কলার থোড় স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ - সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকার

আমাদের অনেকের জন্য কলার থোড় স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ এবং এটি সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকার পাওয়া যায়। তাই আজকের আলোচনায় কলা (Kola)'র থোড়ের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, বিভিন্ন রান্নার রেসিপিসহ নানা বিষয়ে জানতে নিচের লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

কলার-থোড়-স্বাস্থ্যের-জন্য-আশীর্বাদ-সস্তায়-অধিক-স্বাস্থ্যগত-উপকার

আমরা অনেকেই এই কলার কাণ্ডকে বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেই। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, এই কলার থোড় স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদের চেয়ে কম কিছু নয়।

পেজ সূচিপত্র: কলার থোড় স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ - সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকার

কলার থোড় স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ
সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকার
কলার থোড়ের পুষ্টিগুণ কি কি?
কলার থোড়কে যেভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে?
কলার থোড় রান্নার রেসিপি
কলার থোড় স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ - সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকার-পরিশেষে

কলার থোড় স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদঃ

আসলে কলার থোড় বা কাইজাল যে স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ, তা তার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ বিচার করলেই আমাদের বদ্ধমূল ধারণা পরিস্কার হবে। নিম্নে এর নানাবিধ স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণাবলী বর্ণিত হলো:

হৃদস্বাস্থ্যঃ কলার থোড়ে থাকা ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। অর্থাৎ নিয়মিত খাদ্যাভাসে কলার থোড় রাখলে তা হৃদরোগের জন্য তা সুফল বয়ে আনে। মোট কথা প্রাকৃতিক উৎসসমূহ থেকেই আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সংগ্রহ করতে হবে।

ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে সহায়তাঃ আসলে লার থোড়/কাইজাল নিয়মিত খেতে পারলে তা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যার সাথে সমন্বয় করে তা শরীরকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ কানে যে সমস্যাগুলো অল্প বয়সে হতে পারে - সমাধান লুকিয়ে আছে এইসব খাবারে

প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধিঃ কলার থোড় এর মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন রোগ ও অসুস্থতার বিরুদ্ধে আমাদেরকে সুরক্ষিত রাখে। মূলত কলার থোড়ের মধ্যে থাকা নানান উপকারিতাসমূহ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ কলার থোড়ে থাকা ফাইবার ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে থাকে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে অনুসন্ধান করে ওজন বাড়ানোর সাথে সম্পর্কিত উপকারিতা হিসেবে তা নির্বাচন করা যেতে পারে। এ কারণে নিয়মিত খাদ্যাভাসে কলার থোড়ের যে কোন রেসিপি রাখা যেতে পারে।

এ ছাড়াও কলার থোড় এর রসের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে গলব্লাডার স্টোন থেকে ঝুঁকি এড়ানো অনেকটাই সম্ভব। আবার কলার থোড়ের রসের সঙ্গে যদি এলাচ মিশিয়ে খাওয়া যায়, তা হলে মূত্রনালির অনেক বড় রোগ থেকে নির্মূল করে। 

কলার থোড় স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে বুক জ্বালা পোড়া, পেট ব্যথা, পেটে অস্বস্তিভাব, রক্ত বা কোষে জমে থাকা চর্বি নিঃসরণ করতে কলার থোড়ের জুরি নেই। বলাবাহুল্য, যারা দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন বা ওজন কমাতে চাইছেন তারা সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকার হিসেবে ডায়েট লিস্টে এ খাবার নিশ্চিন্তে রাখতে পারেন।

সর্বেোপরি, কলার থোরে থাকা ভিটামিন বি ৬ এবং আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়। পাশাপাশি কমায় কোলেস্টরলের মাত্রাও।

সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকারঃ

মূলত কলার থোড় দিয়ে বিভিন্ন পদের রান্না একটি প্রাচীন পদ্ধতি যা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি আমাদের জীবনে অনেক পুরানো সংস্কৃতি। আর সবথেকে বড় বিষয় হলো কলার থোড় বা কাইজাল আমাদের দেশে অত্যন্ত সস্তা একটি সবজি হলেও, অনেকেই তাদের রন্ধন প্রণালীতে এটি যুক্ত করতে চাইনা। সাধারণত বাজারে বা ভ্যানে করে এবং অনেক অলিতে-গলিতে কিন্তু এই কলার থোড় বা কাইজাল পাওয়া যায়। তবে এখনও গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত মানুষ এই কাইজাল দিয়ে নানা পদ তৈরি করে থাকে। আর এই কাইজাল বা কলার থোড়ের মধ্যে যে অসাধারণ সব পুষ্টিগুণ রয়েছে, তাতো উপরে বর্ণিত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ আলোচনা থেকেই আপনারা জানতে পেরেছেন। মোট কথা সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকার পেতে হলে অবশ্যই কলার থোড় বা কাইজাল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। বর্তমানে বাজারে সবজির মূল্যের যে উর্দ্ধগতি তাতে নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা নির্বাহ করাটা অত্যন্ত দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। তাই গরিবের খাদ্য হিসেবে কলার মোচা, কলার থোড় ইত্যাদি সস্তা প্রকারের সবজিগুলিই ক্রয় করা সম্ভব।

কলার থোড়ের পুষ্টিগুণ কি কি?

পুষ্টিগুণঃ কলার থোড় মধ্যে থাকা ভিটামিন, খনিজ, আমিনো এসিড, ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টিতত্ত্বের সমৃদ্ধ উৎস। এই উপাদানগুলি সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মোট কথা সস্তায় এবং সীমিত অর্থের বিনিময়ে উপরোক্ত পুষ্টিগুণগুলি আমরা অনায়াসেই খাদ্যাভাসে রাখতে পারি।

ফোলিক অ্যাসিড (Folic Acid)ঃ ফোলিক অ্যাসিড গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর মস্তিষ্কের নিবন্ধনে সহায়ক হতে পারে এবং গর্ভকালীন বিকালে মায়ের স্বাস্থ্য বান্ধব। আসলে একজন গর্ভবতী নারীর নানারকম ভিটামিনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই কলার থোড়ের রেসিপি রাখা যেতে পারে।

পটাসিয়ামঃ কলার থোড় পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস। আর আমরা জানি যে, শরীরে পটাশিয়াম আমাদের হৃদরোগ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং শরীরের প্রতিস্থাপন সাহায্য করতে পারে। তাই অবশ্যই নিয়মিত খাদ্যাভাসে কলার থোড় রাখাটা যুক্তিযুক্ত এবং প্রয়োজনীয়।

ভিটামিন সিঃ এই ভিটামিন স্বাস্থ্যকর গাঠিতে রক্ত ও প্রোটিন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত কলার থোড় আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখলে তা আমাদের প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে পুনরুদ্ধার করে।

আরও পড়ুনঃ হাটুঁর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয়-হাটুঁরে জয়েন্টে ব্যথা ঔষধের নাম

ফাইবারঃ কলার থোড়ে রয়েছে অনেক পরিমাণে ফাইবার, যা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কোলন স্বাস্থ্য উন্নত করে। যদিও আমরা জানি যে, ফাইবার বা আঁশ আমাদের শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করতে সহায়তা করে থাকে, তবে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত কথার থোড় খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে।

প্রোটিনঃ কলার থোড় প্রোটিনের ভালো উৎস হিসাবে পরিচিত। যা শরীরের গঠন ও পুনর্নিমাণ কার্যক্রমে সহায়ক। শরীর নামক যন্ত্রটির নানা ধরনের উপাদানের প্রয়োজন পড়ে। আর এক্ষেত্রে আমরা খাদ্য তালিকায় কলার থোড় রাখতে পারি, যা প্রোটিনের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করে থাকে।

আমিনো এসিডঃ কলার থোড় আমিনো এসিডের একটি ভালো উৎস। এটি শরীরের সুস্থ ও মজবুত জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়। অর্থাৎ কলার থোড়ের পুষ্টিগুণগুলির মধ্য থেকে আমাদের শরীরে খুব অনায়াসেই অ্যামিনো এসিড গ্রহণ করতে পারে।

কলার থোড়কে যেভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে?

