লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা
লবঙ্গ একটি পরিচিত মসলা হিসেবে আমরা সকলেই জানি। কিন্তু লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা যে কি কি রয়েছে, তা আমরা অনেকেই জানিনা।
কিন্তু এই লবঙ্গ খাওয়ার অনেক নিয়মাবলী রয়েছে। কখন, কোন সময় বা কিভাবে এই লবঙ্গ খাওয়া যাবে তার কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আর সেগুলো জানতেই আজকে লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ক আলোচনা ।
পোস্ট সূচিপত্র: লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা (Health benefits and harms of cloves)
ভূমিকা:
সাধারণত লবঙ্গ আমাদের রান্নার সাথে সম্পৃক্ত একটি মসলা। যেটি তরকারির মধ্যে দিয়ে খাবারের স্বাদ ও ঝাঁজ বজায় রাখা হয়। কিন্তু এর বাইরেও যে লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে সেগুলোওতো আমাদের জানতে হবে। যেমন-দাঁত ও মাড়ির সুস্থ্যতা, সর্দি-কাশি ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ শরীরের অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। তবে লবঙ্গ খাওয়ার যেমন অনেক উপকারিতা আছে, আবার অপকারিতাও প্রচুর। অর্থাৎ ভালো ও খারাপ এই দুই শব্দের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে হবে, আবার ক্ষয়-ক্ষতি বা লাভ-লোকসান এই শব্দ দুটিও ঠিক তাই। সিদ্ধান্তটা আমার, সমস্যার আবর্তে আমি কোনটি গ্রহণ করবো বা আমার অবস্থান অনুযায়ী কোনটি যুক্তিযুক্ত তা নির্ধারণ আমাকেই করতে হবে। আসলে লবঙ্গ শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি মসলা, কিন্তু এটা কোন সময় বা কখন খাবেন তা খাওয়ার নিয়মাবলীগুলি পরিস্কার বুঝেই তবে তা খাবেন।
লবঙ্গের পুষ্টিগুণাবলীসমূহ:
- ছোট্ট একটি ফল লবঙ্গ, কিন্তু এই ছোট্ট মসলাটির যে এতো গুণাবলী রয়েছে যা কল্পনাতীত।
- লবঙ্গে ভিটামিন সি আছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- আছে লবঙ্গে ভিটামিন কে, অর্থাৎ এই ভিটামিন কে আমাদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে থাকে।
- লবঙ্গে আছে ফাইবার, যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত ও স্বাভাবিক রাখে।
- লবঙ্গে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বা ইউজেনল, যা মধ্যে দেহ থেকে টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে থাকে।
- এ ছাড়াও লবঙ্গে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, যা হাড়ের ক্ষয়রোধে ভূমিকা পালন করে।
- লবঙ্গে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি নামক উপাদন, যা শরীরের মধ্যে থাকা ব্যথা বা প্রদাহ কমিয়ে দিতে সহায়তা করে থাকে।
খালি পেটে লবঙ্গ খেলে কি উপকার হয়:
সাধারণত খালি পেটে লবঙ্গ খেলে নানান উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে তা পরিমিত খাওয়াই ভালো। আপনি যদি সকালে খালি পেটে লবঙ্গ খেতে পারেন তাহলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে, এতে রোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটবে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হবে, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে, দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে, শরীরের প্রদাহ কমবে, লিভার পরিস্কার রাখতে সহায়তা ঘটবে এবং শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি ঘটবে।
কিভাবে লবঙ্গ খাবেন?
- সবসময় বা বেশীর ভাগ সময় মুখে লবঙ্গ দিয়ে রাখাটাও ঠিক নয়, কারণ এতে অনেক সময় হিতে বিপরীত ঘটে থাকে। তাই লবঙ্গ খাওয়ার নিয়মাবলী জানাটা অবশ্যই দরকার।
- খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য ১-২টি লবঙ্গ চিবিয়ে খেয়ে এর কিছুক্ষণ পর হালকা উষ্ণ বা কুসুম গরম পানি পান করুন।
- যদি প্রতিদিন লবঙ্গ খেতে থাকেন, তাহলে তা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে প্রতিদিন আপনি অন্ততপক্ষে ২-৩টি লবঙ্গ খেতে পারেন, যা যুক্তিযুক্ত এবং নিরাপদ।
- যদি গরম পানিতে লবঙ্গ ভিজিয়ে রেখে সেই পানি বা তার সাথে মধু মিশিয়ে একসঙ্গে যদি খেতে পারেন, তাহলে ঠান্ডাজনিত সমস্যাসহ কাশির সমস্যা দূর হবে।
লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা সমূহ:
- লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ক আলোচনায় প্রথমেই এর উপকারগুলি কি কি তা নিম্নের আলোচনা থেকে জেনে নিই:
- লবঙ্গে দাঁতের ব্যথা এবং মাড়ির ক্ষয়রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মূলত অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি নামক একটি উপাদান লবঙ্গে থাকার কারণে তা শরীরে কিছু বিক্রিয়ার মাধ্যমে দাঁতের ব্যথা কমিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: জেনে নিন, কোন কোন ফলে বাড়ে লিভারের কার্যকারিতা
- অনেকের যাত্রাপথে বমি বমি ভাব দূর করার ক্ষেত্রে লবঙ্গ মুখে দিয়ে রাখা যেতে পারে। আবার গর্ভবতী নারীদের বমি বমি ভাব দূর করতেও লবঙ্গ মুখে দিয়ে রাখলে বমির ভাব দূর হয়ে যায়। অনেকের কথা বলার সময় মুখে দুর্গন্ধ বের হয়, এক্ষেত্রে তারা যদি মুখে একটি লবঙ্গ দিয়ে রাখেন, তাহলে মুখের দুর্গন্ধও দূর হয় এবং মুখ থেকে সুগন্ধও বের হবে।
