সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে
সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে, তার মধ্যে যেমন-মানসিক চাপ বাড়ে, শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাসহ, প্রোটিনের মাত্রা কমে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে, স্মৃতিশক্তি, হজমশক্তি ও হার্টের সমস্যা ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ে জানতে নিচের আলোচনাগুলি পড়তে থাকুন
সকালে যদি ভরপেট পুষ্টকর নাস্তা করা যায়, তাহলে সারাদিন এ্যানার্জি মেলে এবং কম ক্লান্তিবোধ লাগে।
পোস্ট সূচিপত্র: সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে (The harm that can be done to the body if you don't eat breakfast)
মানসিক চাপ বাড়ে
শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস
ওজন হ্রাস হওয়া
প্রোটিনের মাত্রা হ্রাস
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
হজমশক্তি হ্রাস পাওয়া
স্মৃতিশক্তির ঘাটতি
হার্টের সমস্যা
সকালের খাবার কেমন হওয়া উচিত
সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে-পরিশেষে
সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে, সেই বিষয়ে নিম্নে বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে বিস্তারিতভাবে নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে, যা জানা আপনার নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক চাপ বাড়েঃ
সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে বিষয়ে বলা যেতে পারে যে, সকালে নাস্তা না করলে কর্টিসল নামে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে তা শুধুমাত্র মানসিক চাপা বাড়ায় না, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও অনেকাংশে বেড়ে যায়। আর সর্বোপরি সারাদিন ক্লান্তি এবং মেজাজ খারাপ হয়ে থাকার অন্যতম বিষয়ও হতে পারে সকালের নাস্তা না খাওয়া।
শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসঃ
অর্থাৎ সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে তা হলো শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং কোষগুলো দৃবূল হয়ে পড়ে। যার ফলে শরীরের অনেক বেশি জীবাণু ও ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে এবং শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
ওজন হ্রাস হওয়াঃ
যদি সময়মত সকালের নাস্তা না করা হয়, তাহলে শরীরে ক্ষুধার ভাব বেড়ে যায় এবং তখন মানুষ যা পাই তা-ই খেতে ইচ্ছে করে। আর এসব কারণে সঠিক পুষ্টি শরীরে প্রবেশ না করার ফলে মানুষের শরীরের ওজন কমে গিয়ে থাকে। অনেক সময় এমনও হয়ে থাকে, যে কোন কারনেই সকালের নাস্তা না করে দুপরের খাবার গ্রহণ করার ফলে এই যে, দীর্ঘ খাদ্যাভাসে বিরতি, তাতে শরীরের নানারকম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মূল বিষয় হলো শরীরকে সঠিকভাবে পরিচালনার নিমিত্তে একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর খাদ্য গ্রহণ করা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ।
আরও পড়ুনঃ ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ
প্রোটিনের মাত্রা হ্রাসঃ
সকালের নাস্তা না করলে শরীরে প্রোটিনের মাত্রা মারাত্মকভাবে কমে যায়, আর এর প্রভাবে কেরাটিনের মাত্রায় তা মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে থাকে। ফলে শরীর নামক যন্ত্রটির যে মারাত্মক ক্ষতিগুলো হয়ে থাকে, তাহলো চুলের বৃদ্ধি কমে যায় এবং চুলও পড়তে থাকে। অনেকের অল্প বয়সেই মাথায় চুল কমে যেতে থাকে, আবার অনেকের খুব বেশী করে চুল পড়তে বা উঠতে থাকে। সাধারণত এ সমস্ত বিষয়গুলির প্রতি নজর দিয়ে অবশ্যই সকালের নাস্তা সঠিক সময়ে গ্রহণ করা সবচেয়ে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ।
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিঃ
হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী দেখা যায়, যে সমস্ত নারীরা সকালের নাস্তা বাদ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং প্রতিদিন যদি নিয়মিত এবং সঠিক সময় অন্তর খাদ্য গ্রহণ করা না হয়, তাহলে শরীরে নানারকম সমস্যার উদ্ভুত হয়ে থাকে। কারণ একটি মানুষ দীর্ঘ ৭-৮ ঘন্টা রাত্রিযাপনের পর সকালে যদি তিনি নাস্তা না করেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই অনেকক্ষণ পর্যন্ত অনাহার বা অভুক্ত থাকা হয়ে যায়, আর এই সমস্ত অনিয়মের কারণে শরীরে দানাবাধে নানারকম জটিলতা।
হজমশক্তি হ্রাস পাওয়াঃ
সাধারণত সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে অথবা যারা সকালের নাস্তা সময়মত করেন না, বা দেরিতে নাস্তা করে থাকেন, তাদের পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা খাবার দেরিতে হজম হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্মৃতিশক্তির ঘাটতিঃ
