পানি কম খেলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয়

সাধারণত পানি কম খেলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয় বলতে পানিশূন্যতা ও ক্লান্তিবোধসহ মনোযোগ কমে যাওয়া, হজম এবং কিডনির সমস্যা, ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট ও মুখে দুর্গন্ধ, রক্তচাপের সমস্যা সহ নানা অসুবিধা। সবকিছু জানতে নিচের পরামর্শগুলো পড়ুন।
পানি-কম-খেলে-শরীরের-কি-কি-ক্ষতি-হয়
সাধারণত একজন সুস্থ্য মানুষের দৈনিক ১০-১২ গ্লাস পানি পান করা উচিত। প্রকৃতপক্ষে পানি কম খেলে শরীরে দেখা দেয় পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনসহ নানা উপসর্গ। তাই পানি বেশী করে খেতে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: পানি কম খেলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয়

পানি কম খেলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয়
পানিশূন্যতা তৈরি হওয়া
ক্লান্তিবোধ ও কম শক্তি
মনোযোগ কমে যাওয়া
হজমজনিত সমস্যা
কিডনির সমস্যা
ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা
শ্বাসকষ্ট ও মুখে দুর্গন্ধ
রক্তচাপের সমস্যা
ঘন ঘন অসুস্থতা সৃষ্টি
মিষ্টি বা নোনতা খাবারের প্রতি আগ্রহ
স্যালাইভা স্টোন কিভাবে হয়ে থাকে
পানি কম খেলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয়-পরিশেষে

পানি কম খেলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয়ঃ

আমাদের শরীরে প্রায় ৭০ শতাংশেরও বেশি পানি থাকে। অর্থাৎ এই পানির মাধ্যমেই শরীরের বেশীর ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। এককথায় পানি কম খেলে কিডনির সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, হজমের সমস্যা, ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা, মূত্রনালীর সংক্রমণ, ইমিউন ফাংশনে সমস্যা, অসুস্থতা, মাথা ব্যথা, কাজে মনোযোগ কমে যাওয়া, ক্লান্তিবোধ, শ্বাস-প্রশ্বাস ও নিঃশাষে দুর্গন্ধ, ঘন ঘন অসুস্থতা, রক্তচাপের সমস্যা সহ স্যালাইভা স্টোন পর্যন্ত নানা ধরণের উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে। তাই আজকে সেই লক্ষকে সামনে রেখে পানি কম খেলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয়, সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে নিম্নে বর্ণিত হয়েছে, যা পড়লে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে এবং ব্যক্তিগতভাবে আপনি নিজেও উপকৃত হতে পারবেন।

পানিশূন্যতা তৈরি হওয়াঃ

শরীরে পানির ঘাটতির কারণে মুখ ও গলা শুস্ক হয়ে যায়। অর্থাৎ ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, যার ফলে বারবার পিপাসা লাগে, মুখ ও গলা শুকিয়ে যায় এবং প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হয়ে যায়। আর যদি গুরুতর পানিশূন্যতা দেখা দেয়, তাহলে মাথা ঘোরা, বিভ্রান্তি, দ্রুত হৃৎস্পন্দন বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও অনেকাংশে বেড়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে

ক্লান্তিবোধ ও কম শক্তিঃ

শরীরে পুষ্টি এবং অক্সিজেন পরিবহনের জন্য পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, তখন দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে একটি ক্লান্তিবোধ এবং শক্তির আধিক্যের ঘাটতি দেখা দেয়। কারণ পর্যাপ্ত পানি গ্রহণের ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ঘটে, যা আমাদের ক্লান্তিবোধসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করে থাকে।

মনোযোগ কমে যাওয়াঃ

শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে এর প্রভাব পড়ে সারা শরীরে। যেমন-মস্তিস্কে রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া, যার ফলে স্মৃতিজনিত সমস্যা, উদ্বেগ ও ক্লান্তির অনুভূতি বাড়াতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে মনমেজাজেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। যা কাজের ক্ষেত্রে এবং নানা জায়গায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটে থাকে।

