করলা খাওয়ার নিয়ম - করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ

করলা একটি লতা জাতীয় একটি উদ্ভিদ। করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ অসীম। কিন্তু এই করলা খাওয়ার নিয়ম কি বা কিভাবে খেলে তা থেকে উপকৃত হওয়া যাবে, তা আজকের আর্টিকেলটি পড়লে জানতে পারবেন।
এলার্জি প্রতিরোধে করলার রস দারুণ উপকারি। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি উত্তম কেননা করলার রস খেলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই করলা খাওয়ার নিয়ম বা করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ কি কি তা অবশ্যই জানতে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: করলা খাওয়ার নিয়ম - করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ (How to eat bitter gourd - Nutritional properties of bitter gourd) 

করলার বিজ্ঞানভিত্তিক নাম কী?

লতা জাতীয় উদ্ভিদ হিসাবে পরিচিত করলা। তবে করলার বিজ্ঞানভিত্তিক নাম-Momordica charantia, যা Cucurbitaceae-গোষ্ঠী বা পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। তবে বিজ্ঞানভিত্তিক নাম ছাড়াও আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে করলাকে করল্লা, উচ্ছা, উচ্ছে ইত্যাদি নামেও জানা যায়।

করলার পুষ্টিগুণসমূহ কি কি?

করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ অনেক। বিশেষ করে ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্যে করলা একটি মহা ঔষধ কা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে সাধারণত যারা পেটের অসুখে ঘন ঘন ভুগে থাকেন, তাদের জন্য করলা অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি হতে পারে। কারণ করলা পাকস্থলীতে পাচক রসের নিঃসরণ সক্রিয় করে এবং তার ফলে হজমশক্তির বৃদ্ধি ঘটে। গ্যাসসহ পেটের বিভিন্ন সাময়িক সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
করলায় আছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ফাইবার, ভিটামিন এ, বি১, বি২, সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিংক ও পটাশিয়ামের মতো পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। এটি পেটের কৃমি ও পেটে জমে থাকা করলা শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় উপাদান দূর করে রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং সেইসাথে ওজন কমাতেও সাহায্য করে এবং দুর্বলতা দূরসহ হাড় মজবুত করতে অত্যন্ত সহায়ক একটি সব্জি এই করলা।

আরও পড়ুন: হেঁচকি ওঠে কেন - হেঁচকি থামানোর ঘরোয়া উপায়গুলি কি কি

প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় থাকে ৮৩.২ গ্রাম জলীয় অংশ। এতে খনিদ পদার্থের পরিমাণ ১.৪ গ্রাম, আঁশ আছে ১.৭ গ্রাম, খাদ্য শক্তি যোগান দেয় ৬০ কিলোক্যালরি, আমিষ পাওয়া যায় ২.১ গ্রাম, করলায় চর্বির পরিমাণ ১.০ গ্রাম, শর্করা রয়েছে ১০.৬ গ্রাম এবং ক্যালসিয়াম ২৩ মি.গ্রা., লৌহ থাকে ২.০ মি.গ্রা., ১২৬ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন ও ৯৬ মিগ্রা ভিটামিন-সি রয়েছে।

করলার উৎপত্তিস্থল কোথায়:

করলা এশিয়া মহাদেশে একটি জনপ্রিয় সবজি হিসেবে খুবই পরিচিত। তবে জেনে রাখা ভালো যে, করলা আসলে এই মহাদেশের অর্থাৎ এশিয়া মহাদেশের সবজি নয়। এটি কিন্তু সর্বপ্রথম আফ্রিকায় আবিস্কৃত হয়েছিল এবং সেখান হতে কালের স্রোতে এশিয়ায় আসে। মজার বিষয় আফ্রিকায় গ্রীষ্মের মৌসুমে কুঙ্গ শিকারিদের প্রধান খাদ্য ছিল এই সবজি।

করলা তিতা কেন?

