মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন

সাধারণত আমরা তরি-তরকারী রান্না করতে যে মসলাগুলো ব্যবহার করে থাকি, তার একটি হচ্ছে মেথি। কিন্তু এই মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন রয়েছে, যা জানতে হবে।
বর্তমানে আমরা অনেকেই ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত হাটাহাটি করে থাকি। কিন্তু আমাদের এই হাঁটাহাঁটি করে ওজন কমানোর কাজটি যদি মেথি দ্বারা হয়ে তাহলে কেমন হয়। তাই কথা না বাড়িয়ে জেনে নেয়া যাক মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন সমূহ:

পোস্ট সূচিপত্র: মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন (Various benefits and nutritional properties of Fenugreek)
মেথির যত পুষ্টিগুণ
মেথির উপকারিতা ও গুণাবলী
মেথির যত পুষ্টিগুণ ও মেথি খাওয়ার নিয়ম
মেথি পানির অপকারিতা
আচার তৈরিতে মেথি গুড়া
মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন : শেষ কথা

মেথির যত পুষ্টিগুণ :

মেথিতে আছে ফাইবার, ভিটামিন এ, বি১, বি২, সি, ফসফোলিপিডস, গ্লাইকোলিপিডস, লিনোনিক অ্যাসিড, কোলিন, নিকোটিনিক অ্যাসিড, নিয়াসিন এবং খনিজের মধ্যে আছে আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, পটাসিয়াম ও জিংক।

মেথির উপকারিতা ও গুণাবলী :

হজমে সাহায্য :
মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন হিসেবে এর অংকুরিত বীজ হজমে সাহায্য করে থাকে। একটি পাত্রে মেথিবীজ নিয়ে তার ওপর একটা ভিজা কাপড় ঢাকা দিয়ে রাখুন। খেয়াল করবেন কাপড়টি যাতে শুকিয়ে না যায় সেজন্য মাঝেমধ্যে একটু পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিবেন। এভাবে মোটামুটি তিন দিন পর বীজের অঙ্কুরোদগম হবে। এই অঙ্কুরোদগম মেথি খেলে খুব সহজেই কমে যাবে শরীরের মেদ। আসলে মেথি ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে ভরপুর।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের নিয়মিত মেথির পানি সেবনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহ রক্তে কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

চুল পড়া রোধ:
মেথির পুষ্টিগুণের ফলে যদি নিয়মিত মেথির পানি সেবন করা যায়, তাহলে চুল পড়া বন্ধ হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর:
আবার যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাদের নিয়মিত মেথির পানি সেবনে তা সমাধান হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: টক দই এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

ব্যথা উপশম:
নিয়মিত মেথির পানি সেবনে  শরীরে ফোলাভাব, পেশির ব্যথা, হাঁটুর গিঁটে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা থেকে থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

হাপানি, কাশি, বুকে কফ জমা:
নিয়মিত মেথির পানি সেবনে শরীরের কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, বুকে কফ জমা ইত্যাদি সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

শিশুদের ওজন বৃদ্ধি:
মেথির পানি মায়ের দুধ উৎপাদন ও নবজাতক শিশুদের ওজন বৃদ্ধির হার বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি:
নিয়মিত মেথির পানি সেবনে পুরুষদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা এবং যৌন কার্যকারিতা বেড়ে থাকে।

আরও পড়ুন: ভিটামিন ডি ও ই একসাথে খাওয়া যাবে কি

কিডনী পরিস্কার:
নিয়মিত মেথি চা পান করলে পরিস্কার থাকে কিডনি। কারণ মেথির প্রভাবে ইউরিন ক্লিয়ার থাকে, ফলে কিডনীতে পাথর হওয়ার ঝুচি হ্রাস হয়।

ওজন কমায়:
মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন হিসেবে মেথির পানি পেট ঠান্ডা করে এবং খিদেও কমিয়ে থাকে। আর স্বাভাবিকভাবেই খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায় বলে ওজন নিয়ন্ত্রণে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আগেকার দিনে আমাদের নানী ও দাদীরা পেট গরম হলেই মেথির পানি খাওয়ার পরামর্শ দিতেন।

মেথি খাওয়ার নিয়ম :

  • মেথি খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ মেথি দশ মিনিট ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন। আবার স্বাদ বৃদ্ধির জন্য তাতে লেবুর রস ও মধু মেশাতে পারেন।
  • সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি বা ডিটক্স ওয়াটার খেতে পারেন।
  • সবুজ মেথি, সবজি এবং পরোটার মধ্যে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ তা সবজি ও পরোটার মধ্যে দিয়ে খাওয়া যায়।

মেথি পানির অপকারিতা :

  • মেথি ভেজানো পানি তিতা স্বাদের হওয়ার কারণে অনেক সময় বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরা সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
  • এ ছাড়াও মেথির পানি খাওয়াতে অনেকের শারীরিক সমস্যা হয়ে থাকে, বিশেষ করে যাদের রক্ত পাতলা। কারণ মেথি রক্তের জমাট বাধায় প্রতিরোধ করে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তা সেবন করাই ভালো।

আচার তৈরিতে মেথি গুড়া :

যে কোন ধরণের আচার, যেমন-আমের আচার, বড়ই এর আচার সহ অনেক আচারেই মেথির গুড়া ব্যবহার হয়ে থাকে। অর্থাৎ বাড়িতেই শুকনো খোলায় মেথি ভেজে গুড়া করে তা আচারের সাথে দেয়া হয়। এর ফলে আচারের স্বাদ বৃদ্ধি ঘটে এবং গন্ধও ছড়ায়।

মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন : শেষ কথা

সুতরাং মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন হিসেবে ১ চামচ মেথি ১ গ্লাস গরম পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে তা ঠাণ্ডা করে সেবন করতে পারেন। আবার আদা, দারুচিনি দিয়ে মেথির চা তৈরি করেও নিয়মিত তা পান করতে পারেন। ৩ মাসের মধ্যেই মেথির জাদুকরী ক্ষমতা উপভোগ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন: কিভাবে পটাশিয়াম রক্তচাপকে প্রভাবিত করে

আশা করছি, মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন সম্পর্কে যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। পরিশেষে মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন বিষয়ক আলোচনায় দীর্ঘক্ষণ আপনার উপস্থিতি সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url