তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী
সাধারণত তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী রয়েছে, সেইসাথে তেজপাতার অপকারিতাসমূহ, তেজপাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াসমূহ এবং তেজপাতা নিরাপদে কীভাবে ব্যবহার যেতে পারে ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ে জানতে নিচের পরামর্শগুলি পড়ুন।
মূলত তেজপাতা আমাদের রান্নার কাজের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি মসলা, যা বিভিন্ন উপকারিতা ও পুষ্টিগুণাবলী সমৃদ্ধ।
পোস্ট সুচিপত্র: তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী
তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা
তেজপাতার পুষ্টি গুণাবলীসমূহ
তেজপাতার অপকারিতাসমূহ
তেজপাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াসমূহ
তেজপাতা কীভাবে নিরাপদ ব্যবহার করা যায়
তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী-পরিশেষে
তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা: অর্থাৎ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী একজন ব্যক্তি যদি দিনে অন্তত ২ বার তেজপাতা গ্রহণ করে তাহলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়। কারণ তেজপাতায় থাকা উপাদানসমূহ ইনসুলিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে নিয়ন্ত্রণে রাখা। এক্ষেত্রে যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে তাদের জন্য তেজপাতা অত্যন্ত উপকারী।
আরও পড়ুনঃ শিশুদের রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল সমূহ
হজম শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তেজপাতায় থাকা এনজাইম দ্রুত খাবার ভাঙতে পারে, যার ফলে যাদের অন্ত্রের সমস্যা আছে, তাদের জন্য তেজপাতা অত্যন্ত উপকারী। আসলে তেজপাতা শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং সেইসঙ্গে অতিরিক্ত প্রস্রাবের সমস্যা কমায় ও হজম রস তৈরিতে এটি উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে থাকে।
ব্যথা উপশমের লক্ষ্যে তেজপাতায় থাকা উপাদানসমূহ যে কোনো ধরনের ব্যথা বা জয়েন্টের ব্যথা এবং বাতের ব্যথা উপশমে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও তেজপাতা ও রেড়ির পাতার পেস্ট যদি আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখা যায়, তাহলে ব্যথা কমে যায়।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তেজপাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে এবং সেইসঙ্গে সর্দি বা কাশি প্রতিরোধেও দারুণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে তেজপাতা পোড়ানোর গন্ধ কিন্তু মানসিক চাপ কমাতে দারুণ সহায়তা করে থাকে। কারণ তেজপাতা পোড়ানোর সুগন্ধ অত্যন্ত আরামদায়ক ও রিল্যাক্সিং হিসেবে পরিচিত। যার ফলে তার মানসিক প্রশান্তি মিলে থাকে।
ত্বক ও চুলের যত্নে তেজপাতার পানি অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে এটি চুলের খুশকি দূর করতেও সাহায্য করে থাকে এবং সেইসঙ্গে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা হ্রাস করতে তেজপাতারর জুড়ি মেলা ভার। তাই রূপচর্চায় অনেকেই তেজপাতা ব্যবহার করে থাকে।
সাধারণত যাদের আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টের ব্যথাজনিত সমস্যা আছে, তেজপাতায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি তাদের শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে। সুতরাং বলাই বাহুল্য যে, শরীরে আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টের ব্যথাজনিত সমস্যার কারণে তেজপাতা অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদন।
তেজপাতায় থাকা অ্যান্টিব্যাকটোরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমূহ ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে থাকে। উল্লেখ্য যে, এই উপাদানসমূহ ক্যান্ডিডার মত ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে।
