বেগুনে পোকা আছে কি না, তা বুঝবেন যেভাবে

সাধারণত বেগুনে পোকা আছে কি না, তা বুঝবেন যেভাবে এবং বেগুনের উপকারিতা, অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বেগুন রান্নার বিভিন্ন রেসিপিসহ নানা বিষয়ে জানতে নিচের লেখাটি পড়তে হবে।
বেগুনে-পোকা-আছে-কি-না-তা-বুঝবেন-যেভাবে
সাধারণত বাজারে বেগুন কিনতে গিয়ে অনেক সময় দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হয়, বেগুনে কি পোকা হবে বা কোন বেগুনটি পোকাবিহীন ইত্যাদি।

পেজ সূচিপত্রঃ বেগুনে পোকা আছে কি না, তা বুঝবেন যেভাবে (How to tell if eggplant has insects or not)

বেগুনে পোকা আছে কি না, তা বুঝবেন যেভাবে
বেগুনের নানান পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
বেগুনের অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বেগুন রান্নার রেসিপিসমূহ
বেগুনে পোকা আছে কি না, তা বুঝবেন যেভাবে-পরিশেষে

বেগুনে পোকা আছে কি না, তা বুঝবেন যেভাবেঃ

ভালো করে দেখে নিতে হবেঃ
বিশেষজ্ঞদের মতামতানুযাযী, বাজারে বেগুন কিনতে গেলে প্রথম কাজ হলো ভালো করে দেখে নেয়া। অর্থাৎ বেগুনের গায়ে কোন ছিদ্র বা দাগ আছে কি না? অর্থাৎ বেগুনের চামড়া কি একেবারে মসৃণ না দাগ আছে? যদি দাগ ছাড়া হয়, তাহলে অবশ্যই তা ক্রয় করতে পারেন, কেননা দাগ ছাড়া বেগুনে পোকামাকড় খাকার সম্ভাবনা অনেকটা কম।

আরও পড়ুনঃ শুটকি মাছ শরীরের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর?

হালকা টিপে দেখাঃ
বেগুন কিনতে গেলে হালকা করে একটু চেপে দেখুন। যদি আপনার হাত সামান্য ভিতরে ঢুকে যায়, তাহলে ধরে নিবেন তাতে বিচি কম হবে এবং বেগুনটি নরম হবে। কিন্তু বেগুন টিপতে গিয়ে দেখেন যে, তা শক্ত লাগছে, তাহলে থরেই নেবেন সেই বেগুনে বেশি বীজ আছে এবং সম্ভব হলে পোকামাকড়ও থাকতে পারে।

হালকা ওজনের বেগুন ক্রয় করুনঃ
অর্থাৎ বাজার থেকে বেগুন কেনার সময় যে বেগুনগুলো একটু হালকা মনে হবে,সেই বেগুনগুলোই ক্রয় করুন। কারণ ভারী বেগুনে বেশি বীজ বা পচা থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অর্থাৎ মনে রাখবেন, যে বেগুনগুলো বড় হলেও ওজনে হালকা, ঠিক সেই বেগুনগুলোই ক্রয় করুন। কারণ এ ধরণের বেগুনগুলো টাটকা বা কম বীজযুক্ত এবং খেতে সুস্বাদু হয়ে থাকে।

বেগুনের চামড়া খেয়াল করুনঃ
বেগুন ক্রয়ের সময় খেয়াল করুন বেগুনের বাইরের চামড়া অর্থাৎ চোকার দিকে। সাধারণত বেগুনের চামড়া বা চোকায় যদি ভাঁজ পড়ে থাকে অথবা সেটি দেখে শুকনো ও নিস্তেজ মনে হয়, তাহলে বুঝবেন যে, সেই বেগুনটি পুরনো এবং অনেকদিন আগেই তা তোলা হয়েছে।