আসলে করলা তিতার জন্য অনেকেই এটি খেতে চাইনা, বিশেষ করে শিশুরা। কিন্তু্ একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন, আগেকার মানুষ, বিশেষ করে আমাদের বাবা-মা, দাদা-দাদু-দিদিমা তারা কিন্তু এই করলা নিয়মিত খেয়ে থাকতেন। আসলে করলা তিতা হওয়ার কারণ হলো এতে এক ধরণের একটি উপাদান থাকে, যার নাম মোমরডিসিন। চলুন ব্যাখাটা জেনে নেই, মূলত করলাতে এক ধরণের জৈব রাসায়নিক যুক্ত থাকে। বিশেষ ধরণের এই গ্লাইকোসাইডের নাম হলো মোমরডিসিন, আর এই মোমরডিসিন উপাদানটির জন্যই করলার স্বাদ তিতা হয়। 

কিভাবে করলা রান্না করলে এর স্বাদ তেতো লাগবে না:

করলা খাওয়ার নিয়ম বা রান্নার পদ্ধতি সম্পর্কেে একটু জেনে নেয়া প্রয়োজন:
  • করলা কাটার আগে ধুয়ে নিতে হবে। তবে কাটার পরে হাত দিয়ে বেশি কচলে নেওয়ার দরকার নেই। রান্নার আগে ধুয়ে নিলেই হবে।
  • যদি আপনি করলা কেটে লবণ মেখে রাখেন তাহলে তেতো ভাব অনেকটাই কেটে যায়। তাই কাটা করলায় লবণ মেখে ২০ মিনিট রেখে দিন। তাতে করে পানি ঝরে তেতো ভাব অনেকটা কমে যাবে। রান্নার আগে আলতো করে আবার ধুয়ে নিতে পারেন।
  • করলা যতই পাতলা করে কাটা যাবে, ততই দ্রুত রান্না হবে। তাই ভাজার জন্য করলা কাটলে অবশ্যই পাতলা করে কাটার চেষ্টা করুন। এতে করলা বেশি সময় নাড়তে হবে না।
  • করলা ভাজি করতে হলে এর সঙ্গে কয়েকটা আলু কুচি করে কেটে দিতে পারেন। এই আলুর কারণেও করলার তেতো ভাব কমে যাবে।

আরও পড়ুন: কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার

  • সাধারণত করলা রান্নার জন্য কোন লোহা বা পিতলের কড়াই ব্যবহার করা যাবে না। এতে করলা তেতো লাগবে। সবচেয়ে ভালো হলো অ্যালুমিনিয়ামের কড়াইতে রান্না করা। এ ছাড়া ননস্টিক ফ্রাই প্যানেও রান্না করতে পারেন।
  • খেয়াল রাখতে হবে যে করলা রান্নার সময় বেশি নাড়া যাবে না। আবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকেও রাখা যাবে না। ঢেকে রান্না করলে করলা তেতো হয়।
  • আমচুর বা লেবু ব্যবহার সর্বোপরি করলার তেতো ভাব দূর করার জন্য এই সবজি রান্নার সময় বিভিন্ন উপকরণ মেশাতে পারেন। যদি খোসা ছাড়িয়ে রান্না করা যায়, তাহলে এর তেতো ভাব অনেকটাই দূর হবে।

করলার নানান উপকারিতা:

করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ হিসেবে এর রস দারুণ উপকারী অ্যালার্জি প্রতিরোধে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি উত্তম। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে করলার রস খেলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বাতের ব্যাথায় নিয়মিত করলা রস খেলে ব্যাথা কমে। আর্য়ুবেদিক শাস্ত্র মতে করলায় তিন ধরণের উপকার পাওয়া যায়। যেমন-কৃমিনাশক, কফনাশক ও পিত্তনাশক ছাড়াও করলায় রয়েছে জীবাণু নাশক ক্ষমতা। সাধারণত কোন ক্ষতস্থানের উপরে যদি করলা পাতার রসের প্রলেপ দিলে এবং উচ্ছে গাছ সেদ্ধ জলদিয়ে ক্ষত ধুলে কয়েকদিনের মধ্যেই ক্ষত শুকিয়ে যায়। অ্যালার্জি হলে এর রস দু চা চামচ দুবেলা খেলে সেরে যাবে। চর্মরোগেও করলা বেশ উপকারী। সাধারণত যাদের জন্ডিস ও লিভারের অসুখ আছে তাদের জন্য করলা খুবই কার্যকরী। এ ছাড়াও যাদের খাবারে অরুচি দেখা দেয়, তাদেরকে করলা খেতে হবে, কেননা করলা খেলে খাবারে রুচি ফিরে আসে। 

