মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
সেই প্রাচীনকাল থেকেই মধু আমাদের বিভিন্ন খাদ্যের সাথে জড়িত। তাই এই মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা এর সম্পর্কে জানবো।
আসলে মধু এমন একটি খাবার, যেটি সব বয়সের সবাই খেতে পারে। মধু শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং নিয়মিত মধু খেলে শরীরের অনেক রোগ-বালাই হতে মুক্ত থাকা যায়। তাই মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-র বিষয়ে নিচের বর্ণনাগুলি ধৈর্য্য সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র: মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা (All the nutritional properties and benefits of Honey)
মধুর ভিটামিন শক্ত
সবচেয়ে ভালো মধু
ভালো মধু চিনবেন কি করে?
সকালে খালি পেটে মধু খেলে কী হয়
মধুর উপকারিতাসমূহ
মধু খাওয়ার অপকারিতা
মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-শেষ কথা
মধুর ভিটামিন শক্তি:
মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-র মধ্যে যে সমস্ত ভিটামিন রয়েছে তা হলো-ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি ছাড়াও আরও রয়েছে গ্লুকোজ, সুক্রোজ, ২২ শতাংশ অ্যামিনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ, ১১ ভাগ এনজাইম, ফ্রুকটোজ, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল ইত্যাদি।
সবচেয়ে ভালো মধু:
সাধারণত মধু ভালো বা খারাপ নির্ধারিত হয়ে থাকে ব্যক্তি বিশেষের পছন্দের উপর। কারণ যার কাছে যেটা ভালো লাগে। কারো কাছে লিচু ফুলের মধু, আবার কারো কাছে সরিষা ফুলের মধু। তবে সবচেয়ে ভালো মধু হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মানুকা মধুকে ধরা হয় এবং সেইসাথে সুন্দরবনের মধু (খালিশা ফুলের মধু)।
ভালো মধু চিনবেন কি করে?
সাধারণত ভালো মধু চিনবার জন্য বেশ ট্রিকস আপনি অ্যাপ্লাই করতে পারেন, যেমন-পানির সাথে মিশিয়ে, কাপড়ে লাগিয়ে, গন্ধ শুঁকে, স্বাদ গ্রহণ এবং ফেনা ও বুদবুদ ওঠা পর্যবেক্ষণ করা। অর্থাৎ মনে করুন এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মধু ঢেলে দিন, যদি মধুটি সেই পানির সাথে সম্পূর্ণই মিশে যায়, তাহলে বুঝবেন মধুটি ভেজাল, আর যদি মধুটি ছোট ছোট দানার মতো ছড়িয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন মধুটি খাঁটি।
সকালে খালি পেটে মধু খেলে কী হয়:
সাধারণত প্রতিদিন যদি সকালে খালি পেটে মধু খেতে পারেন, তাহলে শরীরের হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, শরীর ডিটক্স হয় এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। এ বাদেও মধু শরীরের শক্তি যোগাতে এবং যৌন স্বাস্থ্যেরও উন্নতিতে সহায়তা করে থাকে।
মধুর উপকারিতাসমূহ:
মধু শরীরে তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। সাধারণত মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে। অর্থাৎ মধুতে যে পরিমাণে শর্করা থাকে, তা খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। এর অন্যতম কারণ হলো, মধুতে যে ডেক্সট্রিন নামক উপাদান থাকে, তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তা তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করে।
আরও পড়ুন: আমলকির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাসমূহ
- মধুতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বিদ্যমান, তাই এটি ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সহজেই দূর করতে সহায়ক। সকালে বা ভোরে যদি ১ চা-চামচ খাঁটি মধু খেতে পারেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও অম্লতা দূর হয়।
- মধুতে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ থাকায় তা রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে থাকে।
- সাধারণত যাদের অনিদ্রাজনিত সমস্যা আছে, তাদের যদি রাতে শোবার আগে এক গ্লাস পানিতে দুই চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারলে তা গভীর ঘুমের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
- মধু দাঁতের ক্ষয়রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ তা দাঁতের ওপরে ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করে এবং সেইসঙ্গে দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং সর্বোপরি দাঁত পড়ে যাওয়ার হাত থেকে অনেকটাই সহায়তা করে।
- মধু মুখ গহ্বরের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অর্থাৎ মুখের মধ্যে ঘায়ের জন্য গর্তের সৃষ্টি হলে মধু সেই গর্ত ভরাট করতে সহায়তা করে থাকে এবং সে স্থানে পুঁজ জমতে দেয় না। এ ছাড়াও মধুমিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির ব্যথা দূর হয়।
- মধু সাধারণত পেট পরিস্কার করে এবং চর্বি কমায়, যার ফলে শরীরের ওজনও হ্রাস হয়।
- নিয়মিত মধু খেলে অরুচি ভাব, বমি ভাব, বুক জ্বালা পোড় করা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়ে থাকে। কারণ মধুতে থাকা হাইড্রোক্রলিক অ্যাসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
- মধুতে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান থাকায় তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি ঘটায় এবং শরীরে ভেতরে ও বাইরে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হতে রক্ষা করে।
মধু খাওয়ার অপকারিতা:
মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা এর ক্ষেত্রে মধুর উপকারিতা ব্যাপক, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর অপকারিতাও লক্ষ্য করা যায়। যেমন-অতিরিক্ত মধু খেলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি ঘটায় যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
আরও পড়ুন: কালোজিরা চিবিয়ে খেলে কি কি উপকার হয়
- যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা বিদ্যমান, তাদের মধু খেলে চুলকানি, র্যাশ বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
- যাদের গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসার সমস্যা বিদ্যমান, তাদের অতিরিক্ত মধু খেলে পেটে ব্যথা শুরু হতে পারে।
- এ ছাড়াও মধু শিশুদের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের মধু না খাওয়াই উত্তম। কেননা, এতে তাদের শরীরে বেটুলিজম নামক এক প্রকার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-শেষ কথা:
আসলে মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা এর মধ্যে মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান বিদ্যমান। অর্থাৎ ফুলের পরাগের মধুতে ২৫-৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪-৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫-৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ। এ ছাড়াও ২২ শতাংশ থাকে অ্যামিইনো এসিড, ২৮ শতাংশ থাকে খনিজ লবণ এবং ১১ শতায়শ থাকে এনজাইম।
আরও পড়ুন: চোখ চুলকানো একটি অস্বস্তি, কিভাবে সমাধান করা যায়
আজকের আর্টিকেলে মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা বিষয়ে উপরোক্ত আলোচনা থেকে মধু সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন। তাই মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং সেইসঙ্গে দীর্ঘক্ষণ মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা বিষয়ক আলোচনায় আপনার উপস্থিতির জন্য অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url