করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায়

করলার তেতো স্বাদের কারণে অনেকেই করলা খেতে চান না। তাই কিভাবে করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায়, তা জানতে নিচের লেখাটি পড়ুন।
আসলে করলা তেতো হলেও এর কিন্তু অনেক পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে। আসলে এই সবজিটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সমৃদ্ধ। তাই আমরা যদি করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায় বিষয়টি যদি জেনে থাকি, তাহলে নির্দ্বিধায় করলা খাওয়া যেতে পারে।

পোস্ট সূচিপত্র: করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায় (Can the bitterness of Bitter gourd be avoided?)
করলা তেতো হয় কেন?
করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ
করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায়
করলার বিভিন্ন উপকারিতাসমূহ
করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায়-শেষ কথা

করলা তেতো হয় কেন?

আসলে করলাতে এক ধরনের জৈব রাসায়নিক যুক্ত থাকে, আর এই বিশেষ ধরণের গ্লাইকোসাইডের নাম হলো মোমরডিসিন। আর এই মোমরডিসিন উপাদানটির উপস্থিতির জন্যই মূলত করলার স্বাদ তেতো লাগে।

করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ:

করলার পুষ্টিগুণাবলী অনেক সমৃদ্ধ, যেমন-প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি১, বি২, সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার ও পটাসিয়াম। করলা সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

আরও পড়ুন: করলা খাওয়ার নিয়ম - করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ

তা ছাড়াও এটি কৃমি এবং পেটে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ দূর করে রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে, দুর্বলতা রোধে সহায়তা, হাড় মজবুত ও হজম শক্তি বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক একটি সবজি। তবে যারা সাধারণত পেটের অসুখে ভুগে থাকে, তাদের জন্য কিন্তু করলা একটি মহাঔষধ।

করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায়:

করলার তেতোভাব এড়াতে রান্নাতে কিছু পরিবর্তন আবশ্যক, যার কারণে করলার তেতোভাব অনেকটা কমে গিয়ে থাকে। যেমন-
  • করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায় এর ক্ষেত্রে অবশ্যই করলা রান্না করার আগে তা নিজের প্রয়োজন মতো কেটে অন্তত পক্ষে ২০ মিনিট লবণ মাখিয়ে রেখে দিন। এরপর হালকা করে ধুয়ে নিয়ে রান্না করুন।
  • যদি করলা ভাজি করেন, তাহলে অবশ্যই তা যতটা সম্ভব পাতলা করে কাটার চেষ্টা করুন এবং এর সাথে আলু কুচি কুচি করে দিতে পারেন। কারণ পাতলা করে কাটার ফলে করলা তাড়াতাড়ি রান্না হয় এবং এর সাথে আলু মিক্সড করার ফলে এর তেতোভাবটাও অনেকটা কমে যায়।
  • করলা রান্না করতে হলে ননস্টিক ফ্রাই প্যান বা অ্যালুমিনিয়ামের কড়াইতে রান্না করুন। কারণ লোহা বা পিতলের কড়াইয়ে করলা রান্না করলে এর তেতো ভাবটা বেড়ে যায়।
  • সাধারণত করলা রান্না করতে হলে তা ঢেকে রান্না না করাই ভালো। কারণ ঢেকে রান্না করলে করলা তেতো হয়। এ ছাড়াও রান্না করার সময় খুব বেশী নাড়াচাড়া না করাই। ভালো।
  • করলার তেতোভাব কমাতে তা রান্নার সময় বিভিন্ন উপকরণ মেশাতে পারেন।
  • করলার তেতোভাব কমানোর জন্য তা যদি পাতলা পাতলা করে কেটে নিন। এরপর ভিনেগার ও চিনি দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন। এই মিশ্রণটির মধ্যে অন্ততপক্ষে আধাঘন্টা আপনার কেটে রাখা করলা ডুবিয়ে রাখুন। এরপর তা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করুন।
  • করলার তেতোভাব কমানোর জন্য অনেকে দই দিয়ে করলা রান্না করে খেয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন: কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয়

  • সাধারণত করলা রান্নার সাথে অনেকগুলো মশলা ব্যবহার করলে এর তেতোভাব অনেকটাই কমে যায়। যেমন-পিঁয়াজ, আদা, রসুন, দই, টমেটো ইত্যাদি দিয়ে করলা রান্না করলে তািএর তেতো স্বাদ অনেকটা কমে যাবে।
  • অনেকেই আছেন, যারা করলার তেতোভাব কমাতে এর ওপরের সবুজ আস্তরনটি ছাড়িয়ে রান্না করতে হবে। আবার এর বিচিতেও তেতো ভাব থাকে। তাই এর বিচিগুলো বাদ দিয়ে তা রান্না করলে এর তেতো স্বাদ লাগবে না।

করলার বিভিন্ন উপকারিতাসমূহ:

  • নিয়মিত যদি করলার রস খেতে পারলে তা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে।
  • বাতের ব্যথায় নিয়মিত করলা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • আয়ুর্ব্বেদিক শাস্ত্র মতে করলাতে কৃমিনাশক, কফনাশক এবং পিত্তনাশক উপকার পাওয়া যায়।
  • আবার কোন ক্ষতস্থানের উপর করলা পাতার রস এবং উচ্ছে গাছ সিদ্ধ জল দিয়ে ক্ষতস্থান ধুয়ে দিলে তা কয়েকদিনের মধ্যেই শুকিয়ে যায়।
  • অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় যদি দুই বেলা দু চা-চামচ করলার রস সেবন করা যায় তাহলে তা অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • এ ছাড়াও যাদের জন্ডিস ও লিভারের সমস্যা আছে তাদের জন্য করলা খুবই উপকারী।
  • অনেক সময় খাবারে অরুচি দেখা দেয়, অর্থাৎ এরকম ক্ষেত্রে করলা খেলে খাবারে অরুচি ফিরে অরুচি ফিরে আসে।

করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায়-শেষ কথা:

প্রকৃতপক্ষে করলা তেতো হলেও এর পুষ্টিগুণ যে ব্যাপক তা উপরের আলোচনা ও বিস্তারিত বর্ণনা থেকেই জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আসলে করলা অনেক উপকারী একটি সবজি, যা বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায় হিসেবে মূলত রান্নার উপরেই নির্ভরশীল এর তেতো স্বাদ।

আরও পড়ুন: কাঁচা আদা খেলে কি হয়

যাইহোক, আজকের করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায় বিষয়ক আলোচনায় যদি আপনার কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং প্রয়োজনে অন্যদেরও তা শেয়ার করতে পারেন। পরিশেষে করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায় বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।


বি.দ্র.: আসলে আজকের করলার তেতোভাব কি এড়ানো যায় বিষয়ক আলোচনাটি শুধুমাত্র পরামর্শমূলক কোন চিকিৎসাপত্র নই। তবে যে কোন শারীরিক সমস্যার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url