ঠান্ডাজনিত সমস্যা বিশেষ করে গলা খুশখুশ বা কাশির সমস্যায় ভোগেন তাহলে ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে তেজপাতা দারুণভাবে সাহায্য করে থাকে। অর্থাৎ ৪-৫টি তেজপাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে তা কুসুম কুসুম ঠান্ডা করে নিতে হবে। এরপর একটি পরিস্কার কাপড় পানিতে ভিজিয়ে কয়েকবার বুক মুছুন, তবে খেয়াল রাখতে হবে, পানি যেন খুব বেশি গরম না হয়।
আরও পড়ুনঃ যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে
গবেষণায় দেখা গেছে, তেজপাতা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে সহায়তা করে থাকে। কারণ এতে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদানসমূহ এই ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। উল্লেখ্য যে, গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, তেজপাতা ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে থাকে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী তেজপাতা শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে থাকে। কারণ শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি কিডনির সমস্যাসহ অন্যান্য গ্যাসেরও সমস্যা তৈরি করে। তাই যাদের এ ধরনের সমস্যা বিদ্যমান তাদের অবশ্যই নিয়মিত তেজপাতা গ্রহণ করাটা যুক্তিযুক্ত।
তেজপাতার পুষ্টি গুণাবলীসমূহঃ
তেজপাতায় উল্লেখযোগ্য পুষ্টিগুোবলী রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো-ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান, অ্যান্টিব্যাকটোরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যাবলী।
তেজপাতার অপকারিতাসমুহঃ
তেজপাতার নানাবিধ উপকারিতা থাকরেও এর রয়েছে অনেক অপকারিতা, যা নিম্নে বর্ণিত হলোঃ
অনেক মানুষের তেজপাতায় অ্যালার্জি হতে পারে। বিশেষ করে এর গন্ধ বা সরাসরি ব্যবহারের কারণে কিছু মানুষের অবশ্য ত্বকে অ্যালার্জি অথবা র্যাশ হতে পারে। তাই যাদের এই ধরণের সমস্যা বিদ্যমান বিশেষ করে তাদের অবশ্যই তেজপাতা রান্নায় ব্যবহার না করাই উত্তম।
সাধারণত গর্ভবর্তী নারীদের অবশ্যই অতিরিক্ত তেজপাতা খাওয়া কখনোই নিরাপদ নই। কারণ এতে করে জরায়ু সংকোচনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই গর্ভবতী থাকাকালীন নারীদের অন্তত অতিরিক্ত তেজপাতা খাওয়ার বিষয়ে অতীব সতর্কতা থাকতে হবে।
অনেক সময় অধিক পরিমাণে তেজপাতা খাওয়ার ফলে শরীর গরম হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে যাদের শরীর সাধারণত গরম থাকে, তাদের অবশ্য তেজপাতা কম খাওয়া উচিত। কেননা এতে হিতে বিপরীত হওয়ার ঝুঁকির প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অতিরিক্ত তেজপাতা খাওয়ার ফরে হজমজনিত সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। অনেকে অবশ্য পুরো তেজপাতাটা চিবিয়ে খেয়ে থাকে, এটা কিন্তু আরও বেশি বিপজ্জনক। কারণ তেজপাতা কখনোই অিতিরিক্ত বেশি পরিমাণে খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়।
সাধারণত যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের নিয়মিত ঔষধ খেতে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যদি নিয়মিত ঔষধের সঙ্গে অতিরিক্ত তেজপাতা খাওয়া হলে, কখনো কখনো তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়ে থাকে।
আবার গর্ভবতী নারীদের তেজপাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ তেজপাতায় গর্ভবতী মা বা সদ্য মায়েদের প্রস্রাবের ইনফেকশন ঘটতে পারে।
সাধারণত সার্জারি রোগীদের ক্ষেত্রে অন্তত দুই সপ্তাহ তেজপাতা খেতে নিষেধ করা হয় কারণ তেজপাতা স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে তেজপাতা পোড়ানোর গন্ধ ব্যবহার করে থাকে, যাতে মানসিক চাপ কমে। কারণ তেজপাতার সুগন্ধ অত্যন্ত আরামদায়ক ও রিল্যাক্সিং হিসেবে পরিচিত। এই কাজটি অবশ্যই করা যাবে না, কারণ তেজপাতা পুড়িয়ে তার ধোয়া শ্বাস নেয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে।
তেজপাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াসমূহঃ
মূলত তেজপাতার বিভিন্ন ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন-তেজপাতা বেশি পরিমাণে খেয়ে থাকলে তাতে করে ঘুম ঘুম ভাবের সৃষ্টি হয়ে থাকে, এছাড়াও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিও অনেক সময় কমে যেতে পারে। সিডেটিভ ঔষুধের সাথে যদি বেশি পরিমাণ তেজপাতা খাওয়া হয়ে থাকে, তাহলে শ্বাসকষ্ট বা অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাবের উদয় হতে পারে।
তেজপাতা কীভাবে নিরাপদ ব্যবহার করা যায়ঃ
তেজপাতার অন্যতম ব্যবহার হলো রান্নায়। অর্থাৎ রান্নার স্বাদ এবং ঘ্রাণের জন্য মূলত তেজপাতার ব্যবহারটা বেশি হয়ে থাকে। অর্থাৎ বেশির ভাগ তরকারিতেই কিন্তু তেজপাতার ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, রান্নায় ঘ্রাণ ও স্বাদের জন্য কিন্তু বেশি তেজপাতা ব্যবহার করার দরকার হয়না, ২-৩টি তেজপাতা একটি রান্নার জন্য কিন্তু যথেষ্ট।
অনেকেই তেজপাতা চায়ের মধ্যে দিয়ে অথবা এমনি পানিতে ফুটিয়ে পান করে থাকেন। কিন্তু  এই ধরণের অভ্যাসটি অবশ্যই ঘন ঘন করা যাবে না। সাধারণত তেজপাতা দিয়ে চা ফুটিয়ে দিনে ১-২ বার ব্যবহার করা যুক্তিসংগত, তবে এর বেশি ব্যবহার বা তেজপাতা চায়ের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে খেলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
যদি শরীরের কোন গুরুতর অসুখের জন্য তেজপাতা খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে, কেননা একমাত্র চিকিৎসকই পারেন সঠিক পরামর্শ দিক-নির্দেশনা দিতে।
সর্বোপরি তেজপাতা আমাদের শরীরের নানাবিধ উপকারিতা করে থাকে। কিন্তু কখনোই এই তেজপাতা বেশি পরিমাণে বা ভুলভাবে ব্যবহার করা যাবে না। এতে করে হজমের সমস্যা, অ্যাল্যার্জিজনিত সমস্যা অথবা অন্যান্য ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই পরিমিত পরিমাণ এবং সচেতনভাবে তেকপাতা ব্যবহার করলেই শুধুমাত্র এর উপকারিতা মিলবে।
তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী-পরিশেষেঃ
সাধারণত তেজপাতা রান্নায় মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার তেজপাতা দিয়ে চা তৈরি করে তা পান করা যেতে পারে, সর্বোপরি তেজপাতা সামগ্রিকভাবেই স্বাস্থ্যকর, তবে সবসময়ই তা পরিমিত ব্যবহার করা উচিত। অর্ধাৎ আজকের তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী বিষয়ক আলোচনায় তেজপাতার নানান উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, অপকারিতা এবং সর্বোপরি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াসমূহগুলো আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। আসলে তেজপাতা যে কোন খাবারেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে পোলাও, বিরিয়ানি, মাছ-মাংস, বিভিন্ন প্রকার তরকারিতে, সুজি, পায়েস, ডাল, শাক-সবজি, চা ইত্যাদি নানা ভাবে এবং নানা পদে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ হোয়াটসঅ্যাপে ডিলিট হওয়া মেসেজ দেখা
যাইহোক আজকের তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী সমূহ সম্পর্কে যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। তবে তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী সমুহ আলোচনায় বর্ণিত বিষয়গুলি যদি আপনার নিকট গ্রহণযোগ্য বা ভালো লাগলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতেও পারেন। পরিশেষে আজকের তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী সম্পর্কিত আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
 

 
   
 
 
 
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url