ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? এটা কি কোন অসুখের লক্ষণ?

সাধারণত প্রস্রাব হওয়া শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে টক্সিন ও অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। কিন্তু ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? এটা কি কোন অসুখের লক্ষণ?
ঘন-ঘন-প্রস্রাব-কেন-হয় - এটা-কি-কোন-অসুখের-লক্ষণ
ফলে তখন মনে প্রশ্ন জাগে, আসলে দিনে কতবার প্রসাব হওয়া স্বাভাবিক।

পোস্ট সূচিপত্র: ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? এটা কি কোন অসুখের লক্ষণ?

ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? এটা কি কোন অসুখের লক্ষণ?
প্রস্রাবের স্বাভাবিক নিয়ম
ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণসমূহ
প্রস্রাব সম্পর্কিত উপসর্গসমূহ
ঘন ঘন প্রস্রাবের ক্ষেত্রে ঘরোয়া প্রতিকারসমূহ
ঘন ঘন প্রস্রাব যেভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে
কখন চিকিৎসার প্রয়োজন
পরিশেষে

ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? এটা কি কোন অসুখের লক্ষণ?

ঘন ঘন প্রস্রাবের লক্ষণ হতে পারে দিনে আটবারের বেশি এবং তা চলমান থাকা। অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, মূত্রনালীর সংক্রমণ বা মূত্রাশয় ক্যান্সার, গর্ভাবস্থা, প্রোস্টেট সমস্যা, স্ট্রোক, পেলভিক টিউমার, যোনিতে প্রদাহ, মানসিক চাপ বা উদ্বেগ, ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অতিরিক্ত অ্যালকোহল অথবা ক্যাফেইন পান করা ইত্যাদি।

অবশ্যই ঘন ঘন প্রস্রাব বিভিন্ন অসুখের লক্ষণ হতে পারে। তবে উপরোক্ত উপসর্গগুলি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়,সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অবশ্যই জরুরী। তবে ঘন ঘন প্রস্রাবের কিছু সাধারণ কারণও বিদ্যমান। যেমন-

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া কিন্তু একটি সাধারণ ব্যাপার বা উপসর্গ হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে। আবার যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তাদেরও কিন্তু ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা তৈরি হলে তা অন্ত্র মূত্রাশয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করার ফলে ঘন প্রস্রাব হতে পারে। যদি কেউ অতিরিক্ত পরিমাণে পানি বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করেন, তাহলেও প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। যদি কারো কিডনি বা মূত্রথলির সমস্যা থাকে, অর্থাৎ কিডনি বা মূত্রথলিতে পাথর অখবা ক্যান্সার থাকে, সেক্ষেতেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। অনেক সময় পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থির সমস্যার কারণে ঘন ঘন প্রসাব হতে পারে।

সুতরাং ঘন ঘন প্রসাব শুরু হলেই যে তা অসুখের লক্ষণ হতে পারে ব্যাপারটি তেমন নই। যদিও আমরা অনেকেই অনেক বিষয়ে জানি, তারপরেও হঠাৎ করে কোন একটা সমস্যা তৈরি হয়ে আমরা আসলে ঘাবড়ে যায়। তাই ঘন ঘন প্রসাব হওয়াটা একটা স্বাভাবিক বিষয় হতে পারে, কিন্তু যদি তা দীর্ঘস্থায়ী হতে বা চলতে থাকে, তাহলে অবশ্যই সেটা দুশ্চিন্তার কারণ বৈকি! এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।

প্রস্রাবের স্বাভাবিক নিয়মঃ

ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? এটা কি কোন অসুখের লক্ষণ? সম্পর্কে বিশেষজ্ঞগণের মতামত এমন, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক এবং সুস্থ্য মানুষ দিনে ৬ থেকে ৮ বার প্রস্রাব করে থাকেন। তবে এটা নির্ভর করে তিনি কতটা পানি পান করছেন তার উপর। এ ছাড়াও শারীরিক ওজন, কার্যকলাপ ও আবহাওয়াজনিত কারণ। আবার অনেকেই আছে, যারা বেশি পানি পান করে থাকেন, ফলে সে কারণেও তাদের প্রস্রাবও বেশি হতে পারে।

ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণসমূহঃ

ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণগুলি হতে পারে নিম্নরুপ। যেমন-
  • মূত্রনালী সংক্রমনের জন্য;
  • উচ্চ রক্তচাপের কারণে;
  • মূত্রাশয়ের বিভিন্ন সমস্যা (যেমন-ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস ও ওয়ারঅ্যাকটিভ ব্লাডার সিন্ড্রোম)

আরও পড়ুনঃ কোমর ব্যথা হলে কি করণীয় - নিরাময় পদ্ধতিগুলি কি কি

  • মূত্রাশয়ে ক্যান্সারজনিত কারণে;
  • গর্ভাবস্থার কারণে;
  • টাইপ ১ ও ২ ডায়াবেটিসের কারণে;
  • প্রোস্টেট সমস্যাজনিত কারণে;
  • পেলভিক টিউমারের কারণে;
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন, অ্যালকোহল বা কৃত্রিম মিষ্টি গ্রহণের কারণে;
  • মানসিক উদ্বেগ এবং স্ট্রেসের কারণে;
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে;
  • যোনিতে প্রদাহের কারণে;
  • কিডনিতে পাথরজনিত কারণে;

প্রস্রাব সম্পর্কিত উপসর্গসমূহঃ

ঘন ঘন প্রসাবের সাথে অন্যান্য লক্ষণও থাকতে পারে, যা এর অন্তনির্হিত কারণের উপর নির্ভর করে থাকে। যেমন-

প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া করা। অর্থাৎ অনেক সময় দেখা যায় যে, প্রস্রাব করতে গেলে প্রস্রাবের দ্বার ব্যথা বা জ্বালাপোড়া করছে বা শুরু হয়েছে এবং এটি হঠাৎ করেই শুরু হওয়া। যা আগে কখনও হয়নি। 

স্বাভাবিক নিয়মে প্রস্রাব করতে গিয়ে দেখা যাচ্চে যে, প্রস্রাবে রক্ত পড়ছে। অর্থাৎ আগে কখনো, কোনদিন এমনটা হয়নি, হঠাৎ করে প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে রক্ত পড়ছে।

সাধারণত নারীদের ক্ষেত্রে তলপেটে বা শ্রোণীতে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে বেশি। তবে পিরিয়ডের সময় অনেকেরই এ ধরণের সমস্যা হয়ে থাকে। 

কর্মমূখী মানুষের নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত থাকে, যার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত বা অনিদ্রা (নকটুরিয়া) ঘটতে পারে, তবে সেটা হঠাৎ করেই, কিন্তু যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় তাহলে চিকিৎসার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। 

শলীরের অন্ত্রনালীর ইনফেকশনজনিত কারণে দুর্গন্ধযুক্ত বা মেঘলা প্রস্রাব হতে পারে। তবে সেটা যদি হঠাৎ করে হয়ে আবার বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেটি একটি ব্যাপার, কিন্তু যদি তা চলমান বা কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

সাধারণত ডায়াবেটিসজনিত কারণে হঠাৎ করে যদি তৃষ্ণা বৃদ্ধি ঘটে থাকে, তাহলে এটিও একটি প্রস্রাবের উপসর্গ হিসেবে পরিগিণিত হতে পারে।

অর্থাৎ হঠাৎ করেই  যদি দুর্বল প্রস্রাব প্রবাহ বা প্রস্রাব শুরু করতে অসুবিধা বোধ হয়ে থাকে, তাহলে এটি একটি উপসর্গ হিসেবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারে।

ঘন ঘন প্রস্রাবের ক্ষেত্রে ঘরোয়া প্রতিকারসমূহঃ

ঘন ঘন প্রস্রাবের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে গুড়ের সাথে তিল বীজ মিশিয়ে যদি দিনে দুইবার খেতে পারেন, তাহলে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া কমে যেতে পারে। অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিরাময় পদ্ধতি যা ঘরে বসেই  প্রতিকার করা সম্ভব হয়।