হজমজনিত সমস্যাঃ

সাধারণত পানি হজম ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অর্থাৎ পানিশূন্যতার ফলে হজমজনিত সমস্যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজমও হতে পারে। আবার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার মধ্যে যেমন-ডিহাইড্রেশন গ্যাস্ট্রাইটিস ও আলসারের মতো গুরুতর হজমজনিত সমস্যা বাড়তে পারে। সুতরাং পানি কম খাওয়া হলে তা হজমেরও নানা সমস্যা তৈরী করে।

কিডনির সমস্যাঃ

শরীরে পর্যাপ্ত পানিশূন্যতার কারণে কিডনি ভালোভাবে কাজ করতে পারে না, তার ফলে প্রস্রাবের প্রবাহ কমে যায়। আর এর ফলে কিডনিতে পাথর, মূত্রনালীতে সংক্রমণসহ ধীরে ধীরে কিডনির ঝুঁকি বাড়তে থাকে। যদিও আমরা অনেকেই জানি যে, স্বাভাবিক নিয়মে প্রস্রাব হওয়ার অর্থ হলো শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন পদার্থ বের হওয়া, কিন্তু যখনই আমরা পানি কম খেয়ে থাকি, তখন কিন্তু প্রস্রাবের বেগও কমে যায়, ফলে শরীরে একটা অস্বস্তি ভাব তৈরি হয়ে থাকে। পাশাপাশি সবথেকে বড় সমস্যা হলো কম পানি পানের কারণে শরীরে অতি মূল্যবান কিডনি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারেনা। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন, আমরা যারা পুরুষ, তারা খুব সহজেই যেখানে সেখানে টয়লেট সেরে ফেলতে পারি, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে তা হয় না। যার কারণে তারা কম পানি পান করে থাকেন, এজন্য কিডনিজনিত সমস্যাগুলি বেশি হয়ে থাকে নারীদের ক্ষেত্রে।

ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতাঃ

সাধারণত ইলেক্ট্রোলাইট হলো প্রয়োজনীয় খনিজ যা বিশেষ করে শরীরের তরল ভারসাম্য, স্নায়ু ফাংশন এবং সর্বোপরি পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে। সুতরাং শরীরে পানির ঘাটতির কারণে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীতার ফলে পেশি দুর্বলতা, ক্র্যাম্প, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং অনেক সময় শরীরে খিঁচুনি হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

শ্বাসকষ্ট ও মুখে দুর্গন্ধঃ

পর্যাপ্ত পানি পানের অভাবে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার পাশাপাশি মুখে দুর্গন্ধেরও সৃষ্টি হয়ে থাকে। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ করার ফলে মুখে লালা উৎপন্ন হয়ে থাকে, আর যার কারণে মুখে দুর্গন্ধ বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা তৈরি হয় না।

আরও পড়ুনঃ ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? এটা কি কোন অসুখের লক্ষণ?

কিন্তু যখনই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ করা হয়না বা কম পানি পান করার ফলে মুখে ভিতরে উৎপন্ন লালাগুলি শুকিয়ে গিয়ে ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন হয় এবং এর ফলে মুখ থেকে বাজে গন্ধ বের হয়। খেয়াল করে দেখবেন, যখন আপনি অনেকক্ষণ ধরে কোন পানি না খেয়ে থাকেন, তাহলে নিজেই বুঝতে পারবেন যে, মুখে কেমন একটা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আবার অনেকের সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখা যায়, সে ব্যক্তির মুখ থেকে প্রচন্ড দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।

