বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারে

বর্ষাকালটি হচ্ছে স্যাঁতসেতে ও উদাসীনতাময় আবহাওয়া। এই সময়টাতে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে বেশি। তাই বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারে এমন সবজির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা উচিত।
সাধারণত বর্ষাকালে বিভিন্ন জলবাহিত রোগ, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এবং হজমজনিত রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। পাশাপাশি বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় চারপাশে বিরাজ করছে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া। এতে রোগজীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই, বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারে এমন বিষয়ে জানতে নিচের লেখাটি পড়তে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারে
মৌসুমি ফল
বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারেন
বর্ষাকালে যেসব খাবার/সবজি এড়িয়ে যাওয়া উচিত
বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারে- শেষ কথা

মৌসুমি ফল

বর্ষাকালে অনেক রকমের মৌসুমী ফল পাওয়া যায়। আর চিকিৎসকগণ বলে থাকেন, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তত একটি ফল থাকা ভালো। কারণ ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল থাকে, যেগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এ সময়টাতে ফল হিসেবে আপনি বেছে নিতে পারেন আপেল, নাশপাতি, বেদানা, লিচু ও কলা। কারণ এসব ফলে পানির পরিমাণ কম রয়েছে, ফলে তা জলবাহিত রোগের ঝুঁকি কমায়।

বর্ষাকালে যে সবজিগুলো খেতে পারেন :

করলা

তেঁতো করলা শরীরের অন্ত্রের ভেতরে থাকা পরজীবী কৃমি ধ্বংসে অনেক কার্যকর হয়ে থাকে। সাধারণত পাকস্থলী ও অন্ত্রের পরজীবীগুলো এই বর্ষাকালেই বেশি বাড়ে। আর করলাতে থাকা ফাইবার, ভিটামিন-সি, ফোলেট এবং ভিটামিন-এ এসব সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

আরও পড়ুন: জাম ফলের যত অজানা তথ্য

চিচিঙ্গা

চিচিঙ্গায় থাকা ফাইবার পেটে বেশিক্ষণ থেকে ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। এছাড়াও এটি মেদ ঝরাতেও ভূমিকা রাখে। অনেক সময় ভারী খাবার গ্রহণের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, ফোলাভাব এবং পেট-ব্যথা হয়ে থাকে, আর তা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর এই চিচিঙ্গা। তাই বলা যেতেই পারে বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারে এর মধ্যে চিচিঙ্গা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি।

পটল

পটলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা সঠিক হজমে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়াও পটলে থাকা অ্যান্টিপাইরেটিক উপাদানটি জ্বর এবং সর্দি হ্রাস করতেও সাহায্য করে। রক্তের শুদ্ধির জন্য পটল বেশ উপকারী। কারণ এটি রক্ত ও টিস্যু পরিষ্কার করে ত্বকের যত্ন নেয়। পটলের বীচি কিন্তু ফেলা দেয়া ঠিক নয়, কারণ পটলের বীচি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

কাকরোল

সাধারণত কাকরোলের বীচিতে থাকা ফাইবার গ্যাস্ট্রিক আলসার, পাইলস এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যাগুলো দূরীকরণে সহায়তা করে। এ ছাড়াও কাকরোল যকৃতের ক্ষতি, প্রদাহজনিত অসুস্থতা রোধ এবং জ্বর কমাতেও সহায়তা করে থাকে। এর হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য অতিরিক্তভাবে ইনসুলিনের নিঃসরণ এবং সংবেদনশীলতা উভয় ক্ষেত্রে কার্যকর ভুমিকা রাখার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।

ঢেঁড়শ

ঢেঁড়শে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে এবং প্রোটিন রয়েছে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো শক্তিশালী পলিফেনল প্রদাহ রোধ, হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। তবে বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারে এদের মধ্যে ঢেঁড়শ খেতে পারেন অনায়াসে। সাধারণত ঢেঁড়শ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।

আরও পড়ুন: জাঙ্ক ফুড কি - জাঙ্ক ফুডের ক্ষতিকর দিকসমূহ

তেতো জাতীয় সবজি

করলার মতো তেতো সবজি, যেমন-নিম, হলুদের গুঁড়া এবং মেথির বীজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। বর্ষা মৌসুমে এ খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় অনায়াসে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

