হ্যাকিং কি? হ্যাকিং করে কীভাবে? হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে
আমরা প্রায়ই হ্যাকিং শব্দটি শুনে থাকি এবং অনেকে এর শিকারও হয়েছে। তাই আজকে হ্যাকিং কি? হ্যাকিং করে কীভাবে? হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে? তা জানতে নিচের লেখাটি সম্পুর্ণ পড়ুন।
আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হ্যাকিং শব্দটি একটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর আমাদের অনলাইন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি হুমকি স্বরূপ। অর্থাৎ বিভিন্ন সমস্যার কারণহেতু হ্যাকিং কি? হ্যাকিং করে কীভাবে? হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে ইত্যাদি বিষয়গুলি জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পোস্ট সূচিপত্র: হ্যাকিং কি? হ্যাকিং করে কীভাবে? হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে (What is hacking? How is hacking done? Why do Hackers Hack Websites?)
সূচনা
হ্যাকিং কি?
হ্যাকিং করে কীভাবে?
হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে
নিজেদের পরিচিতি ও প্রচারণা বাড়াতে
স্প্যাম ইমেইল প্রেরনের মাধ্যমে
ম্যালওয়্যার ছড়ানোর মাধ্যমে হ্যাক
ফিশিং পেজ হোস্ট
সার্ভারের কম্পিউটার শক্তি
হ্যাকিং কি? হ্যাকিং করে কীভাবে? হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে-শেষকথা
সূচনা:
হ্যাকারদের বলা হয়ে থাকে বিকৃত রুচির মানিসকতা। অর্থাৎ তারা হ্যাকিং এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে তা বাজে ক্ষেত্রে ব্যবহার করে, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির অর্থ জালিয়াতিসহ তথ্য চুরির মাধ্যমে তার ক্ষতিসাধন করা এবং সর্বোপরি বড় বড় প্রতিষ্ঠান অথবা ই-কমার্স সাইটগুলি ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস (DDoS) জাতীয় হামলার শিকার হয়ে থাকে, এর ফলে তাদের ওয়েবসাইটে কোন ব্যবহারকারীরাও ঢুকতে পারেন।
আরও পড়ুন: ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল
শুধুমাত্র বড় বড় প্রতিষ্ঠান বা কোম্পনীগুলিই যে, হামলার শিকার হয়, তা কিন্তু নয়। আবার অনেক ছোট বা সাধারণ ব্লগসাইটগুলোও এই হ্যাকারদের খপ্পরে পড়ে থাকে। সেই কারণে প্রশ্ন জাগে হ্যাকিং কি? হ্যাকিং করে কীভাবে? হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে? বিষয়গুলি:
হ্যাকিং কি?
আসলে হ্যাকিং হল কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক এবং সর্বোপরি ডিজিটাল ডিভাইসে অননুমোদিত প্রবেশাধিকার বা অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টা। এটি এক ধরণের সফটওয়্যারজনিত কীট, যেটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়, মজাদার ও যুক্তিসংগতভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বোকা বানিয়ে কম্পিউটার সিস্টেমের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করার চরিতার্থে ব্যবহৃত বিভিন্ন কৌশলসমুহ।
হ্যাকিং করে কীভাবে?
