মিতব্যয়িতা কী? টাকা বাঁচানোর ১০টি সহজ কৌশল সম্পর্কে জানুন

মিতব্যয়িতা কী? টাকা বাঁচানোর ১০টি সহজ কৌশল সম্পর্কে জানুন এবং মিতব্যয়িতা সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি কি ইত্যাদি বিষয়ে জানতে নিচের বর্ণনাগুলি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

মিতব্যয়িতা-কী-টাকা-বাঁচানোর-১০টি-সহজ-কৌশল-সম্পর্কে=জানুন

মিতব্যয়ী না হলে, স্বল্প আয়ে দ্রব্যমূল্য উর্দ্ধগতির ভাসমান জাহাজে সঠিকভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন কি করে? 

মিতব্যয়িতা কী?

মিতব্যয়িতা কী? বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর এমন হতে পারে, একজন ব্যক্তি তখনই মিতব্যয়ী হয়ে যখন তিনি কোন বস্তু বা অর্থের সঠিক ব্যবহার করতে শিখেন। অর্থাৎ অপচয় এড়িয়ে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু্ই খরচ করা এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। বস্তুত এটি কিন্তু কৃপণতা নয় বরঞ্চ সেই ব্যক্তির সম্পদের সুশৃঙ্খল এবং হিসাব অনুযায়ী ব্যবহার। বাস্তবিক একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে। যেমন-খেয়াল করে দেখবেন, আমাদের চারিপার্শ্বে এমন কিছু ব্যক্তি আছেন, যাদেরকে বড়লোক, অর্থাৎ অর্থ-বিত্ত-ধন-সম্পদ দিয়ে বিচার করি বা ভাবি, তারা কিন্তু খুব কৃপণ হয়ে থাকে এবং সেইসঙ্গে তারা দান-ধ্যান-সাহায্য কম করে থাকেন। আবার খাবার-দাবারের ব্যাপারেও যে তারা প্রতিদিন মাছ-মাংস-পোলাও-কোরমা ইত্যাদি খেয়ে থাকেন তা-ও নয়। মূলত আমরা খারাপটাই বেশি দেখে থাকি, কিন্তু খুব ঠান্ডা মাথায় যুক্তি দিয়ে বিষয়টি ভাবুন তো. তারা যেভাবে তাদের জীবনযাত্রার কার্যক্রম পরিচালিত করছে, আসলেই সেটি খারাপ কি না?

টাকা বাঁচানোর ১০টি সহজ কৌশল সম্পর্কে জানুনঃ

খুব গভীর এবং নিরিবিলি ভাবে মূল বিষয়গুলি চিন্তা করুনঃ

অর্থাৎ নিজের করণীয় সম্পর্কে একটি তালিকা প্রস্তুত করুন এবং ভাবতে থাকুন আপনার কি করা উচিত আর কি করা উচিত না? সবকিছুই একটা কাগজে লিখে ফেলুন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিক চিহ্ন বা দাগ দিন বা নাম্বারিং করুন। এরপর আপনার চিন্তাগুলোকে একটি কাঠামোতে সাজিয়ে ফেলুন। মানে কোনটা আগে হবে, কোনটা পরে হবে ইত্যাদি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, একই সময়ে নাকি আমাদের মাথায় চারটি বিষয়কে রাখতে পারি।

আরও পড়ুনঃ ভিটামিন ডি ও ই একসাথে খাওয়া যাবে কি

আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যতা আনার জন্য কোথায় কোথায় কমবেশি করতে পারবেন তা দেখুন, না হলে প্রত্যেক মাসে আপনাকে ঋণ করতে হবে অথবা গচ্ছিত যে সঞ্চয় আছে তা ভাঙ্গতে হবে। অল্প তেলে রান্না করার অভ্যেস করুন। সুতরাং এভাবে আপনি আপনার মত করে বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করতে পারেন।
উল্লেখ্য, মনোবিজ্ঞানী জর্ডান পিটারসন দেখিয়েছেন যে, সাধারণত শিক্ষার্থীরা একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে তাদের পারফরমেন্স ভালো হয়।

ক্রয়ের আগে অবশ্যই দরদাম যাচাই-বাছাই করুনঃ

প্রতিনিয়তই আমরা নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন মুদিপণ্য বা আসবাবপত্র, পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, কসমেটিক্স ইত্যাদি দ্রব্যগুলি ক্রয় করে থাকি। তবে এখন থেকে যে কোন কিছু কেনার আগে অবশ্যই দরদাম করে কেনার চেষ্টা করুন। যেমন ধরুন- আপনি বিশ্বস্ততা/সম্পর্কের কারণে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোন দোকান থেকেই যাবতীয় আসবাবপত্র, ফার্নিচার ইত্যাদি ক্রয় না আর করাই মঙ্গল। একটু কষ্ট হলেও মূল (মেইন) বাজারে যান, দেখবেন সেখানে হয়তো আপনি অনেক কমে কিনতে পারবেন। এরকম প্রত্যেকটা জিনিসের ক্ষেত্রে জেনে বুঝে কিনলে- আপনার খরচ কম হবে।

