নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন?

নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন? বলতে, বেশির ভাগ নারীদের মধ্যে কিডনি রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলি সম্পর্কে অসচেতনতা এবং উদাসীনতা কাজ করে থাকে।
অর্থাৎ, এর ফলে রোগ ধরা পড়তে অনেক সময় লেগে যায়। যার ফলাফল প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ৬ লক্ষ নারীর মৃত্যু হয় শুধুমাত্র কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে। তাই নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন? তা জানতে নিচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্র: নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন? (Why are women at higher risk of kidney disease?)
ভূমিকা
চিকিৎসার প্রতি অনীহা
অতিরিক্ত স্থুলতা
উচ্চ রক্তচাপ
ডায়াবেটিজনিত সমস্যা
গর্ভাবস্থায় জটিলতা
সুনির্দিষ্ট অসুখের প্রভাব
কিডনিতে পাথর
মূত্রনালীর সংক্রমণ
কিডনি রোগের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ
কীভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে
নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন?-শেষ কথা

ভূমিকা:

কিডনি রোগ একটি ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। অর্থাৎ বিভিন্ন সময়ে নানা ধরণের উপসর্গগুলি এড়িয়ে যাওয়ার কারণে কিডনির ক্রনিক অসুখ তা ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করতে থাকে।

আরও পড়ুন: জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত?

ফলে শরীরে যখন বৃহৎ আকারে এর লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়, তখন দেখা যায় এই ক্রনিক ডিজিজটি শরীরের অনেকটাই ক্ষতি সাধিত করে ফেলেছে। অর্থাৎ নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন? তার সম্ভাব্য কারণগুলি নিম্নে বর্ণিত হলো:

চিকিৎসার প্রতি অনীহা:

সাধারণত প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত নারীরা অসুস্থ হলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট তেমন একটা যান না। তারা সাধারণ অসুখ ভেবে কিছু ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করে থাকেন। আর এতে করে রোগ ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করে।

অতিরিক্ত স্থুলতা:

কিডনি রোগের আরেকটি অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত স্থুলতা। এই অতিরিক্ত স্থুলতা বা ওজন কিন্তু কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট করে। সাধারণত বেশির ভাগ নারীই সন্তান প্রসব পরবর্তী সময়ে বেশ মোটা বা স্থুল হয়ে যান, আবার অনেকে বিভিন্ন জন্ম নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার ফলেও মোটা হয়ে যেতে থাকেন।

উচ্চ রক্তচাপ:

সাধারণত ৩০ বছরের পর শরীরে নানারকম রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ ত্রিশ বছরের বেশী বয়সী নারীদের সাধারণ ঝুঁকিগুলির মধ্যে অন্যতম উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি। আর এই উচ্চ রক্তচাপ কিন্তু কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।

ডায়াবেটিজনিত সমস্যা:

শরীরে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি ছাড়াও ডায়াবেটিও কিডনি রোগের ঝুঁটির আরেকটি অন্যতম কারণ। অর্থাৎ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে তা কিডনির রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় জটিলতা:

সাধারণত অন্তঃস্বত্ত্বা অবস্থায় কোন নারীর যদি বারবার ইউরিন ইনফেকশন বা রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তা কিডনির ঝুঁকি বাড়াতে সহায়তা করে থাকে।

সুনির্দিষ্ট অসুখের প্রভাব:

অর্থাৎ লুপাস নেফ্রাইটিস (যা এক ধরণের অটোইমিউন রোগ বলে) এবং ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন মেয়েদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। তাই এর ফরেও কিডনির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্ভাবনাটকে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।

কিডনিতে পাথর:

হরমোনজনিত কারণে, খাদ্যাভ্যাস বা বংশগত কারণে অনেক সময় নারীদের কিডনিতে পাথর জমা হয়। এর ফলে পিঠে বা পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়, প্রস্রাবে রক্ত পড়ে এবং ঘন ঘন প্রসাব হতে থাকে।

মূত্রনালীর সংক্রমণ:

অর্থাৎ পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যেই ইউটিআই সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। সাধারণত মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে ইউটিআইয়ের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক খাদ্যগুলি কী কী?

যার ফলে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রসাব, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়া, পেটে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা দিয়ে থাকে।

কিডনি রোগের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ:

নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন? তার কারণ হিসেবে এর উপসর্গ বা লক্ষণগুলি উপেক্ষা করলেই তা বয়ে আনতে পারে বড় ধরণের সমস্যা। কারণ কিডনি রোগ কিন্তু ধীরে ধীরে শরীরে প্রভাব ফেলে। প্রাথমিক লক্ষণগুলি যেমন-মাথা ব্যথা বা বমি বমি ভাব, প্রচণ্ড ক্লান্তি বা দুর্বলতা লাগা, প্রস্রাবের রঙ বা গন্ধে পরিবর্তন, হাত-পা বা চোখ ফুলে যাওয়া, অস্বাভাবিকভাবে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। তবে উপরোক্ত সমস্যাগুলির যে কোনটা দেখা দিলে দেরী না করে দ্রুত চিকিৎসকের যোগাযোগ করতে হবে।

কীভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে:

পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দিনে কতটুকু পরিমাণ পানি পান করতে হবে বা করা যাবে, তা জেনে নিতে হবে।

ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তা ছাড়াও অতিরিক্ত লবণ ও চিনি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে।

খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। অর্থাৎ পরিমিত আহার গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করাই উত্তম। আসলে মাছ, মাংস বা ডিম ইত্যাদি খাদ্যগুলো দুর্বল কিডনির উপর বাড়তি চাপ ফেলে থাকে, খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতা অত্যন্ত জরুরী।

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে সর্বপ্রথম ধুমপান ও অ্যালকোহলের অভ্যাস বাদ দিতে হবে।

সর্বোপরি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। অর্থাৎ যাদের ডায়াবেটিস বা রক্তচাপ আছে, তাদের বছরে অন্তত একবার অবশ্যই ইউরিন টেষ্ট, ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন ও অ্যালবুমিন পরীক্ষা করাতে হবে।

নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন?-শেষ কথা:

মূলত কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কারণ কিডনি আমাদের শরীরের বিষাক্ত উপাদানগুলি বের করে দিয়ে শরীর সুস্থ্য রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বলাই বাহুল্য যে, নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন? হিসেবে নারীদের নিজেদের স্বাস্থ্য বিষয়ে উদাসিন না থেকে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সর্বোপরি সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

আরও পড়ুন: ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ

আশাকরি আজকের আর্টিকেলে নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন? বা কিভাবে এটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে তা জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আসলে কিডনিকে ভালো রাখতে অবশ্যই নারীদের স্বাস্থ্যকর জীবনধারায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনমতেই অবহেলা, উদাসীনতা, গুরত্ব না দেয়া ইত্যাদি বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। সবসময় হাইড্রেটেড থাকা, সঠিক সময়ে এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শরীরচর্চা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। যাইহোক আজকের নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন? বিষয়ক আলোচনায় আপনার যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ প্রদান করতে চান তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং সেইসঙ্গে নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন? সম্পর্কিত আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ অংশগ্রহণ বা উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
__________________________________________________________________________________
বি.দ্র.: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যে জন্য অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url