ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ

আজকাল যে কোন ঠুনকো কারণেই সম্পর্ক ভেঙে যায় বা যাচ্ছে। কিন্তু এই ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ নিয়ে রয়েছে বিস্তর মত পার্থক্য।
আসলে সম্পর্ক এমন একটি বিষয়, যা আমাদের প্রতিনিয়তই মনে করিয়ে দেয় যে, আমি একা নই। সম্পর্ক মানেই অতি চেনা-পরিচিত ও সুনির্দিষ্ট একটি গণ্ডি, যেখানে প্রবেশাধিকার শুধুমাত্র আমারই আছে, সম্পর্ক মানেই একটি স্বপ্ন, একটি আশা-প্রত্যাশা ইত্যাদি। তাই এতো মহামূল্যবান বিষয়টি, অর্থাৎ ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ জানতে নিচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ (Strategies for mending broken relationships)
ভূমিকা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি বন্ধ করে দিন
ক্ষমা করার অভ্যেস গড়ে তোলা
ভুল মেনে নেয়া
পর্যাপ্ত সময় দেয়া
ভাগাভাগি করে কাজ করা
ফোনো নয় সাক্ষাতে কথা বলুন
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যোগাযোগ বন্ধ রাখুন
ঘন ঘন রাগ করা যাবে না
সঙ্গীর প্রশংসা করা
শারিরীক অক্ষমতা
খোলামেলা আলোচনা বা কথা বলা
নিজকে পরিবর্তনে প্রস্তুত থাকা
অল্পে সন্তুষ্ট থাকার অভ্যেস
একে অন্যের প্রয়োজন বুঝতে চেষ্টা করা
সচেতন হওয়া
ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ-শেষকথা

ভূমিকা:

সম্পর্ক হচ্ছে নদীর মত বহমান। অর্থাৎ সোজা হয়ে যেতে থাকার ভিতরেই মাঝে-মধ্যে বাঁকা, আবার কোন স্থানে গভীরতা বেশি, তো কোন স্থানে গভীরতা কম, আবার চলতে চলতে অন্য কোন নদীর সাথে মিলিত হওয়া। আবার এই নদীর জোয়ার ভাটাও আছে। যাইহোক প্রসঙ্গ হলো ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া খুবই কষ্টের, আর এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেকেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন এবং বিপথে চালিত হওয়ার পথ অনুসরণ করে থাকেন। কিন্তু এই ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক আবার গড়ে তোলা যায়, যদি উভয় পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব বা বোঝাপড়া থাকে।

আরও পড়ুন: ভালোবাসা আর প্রেম কী একই বিষয় না আলাদা, ভালোবাসা ও প্রেমের মধ্যে পার্থক্য কি?

সম্পর্ক ততক্ষণ পর্যন্ত জোড়া লাগানো সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না একে অপরের ভুল, অভিমান বা নিজেদের মধ্যে দূরত্ব কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। আসলে পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব বা আশেপাশের মানুষ অনেক সময় তাদের নিজের অজান্তেই নেতিবাচব প্রভাব ফেলতে পারে, তাই সম্পর্ক জোড়া লাগাতে অবশ্যই একে অপরকে দীর্ঘ সময় দেয়া, ধৈর্য্যশীল হওয়া এবং সর্বোপরি একে অপরের কথা শোনা ও বোঝা। মোট কথা হলো, সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকেই শুরু হয় ভাঙনের এবং এতে করে ধীরে ধীরে মানুষের সম্পর্কের ভিতকে দুর্বল করে ফেলে। তবে সম্পর্ক ভেঙে গেলেই যে তা শেষ হয়ে যায় তা নয়, কিছু কৌশল রপ্ত করলেই কি কিন্তু ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানো সম্ভব হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি বন্ধ করে দিন:

ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ হিসেবে সর্বপ্রথম বিভিন্ন রকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো তেকে ব্রেক নিন। কারণ দিনের অধিকাংশ সময়ে মানুষ এইসব ভার্চুয়াল জগতে থাকার ফলে সম্পর্কের গুরুত্ব অনেকটা কমে যেতে থাকে। তাই সম্পর্কে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হলে অবশ্যই সব ধরণের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে একটু দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

ক্ষমা করার অভ্যেস গড়ে তোলা:

সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গেলে অবশ্যই দুইজনের মধ্যে একজনের ক্ষমা করার অভ্যাস বা মানসিকতা থাকতে হবে, আর তা না হলে সে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে।

ভুল মেনে নেয়া:

আসলে দুজনে একসাথে থাকতে, চলতে বা ফিরতে ভুল হতেই পারে। এক্ষেত্রে সাধারণত ছোট-খাট ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কারণে এই ধরনের ছোট ছোট ভুলগুলো মনে রাখায় তা একসময় বড় আকারে বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

পর্যাপ্ত সময় দেয়া:

সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সময় দেয়াটা অতীব জরুরী। একে অপরের সান্নিধ্যে সময় কাটানো এবং বিশেষ করে সম্পর্ক ভেঙে গেলে অবশ্যই সময় দেয়াটা অত্যন্ত জরুরী।

ভাগাভাগি করে কাজ করা:

সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে এটি একটি অন্যতম মাধ্যম। অর্থাৎ দুজন নর-নারী একসঙ্গে ঘরের যাবতীয় কাজগুলো ভাগ করে নিন। হতে পারে সেটা রান্না বা বিছানার মশারী টাঙানো বা অন্যান্য কাজ। যে কোন কাজ দুজনে একসঙ্গে করলে তা সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভীত তৈরী করে এবং দুরত্বও ঘুচে যায়।

ফোনো নয় সাক্ষাতে কথা বলুন:

অনেক সময় মনোমালিন্য তৈরি হলে, সেক্ষেত্রে অবশ্যেই ফোনে কথা না বলে সরাসরি দেখা করে কথা বলার চেষ্টা করুন। আসলে সামনাসামনি দেখা হলে অনেক জটিল বিষয়ও সহজ হয়ে যায়।

নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যোগাযোগ বন্ধ রাখুন:

দুইজনের মধ্যে ঝগড়া বা মনোমালিন্য হলে, কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন। কারণ শূন্যতা বা দূরত্ব অনেক সময় সম্পর্ককে গভীর করে তোলে, অনেক ক্ষেত্রে তা আবার নতুন করে শুরু করতে সহায়তা করে থাকে।

ঘন ঘন রাগ করা যাবে না:

সম্পর্কের টানাপোড়েনে একে অপরজনের প্রতি ঘন ঘন রাগ করা যাবে না। চেষ্টা করবেন একে অপরের প্রতি ছোট-খাট বিষয়ে যাতে রাগ না হয়।

আরও পড়ুন: আবেগ কী অভ্যন্তরীণ না বাহ্যিক ও ভালোবাসা আর প্রেম কী আবেগেরই একটি অংশ

আসলে রাগের মাথায় একজন অপরজনকে যদি আপত্তিকর কিছু বলেও থাকে, তা সেটাতে কিছু মনে না করে রাগ সংবরণের চেষ্টা করুন। কারণ রাগের মাথায় যে কোন ধরণের বড় সিদ্ধান্ত না নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

সঙ্গীর প্রশংসা করা:

যদি কোন কারণে আপনার সম্পর্ক ভেঙেও যায়, তাহলেও সঙ্গীর প্রতি আপনার ভাল লাগার বিষয়গুলোর জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। চেষ্টা করুন তার ভালো সব গুণের প্রশংসা করতে। ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ এর মধ্যে এটিও অন্যতম।

শারিরীক অক্ষমতা:

সম্পর্কের একটি ইতিবাচক দিক হলো যৌন সম্পর্ক। অর্থাৎ যে কোন প্রেমঘটিত সম্পর্কে যৌনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই কোন কারণে যদি সম্পর্কে অশান্তি তৈরি হয়, তাহলে একে অপরের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে দুজনে একসঙ্গে অনেক সময় কাটান, এমন পরিস্থিতি তৈরি করেন, যাতে অপরের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে নিজেদের ক্ষতগুলোকে সারিয়ে নিতে পারেন।

খোলামেলা আলোচনা বা কথা বলা:

সম্পর্ক মজবুত করতে নিজেদের আন্তরিক ও খোলামেরা আলোচনা খুবই জরুরী। এতে করে দুজনের সাথে মানসিক বোঝাপড়া সমস্যার সমাধান অনেকটা হয়ে যায়।

নিজকে পরিবর্তনে প্রস্তুত থাকা:

সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে দুজনের মধ্যে যে কেউ একজনকে মানিয়ে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। অর্থাৎ আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বা আচরণে নমনীয়তা থাকতে হবে।

অল্পে সন্তুষ্ট থাকার অভ্যেস:

অর্থাৎ দুজনের মধ্যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অল্পে তুষ্ট থাকার মানসিকতা পোষণ করতে হবে। কেননা, দুজনের চাহিদাই যদি অতি বেশী হয়ে উঠে বা কেউ কোন বিষয়ে ছাড় না দেয়ার মানসিকতা থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই অল্পে সন্তুষ্ট থাকাটা ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ হয়ে উঠতে পারে।

একে অন্যের প্রয়োজন বুঝতে চেষ্টা করা:

অর্থাৎ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই একে অপরের চাহিদা এবং আবেগকে গুরুত্ব দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে, আমার সঙ্গী/সঙ্গীনিটি কিসে সুখী হোন বা কীভাবে আরামবোধ করেন ইত্যাদি।

সচেতন হওয়া:

সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে নিজেদের সম্পর্কে বা নিজেদের বিষয়ে সচেতন হোন। অর্থাৎ সম্পর্ককে পরিণতি দিতে নিজেরা নিজেদের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকার চেষ্টা করুন। একে অপরের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, ঠিক কীভাবে চললে সম্পর্ক সঠিক দিশায় এগোবে।

ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ-শেষকথা:

হাতে লেখা চিঠির যুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে ফেসবুক, ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপস, মেসেঞ্জার, ইমো, টেলিগ্রাম এর যুগ চলছে। অর্থাৎ আগের থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন দ্রুত বা খুব অল্প সময়ে সম্ভব হয়েছে, আর ঠিক এ কারণেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। ঠিক তেমনই আবার অহরহ সম্পর্ক ভেঙেও যাচ্ছে। । মূলত সম্পর্ক করতে কিন্তু অনেকটা সময় লাগে আর ভাঙতে মাত্র কয়েক মুহুর্ত। বিষয়টি অনেকেই জানেন। অর্থাৎ ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ নিয়ে উপরে বিস্তারিত আলোচনা ও বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। উপরোক্ত আলোচিত বিষয়গুলি আমরা অনেকেই জানি, বুঝি এবং মেনেও চলার চেষ্টা করি, তারপরেও কিছু বিষয় থেকেই যায়, যা নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: কাঠের আসবাবপত্র ঝকঝকে রাখার উপায়

কিন্তু তারপরেও আমাদের মানিয়ে নেয়ার চেষ্টাটা অন্তত করা উচিত। আসলে অবিশ্বাস, প্রতরণাসহ নানা কারণে ধীরে ধীরে সম্পর্কের অবনতি ঘটে থাকে। তাই ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ হিসেবে আপনাকে সচেতনতার মাধ্যমে এবং ভালোবাসা ও বিশ্বাসের ওপর ভর করেই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হবে। যাইহোক আজকের আর্টিকেলে ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ বিষয় সম্পর্কে আপনার যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। পরিশেষে ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি ও সম্পৃক্ততার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আজকের বর্ণিত ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ আলোচনাটি অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।