রক্তচাপের সমস্যাঃ

পর্যাপ্ত পানি পান করার কারণে শরীরে অনেক সময় নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। যার ফলে কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ মনে আতঙ্ক বা মাথাব্যাথাও সৃষ্টি হতে পারে। সর্বোপরি সারাক্ষণ আলস্য এবং ক্লান্তিবোধ লাগতে পারে। মূলত পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে শরীরের রক্ত সংবহন মাত্রার বৃদ্ধি ঘটে থাকে। কিন্তু যখনই আমরা কম পানি পান করে থাকি, তখনই শরীরে দেখা দেয় নানারকমের উপসর্গ।

ঘন ঘন অসুস্থতা সৃষ্টিঃ

সাধারণত পানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রতিরোধ করে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং কোষে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহজ করে থাকে। এক্ষেত্রে যদি পর্যাপ্ত পানি পান না করা হয়, তাহলে শরীরে সংক্রমণ এবং অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।

মিষ্টি বা নোনতা খাবারের প্রতি আগ্রহঃ

কখনও কখনও পানিশূন্যতা ক্ষুধার অনুকরণ করতে পারে। অর্থাৎ পর্যাপ্ত পানি পান না করার ফলে শরীরে শক্তির চাহিদা মেটাতে মিষ্টি বা নোনতা খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। যার ফলে অস্বাস্থ্যকর এবং অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা দেখা দিতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অর্থাৎ অতিরিক্ত কোন কিছুই শরীরের জন্য ভালো নয়।

স্যালাইভা স্টোন কিভাবে হয়ে থাকেঃ

চিকিৎসকদের তথ্য মতে, সাধারণত মুখের মধ্যে অনেক ছোট ছোট লালাগ্রন্থি থাকে, যেখান থেকে লালা বা স্যালাইভা তৈরি হয়। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তি পর্যাপ্ত পানি পান না করেন অথবা কম পানি খেতে থাকেন, তখন এই ধরণের গ্রন্থিগুলোর মুখে ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ জমে যায় এবং তা ছোট্ট পাথরের মতো হয়ে যায়। এর ফলে মুখের ভেতরের লালা বের হতে বাধা পায়। আর তাতে এই গ্রন্থি ফুলে যায়, ব্যথা হয় সর্বোপরি ধীরে ধীরে তা সংক্রমণের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। এই ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার ফলে চোয়ালের নিচের গ্রন্থি ফুলে ওঠে এবং শক্ত কিছু চিবানো যায়না, মাঝে মাঝে খাওয়ার সময় যন্ত্রণা হয় এবং গিলতেও কষ্ট পেতে হয়। চিকিৎসা শাস্ত্র মতে, পর্যাপ্ত পানি পান না করার ফলে মুখের ভিতরের লালাগ্রন্থিতে পাথর তৈরি হয়ে থাকে, যার নাম স্যালাইভা গ্ল্যান্ড স্টোন।

পানি কম খেলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয়-পরিশেষেঃ

আসলে শরীরকে সুস্থ্য ভাবে পরিচালিত করার জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। অর্থাৎ পানি কম খেলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয় বিষয়ে উপরোক্ত সমস্যাগুলি লক্ষ্য করুন, তাহলে সারাদিনে আরও বেশি করে পান করার আগ্রহ বা ইচ্ছা তৈরি হবে।

আরও পড়ুনঃ উপহার পছন্দের ক্ষেত্রে যা ভাবতে হতে পারে

যাইহোক, আজকের আর্টিকেলে বর্ণিত পানি কম খেলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয় বিষয় সম্পর্কে আপনার যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। মূলত শীতকালে সাধারণত মানুষ একটু পানি কম খায়, তাই বলে এটা নয় যে, আমার বরাদ্দ ১০-১২ গ্লাস, আর শীতের কারণে আমি পানি খাচ্ছি মাত্র ৫ গ্লাস। এটা কখনও করা যাবে না। কারণ আমাদের শরীরটা চলেই পানি গ্রহণের উপরে। তাই আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার কাছে ভালো লাগে বা গ্রহণযোগ্য মনে হয়, তাহলে তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। পরিশেষে পানি কম খেলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয় বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ অংশগ্রহণ এবং সম্পৃক্ততার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।