- অনেকের মাথা ব্যথা ও মাথা যন্ত্রণা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে লবঙ্গ মুখে দিতে পারেন।
- পেট ফাঁপা বা পেটের অসুখ নিরাময়ের ক্ষেত্রে লবঙ্গ খেতে পারেন। লবঙ্গে এনজাইম বৃদ্ধি করে পেট ব্যথা, বদহজম, খিদে না হওয়া, পেটের গ্যাস ও বায়ু সহ কলেরা রোগ নিরাময়ে লবঙ্গ কাজ করে থাকে।
- যারা ব্রণজনিত সমস্যা ভুগে থাকেন, এক্ষেত্রে লবঙ্গের পেস্ট তৈরি করে যেসব স্থানে ব্রণ হয়েছে তার ওপর দিয়ে রাখলে দাগ চলে যায়।
- সাধারণত সর্দি-কাশি বা ঠান্ডাজনিত অসুখে লবঙ্গ একটি মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে তারা যদি একটি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চিবিয়ে বা চুষে খেলে ঠান্ডা লাগা, অ্যাজমা, সর্দি, কফ, গলা ফুলা সর্বোপরি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় বেশ সুফল পাওয়া যায়।
- লবঙ্গ ব্রেস্ট ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সারের প্রতিরোধমূলক ভূমিকা পালন করে।
- ঠান্ডাজনিত কারণে শরীরের কোন অংশ হঠাৎ করে ফুলে উঠলে এক্ষেত্রে লবঙ্গ খেলে তা থেকে উপশম হবে।
- লবঙ্গ খাওয়ার ফলে শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান টক্সিন বের করে দেয়। কারণ লবঙ্গে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের জন্য একটি ঢাল হিসেবে কাজ করে। ফলে লিভারসহ শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- সাধারণত অনেকেই আছেন, যারা অত্যন্ত মানসিক স্ট্রেস বা উৎকণ্ঠায় থাকেন, এক্ষেত্রে তারা যদি লবঙ্গ চুষে বা চায়ের মধ্যে দিয়ে খেলেও মেজাজ ফুরফুরে হবে এবং শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি ঘটে।
- লবঙ্গ শরীরের ক্ষতিকর উপাদানগুলোকে বের করে রক্তকে পরিশোধ করতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- লবঙ্গ নিয়মিত খেতে পারলেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এছাড়াও শরীরে ইনসুলিন তৈরী এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
আরও পড়ুন: স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকিসমূহ ও লক্ষণগুলি কি কি
- লবঙ্গ শরীরের রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে থাকে। যার ফলে শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা কমে যায়।
- লবঙ্গ ক্যান্সার, কলেরা ও যকৃতের সমস্যা থেকে শরীরকে রক্ষা করে থাকে। কারণ লবঙ্গের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ যে কোন জীবাণুকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট সহায়ক।
লবঙ্গ খাওয়া অপকারিতা সমূহ:
নিম্নোক্ত আলোচনায় লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা-এর মধ্যে অপকারিতাগুলি বর্ণিত হলো:
- সবসময় লবঙ্গ মুখে রাখা যাবে না। কারণ এতে যাদের শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা কম, তাদের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা তৈরী হবে।
- যেসব ব্যক্তিদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে, তাদের অবশ্য লবঙ্গ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, কেননা এতে শরীরে র্যাশ বা চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত লবঙ্গ খেলে অ্যাসিডিটি বা অম্বলজনিত সমস্যা হতে পারে।
লবঙ্গ বিষয়ক প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী:
রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা
খেজুর ও লবঙ্গ একসাথে খেলে কি হয়
অতিরিক্ত লং খেলে কি হয়
লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে কি হয়
সহবাসের আগে লবঙ্গ খেলে কি হয়
লবঙ্গের ক্ষতিকর দিক
প্রতিদিন কয়টি লবঙ্গ খাওয়া উচিত
রাতে ঘুমানোর আগে লবঙ্গ খেলে কি হয়
খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা
লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম
লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা - পরিশেষে:
আসলে এই লবঙ্গ যে বিভিন্ন অসুখের মহা ঔষধ সে বিষয়টি আমাদের মানতেই হবে। কেননা এর মধ্যে যত গুণাবলী রয়েছে তা যদি আমরা মনে রাখতে পারি, তাহলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আমাদের অনেক ছোটখাটো সমস্যার সমাধান সম্ভব। মূলত লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা দুটিই রয়েছে। লবঙ্গ খেতে হলে আমাদের দুটি নিয়মই ভালো করে জানতে হবে।
আরও পড়ুন: কাঁঠালের বিচির অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
পরিশেষে আজকের লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ক আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কোন উপকারে আসে তাহলে আমাদের শ্রম কর্মপ্রচেষ্টা সার্থক হবে। আর ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। সবশেষে লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ক আলোচনায় যুক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url