কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার

কলা সারা বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় ফল। কলার খোসাকে ব্রিটিশরা ইংরেজিতে ব্যানানা স্কিন বলেছেন। আজকে কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার পোস্টটি পড়লে তা জানতে পারবেন।
কলার খোসা ফলের বাইরের আবরণ। সাধারণত কলার খোসা নানা জায়গায়, নানাভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই জানার প্রয়োজন কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার কিভাবে হয়ে থাকে।

তথ্যে যা যা রয়েছে : কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার
কলার খোসা কি কাজে লাগে?
বিশ্বে কলার উৎপাদন
গবাদি পশুর খাদ্য প্রণালী
কলার খোসার পুষ্টি গুণাবলী সমূহ
কলার খোসার উপকারিতা
কলার খোসা কিভাবে খাওয়া যায়
রূপচর্চা বা ত্বকের যত্নে কলার খোসার ব্যবহার
শেষ কথা

কলার খোসা কি কাজে লাগে?

কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার জানাটা যেমন জরুরী, ঠিক তেমনি কলার খোসা আসলে কি কি কাজে লাগতে পারে সে বিষয়টাও জানাটাও জরুরী তাই না? মূলত কলা নানাভাবে শরীরকে সাহায্য করে থাকে। কলার খোসা খেলে বাজে কোলেস্টেরল কমে, চোখ ভালো থাকে, এটি আমাদের হজম প্রক্রিয়াতেও সাহায্য করে, পশুদের খাদ্য হিসেবে এটি ব্যবহার হয়, আবার রান্নার একটি উপাদান হিসেবেও কলার খোসা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ছড়াও জল বিশুদ্ধকরণে, বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক দ্রব্য তৈরিতে এবং সর্বোপরি বিভিন্ন কৌতুক ও হাস্যরসের যোগান বা খোড়াক কিন্তু এই কলার খোসাতে হয়ে থাকে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার জানাটা আমাদের জন্য কতটা জরুরী।

বিশ্বে কলার উৎপাদন :

কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই এটাও জানতে হবে যে, বিশ্বে কলার উৎপাদন কেমন বা কোন কোন দেশ এই উৎপাদনের সাথে জড়িত। ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, সারা বিশ্বব্যাপী কলা এবং কলাগাছের উৎপাদন ছিল বার্ষিক ১৭৯ মিলিয়ন টন, যার ‍পুরোটার নেতৃত্বে ছিল ভারত ও চীন। সে সময় বিশ্বব্যাপী মোট কলা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৬ শতাংশ। তবে কলা উৎপাদনে অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে উগান্ডা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া এবং ইকুয়েডর প্রভৃতি।

গবাদি পশুর খাদ্য প্রণালী:

কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার অবশ্যই আছে! তা না হলে তা পশুর খাদ্য হিসেবে কিভাবে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বলাবাহুল্য কলার খোসা শুধুই খাদ্য হিসেবে নয়, এর যথেষ্ট পুষ্টিগুণও রয়েছে অনেক। সে যাই হোক, এখন আমাদের জানা দরকার গবাদি পশুর খাদ্য প্রণালীতে এর সম্পক্তকরণ। অর্থাৎ গরু, ছাগল, শূকর, বানর, হাঁস-মুরগি, খরগোশ, মাছ, জেব্রা এবং অন্যান্য প্রজাতির জন্য ফিডস্টক হিসাবে কলার খোসা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে কলার খোসায় থাকা ট্যানিনের প্রভাব নিয়ে কিছু উদ্বেগ রয়েছে যা প্রাণীদের সেবন করে। সাধারণত কলার খোসার এর মধ্যে ইথানল, সেলুলেস, ল্যাকেস উপাদানগুলি সার হিসেবে এবং কম্পোস্ট তৈরিতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখে। আবার কলার খোসা ও পিঁয়াজ রসুনের চোকা দিয়েও কিন্তু তরল সার তৈরি করা যায়। সুতরাং খুব সহজেই বোঝা যায় কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ আমাদের কাছে।

কলার খোসার পুষ্টি গুণাবলী সমূহ:

কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার বিষয়ে অনেকেই এমন প্রশ্ন করে থাকেন, কলার খোসায় আবার কিসের পুষ্টিগুণ। শুধুমাত্র তাদের জন্য বলি, হ্যাঁ, কলার খোসায় অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। আসলে কলার খোসার পুষ্টিগুণ এর পরিপক্কতা এবং চাষের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কলার খোসায় ডেজার্ট কলার খোসার চেয়ে কম ফাইবার থাকে এবং পাকার সাথে সাথে লিগনিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় (৭ থেকে ১৫ শতাংশ শুষ্ক পদার্থ)। অর্থাৎ গড়ে, কলার খোসায় ৬-৯ শতাংশ প্রোটিন এবং ২০-৩০ শতাংশ ফাইবার থাকে, যা NDF হিসাবে পরিমাপ করা হয়ে থাকে। সবুজ কলার খোসায় ৪০ শতাংশ স্টার্চ থাকে যা পাকার পর শর্করায় রূপান্তরিত হয়। সবুজ কলার খোসায় অনেক কম স্টার্চ (প্রায় ১৫ শতাংশ) থাকে, যখন কলার খোসার তুলনায় সবুজ থাকে, পাকা কলার খোসায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ফ্রি শর্করা থাকে। সুতরাং উপরোক্ত কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার বিধিতে এর শুধু পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলাম। এবার জানবো এর উপকারিতা:

কলার খোসার উপকারিতা:

কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার এর মধ্যে রয়েছে চমৎকার সব উপকারিতা, নিম্নে তা আলোচনা করা হল:

১। কলার খোসার মধ্যে রয়েছে ট্রাইপটোফেন। এটি একটি প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড। এটি মস্তিষ্কের সুখী হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।
২। কলার খোসায় রয়েছে সলিউবল ও ইনসলিউবল আঁশ। গবেষণায় বলা হয়, সলিউবল আঁশ শরীরের লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন, অর্থাৎ বাজে কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে।
৩। যদি খোসাসহ কলা খাওয়া যায় তাহলে এর মধ্যে থাকা আঁশ হজমে সাহায্য করে থাকে, আবার এটি ডায়াবেটিসেরও ঝুঁকি কমায় এবং নিয়মিত খেতে পারলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। 
৪। কলার খোসার মধ্যে থাকা ভিটামিন-সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

আরও পড়ুন: অতিরিক্ত তামাক গ্রহণ কি ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী

৫। এ ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম। এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং এর মধ্যে থাকা ম্যাগনেশিয়াম শরীরে শক্তির যোগান দেয়। 
৬। কলার খোসায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এটি কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। 
৭। সর্বোপরি কলার খোসাতে রয়েছে লুটেইন, যা চোখের ছানি প্রতিরোধ করে এবং চোখকে ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত রাখে।

কলার খোসা কিভাবে খাওয়া যায় :

কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কলার খোসা দিয়েও বিভিন্ন চমকপ্রদ রান্না করা যায়। যেমন ধরুন- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারতীয় এবং ভেনিজুয়েলা দেশের রান্নায় কলা এবং কলাগাছের খোসা বিভিন্ন রেসিপিতেও ব্যবহার করা হয়। যেমন-কাঁচা কলার চোকা পাটায় বেটে বা ব্লেন্ডার দিয়ে মিহি করে বেসন বা ময়দা মিক্সড করে বড়া তৈরী করে খেতে পারেন; আবার অনেক সময় যাদের পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায়ে যদি কাঁচা কলার খোসা সেদ্ধ বা ভর্তা করে খাওয়ানো যায়, তাহলে তা অনেকাংশেই ভালো হয়ে যায়।

রূপচর্চা বা ত্বকের যত্নে কলার খোসার ব্যবহার:

কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি অনেক। বলাবাহুল্য যে, কলা খোসা চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়, আবার অনেকেই কলার খোসা রূপচর্চার জন্যও ব্যবহার করে থাকে। যদি মুখে ব্রণ হয় তবে তা দূর করতে কলার খোসা ব্যবহার করা যেতে পারে, এ ছাড়াও শরীরের ক্লান্তি বা অবসাদ কাটাতে কলার খোসা ব্যবহৃত হয়। সাধারণত যাদের মুখে দাগ রয়েছে তারাও কলার খোসা ব্লেন্ড করে লাগাতে পারেন, কারণ কলার খোসায় থাকা সুরক্ষা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি  থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। মুখের বলিরেখা দূর করতেও কিন্তু কলার খোসার জুড়ি মেলা ভার, দাদের ওষুধ হিসেবে কলার খোসা ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেকের স্কিস ডিজিস বা চামড়াজনিত অসুখে ভুগে থাকে, যেমন-খোসপাঁচড়া জাতীয় সমস্যা দূর করতে কলার খোসা ব্যবহার করে থাকেন, আবার শরীরে পোকা মাকড় কামড়ালে, ত্বক মসৃণ করণের জন্য এবং সর্বোপরি ব্যবহৃত অলংকার পরিস্কার করতেও কলার খোসা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার এর বিষয়ে অধ্যাপক ডেভিড লেভিটস্কি বলেন, মানুষ সব সময় জাদুকরি খাবার খোঁজে। খাবার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে এটি কোনো কিছুর জাদুকরি উত্তর নয়। কলার খোসার মধ্যে অনেক স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। তবে এটি যদি হজম করতে পারেন, তখনই তা খাওয়া ভালো।

কলার খোসায় কি কোন গুণাবলী আছে?-শেষ কথা:

পরিশেষে কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার বিষয়ক আলোচনায় একটা বিষয় না বললেই নয়, তা হলো-বর্তমান বাজারের অধিকাংশ ফলেই পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হয়। এটি দেহের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। তাই, যদি কলার খোসা খেতেই চান, তাহলে এতে যেন পেস্টিসাইড বা কীটনাশক না থাকে—সে বিষয়ে আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।

আরও পড়ুন: ভিটামিন ডি ও ই একসাথে খাওয়া যাবে কি

আজকের কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার বিষয়ক আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন এবং সেইসাথে তা অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন। এতোক্ষণ কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার বিষয়ক আলোচনায় থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

একবার কলার খোসা ছাড়ানো হলে, ফলটি কাঁচা বা রান্না করে যেমন খাওয়া যায় ঠিক তেমনি খোসা সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। আর্টিকেলে বর্ণিত কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার বিষয়ক আলোচনায় বলা যেতে পারে যে, কলার খোসা অপসারণের ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জৈব বর্জ্য তৈরি হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url