বিশ্বের এই ১০ স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট আকর্ষণীয়

বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে অসাধারণ সব জায়গা আছে.যার মধ্যে বিশ্বের এই ১০ স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট আকর্ষণীয়
বিশ্বের-এই-১০-স্থান-ভ্রমণ-পিপাসুদের-নিকট-আকর্ষণীয়
ইউনেস্কো কর্তৃক এখন পর্যন্ত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ১২০০টি স্থান স্বীকৃতি পেয়েছে, কিন্তু ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট আকর্ষণীয় বিশ্বের এই ১০ স্থান, যা সবাইকে মুগ্ধ করে।

পেজ সূচিপত্র: বিশ্বের এই ১০ স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট আকর্ষণীয় (These 10 places in the world are attractive to travel enthusiasts)
মাচুপিচু, পেরু
তাজমহল, ভারত
অ্যাংকর ওয়াট, কম্বোডিয়া
দোলোমিতেস পর্বতমালা, ইতালি
ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক, যুক্তরাষ্ট্র
গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ, ইকুয়েডর
প্রাগের ওল্ড টাউন স্কয়ার, চেক প্রজাতন্ত্র
বরোবুদুর, ইন্দোনেশিয়া
ব্রুজেস, বেলজিয়াম
কাপাডোসিয়া, তুরস্ক
বিশ্বের এই ১০ স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট আকর্ষণীয়-পরিশেষে

বিশ্বের আকর্ষণীয় ১০টি স্থান:

চলুন আকর্ষণীয় এই ১০ স্থানগুলি সম্পর্কে জেনে নিই, যা পিপাসুদের নিকট অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর।

মাচুপিচু, পেরু:

বিশ্বের এই ১০ স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট আকর্ষণীয় হিসেবে মাচুপিচু অন্যতম। মাচুপিচু আন্দিজ পর্বতমালায় অবস্থিত একটি প্রাচীন ইনকান শহর, মূলত মাচুপিচু তার অথ্যাধুনিক শুষ্ক পাথরের জন্য বিখ্যাত। কেচুয়া ভাষায় Machu Pikchu অর্থ ‘পুরানো চূড়া’ আর স্পেনীয় ভাষায় বলে Machu Picchu। এটি পেরুর উরুবাম্বা উপত্যকার ওপরে একটি পর্বত চূড়ায় অবস্থিতি এবং ইনকা সভ্যতার সবচেয়ে পরিচিত নিদর্শন। মূলত মাচুপিচুর বেশীর ভাগ স্থাপনাই ইনকা বাস্তুকলার ঐতিহ্যবাহী নির্মাণ পদ্ধতিতে তৈরিকৃত। কয়েক’শ বছর অজ্ঞাত থাকার পর ১৯১১ সালে হাইরাম বিভাম নামক এক মার্কিন এতিহাসিক এটিকে আবার সমগ্র বিশ্বের নজরে নিয়ে আসেন। ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন।

আরও পড়ুন: বাংলায় আরবি খাবারের নাম সমূহ - আরবি দেশের নাম সমূহ

মূলত মাচুপিচুর স্থাপনাগুলোর দেয়াল পাথর দ্বারা নির্মিত এবং মজার বিষয় হলো একটা পাথরের সাথে আরেকটা পাথর জোড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনরকম সিমেন্ট বা চুন-সুরকির মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়নি। অর্থাৎ অ্যাশলার নামক এই নির্মাণ কৌশলে তৎকালীন ইনকারা খুবই দক্ষ ও অভিজ্ঞ ছিলেন। আসলে এই পদ্ধতি বড় বড় পাথরগুলিকে এমন নিখুঁতভাবে কাটা হতো, যা কোনরকম সংযোগকারী মিশ্রণ ছাড়াই একেকটা পাথর অন্য পাথরের খাঁজে খাঁজে খুব শক্তভাবে বসে যেতো। তৎকালীন সময়ে ইনকারা এই নির্মাণ পদ্ধতিতে এতই নিপুণ ও দক্ষ ছিলেন যে, একটা পাথরের সাথে আরেকটা পাথরের জোড় দেয়া অংশের মধ্যে পাতলা ছুরির ফলাও প্রবেশ করা যায় না। এ ছাড়াও এখানকার স্থাপনাগুলোর ছাদ, মন্দির এবং সর্বোপরি প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে এক অপরূপ সৌন্দর্যের যেন হাতছানি।