সিদ্ধ সবজি

সাধারণত বর্ষাকালে কাঁচা সবজিগুলো ক্ষতিকারক জীবাণু বহন করে, যা অনেক সময় নানা ধরনের ইনফেকশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং বর্ষাকালের খাদ্য তালিকায় কাঁচা সবজির পরিবর্তে সিদ্ধ সবজি রাখুন। অর্থাৎ যদি সালাদ আপনার ডায়েট চার্টে থাকে তাও সিদ্ধ করে নিন। তা ছাড়া সিদ্ধ সবজি দ্রুত হজম হয় এবং ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে সহায়তা করে।

বর্ষাকালে যেসব খাবার/সবজি এড়িয়ে যাওয়া উচিত:

ভাজাপোড়া
বাইরের খোলা জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া তৈরী হয়, যা খাওয়া যাবে না। যেমন—পেঁয়াজু, শিঙ্গাড়া, চপ, পাকোড়া, ফুচকা, চটপটি ইত্যাদি খাবারগুলো খোলা পরিবেশে তৈরি হওয়াই খুব সহজেই রোগজীবাণু এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

দুগ্ধজাত পণ্য

বর্ষায় দুগ্ধজাত পণ্যগুলি খাওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি সতর্ক থাকাটা জরুরি। কারণ স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার কারণে এগুলো দ্রুত নষ্ট হতে পারে, তাই না খাওয়াই ভালো। তবে মনে রাখবেন, কখনো কোন কিছু খেলে অবশ্যই সতেজ/ফ্রেশ খেতে হবে।

মাশরুম

মাশরুম ছত্রাক এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তাই বর্ষাকালে মাশরুম না খাওয়াই উত্তম।

আরও পড়ুন: অ্যাভোক্যাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ

শাক

শাক আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ শাকে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন। তবে বর্ষাকালে শাক এড়িয়ে চলাই ভালো। কেননা, বর্ষার সময় শাকের জলীয় অংশ বেড়ে য়ায় এবং তাতে ক্ষতিকর নানা ধরণের ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন শুরু হয়, এই কারণে বর্ষাকালে শাক এড়িয়ে যাওয়া বুদ্দিমানের কাজ।

সামুদ্রিক মাছ

মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃৎপিণ্ড ও এর পেশিকে শক্তিশালী করে। এ ছাড়াও মস্তিষ্কের নতুন কোষ তৈরিতে ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় মাছ খুবই উপকারী। তবে, বর্ষাকাল মাছের প্রজননের আদর্শ সময় হওয়ার কারণে, যতোটুকু পারা যায় তা এড়িয়ে চলাই ভালো।

ধনিয়া এবং পুদিনাপাতা

সাধারণত ধনিয়া এবং পুদিনাপাতা  আমাদের দৈনন্দিন রান্নায় বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। কিন্তু বর্ষাকালে ধনিয়া পাতা ও পুদিনা পাতা খাওয়া থেকে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়। আসলে ধনিয়া পাতা বা পুদিনা পাতা সরাসরি মাটিতে বৃদ্ধি পায়, আর মাটি থেকে সরাসরি তুলে এগুলোকে রান্নায় ব্যবহার করার কারণে এর মধ্যে মাটি-বাহিত ব্যাকটিরিয়া এবং পোকামাকড় দেখা যায়, যা খাওয়া যাবে না।

বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারে - শেষ কথা:

আসলে বর্ষাকালটি অন্যান্য ঋতুর থেকে সম্পূর্ণই আলাদা। যেহেতু এ সময়টাতে বাতাসে আদ্রতার ভাব বেশি থাকে, তাই সবকিছুই কেমন যেন ভিজা ভিজা মনে হয়। এ সময়টাতে সবথেকে সুস্থ্য থাকাটা খুবই জরুরী। আর এ জন্য বিশেভাবে নজর দিতে হয় খাদ্য খাবারের উপর, বিশেষ করে ফুলকপি, বাধাকপি, ক্যাপসিকাম, ধনিয়া ও পুদিনাপাতা, উন্মুক্ত ভাজাপোড়া, শাক-সবজি, দুগ্ধজাত পণ্য ইত্যাদি। মূলত সচেতনতা, জানার আগ্রহ, অতীত অভিজ্ঞতা সবকিছুর সমন্বয়ে মানুষ তার জীবনচক্র পরিচালনা করে।

আশা করছি আজকের বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারে বিষয়ক আলোচনা থেকে আপনারা অনেক কিছুই জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আশা করি এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারে - যা খাওয়া যাবে না বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারে - যা খাওয়া যাবে না বিষয়ক আলোচনায় আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।