগুণ

গন্ধভাদুলী একটি উৎকট গন্ধযুক্ত উদ্ভিদ। এই পাতা থেকে প্রাণীর পাঁদের ন্যায় গন্ধ বাড়ায় বলেই হয়তো একে গন্ধভাদুলী বা গন্ধপাতা বলা হয়ে থাকে। গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ এর কারণে বর্তমানে এই পাতাটি আমাদের অনেকের কাছেই অত্যন্ত পরিচিত।

আমাদের বাপ-দাদা-দাদী, নানা-নানী ইত্যাদি বংশস্পরায় এই পাতার সঙ্গে পরিচিত হয়ে এসেছে। সুতরাং সেই হিসেবে এই পাতাটি আমাদের সকলেরই কাছে একটি পরিচিত পাতা। নিম্নে আমরা গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ এবং অন্যান্য বিষয়াদি জানবো:

গন্ধভাদুলীকে ইংরেজিতে কি বলে?

গন্ধভাদুলীর ইংরেজি অর্থ Skunkvine, Stinkvine, Chinese Fever Vine ইত্যাদি এবং বৈজ্ঞানিক নাম হলো- Paederia foetida Linn।

এই পাতার নামকরণ ও অবস্থান:

অঞ্চলভেদে এই গন্ধভাদুলী পাতাকে বিভিন্ন নামে চেনা যায়। যেমন-গন্ধভাদাল, গন্ধভাদুলী, ভাদাল, গন্ধ ভাদুলীয়া, গাঁদাল এবং গন্ধাভাদালি।

গন্ধভাদুলীকে সংস্কৃতে বলা হয় প্রসারণী, ভদ্রা। আবার গরো ভাষায় একে বলা হয় ফাসিম (Fassim)। 

গন্ধভাদুলী যে কোন জায়গায় হয়ে থাকে, বিশেষ করে বাড়ির আনাচে-কানাচে বা বনের মধ্যে। অন্যতম বিষয় হলো এর যত্নের প্রয়োজন হয় না।

গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ ভেদে এই গাছটি বাংলাদেশ, ভারতের পূর্বাঞ্চল, আন্দামান নিকোবার দ্বীপ, দক্ষিণ ভুটান, কম্পোডিয়া, মায়ানমার, চীন ও তাইওয়ানে প্রচুর জন্মে থাকে। সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এর ফুল ধরে এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফল হয়। শীতকালে এর ফল পাকে এবং বীজ থেকে কাণ্ড বা লতা লাগানো যেতে পারে।

আরও পড়ুন: সজনে পাতা কীভাবে খাওয়া যেতে পারে - সতর্কতাগুলি কি কি

তবে ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, আমাদের (আমরা যারা নিজেকে বাঙালী মনে করি) থেকে এই পাতার সঙ্গে গারোসহ অধিকাংশ আদিবাসীরা অতি প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত ছিলেন। কারণ গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে তারা এতই ওয়াকিবহাল ছিল যে এই পাতা দিয়ে তারা বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু খাবার তৈরী করতেন। 

গন্ধভাদুলী পাতার ঔষধীয় গুণাবলী:

এই লতাবিশিষ্ট পাতাগুলি আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ভাবে খেয়ে আসছি। কিন্তু গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি?

গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ এতই পরিমাণে আছে যা ইউনানী ও আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্রে একে পেটের যাবতীয় রোগের (যেমন-আমাশয়, শুক্রতারল্য, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি) জন্য ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়ে থাকে। বিশেষ করে হাকিম, কবিরাজেরা এটাকে রান্না করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ হিসেবে এটি আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্রে উদরাময় ভালো করার লক্ষ্যে এই পাতার রস সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়।

আরও পড়ুন: সারা শরীর ব্যথা করে কেন - সারা শরীর ব্যথা হলে করনীয়

গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ এর কারণে তা মুখের রুচি, অর্থাৎ এর ডাল ও পাতা পানিতে সিদ্ধ করে ক্বাথ তৈরি করে এর সাথে লবণ মিশিয়ে যদি পান করা যায় তাহলে তা মুখের রুচি ফিরে আসে।

গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই পাতা নিয়মিত সেবনে গেঁটে বাত উপশম হয়।

গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ ভেদে এটি খাওয়া যেতে পারে:

  • এই পাতা বেটে বড়া করে খাওযা যায়;
  • পাতা বাটার সাথে কাঁচা কলা দিয়ে থকথকে করে রান্না করে খাওয়া যায়;
  • প্রয়োজনমত পিঁয়াজ-রসুন সহ অন্যান্য মসলা দিয়ে শুধু পাতা বাটাও রান্না করে খাওয়া যেতে পারে;
  • আরও পড়ুন:
  • যে কোন তরকারির মধ্যে কিছু পাতা দিয়েও তা খাওয়া যেতে পারে;
  • এই পাতা সিদ্ধ করে ক্বাথ তৈরি করে এর সাথে লবণ মিশিয়ে যদি পান করা যেতে পারে।

সবশেষে

আমাদের গ্রাম-বাংলায় এমন অনেক লতা-গুল্ম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যা আমরা দেখেই থাকিনা। তবে অধিকাংশ শাক-সব্জি, বিভিন্ন ঔষধীয় পাতা সবই কিন্তু গ্রামেই এর প্রথম ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং ধীরে ধীরে তা শহরমুখী হয়েছে। এই গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ এর কারণে সবার কাছে তা সমধিক পরিচিতি লাভ করেছে। 

আরও পড়ুন: আবেগ কী অভ্যন্তরীণ না বাহ্যিক ও ভালোবাসা আর প্রেম কী আবেগেরই একটি অংশ

আমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছে, বিশেষ করে: আমার মা, বাবা, দাদা-দাদী,নানা-নানী ইত্যাদি, এ রকম বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য কিন্তু খুবই কার্যকর গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ। কেননা একটা পর্যায়ে গিয়ে শরীরে কিন্তু নানা অসুখ-বিসুখ ঘিরে ধরে, যেমন- প্রায়শই দেখা যায় - হাঁটু ব্যথা, মাজা ব্যথা ইত্যাদি। এ ধরণের সমস্যাগুলিতে বয়স্ক ব্যক্তিরাই ভুগেন সবথেকে বেশী। এ রকম অবস্থায় তাদেরকে যদি গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ বিবেচনাপূর্বক এই পাতা খাওয়ানো যেতে পারে, তাহলে প্রকৃতিকগত ভাবেই ঐ সমস্ত সমস্যার উপশম হয় এবং সেইসাথে ঔষুধ খাওয়ার প্রবণতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আজকে গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ শীর্ষক আলোচনাটি যদি ভালো লেগে থাকে এবং এর থেকে কিছু শিখণীয় হয়, তাহলে অবশ্যই তা অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।