ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ
মানুষের শরীরে হরমোনের তারতম্যের কারণে নানা অবস্থার সৃষ্টি হয়। এর ফলে ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ ঘটতে পারে।
আসলে আমরা শুধু নানাভাবে শরীরের যত্ন নেয়ার ক্রমশই চেষ্টা করে থাকি, কিন্তু কখনোই মনের হাল-হকিকত নিয়ে ভাবিনা। মূলত শরীর ও মন একই বৃন্তে দুটি ভিন্নধর্মী ফুল। সুতরাং ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ একাধিক বিষয়ের প্রভাবের ফলাফল হিসেবে ঘটতে পারে।
পোস্ট সূচিপত্র: ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ (Causes of frequent mood swings)
ভূমিকা
স্ট্রেস হরমোন বা কর্টিসলের প্রভাব
ঘুমের সমস্যা
থাইরয়েড এবং অন্যান্য হরমোনজনিত রোগ
খাদ্যজনিত সমস্যা
অন্তঃস্বত্তাকালীন সময়ে
ঋতু বন্ধ হয়ে গেলে
ইস্ট্রোজেন হরমোন ঘাটতি
সমাধানে যা করণীয় হতে পারে
চিকিৎসকের পরামর্শ কখন গ্রহণ করা যেতে পারে
ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ-শেষকথা
ভূমিকা:
মানুষের শরীরের নানাবিধ পরিবর্তন ঘটে থাকে হরমোনের কারণে। অর্থাৎ হরমোন যে শুধু শরীরের উপর প্রভাব ফেলে তা কিন্তু নয়, এটি মনের উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে থাকে। আর এর অন্যতম উদাহরণ হিসেবে ধরে নিতে পারেন, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, হঠাৎ মেজাজ পরিবর্তন অর্থাৎ ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ একটি অন্যতম। আসলে একটা জিনিস বলুন তো, আমাদের শরীর যদি ভালো না থাকে তাহলে সে নানা ভাবে আমাদের জানান দেয় যে, সে ভালো নেই। ঠিক একই ভাবে মনও জানান দেয় যে সেও ভালো নেই। আমরা কিন্তু শরীরের জন্য ঔষুধসহ সেবা শ্রুশ্রষা, যত্ন-আত্তির কত কিছুই না করি, কিন্তু মনের ব্যামো হলে কোন ঔষুধ খাই বা কি যত্ন করি?
আরও পড়ুন: পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর
সে যাই হোক, আমাদের শরীরের মধ্যে যতগুলো নিয়ন্ত্রকের বসবাস রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হরমোন। আর নির্দিষ্ট কিছু হরমোন কিন্তু সরাসরি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। আসলে এসব হরমোন শরীরে রাসায়নিক বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করে। তাই যখন শরীরে এসব হরমোনের মাত্রা কম-বেশী বা উঠা-নামা করে বা অস্বাভাবিক হয়, ঠিক তখনই নানাপ্রকার উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ ঘটে থাকে, যা নিম্নে বর্ণিত হলো:
স্ট্রেস হরমোন বা কর্টিসলের প্রভাব:
সাধারণত শরীরে যদি কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমে যায়, তাহলে রক্তে শর্করা এবং ইনসুলিনের ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটে। যার ফলে শরীর থেকে সেরোটোনিন কমে যায়, আর এই সেরোটোনিন হরমোনটি হচ্ছে সুখের অনুভূতির জন্য জরুরী। কিন্তু ইস্ট্রোজেন সেরোটোনিনকে প্রভাবিত করার কারণে মানসিক স্থিরতা কমে যায়।
ঘুমের সমস্যা:
একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থ্যতার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম অত্যন্ত জরুরি। আর এই ঘুমের ওপরেও প্রভাব পড়ে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, যার ফলে মেলাটোনিনসহ ঘুম নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলির ভারসাম্য নষ্ট হলে স্বাভাবিকভাবেই তা ঘুমের সমস্যা তৈরি করে। আর সে কারণে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বেড়ে যায় বিষণ্ণতা এবং ক্রোধ বা রাগ।
থাইরয়েড এবং অন্যান্য হরমোনজনিত রোগ:
সাধারণত থাইরয়েড হরমোন শক্তি এবং বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ এর অস্বাভাবিকতা উদ্বেগ, অস্থিরতা ও মেজাজ পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। আবার বিভিন্ন হরমোনজনিত রোগসমূহ যেমন-পিসিওএস, পিসিওডি, মেনোপজ ইত্যাদি মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
খাদ্যজনিত সমস্যা:
পুষ্টিজনিত ঘাটতি এবং খাদ্যাভাসে অনিয়মের কারণেও শরীরে দেখা দেয় নানা প্রতিবন্ধকতা। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে-হজমজনিত সমস্যা, গ্যাস, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও তৈলাক্ত খাদ্য গ্রহণ, কোষ্ঠকাঠিন্য সহ নানা জাতীয় সমস্যার কারণে নিয়মিত মলত্যাগে বাধা। অর্থাৎ খাদ্যজনিত নানাবিধ সমস্যার কারণে শরীরে সঠিক পুষ্টি উপাদান না প্রবেশ করায় হরমোনজনিত সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে, যার ফলে তা মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ে থাকে।