বেগুনের রঙ যাচাইঃ
বেগুন কিনতে হলে অবশ্যই বেগুনের গায়ের রঙ খেয়াল করবেন। অর্থাৎ যদি দেখেন, বেগুনের রং যদি হালকা বা ফিকে মনে হয়, তাহলে সেটি টাটকা নয়। আসলে যে বেগুনের গায়ের রং গাঢ়, চকচকে এবং মসৃণ হয়, তাহলে সেই বেগুন অনায়াসে ক্রয় করতে পারেন। কারণ এমন ধরণের বেগুনে পচন বা পোকা থাকার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।

বেগুনের বোঁটা বা ডাঁটা দেখাঃ
মূলত বেগুন কেনার সময় তার ডাঁটা বা বোঁটা দেখাও জরুরি। অর্থাৎ বেগুন যে কোন সাইজের হোক না কেন, তার ডাটা যদি সবুজ হয়, তাহলে ধরে নিবেন সেই বেগুনটি টাটকা। কিন্তু যদি দেখেন, বেগুনের ডাঁটা বা বোঁটা কালচে বা শুকনা দেখায়, তাহলে অবশ্যই তা কিনবেন না। আসলে ব্যবসায়ীরা অনেক সময় ৩-৪ দিনের পুরোনো বেগুনও বিক্রি করে থাকেন, যাতে পোকার ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি।

বেগুনের সাইজ খেয়াল করুনঃ
বেগুন ক্রয়ের সময় অবশ্যই বেগুনের সাইজ নির্ধারণ করুন। সাধারণত বড় বেগুনে অনেক সময় বেশি বীজ ও পোকার সম্ভাবনা থাকে, তাই ছোট সাইজের বেগুনই বেছে নিন। কারণ ছোট বেগুনগুলি বেশির ভাগই টাটকা হয় এবং এর তরকারি খেতেও সুস্বাদু লাগে। তাই বেগুন ক্রয়ের সময় অবশ্যই এর সাইজের ওপর বিশেষ নজর দিন।

বেগুনের নানান পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাঃ

বেগুনে রয়েছে অসাধারণ সব পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা। নাম বে-গু-ন হলেও কিন্তু এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যেমন-

বেগুনে রয়েছে ফাইবার, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, বি, ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমূহ এর মতো উপাদান। যার কারণে, বেগুন শরীরের সুস্থ্যতার জন্য ভীষণ উপকারী ও সহায়ক একটি সবজি।

মূলত বেগুনে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট জ্ঞানীয় দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ছাড়াও বেগুনে ফ্রি র‌্যাডিকেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সহ এটি মস্তিস্ককে নানান রোগ এবং টক্সিন থেকে মুক্ত করতেও প্রভূত সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ সজনে পাতার ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা, ভিটামিন এবং সতর্কতাগুলি কি কি?

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেগুন অত্যন্ত সহায়ক ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। অর্থাৎ বেগুনের উচ্চ ফাইবার ও কম দ্রবণীয় কার্বোহাইড্রেট উপাদান রক্তের গ্লুকোজ ও ইনসুলিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে থাকে।

আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতেও বেগুনের জুরি মেলা ভার। কারণ এতে ফাইবারগুলি পরিপাকতন্ত্রের খাদ্য প্রক্রিয়াজাৎকরণে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ পাকস্থলিতে পরিপাক রসের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের হজমশক্তিকে উন্নত করে থাকে।

বেগুনের অসাধারণ গুণের কারণে তা ঋতুস্রাবের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করে থাকে। সাধারণত যেসব নারীরা নিয়মিত শাক-সবজি খেয়ে এবং বেগুনও নিয়মিত খেয়ে থাকেন, তাদের ঋতুস্রাবের সমস্যাগুলি তুলনামূলক ভাবে কম হতে দেখা যায়।

বেগুন আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে থাকে। তবে তেলে ভাজা বেগুন কিন্তু আমাদের শারীরিক উপকারে সহায়ক হয়ে ওঠেনা। তাই ভাজা বেগুন বাদে অন্যান্য প্রক্রিয়ায় বেগুন খাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন-বেগুন ভর্তা, বেগুনের তরকারি ইত্যাদি।