ভিন্ন ভিন্ন খাবারের সাথে সেবনঃ কলার থোড় বিভিন্ন ধরণের খাবারের উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যেমন: ফল সালাদ, মিষ্টি, চিপস, চাট, আচার, ভর্তা, চা, জেলি, হালুয়া, মিষ্টি নিরামিষ এবং অন্যান্য খাবারে।

কোকটেল এবং জুসঃ কলার থোড় প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তা ককটেল এবং জুসের তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি আম, লেবু, আমের স্লাইস, মিষ্টি সুরেচা, আইসক্রিম ইত্যাদির সাথে মিলিয়ে সুন্দর সুন্দর কোকটেল বা জুস তৈরিতে অত্যন্ত উপকারী হিসেবে এটি নির্বাচন করা যেতে পারে।

ডেজার্টঃ কলার থোড় প্রজাতি প্রসিদ্ধ ডেজার্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ কলার থোড় থেকে তৈরি হয়ে থাকে বিভিন্ন কেক, পাই, টার্ট, পুডিং, ফ্রাই, মিষ্টি এবং অন্যান্য ডেজার্টের উপাদানসমূহ। যা সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। 

আরও পড়ুনঃ বেগুনে পোকা আছে কি না, তা বুঝবেন যেভাবে

চাউডারিঃ কলার থোড় চাউডারির সাথে মিশে ব্যবহৃত হতে পারে, যাতে চাউডারির স্বাদ ও গুনগত মান উন্নত হয়। সর্বোপরি তা, চাউডারির সাথে মিশ্রিতের মাধ্যমে  এর স্বাদ এবং গুণগতমান বৃদ্ধিতে কলার থোড় অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

মেলা বা উৎসবেঃ বর্তমানে ফল জাতীয় অনেক রকমের কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সুতরাং এ ধরণের কার্যক্রমগুলি বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের ফল উৎসব বা মেলায় কলার থোড় ব্যবহার হয়। যেমন ফল প্রদর্শনী, ফল পরিক্রমা, বনভোজন ইত্যাদি। 

কলার থোড় রান্নার রেসিপিঃ

মূলত কলার থোড় দিয়ে বিভিন্ন পদ রান্না করা হয়ে থাকে, যার মধ্যে থোড় বা কাইজাল ভাজি, লাবড়াতে কলার থোড়ের ব্যবহার, কলার থোড়ের ঘণ্ট, কলার থোড়ের বড়া, কলার থোড়ের তরকারি, কলার থোড়ের চচ্চড়ি ইত্যাদি। তবে এই ধরণের প্রতিটি পদ রান্নার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রেসিপি আছে, যা সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে তা নিবিড়ভাবে দেখে রান্না করা যেতে পারে।

কলার থোড় স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ - সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকার-পরিশেষেঃ

চিকিৎসকরা বলছেন, বৃক্ক বা কিডনিতে পাথর জমতে বাঁধা দিতে পারে কলার থোর এবং মোচা। তাছাড়া যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম তাদের অবশ্যই কলার থোর খাওয়া উচিত। এক কথায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং শরীরের জন্য তা ভীষণ উপকারী। সুতরাং কলার থোড় স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ - সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকার তা আমরা আমাদের দৈনন্দিন রসনাবিলাসে নির্দ্বিধায় তা যুক্ত করতে পারি। এককথায় বলা যায় অল্প পুঁজি অধিক লাভ বা সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকার। এ ছাড়াও কলার থোড়ের আবরণ দিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন সুতাও তৈরি হয়ে থাকে।

তাই, আজকের আলোচনার বিষয়টি যদি আপনার নিকট গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়, তাহলে তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন এবং উপরোক্ত বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য বা পরামর্শ প্রদান করতে চান, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন। কলার থোড় এর উপকারিতা ও ঔষধি গুণ সম্পর্কিত প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য প্রকাশিত, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসাপত্র সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনি আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করবেন। আলোচনাটি যদি গ্রহণযোগ্য এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় এবং উপরোক্ত বিষয় থেকে যদি কিছু জানতে পারেন, তাহলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।