ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল
সাধারণত ফেসবুক আইডি অনেক সময়ই হ্যাক হয়ে যায়। আর তাই এই ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল তা নিয়েই আলোচ্য বিষয়।
আসলে ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া একটি চরম বিড়ম্বনার বিষয়। তবে ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল কি, বা হ্যাক হলে কি করবো, হ্যাক হলে কিভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়, ফেসবুক হ্যাক থেকে বাঁচার উপায় ইত্যাদি বিষয়ে জানার জন্য নিচের লেখাটি পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র: ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল (Tips to avoid Facebook ID hack)
ফেসবুক কি?
ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল
ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে কিনা তা যেভাবে বোঝা যাবে?
ফেসবুক হ্যাক হওয়ার কিছু কারণসমূহ
ফেসবুক আইডি হ্যাক হলে কি করণীয়
ফেসবুক হ্যাক না হওয়ার উপায়সমূহ
ইমেইল ছাড়া হ্যাক হয়ে যাওয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার
ফেসবুক আইডি হ্যাক করলে তার শাস্তি
ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল-শেষ কথা
ফেসবুক কি?
ফেসবুক হলো একটি অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়া, অর্থাৎ এই অনলাইনের মাধ্যমে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, নতুন নতুন বন্ধু তৈরি, অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে চ্যাটিং, ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভিডিও কলের মাধ্যমে একে অপরের সাথে বাস্তব যোগাযোগ, বিভিন্ন ইনফরমেশন শেয়ার, ছবি দেয়া-নেয়া, ছবি আপলোড, বুস্টিং করা ইত্যাদি।
ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল:
আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে যা করতে হবে:
- যখন আপনি ফেসবুক এ্যাকাউন্ট তৈরী করবেন, তখন আপনার পাসওয়ার্ডটি যাতে অনেক শক্তিশালী হয় সেদিকে খেয়াল করবেন। কারণ অতি সহজ, সাধারণ শব্দ, ইত্যাদি বিষয়গুলো খুব সহজেই আন্দাজ করা যায়। (যেমন-আপনার মোবাইল নম্বর, আপনার নাম, আপনার জন্মতারিখ ইত্যাদি)। আসলে এই ধরণের শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ফেসবুকের পাসওয়ার্ডটি কমপক্ষে ৮টি অক্ষর ব্যবহার করতে হয়, তবে এর মধ্যে সংখ্যা, বিশেষ অক্ষর, বড় ও ছোট হাতের অক্ষর সব মিলিয়েই পাসওয়ার্ড দিতে হবে (উদাহরণ: Pa@90#73 এ রকম হতে পারে)।
আরও পড়ুন: ইউটিউবে যুক্ত হলো নতুন সব ফিচার - বন্ধ হচ্ছে জনপ্রিয় কিছু ফিচার
- মনে রাখবেন একই পাসওয়ার্ড দিয়ে যেমন জিমেইল, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
- তবে আলাদা আলাদ একাউন্টের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড মনে রাখা সত্যিই একটি কঠিন কাজ। তাই সকল পাসওয়ার্ড মনে রাখার জন্য Dashlane বা Lastpass এর মত পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহারের মাধ্যমে তা নিরাপদে সংরক্ষণ করা যায়।
- সম্ভব হলে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর আপনার সকল সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। এক্ষেত্রে তা ৪ মাস বা ৫ মাস হতে পারে।
- সাধারণত আমরা প্রয়োজনে অথবা অপ্রয়োজনে অনেকের মোবাইলে, কম্পিউটারে বা সাইবার ক্যাফে বসে ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কিত এ্যাকাউন্টগুলি লগিন করে থাকি। কিন্তু যে কোন ডিভাইসে ফেসবুক অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার সম্পর্কিত এ্যাকাউন্টগুলি লগিন করার সময় সেখানে Remember Password অপশনটি স্ক্রিনে আসে, কখনোই এটাতে Yes করবেন না। এখানে No করে আপনার কাজ শেষ করে অবশ্যই Logout করুন। তবে পরবর্তীতে আপনার ডিভাইস থেকে Login করে অবশ্যই পাসওয়ার্ডটি পরিবর্তন করে নিন।
ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে কিনা তা যেভাবে বোঝা যাবে?