বেগুনে রিব্লোফ্ল্যাভিন নামক উপাদান থাকায় তা মুখ ও ঠোঁটের ঘা সারতে সহায়তা করে থাকে। সাধারণত জ্বর হওয়ার পরে মুখ ও ঠোঁটের কোণে ঘা বা জিহ্বার ঘা ইত্যাদি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে নিয়মিত বেগুন খাওয়ার ফলে শরীরে জ্বর জ্বর ভাব বা ঠোঁটের বা জিহ্বার ঘা সারাতে বা প্রতিরোধ করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

বেগুনের অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ

কাঁচা বেগুন একেবারেই খাওয়া যাবে না, কারণ তাতে পরিপাকতন্ত্রের নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আবার যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের একেবারেই বেগুন খাওয়া ভীষণ ক্ষতিকর। সাধারণত যারা আর্থ্রাইটিস বা সন্ধিপ্রদাহে ভুগছেন, তাদের বেগুন খাওয়া যাবেনা বা তাদের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়াও বেগুন অনেকের গলদেশ ফোলা, চুলকানি, বমি বমি ভাব হওয়া এবং সর্বোপরি চামড়ার ওপর ফুসকুড়ির সমস্যাও তৈরি হতে পারে। তাই বেগুন খাওয়ার পূর্বে নিজের শারীরিক সমস্যাগুলোর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই বেগুন খেতে পারেন।

বেগুন রান্নার রেসিপিসমূহঃ

বেগুন নানাভাবে এবং বিভিন্ন তরকারির মধ্যে দিয়ে রান্না করা যেতে পারে। তবে অনেকের কাছে বেশি প্রিয় হচ্ছে বেগুন ভাজা। এছাড়াও অনেকে সেদ্ধ, বেগুন পোড়া, যে কোন সবজির সাথে বেগুনের ঝোল, ইলিশ মাছের সাথে বেগুনের ঝোল বা সরষাপাতুড়ি, বেগুনের সরিষাপাতুড়ি, লাবড়ায় বেগুনের ব্যবহার, বেগুন দিয়ে বেগুনি, শাকের মধ্যে বেগুন দিয়ে রান্না ইত্যাদি। এককথায় বেগুন দিয়ে সব পদই খুব ভালোভাবে রান্না করা যায়। আসলে বেগুন এমন একটি সবজি যা, যে কোন তরকারিতে মিক্সড করা যেতে পারে। বিশেষ রমজান মাসে বেগুন দিয়ে বেগুনি একটি অত্যন্ত চমকপ্রদ আইটেম। 

বেগুনে পোকা আছে কি না, তা বুঝবেন যেভাবে-পরিশেষেঃ

প্রতিদিনের তরকারিতে বেগুন একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ সবজি। কিন্তু এই বেগুন যদি ফ্রেশ না হয়, অর্থাৎ পোকা থাকে, তাহলে তা কেটে-কুটে বাদ দিয়ে কিছুই থাকেনা। আজকের আর্টিকেলে বেগুনে পোকা আছে কি না এবং তা বুঝবেন যেভাবে বিষয়টি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। আসলে বাজারে সবজি কিনতে গেলে অনেক সময়ই বোঝা যায় না টাটকা কি বাশি, ঠিক তেমনই একটু তাড়াহুড়োর মধ্যে অনেক কিছুই ওভারলুক হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ বিশ্বের এই ১০ স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট আকর্ষণীয়

তাই, বেগুনে পোকা আছে কি না, তা বুঝবেন যেভাবে বিষয়ক আলোচনা থেকে আপনি খুব অনায়াসেই উপরোক্ত পরামর্শগুলি বাজারে সবজি কেনার সময় প্রয়োগ করতে পারেন। যাইহোক, বেগুনে পোকা আছে কি না এবং তা বুঝবেন যেভাবে আলোচনায় আপনার যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। এ ছাড়াও উপরোক্ত পরামর্শগুলি আপনার নিকট গ্রহণযোগ্য বা যুক্তিযুক্ত মনে হয়, তাহলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। পরিশেষে বেগুনে পোকা আছে কি না ছাড়াও তা বুঝবেন যেভাবে বিষয়ে আপনার দীর্ঘক্ষণ সম্পৃক্ততা ও অন্তর্ভূক্ত থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।