জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত?

প্রায়শঃই জ্বর হলে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে একটা জটিলতার সৃষ্টি হয়। আসলে জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত? তা জানতে হবে।
বর্তমানে আবহাওয়াজনিত কারণে প্রায়ই ঘরে ঘরেই জ্বরের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড ও সাধারণ ভাইরাল জ্বর এই সময়টাতে অত্যন্ত ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। আর এই জ্বরগুলোতে প্রধান সমস্যা হচ্ছে খাওয়া-দাওয়া। তাই জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত? তা জানতে নিচের লেখাটি পড়তে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত? (What should you eat to recover quickly from a fever?)
ভূমিকা
জ্বর কেন হয়?
জ্বর কত ধরণের হয়?
জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত?
জ্বর হলে যে খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা
জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত?-শেষ কথা

ভূমিকা:

ঋতুর বার্তাবরণে বর্ষাকালের শেষ সময় অর্থাৎ শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে, আর ঠিক এই সময়ে ঘরে ঘরে দেখা দিচ্ছে জ্বরের প্রকোপ। WHO-এর তথ্য মতে, প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষ জ্বর সংক্রান্ত সমস্যায় দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক দুর্বলতা ও নানাবিধ জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

আসলে এর অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস। মূলত শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খাদ্যাভাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর জ্বর হলে সবথেকে বড় সমস্যা তৈরি হয় খাওয়ায় অরুচি। তাই আজকে জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত? সে বিষয়গুলোসহ কোন জ্বরের জন্য কি কি খাওয়া উচিত ইত্যাদি সমস্ত বিষয়গুলোই জানতে হবে।

জ্বর কেন হয়?

সাধারণত শরীরের রোগ প্রতিরোধের কোন একটি অংশ দুর্বল হয়ে গেলে তখন তা কোন রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। আর এটি শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেড়ে যাওয়াকে বোঝায়। তবে বিভিন্ন কারণে জ্বর হতে পারে, যেমন-সংক্রমণজনিত, অ্যালার্জিজনিত, মানসিক চাপের কারণে এবং কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ বা টিকার কারণেও জ্বর হতে পারে।

জ্বর কত ধরণের হয়?

সাধারণত জ্বরের কারণ, উপসর্গ, তীব্রতা এবং সময়কালের উপর ভিত্তি করে জ্বরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। তবে জ্বরকে ভাইরাল জ্বর (যা ৩-৭ দিন স্থায়িত্ব), ব্যাকটেরিয়াল (দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে) জ্বর ও ম্যালেরিয়া (২৪, ৪৮ বা ৭২ ঘন্টা হতে পারে) মত রোগের সাথে সম্পর্কিত জ্বর হিসেবেই মূলত ভাগ করা হয়ে থাকে। আবার জ্বরগুলোর তীব্রতা বা শরীরের তাপমাত্রা অনুযায়ী শ্রেণী বিভাজন, যেমন-সামান্য জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) হতে পারে আবার উচ্চ জ্বরের জন্য শরীরের তাপমাত্রা ৩৯.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (১০৩.১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) হতে পারে।

জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত?

ভাইরাল বা সাধারণ জ্বর:
এই জ্বরগুলোতে সাধারণত জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা এবং ডায়রিয়াজনিত সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য (যেমন-পেয়ারা লেবু) ভিটামিন এ জাতীয় খাদ্য (যেমন-গাজর, মিষ্টি কুমড়া, মধু, পাকা আম ও কলিজা), জিংক জাতীয় খাদ্য (যেমন-ডিম, আল্মন্ড বাদাম, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, কারোজিরা) ইত্যাদি খেলে শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যক্ষমতা বাড়ে।

এ ছাড়াও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড জাতীয় খাদ্য, যেমন-সামুদ্রিক মাছ, চিয়া সিড, আখরোট, কাঠবাদাম ইত্যাদি। আবার প্রাকৃতিক ডিটক্স ও হোম রেমেডি মধু, আদা, কালোজিরা ইত্যাদির মধ্যে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে। সবথেকে বড় বিষয় হলো নিরাপদ পানি পান, অর্থাৎ টাইফয়েড বা ডায়রিয়ার ৭৫% সংক্রমণ হয়ে থাকে দূষিত পানির কারণে। তবে অসুস্থ্য থাকাকালীন সময়ে সহজযোগ্য পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। যেমন-সিদ্ধ ভাত বা নরম খিচুরি, মুরগির ঝোল বা চিকেন স্যুপ, ফ্রেশ ফলের শরবত ইত্যাদি।

