কানে যে সমস্যাগুলো অল্প বয়সে হতে পারে - সমাধান লুকিয়ে আছে এইসব খাবারে
পেজ সূচিপত্র: কানে যে সমস্যাগুলো অল্প বয়সে হতে পারে - সমাধান লুকিয়ে আছে এইসব খাবারে
কানে যে সমস্যাগুলো অল্প বয়সে হতে পারে
সমাধান লুকিয়ে আছে এইসব খাবারে
কোন বয়সে শিশুদের কানের সমস্যা বেশি হয়
বার্ধক্যকালে বধিরতার ঝুঁকি এড়াতে খাদ্যাভাস
পরিশেষে
কানে যে সমস্যাগুলো অল্প বয়সে হতে পারেঃ
আসলে শিশুরা সবসময় তাদের সব ধরণের সমস্যার কথা মুখ ফুটে বলতে পারেনা। তাই শিশুদের কানে যে সমস্যাগুলো অল্প বয়সে হতে পারে, এমন ক্ষেত্রে শিশুর নিকটতম বা কাছাকাছি মানুষ হিসেবে একমাত্র মা-ই পারেন শিশুর নানাবিধ সমস্যাগুলো সনাক্ত করতে। সুতরাং অল্প বয়সে শিশুদের কানে যে সমস্যাগুলো দেখা যায়, তার মধ্যে-
আরও পড়ুনঃ শিশুদের রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল সমূহ
কানের সংক্রমণঃ কানের সংক্রমণ এমনটি সমস্যা যা শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। অর্থাৎ কানে সংক্রমণ হলে শিশুরা সাধারণত কান্নাকাটি করে, তাদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়, কানে ব্যথা ইত্যাদি।
কানের পর্দা ছিঁড়ে যাওয়াঃ শিশুদের খামখেয়ালীপনা অথবা অসতর্কতার কারণে তাদের কানে কোনো আঘাত বা কানের সংক্রমণ অথবা কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে যায়, যা শিশুদের কানে ব্যথা অথবা শ্রবণশক্তি হ্রাস হিসেবে দেখা হয়ে থাকে।
কানে তরল জমা হওয়াঃ অনেক সময় শিশুদের কানে অতিরিক্ত তরল জমে থাকে, যার কারনে পরবর্তীতে যে কোন ধরনের সংক্রমণ বা অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে। অর্থাৎ এ ধরনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে শিশুর নিকটতম মাকে।
শ্রবণশক্তি হ্রাসঃ শিশুদের শ্রবণ শক্তি হ্রাস হওয়ার কারণ হতে পারে, তার জন্মগত অথবা গর্ভাবস্থায় শিশুটির মায়ের কোন সংক্রমণ (যেমন-শিশুটির মায়ের যদি সিফিলিস, রুবেলা বা সাইটোমেগারোভাইরাস জনিত সমস্যা থাকে) থাকে, তাহলে শিশু জন্মগ্রহণ করার পরেই তার শ্রবণশক্তি হ্রাস হতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ হেডফোন ব্যবাহরঃ অনেক সময় কানে দীর্ঘক্ষণ ধরে হেডফোন ব্যবহার করলে কানে সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে। অনেকেই আছে, যারা প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে দীর্ঘক্ষণ ধরে কানের মধ্যে হেডফোন গুজে থাকে, এতে করে কানের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং পরবর্তীতে তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনেফেকশন বুঝতে না পারাঃ সাধারণত কানের মধ্যে কোন ইনফেকশন হলে তা অনেকেই বুঝতে পারেনা। আবার যদিও বা বুঝে থাকেন, তাহলে শুরু হয় অবহেলা। আর এই ধরনের নির্বুদ্ধিধার জন্য কানে পুঁজ বা কান ব্যথাসহ গুরুত্বর সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে। যার কারণে কানে যে কোন ধরনের সমস্যার জন্য অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।
টিটিনাসঃ অনেক সময় কানোর মধ্যে ভোঁ ভোঁ শব্দ শোনা যায়, আর এ ধরনের সমস্যাগুলি মূলত কানের শ্রবণশক্তি হ্রাস বা অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে উদ্ভুত হয়ে থাকে। আসলে কানের মধ্যে যদি অবিরাম অথবা অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের শব্দ শোনা যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে কানে টিটিনাস হয়েছে।
সমাধান লুকিয়ে আছে এইসব খাবারেঃ
আসলে শিশুদের যে কোন ধরনের শারীরিক সমস্যার অন্যতম কারণ হলো তার খাদ্যাভ্যাস। এক্ষেত্রে অভিভাবককেই খেয়াল রাখতে হয় যে, দৈনন্দিন শিশুর খাবারে তিনি শিশুকে কি খাওয়াচ্ছেন। তাই নিম্নে সমাধান লুকিয়ে আছে এইসব খাবারে বলতে অবশ্যই শিশুদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ভিটামিন, খনিজ, এবং বিশেষ করে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে, যাতে করে শিশুর কানের সূক্ষ্ম গঠন রক্ষা করা যায়। নিম্নে তা বর্ণিত হলো:
আরও পড়ুনঃ সারা শরীর ব্যথা করে কেন - সারা শরীর ব্যাথা হলে করনীয় - কি খেলে শরীরের ব্যথা কমে
ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্যঃ সাধারণত কমলা, লেবু, মাল্টা ইত্যাদি লেবু জাতীয় সাইট্রাস ফলগুলিতে ভিটামিন সি থাকে প্রচুর পরিমাণে। অর্থাৎ এই ভিটামিন সি জাতীয় ফলগুলি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা কানের রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতিতে উন্নত করে। সুতরাং শিশুদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্যগুলি রাখা খুবই আবশ্যক।
ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়ামঃ ওটস এবং বাদামি চালে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে। আসলে এই ম্যাগনেসিয়াম শ্রবণশক্তি হ্রাসে সহায়তা করে এবং পটাশিয়াম কানের কক্লিয়া-তে তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ শিশুদের খাদ্যে এই দুটি উপাদানের ঘাটতি হলে শ্রবণ সমস্যা বৃদ্ধি ঘটে। তাই অবশ্যই শিশুদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত শস্যদানা অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।
