ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়

মাছ খাওয়া শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়, তা অন্যান্য মাছে মেলা ভার।
বর্তমানে সময় সংক্ষিপ্ততা এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেকেই আর ছোট মাছ দীর্ঘক্ষণ ধরে কাটা-বাছা করতে পছন্দ করেন না, তাই তারা বড় বড় মাছ ক্রয় করে তা মাছ বিক্রেতার নিকট থেকেই কেটে নেন। কিন্তু ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় এটা জেনেও তারা বড় মাছ ক্রয় করে থাকেন। তাই ছোট মাছের নানারকম উপকারিতা সম্পর্কে নিচের লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্র: ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় (Benefits of eating Small Fish)
ছোট মাছের পুষ্টিগুণাবলী
বিভিন্ন প্রকার ছোট মাছের নামসমূহ
ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়
ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়-পরিশেষে

ছোট মাছের পুষ্টিগুণাবলী:

ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় এর আলোকে বলা যায়, ছোট মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-এ, ডি, প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, খনিজ, জিংক, আয়রন এবং ফসফরাসের মত উপাদান থাকে। যা হাড়ের স্বাস্থ্য, চোখের দৃষ্টিশক্তি, মস্তিস্কের বিকাশসহ হৃদপিন্ডের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

বিভিন্ন প্রকার ছোট মাছের নামসমূহ:

আমাদের দেশে সর্বত্রই বিশেষ করে পুকুর, নদী, খাল, ডোবা-নালা, জলাশয় ও দিঘীতে এই ছোট মাছ পাওয়া যায়। নানারকম এবং নানা প্রকারের উপকারিতাসহ বিভিন্ন স্বাদের এই ছোট মাছগুলি, যেমন-মলা, ঢেলা, চাঁদা, ছোট পুঁটি, স্বরপুঁটি, পিউলি, পাতাশি, মৌরলা, কাজলি, বাঁশপাতা, ছোট চিংড়ি, মায়া, রাই খয়রা, কাঁচকি, টেংরা, কৈ, মাগুর, শিং ইত্যাদি।

ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়:

সাধারণত শিশু জন্মের  পর তার  শারীরিক বৃদ্ধিতে প্রয়োজন হয় ভিটামিন-এ, ডি এবং খনিজ লবণের। তাই এই সময় স্তন্যদানকারী মায়েদের ছোট  খেতে দেয়া হয়,  তাহলে সদ্যজাত শিশুর জন্য উক্ত ভিটামিনগুলি ১০০% নিশ্চিত হয়।

আরও পড়ুন: কোন সব খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে - শিশু দ্রুত লম্বা হবে কোন খাবারগুলো খেলে?

  • প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু কিন্তু ভিটামিন-এ জনিত অভাবে অন্ধ হয়ে যায়। আবার অনেক শিশু রাতকানা রোগেও ভুগে থাকে। সুতরাং এ ধরণের সমস্যা সমাধানে দৈনিক খাবারে যে কোন ছোট মাছ রাখতে পারলে শিশুদের এই অভাব পূরণে তা সহায়ক হয়ে থাকে।
  • সবাই চায় সুস্থ্য ও সুন্দর শিশু জন্মগ্রহণ করুক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা হয় না। কারণ গর্ভকালীন সময়ে বুকের দুধ তৈরিতে আমিষের প্রয়োজন যেমন হয়, ঠিক তেমনি গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও গঠন যাতে ভালো হয়, তার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ছোট মাছ রাখাটা ভীষণ প্রয়োজন।
  • শিশুদের দৈহিক উচ্চতা নিয়ে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। অর্থাৎ পর্যাপ্ত আমিষের অভাবে সাধারণত ছেলেমেয়েদের দৈহিক উচ্চতা বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই তাদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ছোট মাছ থাকা ভীষণ দরকার। কারণ এই ছোট মাছের আমিষ ও প্রোটিন দেহের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয় পুরণের সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে।
  • সাধারণত যারা রক্তশূন্যতায় ভুগে থাকেন, তাদের জন্য টেংরা মাছ অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়াও কফ, কাশির সমস্যা কমানোর জন্যও টেংরা মাছ খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
  • যাদের অরুচি, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং রক্তস্বল্পতার সমস্যার জন্য নিয়মিত খাদ্য তালিকায় শোল মাছ রাখা যেতে পারে।
  • শরীরে আয়রনের সমস্যা দেখা দিলে মাগুর মাছ খেতে পারেন। কারণ মাগুর মাছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কৌশলসমূহ

  • তবে মলা এবং চান্দা মাছেও প্রচুর ভিটামিন-এ থাকে। এক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম ওজনের খাদ্য উপযোগী মলা মাছে থাকে প্রায় ২৫০০ মাইক্রো গ্রাম ও ১০০ গ্রাম চান্দা মাছে থাকে প্রায় ১৫০০ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন এ।
  • শরীর সুস্থ্য থাকার জন্য দরকার সুষম খাদ্য। আর এই সুষম খাদ্যের অনেকটাই পূরণ হয় ছোট মাছে। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় ছোট মাছ রাখতে পারেন।
  • শরীরের হাড় সংক্রান্ত যে কোনো রোগ প্রতিরোধে পুঁটি মাছ আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। কারণ পুঁটি মাছে রয়েছে ভিটামিন ও ফসফরাস, যা হাড়জনিত যে কোন সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে থাকে।
  • সমুদ্রের নোনা পানির আমোদি মাছ। অর্থাৎ যে কোন ধরণের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে এই আমোদি মাছ খেতে পারেন, কেননা এতে রয়েছে প্রোটিন ও ভিটামিন সি।
  • গর্ভাবস্থায় প্রোটিন ও আয়রনের অভাব ঘটে থাকে। তাই এই সময় প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ মৌরলা মাছ খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন।

ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়-পরিশেষে:

বর্তমানে মানুষের উচ্চ বিলাসিতার কারণে অনেক পুকুর, ডোবা, দিঘী, নালা ভরাট হয়ে ইমারত তৈরি হয়েছে। যার ফলে আগের মত এখন আর ছোট মাছ খুব একটা পাওয়া যায় না। তারপরেও এখনও অনেক ছোট মাছ বিক্রয় হয়। একটা বিষয় হয়তো অনেকেই জানেন যে, মাংস খেলে তা ডাইজেস্ট বা হজম হতে বেশ একটা সময় লাগে। যেমন-মুরগীর মাংস ডাইজেস্ট হতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘন্টা, আবার খাসির মাংস ডাইজেস্ট হতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টার মতো, কিন্তু মাছ খুব সহজেই ডাইজেস্ট হয়ে যায় এবং এর ফলও শরীরে তাড়াতাড়ি দেখা যায়। তাই ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় তা আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন: নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন?

যাইহোক, আজকের আর্টিকেলে ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় বিষয়ক আলোচনাটি যদি আপনাদের নিকট উপকারী বলে মনে হয়, তাহলে তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, সুস্থ্য থাকার নিমিত্তে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় সম্ভব না হলেও অন্তত সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন ছোট মাছ রাখতে পারেন, তাহলে এ ধরণের যাবতীয় শারীরিক সমস্যা থেকে অনেকটাই পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। সবশেষে ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় বিষয়ে আপনার দীর্ঘক্ষণ সম্পৃক্ততার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এবং সেইসঙ্গে আপনার দীর্ঘায়ু ও সুস্থ্য জীবনের প্রত্যাশা করি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url