যাতায়াতের ব্যাপারে সাশ্রয়ী হওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজঃ

পরিবহন খরচের ব্যাপারে একটু সতর্ক হতে হবে। যেমন যাদের গাড়ি আছে, তাঁদের যে সবসময় নিজের গাড়ি চালিয়েই সব জায়গায় যেতে হবে এমনটি নয়। দরকার হলে গণপরিবহন ব্যবহার করবেন। হয়তো যে দূরত্বে আপনি আগে রিকশায় যেতেন, সেখানে এখন হেঁটে হেঁটে যেতে পারেন। আপনি যখন বাইরে বের হবেন তখন অবশ্যই একসাথে অনেকগুলো কাজ ঠিক করে তারপরে বের হন। এভাবে প্রত্যেকটি বিষয়ই পূর্ব পরিকল্পনা করুন। সুতরাং, এটিও আপনাকে সহায়তা করবে।

ঘরেই খাবার তৈরি করার অভ্যাস করুনঃ

খাবারের ব্যাপারে একটু লাগাম দিন। অর্থাৎ আপনি হয়ত মাসে কয়েকবারই কফি শপে যান, ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে ভালো রেস্টুরেন্টে খান। অনেক সময় রান্নার ঝামেলা বা বাচ্চাদের আবদারের ফলে বাইরে থেকে অর্ডার করে খাবার নিয়ে আসেন। এরকম প্রত্যেকটা জিনিসই এখন একটু মূল্যায়ন করতে শিখুন, বাইরের খাবার কমিয়ে দিন। যে দোকানে দাম অনেক বেশি, সেটাকে এড়িয়ে একটু কম দামি দোকানে যান, খরচ কমে যাবে।

নিত্য ব্যবহার্য্য জিনিসপত্রের প্রতি যত্নশীল হউনঃ

পুরনো কাপড়চোপড় এবং ফার্নিচারের প্রতি যত্নশীল হওয়াটা যৌক্তিক। আপনার যে ফার্নিচারটি আছে সেটা একেবারেই না বদলালেও চলে কি-না, এখন নতুন কাপড় না কিনলেও চলে কি-না। সবথেকে বড় কথা হচ্ছে, যদি একান্তই ফার্নিচার কিনতে হয়, তবে পুরনো অনেক সুন্দর সুন্দর ফার্নিচার কিনতে পাওয়া যায়, সেদিকেও মনোযোগ দিতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ চোখে অঞ্জনির ব্যাথা হলে কী করবেন - অঞ্জনি সারানোর ৬টি উপায় সম্পর্কে জেনে নিন

মানসিক প্রশান্তি অর্জন করতে শিখুনঃ

আমরা অনেক সময় আমাদের বাসায় যে পুরনো (অনেক দিন ধরে পড়ে আছে) কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র, বাসনপত্র ইত্যাদি এমনই অনেক জিনিস আছে যা সচরাচর ব্যবহার করা হয়না, সেগুলো কোন মানুষকে দান করে দিন। দেখবেন এতে করে আপনার উপকার হবে সর্বেোপরি মানসিক প্রশান্তি ঘটবে। মোটকথা এটি একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে।

খরচ কমিয়ে আনন্দ উপভোগঃ

টাকা খরচ না করে কিভাবে আনন্দ করা যায়-সেটা খুঁজুন। আপনার মন খারাপের কারণে আপনি চলে যেতে পারেন কোন রিসোর্টে কিংবা কক্সবাজার বা অন্য কোথাও। আপনি তা করতেই পারেন। কিন্তু আপনাকে ভাবতে হবে আমি টাকা খরচ করবো না, কিন্তু মজা করবো। বাচ্চাদের সবাইকে নিয়ে যদি পার্কে যান, দেখবেন ভালো লাগছে। সকালে উঠে একটু হাঁটতে বের হন, মুক্ত বাতাসে একটু হাঁটুন। আপনার আনন্দ হবে, কিন্তু খরচ কম হবে।