হ্যাকিং করার জন্য হ্যাকাররা নির্দিষ্ট কোন সংস্থা/প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে। তারা দীর্ঘ সময় ধরে সেই প্রতিষ্ঠান/সংস্থার যাবতীয় তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে। এরপর তারা সেই প্রতিষ্ঠান/সংস্থার ওয়েবসাইটে ম্যালিসিয়াস কোড বা সফটওয়্যার ইনজেক্ট করে দেয়, যেটি ভিজিটরের কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাউনলোড হয়ে যায়। এ ছাড়াও হ্যাকাররা বিভিন্ন আকর্ষণীয়/তথ্যমূলক হাজার হাজার স্প্যাম ইমেইল সেন্ড করে, যা ক্লিক করলেই কম্পিউটারে অটো কোডগুলি ডাউনলোড হয়ে যায়, বিভিন্ন ফিশিং পেজের মাধ্যমে, আকর্ষণীয় কোন অ্যাড প্রদর্শনের মাধ্যমে ইত্যাদি। অর্থাৎ হ্যাকাররা প্রতিনিয়তই নানাভাবে নানা রকমের বার্তা পাঠায়, যার একটিতে ক্লিক করলেই তাদের প্রদত্ত কোডগুলি কম্পিউটারে অটোমেটিক ডাউনলোড হয়ে যায় এবং এর ফলে হ্যাকাররা সেই প্রতিষ্ঠান/সংস্থার ওয়েবসাইট ধীরে ধীরে দখল নিতে থাকে।
হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে :
হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে তার কারণ হলো কৌশলগত ও আর্থিক উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ কৌশলগত এর উদ্দেশ্য হলো নির্দিষ্ট সেই প্রতিষ্ঠান/সংস্থাটির সুনাম ক্ষুন্ন করা, পাশাপাশি এর সমতুল্য যে প্রতিষ্ঠান/সংস্থা আথে তা সুনাম বাড়িয়ে ব্যবসায়িক লাভবান করে দেয়ার স্বার্থে। আবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলে অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে হ্যাকাররা ব্যক্তিগত অথবা যে প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগের মাধ্যমে কাজ করে তাদের লাভবান করে দেয়ার স্বার্থে। এ ছাড়াও সরকারী নানা ওয়েবসাইট হ্যাক করার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ/হুমকির মুখে পতিত করা ইত্যাদি। যাইহোক চলুন জেনে নিই হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে বা এদের উদ্দেশ্য কী?
নিজেদের পরিচিতি ও প্রচারণা বাড়াতে:
সাধারণত হ্যাকারদের একটি বড় অংশ যারা বেশিরভাগ সময়েই যে কোন ওয়েবসাইট হ্যাক করে সেই ওয়েবসাইটে তাদের নাম অথবা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে এবং তা প্রচারের জন্য ওয়েবসাইটের হোমপেজে একটি বার্তা/ব্যানার বসিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: স্মার্টফোন স্লো হয়ে গেছে, কিভাবে ফাস্ট করা যায়
অর্থাৎ হোমপেজে প্রদর্শিত সেই বার্তা/ব্যানারের মাধ্যমে তারা তাদের নিজেদের পরিচিত বাড়ানোর চেষ্টা করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, যেমন-কোন একটি ওয়েবসাইট যা মানুষ দিনে ৪০ হাজার বার ভিজিট করে, তাহলে সেই ওয়েবসাইটে যদি হ্যাকাররা যদি তাদের তৈরিকৃত কোন ব্যানার/বার্তা প্রদর্শন করতে পারে, তাহলে সেটি একপ্রকার ফ্রি বিজ্ঞাপনের মতোই কাজ হয়ে যায়।
স্প্যাম ইমেইল প্রেরনের মাধ্যমে:
অনেক হ্যাকার আছে, যারা কোন একটি ওয়েবসাইট হ্যাক করে সেই ওয়েবসাইট থেকেই হাজার হাজার স্প্যাম ইমেইল প্রেরণ করে থাকে। এটি ধরা না পড়ার অন্যতম কারণ হলো, হ্যাকাররা ওয়েবসার্ভারকে ব্যবহার এই ধরনের কাজ করে থাকে। আর অপরপক্ষে ওয়েবসাইট স্বত্ত্বাধিকারী বুঝতেই পারেন না যে, তার ওয়েবসাইট থেকেই প্রতিনিয়ত এইসব হাজার হাজার মেইল প্রেরিত হচ্ছে। এ ধরণের বিষয় থেকে হ্যাকারদের প্রাপ্তি হলো প্রতিষ্ঠানটি ব্ল্যাকলিস্টেড হয়ে যায় এবং তার সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়ে যায়।
ম্যালওয়্যার ছড়ানোর মাধ্যমে হ্যাক:
আমাদের ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলোতে যদি ভালো এন্টি ভাইরাস/প্রটেকশন থাকে, তাহলে দেখা যায় বিভিন্ন মেজের প্রদর্শনের সাথে সাথে তা ম্যালওয়্যার কিনা তা সিস্টেম থেকেই জানিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে হ্যাকাররা সাধারণত অনেক সময় ওয়েবসাইটগুলোতে ম্যালিসিয়াস কোড বা সফটওয়্যার ইনজেক্ট করে দেয়, যা খুব সহজেই ভিজিটরের কম্পিউটারগুলোতে ডাউনলোড হয়ে যায়। আর এর সুবাদে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণসহ তথ্য চুরি করতে পারে অনায়াসে। এ ছাড়াও র্যানসমওয়্যার ইনষ্টল করেও অর্থ দাবি করতে পারে।
ফিশিং পেজ হোস্ট:
ফিশিং পেজ হচ্ছে কোন ওয়েবসাইটকে হ্যাক করে সেখানে ফেক লগইন পেজ বসিয়ে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংকিং তথ্য, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি হাতিয়ে নেয়। অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা এই ফেক লগইন-এ ক্লিক করে তাদের নিজের সমস্ত তথ্য প্রদান করে।
সার্ভারের কম্পিউটার শক্তি:
অনেক হ্যাকার আছে, যারা বৃহত্তর উদ্দেশ্যে এবং মোটা অংকের অর্থ লাভের জন্য কাজ করে থাকে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে তারা ওয়বসাইটের কোন তথ্য চুরি করে না, বরং সার্ভারের কম্পিউটার শক্তি ব্যবহার তাদের মূল লক্ষ্য থাকে। অর্থাৎ এই ধরণের শক্তি ব্যবহার করে তারা ডিজিটাল মুদ্রা, যেমন-বিটকয়েন বা অনলাইন মুদ্রা মাইন করে থাকে। মজার বিষয় হলো, এতে তারা একদম বিনা খরচে শক্তিশালী কম্পিউটারগুলো এবং বিদ্যুৎও ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।
হ্যাকিং কি? হ্যাকিং করে কীভাবে? হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে-শেষকথা:
বর্তমানে হ্যাকিং শুধু বড় প্রতিষ্ঠান নয়, ছোট বা মাঝারি পর্যায়ের ওয়েবসাইটগুলোর জন্যও মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত পত্র-পত্রিকা অথবা অনেক বন্ধু-বান্ধবের নিকট প্রতিনিয়তই শোনা যায়, আমার ফেসবুক পেক হ্যাক হয়ে গেছে। আবার অমুক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অর্থও হ্যাকাররা অনায়াসে হাতিয়ে নিয়েছে। আসলে একজন হ্যাকার মানেই হল একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তারা দীর্ঘসময় ধরে স্টাডি করে, বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে, কম্পিউটার সিস্টেম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং এতোটা সময় ধরে বা দীর্ঘ সময় ধরেও হ্যাকাররা কোন ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত থাকে তথ্য আত্মসাতের উদ্দেশ্যে। যাইহোক আজকের আলোচনায় হ্যাকিং কি? হ্যাকিং করে কীভাবে? হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন: ছবি দিলেই ভিডিও তৈরি করে দেবে চ্যাটবট জেমিনি
আসলে কম্পিউটার বা মোবাইল যাই ব্যবহার করেন না কেন, প্রটেকশন থাকতে হবে। যদি আপনি উইন্ডোজ ১০ বা ১১ বা তারও উপরের কোন ভার্সন ব্যবহার করেন এবং এর অরজিন্যাল প্যাকেজই যদি ব্যবহার করে তাহলে অনেকটা সেফ থাকতে পারে। আর সবথেকে বড় বিষয় হলো না বুঝে কোনটাতে ক্লিক করা। সুতরাং হ্যাকিং কি? হ্যাকিং করে কীভাবে? হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে ইত্যাদি বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। তবে বর্তমানে অনেক দেশেই হ্যাকারদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে, শুধুমাত্র স্বীয় দেশের তথ্য জগতের সুবিধার্থে। পরিশেষে হ্যাকিং কি? হ্যাকিং করে কীভাবে? হ্যাকাররা ওয়েবসাইট কেন হ্যাক করে বিষয়ে আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url