তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী
সাধারণত তেজপাতা আমাদের নিকট রান্নার সাধ ও গন্ধ বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত একটি মশলা। কিন্তু এই তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী রয়েছে, সেগুলো আমরা অনেকেই জানিনা।
সুতরাং আজকে তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী বিষয়ক আলোচনায় জানা যাবে, তেজপাতায় কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাবলী রয়েছে। কেনই বা তা শরীরের জন্য উপকারী, কিভাবে তা আমাদের শরীরের কাজে লাগবে ইত্যাদি তথ্য সম্পর্কে।
পোস্ট সুচিপত্র: তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী (Various health benefits and properties of Bay Leaves)
তেজপাতার পুষ্টি গুণাবলীসমূহ
তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা
তেজপাতা ব্যবহারে সতর্কতা
তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী-পরিশেষে
তেজপাতার পুষ্টি গুণাবলীসমূহ:
তেজপাতার পুষ্টিগুণের মধ্যে অন্যতম হলো ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান, অ্যান্টিব্যাকটোরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি।
তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা: অর্থাৎ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী একজন ব্যক্তি যদি দিনে অন্তত ২ বার তেজপাতা গ্রহণ করে তাহলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়। কারণ তেজপাতায় থাকা উপাদানসমূহ ইনসুলিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে নিয়ন্ত্রণে রাখা। এক্ষেত্রে যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে তাদের জন্য তেজপাতা অত্যন্ত উপকারী।
আরও পড়ুন: শিশুদের রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল সমূহ
- হজম শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তেজপাতায় থাকা এনজাইম দ্রুত খাবার ভাঙতে পারে, যার ফলে যাদের অন্ত্রের সমস্যা আছে, তাদের জন্য তেজপাতা অত্যন্ত উপকারী। আসলে তেজপাতা শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং সেইসঙ্গে অতিরিক্ত প্রস্রাবের সমস্যা কমায় ও হজম রস তৈরিতে এটি উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে থাকে।
- ব্যথা উপশমের লক্ষ্যে তেজপাতায় থাকা উপাদানসমূহ যে কোনো ধরনের ব্যথা বা জয়েন্টের ব্যথা এবং বাতের ব্যথা উপশমে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও তেজপাতা ও রেড়ির পাতার পেস্ট যদি আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখা যায়, তাহলে ব্যথা কমে যায়।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তেজপাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে এবং সেইসঙ্গে সর্দি বা কাশি প্রতিরোধেও দারুণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
- মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে তেজপাতা পোড়ানোর গন্ধ্য কিন্তু মানসিক চাপ কমাতে দারুণ সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ তেজপাতার সুগন্ধ অত্যন্ত আরামদায়ক ও রিল্যাক্সিং হিসেবে পরিচিত।
- ত্বক ও চুলের যত্নে তেজপাতার পানি কিন্তু চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে থাকে এবং সেইসঙ্গে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা হ্রাস করতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
- সাধারণত যাদের আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টের ব্যথাজনিত সমস্যা আছে, তেজপাতায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি তাদের শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে।
- তেজপাতায় থাকা অ্যান্টিব্যাকটোরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমূহ ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে থাকে। উল্লেখ্য যে, এই উপাদানসমূহ ক্যান্ডিডার মত ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে।
- ঠান্ডাজনিত সমস্যা বিশেষ করে গলা খুশখুশ বা কাশির সমস্যায় ভোগেন তাহলে ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে তেজপাতা দারুণভাবে সাহায্য করে থাকে। অর্থাৎ ৪-৫টি তেজপাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে তা কুসুম কুসুম ঠান্ডা করে নিতে হবে। এরপর একটি পরিস্কার কাপড় পানিতে ভিজিয়ে কয়েকবার বুক মুছুন, তবে খেয়াল রাখতে হবে, পানি যেন খুব বেশি গরম না হয়।
আরও পড়ুন: যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে
- গবেষণায় দেখা গেছে, তেজপাতা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে সহায়তা করে থাকে। কারণ এতে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদানসমূহ এই ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। উল্লেখ্য যে, গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, তেজপাতা ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে থাকে।
- গবেষণার তথ্য অনুযায়ী তেজপাতা শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে থাকে। কারণ শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি কিডনির সমস্যাসহ অন্যান্য গ্যাসেরও সমস্যা তৈরি করে।
তেজপাতা ব্যবহারে সতর্কতা:
- সাধারণত অতিরিক্ত তেজপাতা খাওয়াটা ঠিক নই। কারণ অতিরিক্ত তেজপাতা খেলে তা হজমে সমস্যা হতে পারে। কারণ তেজপাতা পুরোপুরি হজম হয় না।
- আবার গর্ভবতী নারীদের তেজপাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ তেজপাতায় গর্ভবতী মা বা সদ্য মায়েদের প্রস্রাবের ইনফেকশন ঘটতে পারে।
- সাধারণত সার্জারি রোগীদের ক্ষেত্রে অন্তত দুই সপ্তাহ তেজপাতা খেতে নিষেধ করা হয় কারণ তেজপাতা স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী-পরিশেষে:
সাধারণত তেজপাতা রান্নায় মশলা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার তেজপাতা দিয়ে চা তৈরি করে তা পান করা যেতে পারে, সর্বোপরি তেজপাতা সামগ্রিকভাবেই স্বাস্থ্যকর, তবে সবসময়ই তা পরিমিত ব্যবহার করা উচিত। তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী বিষয়ক আলোচনাটি আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। আসলে তেজপাতা যে কোন খাবারেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে স্যুপ, পোলাও, বিরিয়ানি, মাছ-মাংস, বিভিন্ন তরকারি, সুজি, পায়েসসহ সব রান্নায়।
আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপে ডিলিট হওয়া মেসেজ দেখা
যাইহোক আজকের তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী সমূহ সম্পর্কে যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। তবে তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী সমুহ আলোচনায় বর্ণিত বিষয়গুলি যদি আপনার নিকট গ্রহণযোগ্য বা ভালো লাগলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতেও পারেন। পরিশেষে আজকের তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী সম্পর্কিত আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url