আরও পড়ুন: কালোজিরা চিবিয়ে খেলে কি কি উপকার হয়
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সমস্যা বেশীর ভাগ নারীদের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। আর তার ফলেই ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ ঘটতে পারে।
অন্তঃস্বত্তাকালীন সময়ে:
মূলত অন্তস্বত্তাকালীন সময়ে নারীদের শরীরে হরমোনের ব্যাপক তারতম্য পরিলক্ষিত ঘটে। অর্থাৎ এই সময়ে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে বেশকিছু উপসর্গ দেখা যায়, যেমন-গা গোলানো, বমি, পেটের সমস্যা, মেজাজ বিগড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
ঋতু বন্ধ হয়ে গেলে:
সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মহিলাদের ক্ষেত্রে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য দারুণ ভাবে বিঘ্নিত হয়। অর্থাৎ ঋতুবন্ধের সময় যতই ঘনিয়ে আসে ততই সমস্যাও বাড়তে থাকে। তবে নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভাস গ্রহণ করার ফলে এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ইস্ট্রোজেন হরমোন ঘাটতি:
নারীদের ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়ার ফলে মাসিক অনিয়মিত বা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং অন্যান্য সমস্যাসহ বিশেষ করে এ সময় তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
সমাধানে যা করণীয় হতে পারে:
খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন রঙের ফলমূল ও শাকসবজি অন্তর্ভূক্ত রাখতে হবে। অর্থাৎ নানা প্রকার রঙিন খাবারে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
এক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় আপেল, স্ট্রবেরি, কমলালেবু, কালো জাম, পেয়ারা, বাধাকপি ও ব্রৃকলি ইত্যাদি রাখতে হবে।
শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ভিটামিন ও খনিজ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। যেমন-ডিমের কুসুমে আছে-এ, ডি, ই, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও সেলেনিয়ামসহ বেশ কয়েকটি ভিটামিন।
হজমের সমস্যার কারণে হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতায় প্রভাব ফেলে। তাই এক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় দই, বাটারমিল্ক ও ভাতের ফ্যান রাখা যেতে পারে।
শরীরের হরমোনজনিত সমস্যা নিরসনে চিনি খাওয়া কমাতে হবে। অর্থাৎ চিনি জাতীয় খাদ্যগুলি তুলনামূলকভাবে কম গ্রহণ করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত চিনি খেলে তা শরীরে ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি এবং নানা রোগের সৃষ্টি করে থাকে।
তবে হরমোনের ভারসাম্য বজায়ে প্রয়োজনে তুলসি ও ভেষজ চা পান করা যেতে পারে। কারণ এই জাতীয় পানীয় স্ট্রেস কমাতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
চিকিৎসকের পরামর্শ কখন গ্রহণ করা যেতে পারে:
যদি দীর্ঘদিন ধরে শরীরে ক্লান্তি, মনোযোগের ঘাটতি, ওজন কম-বেশি, মেজাজ পরিবর্তন, স্মৃতিভ্রংশ ইত্যাদি ধরণের উপসর্গ দেখা দিলে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ সঠিক চিকিৎসাপত্র এবং জীবনযাপনে পরিবর্তনের মাধ্যমে হরমোনজনিত সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে থাকে।
ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ-শেষকথা:
আসলে ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ এর মধ্যে বলা যায়, সবকিছুরই একটা নিয়ম এবং মাত্রা আছে। আসলে আমাদের শারীরিক নানাবিধ সমস্যার অন্যতম কারণ হলো, উদাসিনতা, গুরুত্ব না দেয়া, রোগ চেপে রাখা, মদ্যপান, অতিরিক্ত ঔষধ সেবন, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, সঠিক খাদ্যাভাস, শারীরিক পরিশ্রম, নিজের প্রতি আস্থা না রাখা, অল্পেই ধৈর্য্যচ্যুতি, চাহিদার থেকে অতিরিক্ত প্রত্যাশা, অপব্যবহার, পরনিন্দা চর্চা এবং সর্বোপরি হরমোনজনিত তারতম্যের প্রভাবে ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ হতে পারে।
আরও পড়ুন: গিমা শাক রান্না করার রেসিপি
যাইহোক আজকের ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ বিষয়ক আলোচনায় আপনার কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। উপরোক্ত আলোচনাগুলি যদি নিজে বুঝে থাকেন অথবা ভালো লেগে থাকে, তাহলে তা অবশ্যই অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। পরিমেষে ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url