০০১। আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য অনেক ধরণের মাধ্যম আছে। নিম্নে কিছু উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপায় বর্ণিত হলো:
প্রথমত ফেসবুক একাউন্টের লগইন হিস্ট্রি চেক করতে পারেন। হিস্ট্রি চেক করলেই দেখা যাবে যে, কোন কোন ডিভাইসে এবং কোথায় থেকে এ্যাকাউন্টটি লগইন করা বা ব্যবহার করা হচ্ছে। মজার বিষয় হচ্ছে, ঠিক এখানেই আপনি জানতে পারবেন এই মুহুর্তে আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি কোন কোন ডিভাইসে লগইন করা আছে। আর হিস্ট্রি চেকের মাধ্যমেই জানা যাবে যে, আইডটি হ্যাক হয়েছে কি না বা কে কোন ডিভাইস থেকে উক্ত এ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করছে। উল্লেখ্য, যদি কোন ধরনের সন্দেহ জনক ডিভাইস দেখেন, যেখান থেকে আপনার এ্যাকাউন্ট লগন করা আছে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে Log Out of All Sessions অপশনে ক্লিক করে সকল ডিভাইস থেকে আপনার এ্যাকাউন্টটি লগআউট করে নিন।
কিভাবে হিস্ট্রি চেক করতে হবে তার জন্য আপনার ফেসবুকের উপরের ডানকোনায় ৩ ডট মেনুতে ক্লিক করুন:
এরপর Settings-এ ক্লিক করতে হবে।
এরপর Settings-এ ক্লিক করার পর Security and Login অপশনে ক্লিক করুন। অর্থাৎ এখানেই আপনি দেখতে পারেন যে আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি কোন কোন ডিভাইসে লগইন করা আছে।
এখানে যদি দেখেন যে কোন অপরিচিত ডিভাইস থেকে লগইন করা আছে যেটা আপনি চেনেন না, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে Log Out of All Sessions অপশনে ক্লিক করলে সকল ডিভাইস থেকে আপনার এ্যাকাউন্টটি লগআউট হয়ে যাবে।
০০২। আবার আপনি ইচ্ছে করলে থার্ড পাটি টুলস ব্যবহারের মাধ্যমেও জানতে পারেন, আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে কি না। আসলে Have I Been Pwned টুলটি সকল ধরণের তথ্য সংরক্ষণ করে থাকে। মূলত এই Have I Been Pwned কিন্তু একটি ওয়েবসাইট। অর্থাৎ এই ওয়েব সাইটের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, কিভাবে আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টের তথ্য অন্য কোথাও ফাস হয়েছে বা হচ্ছে কিনা? এক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এরপর আপনি যা দিয়ে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিলেন (হতে পারে তা ইমেইল বা কোন নাম্বার) সেই নাম্বার বা ইমেইল এড্রেস এখানে টাইপ বা পেস্ট করে Pwned-এ ক্লিক করতে হবে। তাহলেই আপনি দেখতে পাবেন যে, আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে কি না?
০০৩। ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে তার কিছু কিছু লক্ষণ দেখা যায়। তাই এসব ক্ষেত্রে আপনার ফেসবুক প্রোফাইলের About অপশনে ক্লিক করে দেখে নিন যে, সমস্ত তথ্য ঠিক আছ কি না? কারণ বেশিরভাগ সময় হ্যাকাররা এই About অপশনের তথ্য পরিবর্তন করে থাকে। তাই এ বিষয়ে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।
ফেসবুক হ্যাক হওয়ার কিছু কারণসমূহ:
দিন দিন ফেসবুক এ্যাকাউন্টকারীদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনি বাড়ছে হ্যাকারদের সংখ্যাও। তাই কি কি কারণে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাক হতে পারে সে বিষয়গুলি জানাটা আমাদের খুবই দরকার। যেমন-
- ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খোলার সময় ইমেইলের পরিবর্তে মোবাইল নাম্বার ব্যবহার;
- টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু না রাখা;
- ফেসবুকে রিকভারি অপশন চালু না রাখা;
- ফেসবুক এ্যাকাউন্টে দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার, অর্থাৎ নিজের, বাবা ও মায়ের নাম, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, নিক নেম ইত্যাদি পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা;
