যে তিনটা জিনিস আটায় মেশালে বাড়বে হজমশক্তি
পেট ভালো থাকলে মনও ভালো থাকে। আর এই পেট ভালো রাখার জন্য যে তিনটা জিনিস আটায় মেশালে বাড়বে হজমশক্তি, সে বিষয়ে জানবো।
আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্র মতে, খাবারের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে পেট ভালো রাখার উপায়। আর সেটি যদি হয় রুটি, তাহলে তো প্রশ্নই চলেনা। সুতরাং এই রুটিকে শক্তিশালী করার জন্য যে তিনটা জিনিস আটায় মেশালে বাড়বে হজমশক্তি তা জানতে নিচের লেখাটি পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র: যে তিনটা জিনিস আটায় মেশালে বাড়বে হজমশক্তি (These three things mixed with Flour will improve digestion)
ভূমিকা
যে জিনিসগুলি আটায় মেশালে হজমশক্তির বৃদ্ধি ঘটে
হজমশক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণসমূহ
হজমশক্তি কমে যাওয়ার কারণ সমূহ
যে তিনটা জিনিস আটায় মেশালে বাড়বে হজমশক্তি-পরিশেষে
ভূমিকা:
বর্তমানে আমাদের খাদ্যাভাসের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাদ্য হচ্ছে রুটি। বিশ্বের অনেক দেশেই কিন্তু প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয় রুটি, আর এই রুটির উপকরণ হচ্ছে আটা। অর্থাৎ এই আটা দিয়ে নানা ধরণের পদ তৈরী করা গেলেও রুটিই কিন্তু আমাদের নিকট অত্যধিক প্রিয়। কিছু কিছু অসুখে আক্রান্ত রোগীদের রুটি খাওয়া বাধ্যতামূলক। আবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভাতের থেকে রুটি খাওয়ার উপরই জোর দিয়ে থাকেন। তবে আমাদের দেশের আবহাওয়াজনিত কারণে আমরা অনেকেই দুইবেলা রুটি এবং একবেলা ভাত খেয়ে থাকি। তবে এখনো অনেক গ্রামের মানুষ আছেন, যারা তিনবেলায় ভাত খেয়ে থাকে। তাই আজকের আর্টিকেলে বর্ণিত যে তিনটা জিনিস আটায় মেশালে বাড়বে হজমশক্তি তা জানতে নিচের লেখাগুলো অবশ্যই পড়তে হবে।
যে জিনিসগুলি আটায় মেশালে হজমশক্তির বৃদ্ধি ঘটে:
আজওয়াইন গুড়া মিশালে:
অর্থাৎ আজওয়াইন সাধারণত পেটের হজম রসকে সক্রিয় করার পাশাপাশি হজমশক্তিরও বৃদ্ধি ঘটায় এবং সর্বোপরি পেট পরিস্কারে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়াও গ্যাস, এ্যাসিডিটি, বুক ও পেট জ্বালাপোড়া, পেট ভারীভাব ইত্যাদি কমাতেও জুরি নেই এই আজওয়াইনের। যদিও আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্রে আজওয়াইনকে উষ্ণ প্রকৃতির বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে ১ কেজি আটার সাথে ১ চামচ আজওয়াইন গুড়া মেশাতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, অনুপাত অনুযায়ীই আজওয়াইন গুড়া মেশাতে হবে, কোন কারণে তা বেশি পরিমাণ হয়ে গেলে শরীর ও পেট গরম হতে পারে।
আরও পড়ুন: মুখে ব্রণ হয় কেন, ব্রণের সমস্যা সমাধানে কী করণীয়?
মৌরি মেশালে:
মৌরি আমাদের নিকট অতি পরিচিত একটি মসালা এবং তা আমরা বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি। মৌরি অনেক ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি মসালা, যা পেট ঠান্ডা রাখে, মল নরম করে এবং পেট পরিস্কার করতে সাহায্য করে থাকে। এ ছাড়াও এসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া, মুখে রুচি বাড়ানোসহ শ্বাসতন্ত্র পরিস্কারে সহায়তা করে থাকে মৌরি। এক্ষেত্রে ১ কেজি আটার মধ্যে ১.৫ চামচ মৌরি গুড়া মেশাতে হবে। তবে মৌরি গুড়া করার আগে যদি তা শুকনা খোলায় হালকা করে ভেজে নিতে পারেন।
রাঁধুনী বীজ মেশালে:
সাধারণত আমাদের রান্নাতে আজমোদ বীজ বা রাঁধুনী বীজ খুব কমই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জানলে অবাক হবেন যে, এই রাঁধুনী অনেক ঔষধী গুণে সম্পন্ন। এটি আমাদের শরীরে লিভার ডিটক্স করে এবং মূত্রনালির সমস্যায় ভীষণ উপকারী। এ ছাড়াও পেট ফোলা, গ্যাসের সমস্যা, পেটে মোচড় দেয়া ইত্যাদি নানা ধরণের সমস্যায় সহায়তা করে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি ১ কেজি আটার মধ্যে ১ চামচ রাঁধুনী গুড়া মেশাতে হবে। তবে এটি গুড়া করার আগে যদি তা শুকনা খোলায় হালকা করে ভেজে নিতে পারেন।
আরও যে তিনটা জিনিস আটার সাথে মেশাতে পারেন:
উপরোক্ত ট্রিপসগুলো ছাড়াও আরও যে তিনটা জিনিস আটায় মেশালে বাড়বে হজমশক্তি-র বৃদ্ধি ঘটে তা নিম্নে বর্ণিত হলো:
ইসবগুলের ভুসি: অর্থাৎ আমরা অনেকেই এই ইসবগুলের ভুসির নানান উপকারিতা ও গুনাগুণ সম্পর্কে জানি। তাই যদি আটার সাথে সামান্য পরিমাণে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে রুটি বা পরোটা তৈরি করে খেতে পারেন।
তিসির বীজ: জেনে অবাক হবেন যে, এই তিসির বীজে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ফাইবার রয়েছে। এটি শুধু হজমশক্তির বৃদ্ধি ঘটায়না বরং হৃদরোগের ঝুঁকিও কমাতে সহায়তা করে থাকে। আপনি যদি আটার সাথে সামান্য পরিমাণে তিসির বীজ মিশিয়ে খেতে পারেন, তাহলে একদিকে যেমন হজমশক্তির বৃদ্ধি ঘটবে আবার অন্যদিকে শরীরে পুষ্টি উপাদানেও সহায়তা ঘটবে।
আরও পড়ুন: ফ্যাটি লিভার কমাতে নিয়ম করে আদা খান
জোয়ান: আমরা অনেকেই জানি যে, জোয়ান হজমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মসালা। এটি শুধু হজমে সহায়তা করা বাদেও গ্যাস, এসিডিটি ইত্যাদি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই হজমশক্তির বৃদ্ধিসহ অন্যান্য উপকার পেতে হলে আটার মধ্যে সামান্য পরিমাণে জোয়ান মিশিয়ে রুটি বা পরোটা তৈরি করে খেতে পারেন।
হজমশক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণসমূহ:
আসলে অনিয়ম এবং নানা প্রকারের খাদ্যাভাস গ্রহণসহ শারীরিক নানা সমস্যার কারণে মানুষের হজমশক্তি কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। এক্ষত্রে হজমশক্তি কমে যাওয়ার নিম্নোক্ত কারণগুলি হতে পারে বদহজম, পেট ফোলাভাব, বৃক জ্বালাপোড়া করা, ক্ষুধা কমে যাওয়া, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা এবং মাথাব্যথাসহ মলত্যাগের সমস্যা।
হজমশক্তি কমে যাওয়ার কারণ সমূহ:
আজকের যে তিনটা জিনিস আটায় মেশালে বাড়বে হজমশক্তি আরোচনার মধ্যে হজমশক্তি কিভাবে কমে যেতে পারে সে বিষয়েও জানতে হবে। যেমন-
পর্যাপ্ত না ঘুমানো, মানসিক দুশ্চিন্তা বা চাপ, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা, বেশি বেশি ফাস্টফুডে আসক্তি, খোলা পরিবেশে তৈরিকৃত ভাজাপোড়া খাওয়া, খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা র্অাঁশজাতীয় খাদ্য না থাকা, অ্যালকোহল ও ধুমপান, শারীরিক পরিশ্রম না করা ইত্যাদিকে দায়ী করা যেতে পারে।
যে তিনটা জিনিস আটায় মেশালে বাড়বে হজমশক্তি-পরিশেষে:
মূলত আমাদের শরীরটি চলে কিন্তু খাবারের উপরই। অর্থাৎ আপনি যতদিন খেতে পারছেন, ততোদিন পর্যন্ত আপনার শরীরটি আপনার সাথে সঙ্গ দেবে, কিন্তু যে মুহুর্তে খাবার-দাবার ছেড়ে দিবেন, অথবা খেতে পারবেন না বা পারছেন না, ঠিক সেই মুহুর্ত থেকেই শরীর আপনার কথা কিন্তু শুনবে না। আসলে অনেক সময় আমাদের খেতে ইচ্ছে করেনা, রুচি হয়না, খাবারের প্রতি অনীহা, গ্যাস, চুয়া ঢেকুর, বদহজম ইত্যাদি নানা জাতীয় সমস্যার কারণে আমরা খেতে পারিনা। তাই এসব ক্ষেত্রে যে তিনটা জিনিস আটায় মেশালে বাড়বে হজমশক্তি বিষয়ক আলোচনায় আমাদের একটু সচেতন হতে হবে। যেমন-আমরা যদি প্রতিবার খাওয়া শেষ করে অল্প পরিমাণ লেবু-পানি খেতে পারি, তাহলে হজমের জন্য খুব ভালো কাজ করে। আবার খাবার শুরু করার আগে যদি জিহ্বাতে সামান্য পরিমাণ লবণ স্পর্শ করে খাওয়া শুরু করি, তাহলেও সেটাও আমাদের হজমের জন্য সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন: মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন
সুতরাং খাবারের আসলে একটা সময় থাকা উচিত। সাধারণত দুপুরের খাবার যদি ১২ টা থেকে সর্বোচ্চ ২ টার মধ্যে খেতে পারেন, তাহলে সেটা একটা নিয়মের মধ্যে পড়ে। অনেকেই বলেন, খাবারের পর পুদিনা পাতার চা পান করলে তা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। যাইহোক যে তিনটা জিনিস আটায় মেশালে বাড়বে হজমশক্তি বিষয়ে যদি আপনাদের কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকে, তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আসলে খাবার কিন্তু ধীরে এবং সম্পূর্ণ চিবিয়ে খাওয়াই ভালো। তাড়াহুড়ো করে গিলে খাওয়া মোটেই উচিত নয়। পরিশেষে যে তিনটা জিনিস আটায় মেশালে বাড়বে হজমশক্তি বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url