বাড়তি খরচ এড়ানোর চেষ্টা করুনঃ

এমন জিনিস ক্রয় করুন, যা আপনার খুবই দরকার, না কিনলেই নয়। তবে কোন জিনিস কেনার আগে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করুন: যেমন-জিনিসটি আপনি কেন কিনবেন? জিনিসটি কি আপনাকে কিনতেই হবে? জিনিসটি কি না কিনে পারা যায় না? সিদ্ধান্ত নিন, কি করবেন। লক্ষ্য করবেন, এমন অনেক জিনিস আছে যা না কিনলেও চলে। সুতরাং উক্ত খরচগুলো আপনি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। অবশ্যই আপনার একান্ত চাহিদা ও মনোযোগের উপর বিশ্বাস করুন, বাড়তি চাহিদার ওপরে মনোযোগ কমিয়ে দিন। তাতে আপনার খরচ সাশ্রয় হবে।

কিছু কিছু কাজ নিজে শিখে নিতে চেষ্টা করুনঃ

টাকা বাঁচানোর ১০টি সহজ কৌশল সম্পর্কে জানুন ধারায় জীবন যাপন করতে চাইলে আপনাকে কিছু কিছু কাজ শিখে নিতে হবে। যেমন ধরুন- পানির ট্যাপে সমস্যা হয়েছে, লাইট বদলাতে হবে, বাথরুমের সাবান কেস ভেঙ্গে গেছে ইত্যাদি, এ রকম টুকিটাকি অনেক সমস্যা হয়েছে। উক্ত কাজগুলি নিজে শিখে নিলে অযথা বাইরের লোককে বাড়তি টাকা দেয়া লাগছেনা।

আয় বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেনঃ

আপনি বাড়তি আয়ের চেষ্টা করতে পারেন। যেমন ধরুন- এখন যে কাজ করছেন তার বাইরে অতিরিক্ত কিছু কাজ করা যায় কিনা সে বিষয়ে ভাবুন, যারা ছাত্র তারা ফ্রিল্যান্সিং বা নিজের পছন্দ মতো যে কোন কাজ করতে পারেন। যাঁরা গৃহকার্যের মত বিশাল ডিপার্টমেন্ট সামাল দেন, তারা অনলাইনে অনেক কিছু করার মাধ্যমে সংসারে বাড়তি আয় করতে পারেন। নিজের মধ্যে সুপ্ত সম্ভাবনাগুলি খুঁজে দেখুন এবং তার যথাযথ প্রয়োগ করে আপনি ঘরে বসেই অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

মিতব্যয়িতা সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গিঃ

মূলত পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মিতব্যয়িতাকে অবলম্বন করতে এবং অপচয় করতে স্পষ্ট নিষেধ করা হয়েছে। কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা অপচয়কারীদের কখনোই পছন্দ করেন না। তিনি মিতব্যয়িতাকে রিজিক বৃদ্ধি এবং দারিদ্রতাকে দূর করার সাথে সামঞ্জস্য করেছেন। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মে মিতব্যয়িতাকে অর্থ অপচয় এবং কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ হিসেবে উৎসাহিত করা হয়েছে, যা একজন ঈমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

মিতব্যয়িতা কী? টাকা বাঁচানোর ১০টি সহজ কৌশল সম্পর্কে জানুন-পরিশেষেঃ

উপরোক্ত আলোচনায় মিতব্যয়িতা কী? এবং এর সাথে টাকা বাঁচানোর ১০টি সহজ কৌশল সম্পর্কে জানুন বিষয়গুলো আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। কারণ একজন মানুষের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কিন্তু এই মিতব্যয়িতা। অনেক প্রচলিত একটি প্রবাদেই আছে, ‘বিন্দু বিন্দু জল সাগর সমান’। অর্থাৎ হঠাৎ করেই কেউ বড় হয়ে উঠেনা, ধীরে ধীরে এবং প্রাকৃতিক নিয়মেই সবকিছু ঘটে থাকে।

আরও পড়ুনঃ বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও দামি খাবার কোনগুলো

বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা এবং প্রতিযোগতিামূলক বাজারে টিকে থাকাই সবার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মাঝে কেউ চলে যায় উচ্চ শিখরে আর কেউবা চলমান স্রোতধারায় নিজেকে হারিয়ে ফেলে। তাই অবশ্যই নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য সঠিক ভাবনা ভাবতে হবে দিনে দিনেই। তাই একজন মানুষের মিতব্যয়িতা কী? সে বিষয়ে যেমন তাকে বুঝতে হবে ঠিক তেমনি টাকা বাঁচানোর ১০টি সহজ কৌশল সম্পর্কে জানুন বা জানাটাও খুবই জরুরী। যাইহোক, মিতব্যয়িতা কী? এবং টাকা বাঁচানোর ১০টি সহজ কৌশল সম্পর্কে জানুন বিষয়ে আপনার কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। পরিশেষে আজকের আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি এবং সম্পৃক্ততার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।