- ফেসবুক এ্যাকাউন্টে নিজের জন্মতারিখ ওপেন রাখা;
- একই ধরনের পাসওয়ার্ড সকল জায়গায় ব্যবহার করা;
- অনেকে ফেইক নেম বা জন্মতারিখ ফেসবুক আইডিতে ব্যবহার করা।
ফেসবুক আইডি হ্যাক হলে কি করণীয়:
ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল বিষয়ক আলোচনায় মূলত ফেসবুক আইডি হ্যাক হলে সবার আগে যা যা করতে হবে, তা হলো:
- ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার পর কোন কারণে যদি দেখেন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন হয়নি, তাহলে সর্বাগ্রে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে। এক্ষেত্রে মেনু থেকে সেটিংস অপশনে ক্লিক করুন। এরপর Security & Logon থেকে Password-এ ক্লিক করুন। এরপর Change Password-এ ক্লিক থেকে আগের পাসওয়ার্ড মুছে দিয়ে নতুন পাসওয়ার্ড ও কনফার্ম পাসওয়ার্ড দিয়ে Save Changes-এ ক্লিক করুন।
- যদি দেখেন যে, হ্যাকাররা আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ডই পরিবর্তন করে ফেলেছে, তাহলে আপনি অতিসত্ত্বর ফেসবুক এ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে Forgot Your Password-এ ক্লিক করুন। এরপর আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি খুঁজে বের করার জন্য ফোন নম্বর, ইমেইল এ্যাড্রেস দিয়ে এ্যাকাউন্টটি খুঁজে বের করতে হবে। এরপর আপনার এ্যাকাউন্ট প্রদর্শিত হলে সেখানে Reset Your Password-এ ক্লিক করতে হবে।
- যদি আপনি নিশ্চিত হয়ে যান যে, আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়ে গেছে, তাহলে অবশ্যই facebook.com/hacked লিংকে প্রবেশ করে করে My Account is compromised-অপশনে ক্লিক করে সকল সঠিক তথ্য প্রদান করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে হ্যাক হওয়ার ব্যাপারে জানিয়ে রাখতে পারেন।
- অনেক সময় ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাক করে হ্যাকাররা আপনার প্রোফাইলে বিভিন্ন ধরণের অশালীন ছবি পোষ্ট করে থাকে, যাতে করে আপনাকে অন্যদের কাছে ছোট হতে হয়। এ ছাড়াও আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা সকল ফ্রেন্ডদের বাজে বাজে এসএমএস, অর্থ সাহায্যের এসএমএস ইত্যাদি পাঠিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি যদি নিশ্চিত হন, তাহলে অন্যকোন এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অথবা অন্য কোন উপায়ে আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা বন্ধুদের বিষয়টি অবগত করার চেষ্টা করু্ন যে, আপনার ফেসবুক হাইডি হ্যাক হয়ে গেছে।
- বিভিন্ন ধরণের ম্যালওয়ার সফটওয়্যার বা ভাইরাস যুক্ত অ্যাপ এর কারণে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাক হতে পারে। তাই এই সকল অ্যাপ কোনগুলো তা দেখার জন্য আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে Settings-এ ক্লিক করে Apps and Website-এ ক্লিক করলেই এখানে কিছু ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপের লিস্ট দেখা যাবে, যদি সম্পূর্ণ লিস্টটি দেখতে চান, তাহলে See more অপশনে ক্লিক করতে হবে। অর্থাৎ এই অপশনে ক্লিক করার পর যদি আপনার নিকট কোন সন্দেহজনক ওয়েবসাইট নজরে পড়ে তাহলে পাশে থাকা রিমুভ বাটনে ক্লিক করে তা মুছে ফেলুন।
ফেসবুক হ্যাক না হওয়ার উপায়সমূহ:
মূলত নিজের কিছু ভুল এবং উদাসীনতার কারণে আমরা ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করি না। আসলে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, যা নিম্নে বর্ণিত হলো:
- যদিও আমরা অনেকেই জানি এবং পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার অন্যতম কারণ হলো পাসওয়ার্ড। নিজের মনে রাখার সুবিধার্থে এবং সর্বোপরি সহজ বা সাধারণ মানের পাসওয়ার্ড দেওয়াতে হ্যাকাররা খুব সহজেই তা বের করে হ্যাক করতে পারে। এক্ষেত্রে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট তৈরির সময় শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিতে হবে (যেমন-বড় ও ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা, বিশেষ অক্ষর)। এ ছাড়াও একই পাসওয়ার্ড অন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে বা একাধিক প্লাটফরমে ব্যবহার না করা। সর্বোপরি প্রতি ৬ মাসের অন্তত একবার হলেও ফেসবুক এ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা উচিত।
আরও পড়ুন: স্মার্টফোনে ফটো গ্যালারি স্পেস কিভাবে বাড়ানো যায়
- সাধারণত ফেসবুক ব্যবহার করার সময় কিছু মেসেজ আছে যাকে ফিশিং লিংক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ হ্যাকাররা ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্য ফেসবুক পেজের গ্রুপে এই ফিশিং লিংক ছড়িয়ে দেয়, যার ফলে যখনই কেউ না কেউ এই ফিশিং লিংকে দেয়া আকর্ষণীয় ফিচার বা গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য দেখে এবং তাতে না বুঝেই ক্লিক করে দেয়। আর এর ফলে হ্যাকাররা খুব সহজেই তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। আবার অনেক সময় হ্যাকাররা জনপ্রিয় সকল ওয়েবসাইটের মতো করে ওয়েবসাইট তৈরি করে, একই ডোমেইন নেম এবং সম্পূর্ণ হুবহু ওয়েবসাইট এর মত করে ওয়েবসাইট তৈরি করে, এর ফলে সহজেই আপনি বুঝতে পারবেন না যে আপনি প্রতারিত হচ্ছেন কিনা। এক্ষেত্রে সতর্কতা হিসেবে আপনাকে ফেসবুকে দেখা যেকোন ধরনের লিংকে ক্লিক করার আগে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং এর সাথে সাথে স্প্যাম লিংকে ক্লিক পরিহার করতে হবে।
- অনেকেই আছেন, যারা বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে ফেসবুক লগিন করে থাকে। অর্থাৎ কোন সাইবার ক্যাফেতে, অন্য কারো মোবাইল বা কম্পিউটারে বসে ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে। এক্ষেত্রে সতর্কতা হিসেবে আপনি যেটা করতে পারেন, যদি অন্য কোন ডিভাইস থেকে লগইন করেই থাকেন, তাহলে কাজ শেষ হয়ে গেলে অবশ্যই সেখান থেকে লগআউট করে নিন এবং পরবর্তীতে আপনার এ্যাকাউন্ট ওপেন করে পুনরায় ফেসবুকের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নিন।
- ফেসবুক ব্যবহার করার সময় আমরা না বুঝেই বিভিন্ন ধরণের লিংকে প্রবেশ করি। কিন্তু সেই লিংকটি কতটুকু নিরাপদ তা আমরা চিন্তা করিনা। তাই ফেসবুক নিজেই এই সমস্ত হ্যাকিং থেকে বাঁচার জন্য Safe Browsing নামে একটি ফিচার চালু করেছে। তাই ফেসবুক সেটিংস-এ ক্লিক করে Password and Security মেনু থেকে Safe Browsing ফিচারটি চালু করতে হবে। এক্ষেত্রে সুবিধা হলো, যদি আপনার Safe Browsing ফিচারটি চালু করা থাকে, তাহলে যখনই আপনি যে কোন লিংকে প্রবেশ করেন, যদি সেই লিংকটি আপনার এ্যাকাউন্টের জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে ফেসবুক নিজেই সেটার ওয়ার্নিং দিবে আপনাকে।
- আবার টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন অপশন চালু রাখার মাধ্যমে আপনি এ ধরণের বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারেন। আসলে টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন অপশনটি চালু রাখার সুবিধা হলো, যখনই অন্য কেউ আপনার এ্যাকাউন্ট লগইন করবে বা করার চেষ্টা করবে, ঠিক তখনই আপনার মোবাইলে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসবে, যাতে করে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন যে আপনার এ্যাকাউন্টটি অন্য কেউ লগইন করছে কি না?
