আজকের আলোচনায় হেঁচকি হঠাৎ ওঠে কেন? - দ্রুত হেঁচকি বন্ধের ১১টি ঘরোয়া উপায় এবং হেঁচকি বন্ধ করার হোমিওপ্যাথি ঔষধ, হেঁচকি ওঠার কারণ কি হতে পারে এবং কোন পর্যায়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা যাবে ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে নিচের লেখাগুলো পড়ুন।
হেঁচকি (hiccup/hiccough) হলো মধ্যচ্ছদা বা ডায়াফ্রামের অনৈচ্ছিক সংকোচনের ফলে সৃষ্ট ঝাঁকুনি যা প্রতি মিনিটে কয়েকবার হয়ে থাকে।
হেঁচকি হঠাৎ ওঠে কেন?
চিকিৎসাশাস্ত্রে এটিকে সিনক্রোনাস ডায়াফ্রাগমাটিক ফ্লাটার (SDF) বা সিংগুল্টাস (singultus) নামে পরিচিত। হেঁচকি ওঠে কেন এমন প্রশ্নে বলা যায়, মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ দুটি অঙ্গ হলো- হৃদপিণ্ড ও ফুসফুস এবং এ ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি হল লিভার, পাকস্থলী ও প্লীহা। এই অঙ্গগুলির মধ্যে কোনওটিতে যদি কোন কারণে সমস্যা দেখা যায় তাহলে তা ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা পেশীকে বিরক্ত করে এবং এর ফলেই হেঁচকি ওঠে থাকে।
দ্রুত হেঁচকি বন্ধের ১১টি ঘরোয়া উপায়ঃ
হেঁচকি সাধারণত এমনিতেই ভালো হয়ে যায়, তবে হেঁচকি থামানোর ঘরোয়া উপায়গুলি কি কি তা জানার চেষ্টা করুন:
হঠাৎ করে চমকিয়ে দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে হেঁচকি থামানোে যেতে পারে। অর্থাৎ এমনটা দেখে গেছে যে, যদি হিক্কা বা হেঁচকি উঠা ব্যক্তিকে হঠাৎ করে চমকানো যায় অথবা ভয় দেখানো যেতে পারে তাহলে তার হেঁচকি বন্ধ হতে পারে।
কাগজের ব্যাগে নিঃশ্বাস ফেলা (ব্যাগের মধ্যে মাথা না ঢুকিয়ে)। হেঁচকি থামানোর কৌশল হিসেবে কাগজের ব্যাগে বা ঠোসের মধ্যে নিজের মাথা না ঢুকিয়ে নিঃশ্বাস আদান-প্রদান করলে অনেক সময় হেঁচকি থেমে যেতে পারে।
দুই হাঁটু বুক পর্যন্ত টেনে ধরে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া। অনেক সময় অতিরিক্ত হেঁচকি উঠতে থাকলে তা কমানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে যদি দুই হাঁটু বুক পর্যন্ত টেনে ধরে সামনের দিকে ঝুঁকে কয়েকবার করতে থাকলে হেঁচকি কমে যেতে পারে।
হেঁচকি থামানোর ঘরোয়া উপায়গুলি কি কি এর মধ্যে হেঁচকি ওঠার সময়ে ঠাণ্ডা পানি বা বরফ খেয়ে তা থামানো যেতে পারে। এই ঘরোয়া উপায়টি প্রয়োগ করেও হেঁচকি থামানো যেতে পারে। অর্থাৎ হেঁচকি উঠতে থাকলে বরফ বা ঠান্ডা পানি খেয়েও তা থামানো যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ রক্ত দেওয়া-নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন
হেঁচকি উঠলে কিছু দানাদার চিনি খাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ হেঁচকি উঠতে থাকলে এবং তা কোনমতেই যদি না কমে, তাহলে ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে কিছু দানাদার চিনি খেয়ে নিতে পারলে এর থেকে খুব সহজেই পরিত্রাণ মিলতে পারে।
হেঁচকি উঠলে লেবুতে কামড় দেয়া বা একটু ভিনেগারের স্বাদ নেয়া। অর্থাৎ হেঁচকি থামানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে কেউ যদি সামান্য একটু ভিনেগার জিহ্বার উপর দিয়ে তা গলা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, তাহলে অনেক সময় হেঁচকি কমে যেতে পারে।
হেঁচকি থামানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে আমরা এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করতে পারি। অর্থাৎ যখন হেঁচকি উঠছে, তখন শ্বাস-প্রশ্বাস আপডাউন করা, অর্থাৎ একসাথে অনেকগুলো নিঃশ্বাস গ্রহণ করে তারপরে তা আস্তে আস্তে ছাড়তে হবে।