মধু এবং কলার সাথে আমলা মিশিয়ে দিনে অন্তত ২-৩ বার খেতে পারেন, এতে করে আপনার অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া থেকে পরিত্রাণ হতে পারে।

যদি আমরা জানি যে, তুলসী পাতার অনেক গুণ। তবে এক্ষেত্রে তাজা তুলসী পাতা গুড়ো করে এর সাথে মধুর সাথে মিশিয়ে যদি সকালে খেতে পারেন, তাহলে অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী

ঘন ঘন বা অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে জিরা বীজ সিদ্ধ করে তা ভালোভাবে ছেঁকে নিয়ে যদি দিনে অন্তত দুইবার খেতে পারেন, েএতে করে আপনার অতিরিক্ত প্রস্রাবের প্রবণতা কমে যেতে পারে।

অতিরিক্ত প্রস্রাব রোধে আপনি যদি রিঠা (সাবান বাদাম) তা সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে  তা পান করতে পারেন, তাহলে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া থেকে অনেকটাই পরিত্রাণ পেতে পারেন।

ঘন ঘন প্রস্রাব যেভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারেঃ

  • ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল এবং কার্বনেটেড পানীয় পান করা সীমিত করতে হবে।
  • বিশেষ করে মশলাদার এবং অ্যাসিডিক জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে।
  • রাত্রে ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত তরলজাতীয় খাদ্য পরিহার করুন।
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের অবশ্যই শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • মূত্রনালীর সমস্যা হলে তা অতিসত্ত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
  • পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম করতে হবে, যাতে মূত্রাশয় নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী থাকে।

কখন চিকিৎসার প্রয়োজনঃ

  • বিশেষ করে ঘন ঘন প্রস্রাবের সাথে রক্ত, তীব্র ব্যথা বা জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • প্রস্রাবের সময় তলপেট বা শ্রোণী অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য অস্বস্তি, ব্যথা বা ফোলাভাব দেখা দিয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে।
  • আবার যদি স্বাভাবিক ভাবে প্রস্রাব না হওয়া বা দীর্ঘ সময় ধরে তা স্থায়ী হয়, এমন ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
  • অনেক সময় পিঠের নীচের অংশে ব্যথা অনুভব করা অথবা বিশেষ করে কিডনি’র আশেপাশে ব্যথা অনুভূত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরাণপন্ন হতে হবে।
  • অনেকেরই রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব করতে থাকেন, তাহলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • সাধারণত প্রস্রাবের সমস্যা হলে বা প্রস্রাব কোন কারণে বাধাগ্রস্ত হলে জ্বর বা বমি বমি ভাব দেখা দিয়ে থাকে। তাই এমন ধরণের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? এটা কি কোন অসুখের লক্ষণ?-পরিশেষেঃ

ঘন ঘন প্রস্রাব হলে অনেকেই বলে থাকে, এটি ডায়াবেটিসের লক্ষণ। যদিও ডায়াবেটিস ঘন ঘন প্রস্রাবের একটি সাধারণ কারণ, তবে এই নয় যে, ডায়াবেটিস হয়ে গেছে, অন্য কোন কারণে হঠাৎ করেই ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। আজকে ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? এটা কি কোন অসুখের লক্ষণ? বিষয়ক আলোচনাটি আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। অর্থাৎ আজকের বিষয়টি যদি আপনার নিকট গ্রহণযোগ্য হলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন।

আরও পড়ুন: ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ

যাইহোক ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? তার জন্য মূলত জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। যেমন-Kegel ব্যায়াম করা, মানসিক চাপ বা উদ্বেগ হ্রাস, রাত্রে অতিরিক্ত তরল খাওয়া বর্জন, হাঁটাচলা বা শারীরিক ব্যায়াম, খাদ্যাভাস পরিবর্তন ইত্যাদি। সুতরাং ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? এটা কি কোন অসুখের লক্ষণ? বিষয়ক আলোচনায় আপনার যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। পরিশেষে ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? এটা কি কোন অসুখের লক্ষণ? বিষয়ক আর্টিকেলে আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি এবং সম্পৃক্ততার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।