ইমেইল ছাড়া হ্যাক হয়ে যাওয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার:
সাধারণত আমাদের ফেসবুক হ্যাক করার পর হ্যাকাররা এর ইমেইল, ফোন নম্বর ইত্যাদি সকল কিছু পরিবর্তন করে ফেলে। তাই এই ধরণের হ্যাক হয়ে যাওয়া ফেসবুক ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, যা নিম্নে বর্ণিত হলো:
সাধারণত হ্যাক হয়ে যাওয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে গেলে তা লগআউট হয়ে যায়। সুতরাং এই ধরণের এ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে আনার জন্য-
ধাপ-১: আপনার ফেসবুকে ফ্রেন্ডলিস্টে ছিল এমন কারো এ্যাকাউন্ট থেকে আপনার এ্যাকাউন্টটি সার্চ করে বের করতে হবে।
ধাপ-২: সার্চ করে আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি খুঁজে পেলে সেই ফেসবুকের প্রোফাইলে প্রবেশ করে উপরের থ্রি ডট মেনুতে ক্লিক করুন।
ধাপ-৩: এখানেই আপনি দেখতে পাবেন, আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টের একটি লিঙ্ক, অর্থাৎ সেই লিঙ্কটি কপি করে নিন।
ধাপ-৪: এরপর Google Chrome থেকে facebook.com লিখে সার্চ করুন। এরপর Google Chrome-এর থ্রি ডট মেনু থেকে ডেস্কটপ সাইট মেনুতে ক্লিক করে ওপেন করুন। অথবা Google Chrome-এর সার্চবারে লিখুন web.facebook.com।
ধাপ-৫: এরপর ফেসবুক আইডটি ওপেন করার জন্য Email and Phone Number অপশনটিতে কপি করে রাখা সেই লিংকটি এখানে পেস্ট করে দিন। এরপর আপনার পেস্ট করার লিংকটির https://www.facebook.com/ এই পর্যন্ত কেটে দিয়ে শুধুমাত্র শেষের নামটুকু রেখে দিন, কারণ এটাই আপনার এ্যাকাউন্টের ইউজার নেম হিসেবে কাজ করবে। এবারে পাসওয়ার্ডের জায়গায় ইচ্ছামত কিছু লিখুন বা ভুল পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করার চেষ্টা করুন।
ধাপ-৬: এবার কিন্তু আপনার ফেসবুক আইডিটি লগইন হবে না, উপরন্তু হ্যাক হয়ে যাওয়া ফেসবুক আইডিটি এখানে শো করবে। অর্থাৎ এখানে আপনি Forgotten Password-এ ক্লিক করুন।
ধাপ-৭: খেয়াল করবেন, Forget দিলেই যে আপনার হ্যাক হয়ে যাওয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ওপেন হবে তা কিন্তু নয়। আসলে এখানে শো করবে যে আপনার ফেসবুকে কোন মেইল দেয়া আছে। যদি এখানে আপনার প্রদত্ত ইমেইলটি দেখতে পান তাহলে খুব সহজেই তা রিকোভার করতে পারবেন, আর যদি দেখেন উক্ত এ্যাকাউন্টে অন্য কারো ইমেইল ও নাম্বার দেয়া আছে তাহলে, No longer have access to these?-এ ক্লিক করুন।
ধাপ-৮: এরপর আরকেটি অপশন আসবে যেখানে আপনার নতুন মেইল ও কনফার্ম মেইল বসাতে হবে, যা আগে কখনো কোন ফেসবুক এ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা হয়নি। এরপর কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করতে হবে। (উল্লেখ্য যে, সবার এ্যাকাউন্টে কিন্তু এই অপশনটা আসবে না, এক্ষেত্রে শুধুমাত্র যাদের একাউন্টে ট্রাস্টেড কন্ট্রাক্ট যুক্ত করা আচে শুধুমাত্র ক্ষেত্রেই এই অপশন আসবে)।
ধাপ-৯: এবারে আরেকটি পেজ প্রদর্শিত হবে যেখানে আপনার ট্রাস্টেড কন্ট্রাক্টের সাহায্য নিতে হবে। অর্থাৎ এখান থেকে Reveal Your Trusted Contacts অপশন থকে একটি নাম দিতে হবে যাকে আপনার ট্রাস্টেড কন্ট্রাক্টে রেখেছেন। এরপর কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-১০: অর্থাৎ কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করার পরই দেখা যাবে আপনি কাকে কাকে ট্রাস্টেড লিস্টে রেখেছিলেন। এদের মধ্যে থেকে ৩টি ফেসবুক আইডির কোডের প্রয়োজন হবে, সেক্ষেত্রে আপনি যাদের আপনার ট্রাস্টেড কন্ট্রাক্টে রেখেছেন, তাদের সাথে যোগাযোগ করে কোডগুলো সংগ্রহ করতে হবে।
ধাপ-১১: এবার ট্রাস্টেড কোড পাওয়ার পর https://www.facebook.com/recover লিংকটি কপি করে যারা আপনার ট্রাস্টেড কন্ট্রাক্টে আছে তাদের ৩ জনকে লিংকটি দিয়ে তাদের নিকট থেকে কোড কালেক্ট করতে হবে।