এক চামচ মাখন ও চিনিও হেঁচকি কমাতে দারুণ কাজ করে। অর্থাৎ হেঁচকি থামানোর ঘরোয়া উপায় বা টোটকা হিসেবে এক চামচ মাখন খেয়ে নিতে পারলে তা হেঁচকি কমাতে অনেক সহায়তা হয়ে থাকে।
বড়ো চামচের এক চামচ চীনাবাদামের মাখন খাওয়া। অনেকেই হেঁচকি থামানোর জন্য নিকটস্থ যেটা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাই প্রয়োগ করা যেতে পারে। অর্থাৎ হেঁচকি কমানোর জন্য যদি ঘরে চীনা বাদামের মাখন থাকে, তাহলে তা চট করে এক চামচ খেলে নিতে পারলে হেঁচকি আপনা-আপনি কমে যায়।
হেঁচকি বন্ধ করার হোমিওপ্যাথি ঔষধঃ
যদি কারো এক নাগাড়ে হেঁচকি উঠতে থাকে এবং বন্ধ না হয়, তাহলে অবশ্যেই Nux-v 30 protenship, ২ ফোটা ১ চামচ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এবং এর সাথে দুই নাক দিয়ে অনেককানি  নিঃশ্বাস গ্রহণ করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত নাক সম্ভব রাখা সম্ভব বন্ধ ততোক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ রেখে আস্তে আস্তে গ্রহণকৃত নিঃশ্বাসগুলি ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে।
ইনফ্যান্ট শিশুর হিক্কা বা হেঁচকি হলে তার ঔষধসমূহ নিম্নরূপঃ
3 Nux-v, 2 Bell, 2 Puls, 1 Acon, 2 Hyos, 1 Stram, 1 ign, 2 Nux-m, 1 Cic
রোগের লক্সনসমুহঃ
অপুষ্টিজনিত শীর্ণ শিশুর শরীর ঝাঁকি দিয়ে ওঠে ও দুধ পান করার পর হিক্কা হয এবং খাবার বের না হয ঢেঁকুর হয়ে থাকে। ঔষধ : 2 Teucr
রোগের লক্ষণসমূহঃ
শিমুদের হিক্কা দেয়া। ঔষধ: 2 Nux-v, 1 Bor, 1 ign, 1 lp.
হেঁচকি ওঠার কারণগুলি কি হতে পারেঃ
হেঁচকি হঠাৎ ওঠে কেন? এর কারণ হতে পারে কিছু অসাবধানতা। এই যেমন তাড়াহুড়া করে খাবার খাওয়া, পানি পান করা, খাবার সময় কথা বলা বা অন্য দিকে মনোযোগ দেওয়া।
অর্থাৎ হেঁচকির সময় শ্বাসনালীতে সামান্য খিঁচুনির মত হয় যার ফলে শ্বাসযন্ত্রে দ্রুত বাতাস প্রবেশ করে। তখন ভোকাল কর্ড হঠাৎ বন্ধ হয়ে 'হিক' শব্দ তৈরি হয়।
ফুসফুসের নীচের পাতলা মাংসপেশীর স্তর, যেটিকে ডায়াফ্রাম বলে, হঠাৎ সংকোচনের ফলেই হেঁচকি তৈরি হয়।
হেঁচকি হঠাৎ ওঠে কেন? এমন ক্ষেত্রে অনেকের প্রয়োজন/অপ্রয়োজনে চেতনানাশক, উত্তেজনাবর্ধক, পার্কিনসন্স রোগ বা কেমোথেরাপির বিভিন্ন ধরণের ওষুধ নেয়ার ফলেও হেঁচকি তৈরি হতে পারে।
এছাড়া কিছু অসুখের ক্ষেত্রেও মানুষের হেঁচকি হতে পারে। অর্থাৎ হেঁচকি ওঠে কেন এর ক্ষেত্রে এটিও একটি কারণ।
আরও পড়ুনঃ মাইগ্রেন হলে কি কি সমস্যা হতে পারে - প্রতিকারগুলি কি কি
ডাক্তারী মতে হেঁচকি ওঠার কারণ হিসেবে বলা হয়, যেমন- অনেক সময় কিডনি ফেল করলে, স্ট্রোকের ক্ষেত্রে, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রেও অনেকের হেঁচকি তৈরি হতে পারে।
অনেক সময় হাসি বা কাশির মধ্যে, অতিরিক্ত মদ্যপান, অতিদ্রুত খাবার গ্রহণ করা বা ঝাঁঝসহ পানীয় বেশি পরিমাণে খেলে হেঁচকি শুরু হতে পারে, তবে কোনো ধরণের কারণ ছাড়াও হেঁচকি আসাটা একেবারেই অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারেঃ
হেঁচকি সাধারণত আপনা থেকেই ভাল হয়ে যায়, তবে যদি অতি দীর্ঘসময় ধরে হেঁচকি উঠতে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। কারণ যে কোন বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী সময় নষ্ট না করাই উত্তম।