তাজমহল, ভারত:

সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিতে নির্মিত একটি অত্যাশ্চর্য সমাধি, যার বিশ্বের মানুষের নিকট একটি চিরন্তন প্রেমের প্রতীক।১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এর নির্মাণ শৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্য শিল্পের সম্মেলন ঘটিয়ে তা তা নির্মাণ করা হয়েছে। সাদা মার্বেলে গোম্বুজাকৃতির রাজকীয় সমাধিটির বেশির ভাগ সমাদৃত। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মুমতাজ মহল তাদের চতুর্দশ কন্যা সন্তান গৌহর বেগমের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যেই এই অপূর্ব সৌধটি নির্মিত হয়েছিল। অর্থাৎ বিশ্বের এই ১০ স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট আকর্ষণীয়-এর মধ্যে তাজমহলও অত্যন্ত জনপ্রিয়।

অ্যাংকর ওয়াট, কম্বোডিয়া:

অ্যাংকর ওয়াট হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় স্থাপনা। অর্থাৎ একটি একটি মন্দির কমপ্লেক্স। চারিদিকে ঘন জঙ্গলে ঘেরা এই কমপ্লেক্সে রয়েছে সব মনোমুগ্ধকর খোদাই করা কারুকাজ, মন্দির এবং বিশালাকার একটি জলাশয়। মূলত এই থর্মীয় স্থাপনাটি কম্বোডিয়ার খেমার সাম্রাজ্যের এক অপরূপ নিদর্শন। অ্যাংকর ওয়াট মন্দিরের বিশেষত্ব হলো সূর্য ওঠার সময় এটি সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখা যায়।

দোলোমিতেস পর্বতমালা, ইতালি:

ইউনেস্কো ২০০৯ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদান করেছেন ইতালির এই দোলোমিতেস পর্বতমালাকে। মূলত দোলোমিতেসে চুনাপাথরের চূড়া, গভীর উপত্যকা এবং অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা গ্রামগুলি পর্বতারোহী এবং ভ্রমণপিপাসুদের জন্য স্বর্গের মতো পরিবেশ তৈরি করে থাকে। যার কারণে ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট অতি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে এই দোলোমিতেস পর্বতমালাটি।

ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক, যুক্তরাষ্ট্র:

ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কটিকে ১৯৭৮ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদান করে ইউনেস্কো। আসলে ১৮৭২ সালে বিশ্বের প্রথম জাতীয় উদ্যান হিসেবে ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত এই পার্কে আছে ওল্ড ফেইথফুলের মতো প্রাকৃতিক গরম পানির ফোয়ারা। এখানকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ও বৈচিত্র্যময় সব বন্য প্রাণী থাকায় তা ভ্রমণপিপাসুদের নিকট বিশ্বের অন্যতম চমকপদ্র প্রাকৃতিক গন্তব্য স্থান হিসেবে পরিচিত হয়েছে।

গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ, ইকুয়েডর:

ইউনেস্কো ১৯৭৮ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি হিসেবে এই গ্যালাপাসোস দ্বীপপুঞ্জকে অন্তর্ভূক্ত করে। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত গ্যালাপাসোস দ্বীপপুঞ্জটি ইকুয়েডর থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এই দ্বীপপুঞ্জের অদ্ভুত এবং মজাদার বিষয় হলো এই দ্বীপে এমন সব প্রজাতির প্রাণী বসবাস করে, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না।

আরও পড়ুন: বিশ্বের ১৯৩টি দেশের জাতীয় ফুলের নাম ও তালিকা - বিশ্বে কতগুলো দেশ আছে

জনবিচ্ছিন্নতা এবং আগ্নেয়গিরির উৎপত্তির কারণে এই দ্বীপটি পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ বাস্তুব্যবস্থা হয়ে উছেছে। বিবর্তনবাদের প্রবর্তক চার্লস ডারউইন তাঁর বিবর্তনতত্ত্বের জন্য অনুপ্রেরণা তিনি এখান খেকেই নিয়েছিলেন।

প্রাগের ওল্ড টাউন স্কয়ার, চেক প্রজাতন্ত্র:

প্রাগ শহর হচ্ছে মধ্যযুগীয় এবং বারোক স্থাপত্যের এক অন্যতম নিদর্শন, যা ইউনেস্কো ১৯৯২ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মূলত প্রাগ শহরটি একটি ঐতিহাসিক কেন্দ্র। সে কারণে এই শহরটি শতাব্দীর পর শতাব্দী মধ্য ইউরোপের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবকে প্রতিফলিত করছে। রাজকীয় দূর্গ থেকে শুরু করে প্রাণবন্ত ওল্ড টাউন স্কয়ার, যা বিশ্বের অন্যতম মনোমুগ্ধকর শহর হিসেবেই অদ্যাবধি দাঁড়িয়ে আছে।

বরোবুদুর, ইন্দোনেশিয়া:

ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল জাভায় অবস্থিত বরোবুদুর একটি বৌদ্ধ মন্দির, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড়। চারিদিকে আগ্নেয়গিরি পর্বতমালা দিয়ে ঘেরা বর্তমানে এ স্থানটি নবম শতাব্দীর অন্যতম সেরা নিদর্শন। সাধারণত ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হলো এর আধ্যাত্মিক স্থান আর অন্যদিকে স্থাপত্যকৌশলের অসাধারণ নিদর্শন। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কো এই বরোবুদুর স্থানটিকে ১৯৯১ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদান করেন।

ব্রুজেস, বেলজিয়াম:

ব্রুজেস বেলজিয়ামের একটি ঐতিহাসিক কেন্দ্র। কারণ ব্রুজেস শহরটি তার গথিক স্থাপত্য সংরক্ষণ করেছে এবং তা আধুনিক জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে চলমান স্রোতধারায় মিশেছে। কারণ এখানকার গাড়িমুক্ত রাস্তা, নয়নাভিরাম চত্বর এবং সর্বোপরি ঐতিহাসিক গিল্ড হাউসগুলো ভ্রমণ পিপাসুদের মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। ব্রুজেস শহরে অবস্থিত খাল ও মধ্যযুগীয় সৌন্দর্যের কারণে এটিকে ‘উত্তরের ভেনিস’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। তাই আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কো ২০০০ সালে এ শহরটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদান করেন।

কাপাডোসিয়া, তুরস্ক:

কাপাডোসিয়া অঞ্চলটির উৎপত্তি ঘটে অগ্ন্যুৎপাতের মধ্য দিয়ে। বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম মনোরম প্রাকৃতিক স্থানগুরোর একটি, যা হট-এয়ার বেলুন রাইডের জন্য বিখ্যাত। সাধারণত ভ্রমণ পিপাসুরা এই হট-এয়ার বেলুনে চড়ে সূর্যোদয়ের সময় এর উপত্যকাগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকে। মূলত আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এখানে সব অদ্ভুত পাথরের গঠন তৈরি হয়েছে, যা ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষিত করে। এ ছাড়াও এখানে একটি প্রাচীন গুহা আছে। উল্লেখ্য যে, এই অঞ্চলটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের বসতির কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।

বিশ্বের এই ১০ স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট আকর্ষণীয়-পরিশেষে:

যদিও ইউনেস্কোর তালিকায় ১২০০টি স্থান স্বীকৃতি পেয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে বিশ্বের এই ১০ স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট আকর্ষণীয়। কারণ এগুলোর মনোমুগ্ধকর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক বিষয়াবলী, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, নান্দনিক সৌন্দর্যের কারুকার্য এবং সর্বোপরি যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার ক্ষেত্রে পর্যটকরা এসব স্থান পরিদর্শন করে থাকে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট

যাইহোক, আজকের বিশ্বের এই ১০ স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট আকর্ষণীয় বিষয়ক আর্টিকেলটির মধ্যে অজানা কোন বিষয় যদি জেনে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন এবং উক্ত বিষয়ে কোন মন্তব্য/পরামর্শ প্রদান করতে চাইলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। পরিশেষে বিশ্বের এই ১০ স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট আকর্ষণীয় কেন তা জানতে আপনার দীর্ঘক্ষণ সম্পৃক্ততা এবং উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ এবং সেইসঙ্গে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url