ধাপ-১২: এরপর Each friend will give you a code enter there-এ কোডগুলো দিতে হবে এবং কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-১৩: আপনার প্রদত্ত সকল কোডগুলো যদি ঠিকঠাক থাকে, তাহলে আরেকটি পেজ প্রদর্শিত হবে যেখানে আপনার নতুন পাসওয়ার্ড চাইবে। অর্থাৎ এখানে আপনি একটি নতুন করে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-১৪: এরপর আরেকটি পেজ প্রদর্শিত হবে, যেখানে একটি ম্যাসেজ আসবে যে আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি রিকভার করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে আপনার ইমেইলটিও চেক করতে বলা হবে। আর আপনার জিমেইলে প্রবেশ করলে দেখতে পাবেন মেইলের সাথে ফেসবুক থেকে একটি লিংক পাঠিয়েছে, অর্থাৎ আপনি এই লিংকে ক্লিক করবেন। এরপর প্রদর্শিত মেসেজে দেখতে পাবেন আপনার আইডি ফিরে পাবার জন্য ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে বলবে।
ধাপ-১৫: নির্ধারিত ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর জিমইলে প্রবেশ করে ফেসবুকের লিংকে ক্লিক করলেই দেখতে পাবেন, আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি ওপেন হয়ে গেছে।
ধাপ-১৬: এবার যে কাজটি করতে হবে তা হলো, আপনার ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি লগইন করতে হবে। এই লগইন করার জন্য আপনি যে ইমেইল দিয়ে এই এ্যাকাউন্টটি পুনরুদ্ধার করেছেন, সেই মেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে। তাহলেই আপনি আপনার ফেসবুক একাউন্টে খুব সহজেই লগইন করতে পারবেন।
থাপ-১৭: তবে ফেসবুক লগইন করার পূর্বে আপনাকে Settings থেকে Personal and Account Information থেকে কন্ট্রাক্ট হতে হ্যাকারের মেইল ও ফোন নম্বর সেটা রিমুভ করে দিতে হবে। এ ছাড়াও উক্ত এ্যাকাউন্ট আর কোন পরিবর্তন দেখতে পান, তাহলে তা ঠিক করে দিতে হবে।
ফেসবুক আইডি হ্যাক করলে তার শাস্তি:
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) এর ধারা ৫৪ অনুযায়ী কম্পিউটার সিস্টেমের যে কোন ধরণের ক্ষতিসাধন, অনিষ্ট, ইমেইল পাঠানো, ভাইরাস ছড়ানো, সিস্টেমে অনধিক প্রবেশ, ক্ষতি করা আইডি হ্যাক করার মত জঘন্যতম অপরাধের শামিল। অর্থাৎ ২০০৬-এর ৫৪ নং ধারা অনুযায়ী এই ধরনের অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদন্ড ও সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদন্ড অনাদায়ে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড।
- আবার কেউ যদি কম্পিউটার রিসোর্সসহ যে কোন ধরণের তথ্য বাতিল পরিবর্তন, বিনাশ অথবা কম্পিউটার সার্ভার নেটওয়ার্কের যে কোন ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করে, তাহলে এটা হ্যাকিং অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ১৪ বছর কারাদন্ড এবং সর্বনিম্ন হলো ৭ বছরের কারাদন্ড অথবা ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা।
- এই আইনের ৫৭ নং ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য কারো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে মিথ্যা বা অশ্লীল কিছু প্রচার করে তবে তার শাস্তি হবে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদন্ড ও সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদন্ড অথবা এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা। এ ছাড়াও কারও দ্বারা এই অপরাধ দ্বিতীয়বার সংঘটিত হয় তাহলে তার শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা অনধিক ৫ কোটি টাকা।
ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল-শেষ কথা:
আসলে ফেসবুক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনেকেরই এই ধরণের সমস্যায় পড়তে হয়। আশাকরি আজকের ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল বিষয়ক আলোচনায় সমস্ত বিষয়গুলি এবং নিয়ম-কানুন ফলো করতে পারেন, তাহলে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবেন। কারণ ফেসবুক হ্যাক হয়ে গেলে প্রাথমিকভাবে কি করণীয়, কিভাবে তা পুনরুদ্ধার করা যাবে, হ্যাক হওয়ার আগে কি কি করণীয় ইত্যাদি সমস্ত বিষয়াদি আলোচনা ও বিশ্রেষণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গুগল তার সার্চে নিয়ে আসছে বড় পরিবর্তন
যাইহোক ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন। তবে ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার অন্যতম কারণের মধ্যে অন্যের ডিভাইসে লগইন করে ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করা, আবার ফেসবুক হ্যাক হওয়া থেকে নিরাপদ রাখতে কিছু সেটিংস পরিবর্তন করাটাও অত্যন্ত জরুরী। পরিশেষে ফেসবুক আইডি হ্যাক থেকে বাঁচার কৌশল বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url