যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে

কিডনি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিন্তু আমাদের কিছু মাত্রাতিরিক্ত অভ্যাসের কারণে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই জানতে হবে, যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে সেই বিষয়গুলি।
মূলত কিডনি আমাদের শরীরর থেকে টক্সিন ও অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। আমাদের অবহেলা, উদাসীনতা অথবা খামখেয়ালীপনার কারণে নিজের অজান্তেই এমন কিছু অভ্যাস গড়ে তুলি, যা ধীরে ধীরে কিডনিকে নষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। সে কারণে আমাদের জানা দরকার যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে, প্রকৃতপক্ষে সেই অভ্যাসগুলি আসলে কি কি হতে পারে?

পোস্ট সূচিপত্র: যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে (Bad habits that can damage the kidneys)
পর্যাপ্ত পানি পান না করা
প্রস্রাব চেপে রাখা
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসে আসক্ত
উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস
ব্যথানাশক ঔষুধ সেবন
অতিরিক্ত ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন
অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
বংশগত কারণ
যেভাবে কিডনি ভালো রাখবেন
যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে-পরিশেষে

পর্যাপ্ত পানি পান না করা:

অনেকেই আছেন, যাদের পানি খেতেই দুনিয়ার কষ্ট। আবার এমন অনেকে আছেন, যারা প্রস্রাব করার ভয়ে পানিই খান না। অর্থাৎ পর্যাপ্ত পানি পানের কারণে শরীর থেকে বর্জ্য বের হয়ে কিডনি পরিস্কার বা সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুন: সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে

এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, কম পানি পান করলে তা কিডনিতে চাপ পড়ে এবং পাথরসহ নানা ধরণের অসুবিধার সৃষ্টি হয়ে থাকে। সাধারণত একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিদিন ২-৩.৫ লিটার পানি কোন না কোন ভাবে আমাদের পান করা উচিত।

প্রস্রাব চেপে রাখা:

অনেকেই আছেন, যারা কোন না কোন ইস্যুতে দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখে। এতে করে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রমের উপর তার প্রভাব পড়ে এবং কিডনির কার্যকারিতা কমতে থাকে।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসে আসক্ত:

সাধারণত কিডনি নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ। অর্থাৎ অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাদ্যগুলির মধ্যে, যেমন-অ্যাড সুগার, অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং সোডিয়াম থাকে, যা কিডনি নষ্টের জন্য অন্যতম। এ ছাড়াও বাইরে খোলা বা উন্মুক্ত স্থানে তৈরিকৃত অতিরিক্ত তেলে ভাজাপোড়া খাওয়া ইত্যাদি।

উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস:

যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং সেইসাথে ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের কিডনি নষ্ট হয়ে যাওযার ঝুঁকি অনেকাংশে বেশি থাকে। কেননা, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিযন্ত্রণ না করলে তা কিডনির জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে।

ব্যথানাশক ঔষুধ সেবন:

কিডনি নষ্ট হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো ঘন ঘন ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়া। অর্থাৎ অনেকেই আছে, যারা সামান্য ব্যথায়ও ঘন ঘন ব্যথানাশক ঔষধ খেয়ে থাকে। মূলত ঘন ঘন ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়ার ফলে কিডনির রক্তপ্রবাহ কমে যায় এবং ধীরে ধীরে কিডনি নষ্টের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

অতিরিক্ত ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন:

অনেকেই আছে, যারা ঘন ঘন বা খুবই নিয়মিত ধুমপান করে থাকে, আবার যারা মদ্যপানে অভ্যস্ত তারা ধীরে ধীরে মদ্যপানের মাত্রা বাড়াতে থাকে।

আরও পড়ুন: শুটকি মাছ শরীরের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর?

অর্থাৎ অতিরিক্ত ধুমপান ও মদ্যপানের কারণে কিডনির রক্তনালীকে সংকুচিত করে ফেলে এবং কিডনির টিস্যুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্বোপরি এতে কিডনি ফেইলিওরের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়া:

অর্থাৎ যারা তরকারির বাইরেও অতিরিক্ত লবণ খেয়ে থাকে, সাধারণত তাদের রক্তচাপ বাড়ে, আর এ কারণে সরাসরি কিডনির ক্ষতি করে থাকে। দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে তা কিডনিকে দুর্বল করে তোলে।

বংশগত কারণ:

অনেক সময় জন্মগত এবং বংশগত কারণেও কিডনিজনিত সমস্যা হতে পারে। যেমন-মুত্রতন্ত্রের প্রদাহ, কিডনিতে পাথর ইত্যাদি।

যেভাবে কিডনি ভালো রাখবেন:

  • অর্থাৎ পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন ২ থেকে ৩.৫ লিটার পানি কোন না কোন ভাবে পান করতে হবে।
  • কিডনি সুস্থ্য রাখার জন্য ধুমপান ও অ্যালকোহল সেবন পরিহার করতে হবে।
  • দীর্ঘসময় ধরে প্রস্রাব চেপে রাখা যাবে না।
  • যেন তেন ভাবে ব্যথানাশক ঔষধগুলি সেবন বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমেই ঔষধ সেবন করতে হবে।
  • সাধারণত যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • যে কোন ভাবেই হোক না কেন অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে।
  • কিডনিকে ভালো এবং সুস্থ্য রাখতে চাইলে স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। যেমন-বিভিন্ন ফল, শাকসবজি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য বেশি বেশি করে খেতে হবে।
  • বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • অতিরিক্ত তৈলাক্ত বা খোলাস্থানে তৈরিকৃত খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না।

যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে-পরিশেষে:

সুস্থ্য থাকতে চাইলে সচেতন হতে হবে, নিয়মানুযায়ী খাদ্য-খাবার গ্রহণ করতে হবে। আশাকরি, যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে এবং কিভাবে এই ধরণের সমস্যা থেকে ভালো থাকা যায় ইত্যাদি বিষয়গুলো উপরোক্ত বিষয়গুলি থেকে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন: কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক

অর্থাৎ যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে বিষয় সম্পর্কে আপনার কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং প্রদত্ত পরামর্শগুলি যদি ভালো লাগে তাহলে তা অবশ্যই অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। মূলত কিডনি সুস্থ্য রাখতে চাইলে সঠিক সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান, শারীরিক পরিশ্রম বা নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং সর্বোপরি যে কোন সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে আপনার কিডনিকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করবে। যাইহোক, আজকে যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে বিষয়ের সাথে আপনার দীর্ঘক্ষণ সম্পৃক্ততা ও উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।