ব্যাকটেরিয়া জনিত জ্বর:
টাইফয়েড একটি এন্টারিক ফিভার ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। এই ধরণের জ্বরের ফলে অন্ত্রে প্রদাহ, জ্বর, দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা এবং দীর্ঘস্থায়ী পুষ্টিহীনতা দেখা দিয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ

এই জ্বরের খাদ্য হিসেবে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার, যেমন-ভাতের মাড়, সিদ্ধ ওটস, মিষ্টি আলু, সুজি, কলা, চাল ও মুগের ডালের নরম পাতলা খিচুরি খাওয়া যেতে পারে। তা ছাড়াও হালকা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য, যেমন-ডিমের সাদা অংশ, ঝোল জাতীয় মাছ বা মুরগির স্যুপ ইত্যাদি। তবে ডায়রিয়া ও বমি থাকলে ওআরএস স্যালাইন সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে পারে।

ম্যালেরিয়া জ্বর:
ম্যালেরিয়া জ্বর সাধারণত মশা দ্বারা ছড়ায়। এই জ্বরে কাঁপুনি, জ্বর এবং শরীরে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত এই ধরনের অসুখের জন্য ভিটামিন এ, সি এবং জিংক জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে এবং সেইসাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ভিটামিন এ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে গাজর, পেপে, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি। আবার ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারা, যেমন-লেবু, কমলা, পেয়ারা, আমলকী ইত্যাদি। জিংক সমৃদ্ধ খাবার, যেমন-ডিম, মাংস, বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাদ্যসহ ভাত, রুটি এবং সবজি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে।

জ্বর হলে যে খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা:

সাধারণত আবহাওয়াজনিত পরিবর্তনের কারণেও বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে। আর সে কারণেই জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত? এমন প্রশ্নে সব খাবারই যে খাওয়া যাবে সেটা সঠিক নয়। অর্থাৎ জ্বর হলে যে সমস্ত খাওয়া যাবেনা তা নিম্নে বর্ণিত হলো:

পনির: সাধারণত পনিরে হিস্টামিন এক ধরণের রাসায়নিক থাকায় তা অ্যালার্জনের সংস্পর্শে এলেই তা ইমিউন সিস্টেমের মাধ্যমে শরীরের নির্গত হয়। পনির ছাড়াও অনেক খাবারে হিস্টামিন পাওয়া যায়, তাই জ্বর হলে এ ধরনের খাবারগুলি এড়িয়ে যেতে হবে।

দুগ্ধজাত দ্রব্য: আসলে দুগ্ধজাতীয় দ্রব্যগুলি শরীরে শ্লেষ্মা বাড়িয়ে থাকে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, শস্যের সঙ্গে পনির এবং দুগ্ধজাত খাবারগুলি নাকে শ্লেষ্মা বাড়ায়, যা ব্লকেজ সৃষ্টি করে থাকে। এক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে গরুর দুধের পরিবর্তে চায়ে বাদাম বা ওটস মিল্ক যোগ করতে হবে।
অ্যালকোহল: সাধারণত অ্যালকোহরে হিস্টামিন থাকে। এর ফলে জ্বর হলে চোকের চুলকানি বাড়ে এবং গন্ধের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

মিষ্টি: চিনি বা প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলি শরীরে হিস্টামিন তৈরি করে এবং এটি জ্বরের লক্ষণগুলোকে বাড়িয়ে দিতে পারে।

ফল ও সবজি: সাধারণত জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হজমের সমস্যা ও খাবারের অ্যালার্জি থাকতে পারে। জ্বর থাকাকালীন সময়ে অনেকের তাজা ফল খেলে গলায় চুলকানি, কানে চুলকানি, জিভ বা ঠোঁট ফুলে যাওয়ার মতোও সমস্যা তৈরী হতে পারে। তাই জ্বরের সময় এ ধরণের সমস্যা তৈরী হলে তা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত?-শেষ কথা:

সাধারণত জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত? হিসেবে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য-খাবার, সবজি দিয়ে স্ট্রু এবং রসুনও কাঁচা বা প্রক্রিয়াকরণ করেও তা খাওয়া যেতে পারে। আসলে আবহাওয়ার কারণে বর্তমানে প্রায়ই ঘরে ঘরে জ্বর সংঘটিত হচ্ছে, তাই সুস্থ্য থাকার জন্য যেমন দরকার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, ঠিক তেমনি প্রয়োজনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ।

আরও পড়ুন: হ্যাকিং কি? হ্যাকিং করে কীভাবে? হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে

আজকের জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত? বিষয়ক আলোচনা সম্পর্কে যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আর সবথেকে বড় বিষয় হলো সচেতন থাকা এবং সময়মত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। পরিশেষে জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত? সম্পর্কিত আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

বি.দ্র.: তবে যে কোন ধরণের অসুখ হলে সর্বাগ্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url