কলার মোচায় যা যা আছে - মহৌষধ কলার মোচা
কলার মোচায় যা যা আছে অর্থাৎ কলার মোচার উপকারিতা, গুণাবলী, কলার মোচা রান্নার রেসিপি ইত্যাদি নানা গুণাবলী বিদ্যমান আর এজন্য মহৌষধ কলার মোচা বলা হয়ে থাকে। তাই সবকিছু জানতে নিচের লেখাগুলো পড়ুন।
আসলে কলার মোচা একটি সম্পূর্ণব প্রাকৃতিক খাদ্য, যা শরীরের আয়রন সহ বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব পূরণ করে থাকে।
মহৌষধ কলার মোচা
কলার মোচার গুণাবলীসমূহ
কলার মোচার উপকারিতা
কলার মোচার ইংরেজি নাম কি?
কলার মোচা রন্ধন প্রণালী
কলার মোচায় যা যা আছে - মহৌষধ কলার মোচা-শেষকথা
কলার মোচায় যা যা আছেঃ
মহৌষধ কলার মোচাঃ
কলার মোচার গুণাবলীসমূহঃ
কলার মোচার গুণের তালিকাও কিন্তু কম দীর্ঘ নয়। কলার মধ্যে থাকা সব পুষ্টিগুণই বিদ্যমান কলার মোচাতেও। অর্থাৎ এতে থাকে মেন্থলের নির্যাস, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও থাকে উপকারী ফেনলিক অ্যাসিড। তাই নিয়মিত কলার মোচা খেলে রক্তে ফ্রি র্যাডিক্যালের সমস্যা কমে যায় এবং চেহারায় বয়সের ছাপ পড়া রুখে দেয়। এ ছাড়াও মোচা খেলে অ্যালঝাইমার্স ও পারকিনসন্সের ঝুঁকি অনেকটাই কমে থাকে। কলার মোচা যদি হলুদ, গোলমরিচের গুঁড়ো এবং জিরা দিয়ে মোচা সেদ্ধ করে খাওয়া যায়, তাহরে জরায়ু সুস্থ রাখে।
কলার মোচার উপকারিতাঃ
কলার মোচা অত্যন্ত উপকারী এবং সর্বেোপরি এটি বেশ সহজলভ্য। আমাদের দেশে মোটামুটি বিভিন্ন বাজারে, ভ্যানে করে বিক্রি হতে দেখা যায়। কলার মোচার মধ্যে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা হাড়ের গঠনে কাজ করে। গর্ভবতী নারীদের জন্য মোচা অনেক বেশি উপকারী। শুধুমাত্র আমাদের দেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। চলুন জেনে নেয়া যাক, কলার মোচায় যা যা আছে - মহৌষধ কলার মোচা এর বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে-
আরও পড়ুনঃ গিমা শাক এর উপকারিতা ও ঔষধি গুণ
পিরিয়ড নিয়মিতকরণে সাহায্য করেঃ যে সমস্ত নারী অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যায় ভোগেন, তারা অবশ্যই এই চক্র ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত কলার মোচা খেতে পারেন । কলার মোচায় থাকা বিভিন্ন উপকারী উপাদান, পিরিয়ড চলাকালীন ব্যথা কমায় এবং সেইসঙ্গে এটি প্রোজেস্টেরন হরমোন উত্পাদন বৃদ্ধি করে রক্তস্বল্পতা কমিয়ে থাকে।
ওভারিয়ান সিন্ড্রোম সমস্যায় কার্যকরীঃ বর্তমানে অনেক নারী আছেন যাদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম বা পিসিওএস হয়ে থাকে। এ ধরনের সমস্যায় সন্তান ধারণসহ স্বাভাবিক অনেক কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কেউ যদি নিয়মিত কলার মোচা খেতে পারে, তাহলে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম সারাতে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কলার মোচা কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ফোলাভাব ইত্যাদিও দূর করে।
মন ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ অনেকেই অনেক সময় বিভিন্ন বিষন্নতা বা হতাশায় ভুগতে থাকেন। কলার মোচার মধ্যে আছে ম্যাগনেশিয়াম, যা হতাশা, উদ্বেগ ইত্যাদি কমিয়ে আনতে সাহায্য করে, বিষন্নতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে এবং সর্বেোপরি এটি মন ভালো রাখতেও বিশাল ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডায়াবেটিসের জন্য উপকারীঃ কলার মোচায় থাকা ফেনলিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য উপকারী সবজি হতে পারে কলার মোচা।
আরও পড়ুনঃ সারা শরীর ব্যথা করে কেন - সারা শরীর ব্যথা হলে করনীয়
জটিল রোগে প্রতিরোধ করেঃ কলার মোচার ফেনোলিক অ্যাসিড, ট্যানিন, ফ্লেভানয়েড ও নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, এগুলি শরীরের ফ্রি-র্যাডিকেল ধ্বংস করে এবং এর ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধ সহজ হয়। সেইসঙ্গে হৃৎপিণ্ডও ভালো থাকে।
হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ঃ কলার মোচার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় এটি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়। অর্থাৎ নিয়মিত কলার মোচা খেতে পারলে তা পরিপাকতন্ত্রজনিত সকল সমস্যা দূর হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা খুব অনায়াসেই সমাধান করা সম্ভবপর হয়।
ত্বকের গঠন উন্নতঃ কলার মোচা নিয়মিত খেলে অকালে বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া বা চেহারায় বয়সের ছাপ পড়া ইত্যাদি নিরোধ হয়ে থাকে এবং ত্বকের গঠন উন্নত করে বলিরেখা কমায়। সাধারণত যাদের ত্বকজনিত সমস্যার মধ্যে আবর্তিত থাকে, তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ও গুরুত্বপূর্ণ এই কলার মোচা।
চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে: মূলত কলার মোচায় ভিটামিন এ থাকায় তা চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়াও নিয়মিত কলার মোচা খেতে পারলে তা রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
দাঁত ও হাড় মজবুত করে: মূলত কলার মোচাতে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো উপাদান, যা শরীরের হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সহায়তা করে থাকে। আর যদিও আমরা জানি যে, হাড় এবং দাঁতের জন্য ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি।
রক্ত স্বল্পতা কমাতে সহায়তা করে: কলার মোচায় উচ্চ পরিমাণে আয়রন থাকায় তা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। সাধারণত যাদের রক্ত স্বল্পতাজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য খুবই উপকারী কলার মোচা। সবথেকে বড় বিষয় হলো এটি সস্তায় অনেক ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি প্রাকৃতিক খাবার।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা: আসলে কলার মোচাতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকায় তা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাধারণত যাদের উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত কলার মোচা খাওয়া যেতে পারে।
কলার মোচার ইংরেজি নাম কি?
চলতি ইংরেজিতে কলা গাছের ফুল বা মোচাকে অনেকেই বলে থাকেন Banana Flower। এটি পুরোপুরি ভুল না হলেও কলার মোচার ইংরেজি নাম হল প্লান্টেইন ফ্লাওয়ার (Plantain Flower)।
কলার মোচা রন্ধন প্রণালীঃ
আসলে কলার মোচা পুষ্টিগুণে ভরা, খেতেও ভীষণ সুস্বাদু। কলার মোচার বিভিন্ন সব চমৎকার পদ তৈরি করে তা রান্নার স্বাদে আনা যায় ভিন্ন এক মাত্রা। তবে কলার মোচা দিয়ে তৈরি করা যায় চপ, মোচার ঘণ্ট, কালিয়া, বড়া, ভাজা, মোচা ও নারিকেল ভর্তা, শুঁটকি দিয়ে মোচা ভুনা, চিংড়ি দিয়ে মোচার ঘন্ট, রুই মাছ দিয়ে মোচার তরকারি, মোচার পোলাও ইত্যাদি। আসলে গরম ভাতের সঙ্গে মোচার যেকোনো পদ খেতেও বেশ সুস্বাদু। তবে কলার মোচা প্রক্রিয়া করাটা বেশ ঝামেলা পূর্ণ এবং সময় সাপেক্ষ বিষয়। আর শুধুমাত্র এ কারণেই অনেকেই মোচার কোন পদ বা মোচা রান্না করতে দ্বিধা করে থাকে। তবে প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হলেই বাকী কাজগুলো খুব সহজেই সম্পন্ন হয়ে ওঠে। আর আজকাল তো সোশ্যাল মিডিয়াতে খুব সহজেই যে কোন রান্নার বিষয়ে পরামর্শ এবং কিভাবে রান্না করা যাবে, তার সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো খুব অনায়াসেই দেখে নেয়া যেতে পারে।
কলার মোচায় যা যা আছে - মহৌষধ কলার মোচা-শেষকথাঃ
মূলত আমাদের সকরের নিকট কলা একটি অতি পরিচিত, সস্বাদু ও জনপ্রিয় ফল। আজকের কলার মোচায় যা যা আছে এবং মহৌষধ কলার মোচা বিষয়ক আর্টিকেল থেকে আপনারা যা যা জানতে পারলেন, তা হলো- কলার মোচার ঔষধি গুণাবলী এবং নানান উপকারিতা, রন্ধন প্রণালীসহ এর নামকরণ সম্বন্ধে। আশাকরি বিষয়গুলো জানা থাকলে আপনাদের তা উপকারে আসবে। আসলে প্রকৃতি সৃষ্ট এমন অনেক খাদ্য আছে, যা কালের আবর্তে দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে, অথচ একসময় এই হারিয়ে যাওয়া সবজিগুলোই ছিল সাধারণ মানুষের অত্যন্ত প্রিয় খাদ্য।
আরও পড়ুনঃ কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার
পৃথিবীতে এই একটি মাত্র ফল, যার কোনকিছুই ফেলা হয়না। অর্থাৎ কলা আমরা খেয়ে থাকি, কলা হওয়ার আগে যে কাণ্ডটি হয় তা হলো মোচা। এই মোচাও আমরা খেয়ে থাকি। এমনকি কলার গাছটি কেটেও আমরা খেয়ে থাকি এবং গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকি।
যাইহোক, কলার মোচায় যা যা আছে তা যে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত তা এর উপকারিতা ও গুণাবলী দেখলেই খুব সহজেই অনুমেয় হয়। আগে রাজা-বাদশাহের আমলে এই কলার মোচাকে বলা হতো রাজকীয় খাবার। শোনা যায়, আগেকার যুগে রাজ-বাদশাহরা নাকি তাদের খাবারে কলার মোচার কোন একটি রেসিপি রাখতেন। তাই আজকের কলার মোচায় যা যা আছে - মহৌষধ কলার মোচা বিষয়ক আলোচনাটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই তা শেয়ার করবেন এবং সেইসঙ্গে দীর্ঘক্ষণ উপরোক্ত বিষয়ক আলোচনায় সম্পৃক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
 

 
   
 
 
 
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url