যদি ঘরোয়া পদ্ধতিতে হেঁচকি নিরাময় না হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াটা জরুরী। আসলে আমরা অনেক সময় অনেক বিষয়েই গুরুত্ব দেই না। যার ফলস্বরূপ খারাপ কিছুই ঘটে থাকে। তাই যদি ঘরোয়া পদ্ধতি প্রয়োগ করে হেঁচকি ভালো না হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাধারণত হেঁচকির তীব্রতার ওপর  নির্ভর আপনাকে কখন বা কোন সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যদি হেঁচকি ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে না কমে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াটা সঠিক।
অনেকের দৈনন্দিন কাজের মধ্যে কোন একটা সময়ে বা নিয়মিত হেঁচকি উঠতে থাকলে এবং তাতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত মনে করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অর্থাৎ হেঁচকি যদি প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে বিলম্ব না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ েনিতে হবে।
পরিশেষেঃ
হেঁচকি হঠাৎ ওঠে কেন? এটা যেমন একটি সমস্যা, ঠিক তেমনি দ্রুত হেঁচকি বন্ধের ১১টি ঘরোয়া উপায় গুলি জানা ভীষণ দরকার এবং হেঁচকি বন্ধ করার হোমিওপ্যাথি ঔষধ সমূহ কি কি তা জানা দরকার। আসলে হেঁচকি ওঠাটা খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা এবং সাধারণত মিনিট খানেকের মধ্যেই তা স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তবে হেঁচকি হঠাৎ ওঠে কেন? এবং দ্রুত হেঁচকি বন্ধের ১১টি ঘরোয়া উপায় সমূহ ও হেঁচকি বন্ধ করার হোমিওপ্যাথি ঔষধ গুলি কি কি হতে পারে ইত্যাদি ব্যাপার নিয়ে মজার একটি গল্প বলা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের চার্লস অসবোর্ন ১৯২২ সালে হেঁচকি তোলা শুরু করেন তিনি, কথিত আছে সে সময়ে তিনি একটি শূকর ওজন করার চেষ্টা করছিলেন। এরপর ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মি. অসবোর্ন হেঁচকি তোলা থামান, অর্থাৎ ৬৮ বছর পর তার হেঁচকি থামে। মি. অসবোর্ন কি হেঁচকি থামানোর ঘরোয়া উপায়গুলি জানতেন না বা তিনি কোন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করেন নি। এই ঘটনাকে কি বলবেন? হেঁচকি ওঠার ক্ষেত্রে বিশ্ব রেকর্ড হিসেবে এটিকেই একমাত্র উদাহরণ হিসেবে মনে করা হয়।
সুতরাং আজকের হেঁচকি হঠাৎ ওঠে কেন? এবং কিভাবে দ্রুত হেঁচকি বন্ধের ১১টি ঘরোয়া উপায় জানা যায় এবং হেঁচকি বন্ধ করার হোমিওপ্যাথি ঔষধ গুলি কি যা জানা থাকলে অনেক উপকারে আসে। মূলত: হেঁচকি কারো ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় হয়না। এটি একটি অনৈচ্ছিক ক্রিয়া যা একটি রিফ্লেক্স আর্কের সাথে সম্পর্কিত। একবার উদ্দীপনা সৃষ্টি হলে রিফ্লেক্স বা প্রতিবর্তী ক্রিয়ার মাধ্যমে খুব জোরের সাথে ডায়াফ্রামের সংকোচন ঘটে, এর প্রায় ০.২৫ সেকেন্ড পরে ভোকাল কর্ড বন্ধ হয় এবং এর ফলেই হিক শব্দের উৎপত্তি হয়ে থাকে অর্থাৎ হেঁচকি ওঠে।
আশা করছি, উপরোক্ত বিষয়টি যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। হেঁচকি হঠাৎ ওঠে কেন? - দ্রুত হেঁচকি বন্ধের ১১টি ঘরোয়া উপায় এবং হেঁচকি বন্ধ করার হোমিওপ্যাথি ঔষধ বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন এবং এতোক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে
পরিশেষে হেঁচকি হঠাৎ ওঠে কেন? - দ্রুত হেঁচকি বন্ধের ১১টি ঘরোয়া উপায় এবং হেঁচকি বন্ধ করার হোমিওপ্যাথি ঔষধ সমূহ কি কি তা শুধুমাত্র সচেতনার জন্য প্রকাশিত, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসাপত্র সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনি আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url