পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর
পটল রান্না করার সময় অনেকে এই পটলের বিচি ফেলে দেন। কিন্তু এই পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর, সেটা জানতে নিচের লেখাটি পড়ুন।
মূলত পটল এমন একটি সবজি যা অনেক পদে রান্না করে খাওয়া যায় এবং এটি সকলের কাছেই প্রিয়। কিন্তু অনেকেই আছেন, যারা এই পটলের বিচির গুণাগুন না জেনেই বাড়তি ঝামেলা হিসেবে ফেলে দেন। তাই আজকে এই পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর সে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হবে।
পোস্ট সূচিপত্র: পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর (Is eating Plantain Seeds good or harmful?)
ভূমিকা
পটলের বিচি খাওয়ার উপকারিতা
পটলের বিচি খাওয়ার অপকারিতা
পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর-শেষ কথা
ভূমিকা:
আসলে পটল ছোট-বড় সকলেরই কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি হিসেবে পরিচিত। পটল এর ইংরেজি হল Parwal বা Pointed Gourd এবং বৈজ্ঞানিক নাম হলো Trichosanthes dioical। পটল দিয়ে বিভিন্নভাবে রান্না করা যেতে পারে, যেমন-পটলের দোরমা, পোস্ত, পটোল চিংড়ি, পটল-আলুর পাতলা ঝোল, পটল ভাজি, লাবড়ায় পটল, পটল-আলু সিদ্ধ বা ভর্তা, মাছের ঝোলে পটল-আলু, মিক্সড সবজিতে পটল, অনেকে নুডলসের মধ্যে পটল ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত কাঁচা পেঁয়াজ খেলে যেসব ক্ষতি হতে পারে
তবে উপরোক্ত পদগুলি রান্না করতে অনেকেই বিচিসহ রান্না করে থাকেন। এক্ষেত্রে পটলের বিচি যাদের কাছে বিরক্তিকর অথবা যাদের দাঁতের সমস্যা আছে বা কেউ কেউ পটল ভাজার সময় বিচিগুলো ফেলে দেন। কিন্তু জানলে অবাক হবেন যে, এই পটলের বিচির কত গুণ। নিম্নে পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর তা বিস্তারিত বর্ণিত হলো।
পটলের বিচি খাওয়ার উপকারিতা:
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা:
পটলের বিচিতে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ঘটে। অর্থাৎ এতে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলগুরো কমিয়ে শরীরকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সহায়তা:
সাধারণত যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা আছে, তাদের বেশি করে পটলের বিচি খেতে হবে। আসলে পটলের বিচিতে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়ে থাকে।
হজমের সমস্যা দূরীকরণে সহায়তা:
বর্তমানে হজমের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকে। তাই যাদের হজমজনিত সমস্যা বিদ্যমান তাদের ক্ষেত্রে পটলের বিচি খাওয়া অত্যাবশ্যক, কারণ পটলের বিচিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় তা রক্তে জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে থাকে।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী পটলের বিচিতে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও নিয়মিত পটলের বিচি বা বীজ খেলে জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি জাতীয় সমস্যা নিরসনে অনেকটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা:
পটলের বিচিতে পুষ্টি উপাদান থাকায় তা যেমন শরীরের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও তা অনেক বেশি উপকার হয়ে থাকে।
শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়তা:
আসলে পটল এবং টপটলের বিচিতে দুটোতেই যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে তা শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে থাকে। বিশেষ করে যাদের বাতের সমস্যা আছে, তাদেরকে নিয়মিত পটল ও পটলের বিচি খেতে হবে।
কৃমি নাশকে সহায়তা:
পটল এবং পটলের বিচি দুটোই প্রাকৃতিকভাবে শরীরে কৃমিনাশক হিসেবে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আর পটলের বিচিতে রয়েছে পাাইপেরাজিন সাইট্রেট নামক কার্যকরী উপাদান, যা শরীরে কৃমিনাশকে সহায়তা করে থাকে।
আরও পড়ুন: আমলকির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাসমূহ
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা:
সাধারণত পটলের বিচিতে রয়েছে ফাইবার যা অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে। ফলে যাদের ওজন অত্যধিক বেশি তাদেরকে নিয়মিত পটল এবং পটলের বিচি খেতে হবে।
রক্ত পরিশুদ্ধকরণে সহায়তা:
মূলত পটরের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা রক্তে জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়, যার ফলে রক্তের পরিশুদ্ধি ঘটে থাকে।
সর্দি-কাশি কমাতে সহায়ক:
সাধারণত বর্ষাকালে অনেকের সর্দি-কাশিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। আবার অনেকেরই সারা বছর কোন না কোন ভাবে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে তাদেরকে এ সকল অসুখের পরিত্রাণে নিয়মিত পটল ও পটলের বিচি খেতে হবে।
পটলের বিচি খাওয়ার অপকারিতা:
যদিও পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর এর মধ্যে উপকারিতাই বেশি, তথাপি নিম্নে কিছু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক বর্ণিত হলো:
পটলের বিচি: আসলে অনেকেই আছে যারা পটলের বিচি চিবিয়ে না খেয়ে গোটা গিলে ফেলে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘরে। এক্ষেত্রে পটলের বিচি গোটা গিলে ফেললে তা হজমে অসুবিধা হয়, বিশেষ করে পটি করার সময়ই তা বোঝা যায়।
পটলের খোসা বা চোকা: প্রত্যেকটা সবজিরই একটি খোসা বা চোকা থাকে। এক্ষেত্রে পটলের খোসা না খাওয়াই শরীরের জন্য ভালো। এতে করে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি একান্তই পটলের খোসা বা চোকা খেতে চান তাহলে তা অবশ্যই ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে। তবে অনেক সময় পটলের চোকা ছিলতে না পারলেও তা বটিতে ঘষে নিয়েও রান্না করা যেতে পারে। এ ছাড়াও যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাদের বেশি পরিমাণে পটল না খাওয়াই ভালো। কারণ এতে করে এসিডিটির আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে এই সেইসঙ্গে গ্যাসও বাড়তে পারে।
পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর-শেষ কথা:
উপরোক্ত আলোচনা থেকে পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। তাই চেষ্টা করুন পটলের বিচি ফেলে না দিয়ে তা খাবারের। কারণ মাথা থেকে পা পর্যন্ত এই বিশাল দেহটাকে সুস্থ্য রাখতে আমাদের অনেকগুলো কাজের মধ্যে একটি হচ্ছে সঠিক এবং সময়মত খাদ্য গ্রহণ। যেমন গাড়িতে তেল না দিলে গাড়ি চলেনা, ঠিক তেমনি শরীরকে যদি উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ না করাতে পারা যায়, তাহলে শরীরও আস্তে আস্তে ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: কাঁঠালের বিচির অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
যাইহোক আজকের পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর বিষয়ক আলোচনায় আপনাদের কোন পরামর্শ/মন্তব্য থাকলে তা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। পরিশেষে পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url