জাম ফলের যত অজানা তথ্য

জাম ফল আমাদের সকলের নিকট একটি অতি পরিচিত ফল। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা এই জাম ফলের যত অজানা তথ্য সম্পর্কে।

মূলত প্রতিটা ফলেরই একটি উপকার আছে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। কিন্তু জাম ফল হচ্ছে অন্যতম, কেননা এই জাম দিয়ে আয়ুর্বেদিক ঔষধ সহ শরীরের নানাবিধ রোগব্যাধি দূর করা সহ প্রচুর ভিটামিনে সমৃদ্ধ একটি ফল, তাই জাম ফলের যত অজানা তথ্য গুলি আমাদের জানা উচিত।

পোস্ট সূচিপত্র: জাম ফলের যত অজানা তথ্য
জামের বৈজ্ঞানিক নাম কি?
জামের বৈশিষ্ট্যাকৃতি
জামের নানারকম নামকরণ
জামের খাদ্য উপকারিতা সমূহ
জাম খাবারের পূর্বে যে সতর্কতাগুলি খেয়াল রাখতে হবে
জাম ফলের যত অজানা তথ্য-পরিশেষে

জামের বৈজ্ঞানিক নাম কি?

জাম ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Syzygium cumini, জাম Myrtaceae পরিবারভুক্ত একটি ফল, যা গাঢ় বেগুনী রঙের হয়ে থাকে।

জামের বৈশিষ্ট্যাকৃতি:

সাধারণত জাম ফলের আকৃতি ১ থেকে ২.৫ সেন্টিমিটার লম্বা। জাম একটি বিশেষ্য পদ। তবে জাম ফলের ইংরেজি শব্দ Black plum, তবে জামের ইংরেজী শব্দগুলোর মধ্যে Java plum, Jambul, Malabar plum শব্দগুলো অন্যতম।

জামের নানারকম নামকরণ:

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে জাম পরিচিত। জাম ফল অনেক দেশে অনেক নামের হয়ে থাকে, কোন দেশে জাম্বুল, জাম্ভুল, জাম্বু, আবার কোন দেশে জাম্বুলা, জাভা প্লাম, জামুন, জামব্লাং নামে তো আবার কোন দেশে জাম্বোলান, কালো প্লাম ইত্যাদি। এছাড়াও ড্যামসন প্লাম, ডুহাট প্লাম নামেও অভিহিত করা হয়। তবে জাম্বোলান প্লাম, পর্তুগিজ প্লাম ইত্যাদি। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই জামের নামকরণ বিভিন্ন রকম। যেমন-তেলুগু ভাষায় একে বলা হয় নেরেদু পান্ডু, তামিল ভাষায় নাভা পাজহাম, মালায়ালাম ভাষায় বলে নাভাল পাজহাম, কন্নড় ভাষায় নেরালে হান্নু এবং ফিলিপাইনে এই জামকে বলা হয় ডুহাট। নিম্নে আমরা জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর মধ্যে তার উপকারিতা সম্পর্কে জানবো।

জামের খাদ্য উপকারিতা সমূহ:

টক মিষ্টি সুস্বাদু এই ফলটি সকলেরই কাছে বেশ জনপ্রিয়। জাম ফলের যত অজানা তথ্য বলতে এই ফলটি বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কবিরাজী বা হেকিমী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং চীন-এ এর ব্যবহার প্রচলনটা বেশী।

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার জন্য জামের বীজ ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ জামের বীজ হতে উৎপাদিত রসদ দিয়ে আয়ুর্বেদে বহুমুত্র চিকিৎসাসহ অন্যান্য চিকিৎসা জন্যও ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও ইউনানী এবং চৈনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও এর ব্যবহার রয়েছে।

জাম হজমের সমস্যাসহ জামের বীজ, ছাল ও পাতা দিয়ে তৈরীকৃত ঔষধে উচ্চ রক্তচাপ এবং মাড়ির প্রদাহ সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা করা হয়।

জাম থেকে মদ ও সিরকা তৈরি করা যায়। অর্থাৎ উন্নত দেশগুলোতে জাম ফলটিকে  বিশেষ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বেশ উন্নতমানের মদ তৈরী করা হয়।

বলাইবাহুল যে, জাম ফলে সবথেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি বিদ্যমান, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরী।

আরও পড়ুন: কলার মোচায় যা যা আছে - মহৌষধ কলার মোচা

এ ছাড়াও জাম গাছের গুঁড়ি থেকে যে কাঠ পাওয়া যায় তা দিয়ে দরজা জানালার ফ্রেম আসবাবপত্র তৈরি করা সম্ভব।

যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কম, তাদের জন্য জাম খাওয়াটা খুবই উপকারী। শরীরে জামে থাকা মিনারেলস হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এবং সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে থাকে।

প্রায়ই দেখা যায় যে অনেকে খাবারে রুচি থাকেনা। জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর মধ্যে উপকারী বিষয়টি হচ্ছে, অবশ্যই তারা এ ফলটি খাদ্য তালিকায় সংযোজন করতে পারেন। জামের মধ্যে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি থাকায় তা মুখের রুচি ফেরাতে যথেষ্ট কার্যকরী।

জাম খেলে পেট ঠান্ডা থাকে এবং সর্বোপরি হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। জাম বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়ার মতো সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: কলার থোড় স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ - সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকার

জাম ফলের যত অজানা তথ্য বলতে বিশেষ করে গরমের মৌসুমে ত্বকে সাধারণত বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে জাম খেলে ত্বক রুক্ষ বা শুষ্ক হয়ে যাওয়া, সানবার্ন থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

জামের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকার কারণে ত্বকের জ্বালাপোড়া, ব্রনের সমস্যা, ত্বক মসৃণ ও উজ্জল রাখতে সাহায্য করে।

সাধারণত গরমের আবহাওয়াজনিত কারণে জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি হতে পারে। জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর মাধ্যমে জানা যায় যে, এ সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে জাম খেলে এই রোগগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ জামে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য উপাদান মৌসুমের আবহাওয়া অনুযায়ী শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

জাম খাবারের পূর্বে যে সতর্কতাগুলি খেয়াল রাখতে হবে:

জাম ফল খাবারের আগে বা খাওয়ার সময় অথবা পরে কী কী নিয়মাদি রয়েছে, যেগুলি না মানলে নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে-

১.  খালি পেটে কখনোই জাম খাওয়া উচিত নয়। কারণ খালি পেটে জাম খাওয়ার কারণে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেয়া দেয়, যেমন-বদহজম, অম্বল, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি।

২.  সাধারণত পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন, যদি অন্য কোন খাবারের সঙ্গে জাম খাওয়া উচিত নয়, তাহলে সেটি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। উল্লেখ্য যে, জাম ও হলুদ খুবই মারাত্মক জুড়ি। তাই অবশ্যই কখনোই একসঙ্গে জাম ও হলুদ খাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে জাম খাওয়ার পর হলুদ দিয়ে তৈরিকৃত কোনো খাবার অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে।

৩.  জাম খেলে পিপাসা লাগেই। তবে অবশ্যই জাম খাওয়ার আগে পানি পান করতে চেষ্টা করুন। এতে জামের পুষ্টিগুণ অটুট রাখতে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় থাকবে। একান্তই যদি পানি পান করতে হয় তাহলে অন্তত আধঘণ্টা অপেক্ষা করুন।

আরও পড়ুন: পাসপোর্ট চেকিং করার নিয়ম - পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক

৪.  চিকিৎসকেরা বলেছেন, জাম খাওয়ার পর অবশ্যই দুধ, পনির বা দইয়ের মতো দুগ্ধজাত খাবার যেন খাওয়া না হয়, এতে  শরীরের জন্য বিপদজনক হতে পারে। তাই জাম খাওয়ার পর কখনোই এসব খাবার খাওয়া উচিত নয়।

৫.  কখনোই খালিপেটে জাম খাবেন না। অর্থাৎ জাম খাওয়ার আগে দেখে নিতে হবে যে জামটি পাকা না আধা পাকা। যদি আধাপাকা মনে হয় তাহলে না খাওয়াই ভালো।নখাবার পরপরই ভরাপেটে জাম খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।

৬.  কিডনি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জাম খাওয়া একেবারেই উচিত নয়, এক্ষেত্রে তারা যদি একান্তই জাম খেতে চায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

জাম ফলের যত অজানা তথ্য-পরিশেষে:

সাধারণত গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ গরমকালে অন্যান্য ফলের মত জামও বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু এই অত্যন্ত সুস্বাদু ও মিষ্টি এই ফলটির অনেক তথ্যই আমাদের অজানা। তাই আজকে আমরা জাম ফলের যত অজানা তথ্য সম্পর্কে উপরে বর্ণিত আলোচনা থেকে জেনেছি। একটা বিষয় মনে রাখবেন, শরীরের জন্য ফল খাওয়া অব্যশই ভালো, কিন্তু যখন-তখন ফল খেলেই সেটি যে শরীরের জন্য কোন কাজে আসবে তা কিন্তু নয়। ফল খেতে হবে, তবে তা সময় ভেদে। ছোটবেলায় জাম খেয়ে কার জিহ্বা কতটা কালো হচ্ছে তা বের করে দেখানোটাই ছিল বীরত্ব, কিন্তু যৌবনকালে সেটি হয়না, আবার বার্ধক্য বা মাঝ বয়সের সময়ে তা কিন্তু হয় না।

ফল খাওয়া যে শরীরের জন্য ভালো, তা কিন্তু আমরা সবাই জানি। তবে যে কোন ফল অবশ্যই খালি পেটে না খাওয়াই ভালো, তাতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। যেমন-সকালে নাস্তার পরে অথবা নাস্তার সাথে কিন্তু আমরা পাকা কলা খেয়ে থাকি, আমের সময় আম। আবার বিকালের দিকে পেয়ারা বা জাম এই ফলগুলো খেয়ে থাকি। খেয়াল করেন, আমরা কিন্তু প্রতিটা ফলই ভরা পেটে বা আহারের বেশ কিছু পরেই গ্রহণ করছি। যাইহোক অনেক বেশি বকে ফেললাম, ক্ষমা করবেন। পরিশেষে জাম ফলের যত অজানা তথ্য বিষয়ক আলোচনাটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে তা শেয়ার করবেন। সবশেষে এই দীর্ঘক্ষণ জাম ফলের যত অজানা তথ্য বিষয়ক আর্টিকেলে ‍সম্পৃক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।