মাছ এবং সামুদ্রিক খাদ্যঃ সাধারণত স্যালমন, সার্ডিন এবং টুনা জাতীয় মাছে প্রচুর ওমেগা-৩ এবং ভিটামিন ডি থাকে। আসলে এগুলো কানের কোষের ক্ষয় কমিয়ে শ্রবণ শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। তাই শিশুদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই এই সমস্ত খাদ্যগুলি রাখা যেতে পারে।
সুষম খাদ্য নিশ্চিতকরণঃ শিশুদের খাদ্যে নিয়মিত সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত ঘুম এবং শব্দ দূষণ থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। কারণ অতিরিক্ত শব্দ দূষণে শিশুদের কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে।
বাদাম বা বীজ জাতীয় খাদ্যঃ আমরা অনেকেই জানি যে, আখরোট এবং তিসির বীজ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য এবং সেইসঙ্গে জিঙ্ক। উভয় খাদ্যগুলি কানের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে ওমেগা-৩ উপাদানটি কানের ভেতরে প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে থাকে, আর জিঙ্ক শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং কানের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। তাই শ্রবণশক্তি ভালো রাখতে অবশ্যই বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাদ্যসমূহ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে।
কোন বয়সে শিশুদের কানের সমস্যা বেশি হয়ঃ
সাধারণ প্রক্রিয়ায় মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রবণশক্তিও কমে যায়। তবে আজকাল ছোট্ট শিশুদেরও কানের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে তা কনজেনিটাল বা জন্মগত বধিরতা হয়ে থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা গেছে যে, স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরদের এই ধরণের সমস্যা দিনকে দিন বাড়ছে। অর্থাৎ ছোটকোল থেকেই কানের বিভিন্ন সমস্যাসহ বধিরতার মত লক্ষণগুলোও প্রকট হচ্ছে। সুতরাং এই ধরণের বিষয়গুলোতে সচেতন হওয়াটা অত্যন্ত জরুরী।
শিশুদের কানের বেশির ভাগ সমস্যা শুরু হয়ে থাকে গর্ভাবস্থা থেকে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত। আসলে শিশুদের কানে যে ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলো-কানে ব্যথা, কান চুলকানো, কান দিয়ে পানি বা পুঁজের মতো চটচটে আঠালো রস বের হওয়া ইত্যাদি। আবার এও দেখা গেছে, কানে উচ্চস্বরে হেডফোন বা ইয়ারফোনে গান শুনলেও কানের শ্রবণশক্তির সমস্যা তৈরি হতে পারে।
তবে শিশুদের কানের যে কোন সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা ভীষণ জরুরী। কারণ নির্ধারিত চিকিৎসকই একমাত্র পারেন শিশুর সঠিক সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে।
বার্ধক্যকালে বধিরতার ঝুঁকি এড়াতে খাদ্যাভাসঃ
সাধারণত বয়স বাড়লেই অনেকেই কানে কম শুনতে শুরু করেন। তবে এটা ঠিক যে, শুধুমাত্র বয়সজনিত কারনেই যে কানে কম শোনা যায়, এমনটা নয়, আসলে কানে কম শোনার পেছনে কারণ হতে পারে পুষ্টিজনিত সমস্যা। তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে সঠিক পুষ্টিকর খাবার খেতে পারলে তা বধিরতার ঝুঁকি এড়াতে আপনাকে সাহায্য করবে।
মূলত শ্রবণ শক্তি হ্রাস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে পটাশিয়াম। অর্থাৎ এক্ষেত্রে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা খুবই জরুরী। সাধারণত পটাশিয়াম দেহে বিভিন্ন তররের ভারসাম্য বজায় রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের অন্তঃকর্ণে তরল পদার্থ থাকে। আর এই অন্তঃকর্ণ ভালো রাখতে পটাশিয়ামের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে কালো ডাল, আলু, কলা ইত্যাদি খাদ্যগুলি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য।
শ্রবণশক্তি ভালো রাখতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই খাদ্যাভাসে রাখতে পারেন, সামুদ্রিক মাছ, আখরোট, চিয়া বীজ, ডিম ও মাছের তেল, তিসি বীজ ইত্যাদি। আবার শরীরে যদি জিঙ্কের ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলেও শ্রবণশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই এক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন কাঁচা মুখ, ছোলা, কাবলি ছোলা, দুধ, ডিম ও দই ইত্যাদি।
শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, খনিজ, ভিটামিন ইত্যাদি উপাদানগুলি আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। যেমন-দুগ্ধ ও দুদ্ধজাত খাবার, পনির ইত্যাদি।
কানে যে সমস্যাগুলো অল্প বয়সে হতে পারে - সমাধান লুকিয়ে আছে এইসব খাবারে-পরিশেষেঃ
আরও পড়ুনঃ বেগুনে পোকা আছে কি না, তা বুঝবেন যেভাবে

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url