করলা খাওয়ার নিয়ম - করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ - শেষ কথা:

করলা খাওয়ার নিয়ম অর্থাৎ বিভিন্ন নিয়মানুযায়ী করলা খাওয়া যেতে পারে। আমরা জানি যে করলা পাতার রস খুবই উপকারী। এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, নানা ধরনের ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। এনার্জি ও স্টেমিনা বাড়িয়ে তুলতেও করলা পাতার রস সাহায্য করে। আবার অতিরিক্ত এলকোহল খাওয়ার অভ্যাস থেকে লিভার ড্যামেজড হলে, সে সমস্যায় করলা পাতার রস দারুন কাজে দেয়। যে সমস্ত ব্যক্তি ব্লাড ডিজঅর্ডার সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগে থাকেন, তারা যদি লেবুর রস ও করলা পাতার রস একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন, তাতে উপকৃত হবেন ।  অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, ফেরেনজাইটিসের মতো অসুখের জন্য তারা যদি করলা পাতার রসে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন, তাহলে তারা উক্ত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন। এর মাধ্যমে সোরিয়াসিসের সমস্যা, ফাংগাল ইনফেকশন প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। করলা নানা রকমের ব্লাড ডিজঅর্ডার যেমন স্ক্যাবিজ, রিং ওয়র্ম এর সমস্যায় করলা উপকারি। ব্লাড পিউরিফিকেশনে সাহায্য করে। স্কিন ডিজিজ ও ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: আমকে ভিন্ন ভিন্ন দেশে কী নামে ডাকা হয়ে থাকে - কোন দেশে আম জনপ্রিয়

আশা করছি, করলা খাওয়ার নিয়ম - করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ বিষয়ে যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। আগেকার দিনে আমাদের মা-বাবা-দাদা-দাদিরা কিন্তু ভাতের সাথে করলা সিদ্ধ খেতে দিতেন। ছোট্ট বয়সে তিতা জাতীয় কোন জিনিস খাওয়া যে কতটা কষ্টকর, তারপরেও খেতে হতো, নাহলে বকবে। আবার একটু খোঁজ নিয়ে জানবেন, জাপানিরা যে কোন খাদ্য-খাবার গ্রহণের পর একটি কাঁচা সবজি বা ফল খেয়ে থাকেন। হোক সেটা করলা বা বেগুন বা অন্য কিছু। করলা আমাদের দেশে নানা পদে নানাভাবে রান্না করা হয়ে থাকে। করলা ভাজি, করলা সিদ্ধ, করলার চচ্চুড়ি, মাছের সাথে করলার ঝোল, ডালের সাথে করলা, করলার জুস ইত্যাদি। সুতরাং আজকের আর্টিকেলে করলা খাওয়ার নিয়ম সহ এর যাবতীয় গুণাবলীগুলি আপনাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে আশা করি আরও প্রসারিত করবে এবং পরবর্তীতে এ রকম তথ্যমূলক পোষ্ট পেতে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। পরিশেষে এতোক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
 
বিঃদ্রঃ করলা খাওয়ার নিয়ম - করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ টপিকটি শুধুমাত্র সচেতনতার জন্যই প্রকাশিত, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসাপত্র সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্য বা সঠিক সেবা পেতে অবশ্যই আপনি আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url