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা যারা সকলের নাস্তা করেন না, তাদের স্মৃতিশক্তি এবং শারীরিক শক্তির ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে তারা অবসাদে ভোগেন এবং সহজে সবকিছু ভুলে যান। যদি আপনি প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য গ্রহণ না করে থাকেন, তাহলে শরীরে অন্যান্য সমস্যার মত স্মৃতিশক্তিরও ঘাটতি হতে পারে। যেমন-সকালের নাস্তা আপনি খুব জোর হলে সকাল ৮-৯ বা সর্বোচ্চ ১০টার মধ্যে গ্রহণ না করে নাস্তা করছেন দুপুর ১২টায় বা বেলা ১টায়। আবার দুপুরের খাদ্য গ্রহণ যদি ১-২ টার মধ্যে গ্রহণ না করে, তা যদি বিকাল ৪-৫টার সময় গ্রহণ করতে থাকেন, এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই আপনার শরীরে অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি স্মৃতিশক্তিরও ঘাটতি ঘটে থাকে।
হার্টের সমস্যাঃ
আবার আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত সকালের নাস্তা করেন না, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই বেড়ে যায়। আসলে শরীরকে ঠিক রাখার জন্য যে সবসময়ই খেতে হবে এমনটাও নয়, আবার না খেয়ে থাকতে হবে এমনটাও নয়। মোটকথা আমরা ইচ্ছাবশতঃ অথবা খামখেয়ালীভাবেই খাদ্য গ্রহণের সময় পরিবর্তন করে থাকি। কিন্তু এতে করে শরীরের ওপর নানা অনিয়ম সৃষ্টি হয়, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বিভিন্ন ধরনের অসুখের উৎপত্তি। আর এক্ষেত্রে বলাইবাহুল্য যে, একজন মানুষের সকালের নাস্তা কিন্তু শরীরের ওপর অনেকখানি ভূমিকা বিস্তার করে থাকে। তাই নিয়মানুযায়ী যদি প্রতিদিন সকালের নাস্তা সঠিক সময়ে গ্রহণ করা না হয়, তাহলে হার্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে. যা গবেষণা থেকেই প্রমাণিত।
সকালের খাবার কেমন হওয়া উচিতঃ
সাধারণত সকালের খাবারে কখনোই খিচুরি, পরোটা, মিষ্টান্ন, দুধ চা, প্রক্রিয়াজত খাদ্য কিংবা ভাজাপোড়া রাখা যাবে না। কারণ এতে সারাদিন পেট জ্বালাপোড়া ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। অনেকে আছেন, যারা সকালের নাস্তা হোটেলে করতে পছন্দ করেন। আবার অনেক বিত্তশালী পরিবাবর্গ সকালের নাস্তা একটু হাই খাবার খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু একজন সুস্থ্য মানুষের প্রতিদিন কি রিচ ফুড খাদ্য গ্রহণ করা সমীচিন? এমন প্রশ্ন নিজের কাছেও করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়? গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
সম্ভব হলে আপনার সকালের নাশতায় দুধ, রুটি, সবজি, ডিম ইত্যাদি রাখতে পারেন। কারণ এ সমস্ত খাদ্যগুলি আমাদের মস্তিস্কে সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে থাকে, ফলে মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রতিদিনই যেনো একই রকমের খাদ্য দিয়ে সকালের নাস্তা গ্রহণ করা না হয়ে থাকে।
সকালের নাস্তায় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকাটা খুবই জরুরী। কারণ এ সমস্ত খাবারগুলো শরীরকে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি ও তৃপ্তি দিয়ে থাকে। যেমন-ওটস, ডিম টোস্ট, ফলমূল বা বাদাম ইত্যাদি। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী সম্ভব হলে উপরোক্ত খাবারগুলি নাস্তার সাথে গ্রহণ করতে পারেন।
সকালের নাস্তায় যদি হালকা কিছু খেতে চান, তাহলে অবশ্যই ফল, কলা ও শাক-সবজির জুস, রুটি বা টোস্টের সঙ্গে অ্যাভোকাডো রাখা যেতে পারে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের সকালে ভাত না খাওয়াই ভালো। এখনও গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষই সকালে গরম ভাত, সেদ্ধ বা ভর্তা ইত্যাদি খেয়ে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চল, শ্রেণীভেদে মানুষের খাদ্যাভাসের পরিবর্তন হয়ে থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন, সকালের নাস্তায় অতিরিক্ত তেল, চর্বি জাতীয় খাদ্য বা ভাজাপোড়া না খাওয়া। এতে করে সারাদিন শরীর সুস্থ্য ও স্বাভাবিক থাকবে।
যদি আপনার নাশতায় আমিষের ঘাটতি মেটাতে চান, তাহলে রুটি বা টোস্টের সাথে শাক-সবজি, ডিমের অমলেট অথবা কম চর্বিযুক্ত দই, ফল ও বাদাম রাখতে পারেন। যদি মনে করেন অথবা চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে অথবা আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার শরীরে আমিষ জাতীয় খাদ্যের ঘাটতির সমস্যা আছে, তাহলে অবশ্যই উপরোক্ত খাদ্যগুলি আপনাকে নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে।
সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে-পরিশেষেঃ
মূলত সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে তা হলো শরীরের উপর প্রভাবের সাথে মনের উপরও প্রভাব ফেলে থাকে মারাত্মক ভাবে। আসলে একজন মানুষের সকালের নাস্তার উপরই সারদিনের কর্মশক্তি নির্ভর করে। সর্বোপরি, সারা রাত্রি ৮-১০ ঘন্টা ঘুমানোর কারণে পেট খালি হয়ে যায়, আর তার উপর যদি সকালের নাস্তাটা সঠিক সময়ে করা না হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে তৈরি হবে নানাপ্রকার বিপাকক্রিয়াসহ অন্যান্য সমস্যা। মূলত সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে বিষয়টি আশাকরি উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন।
আরও পড়ুনঃ ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়
সকালের নাশতা না করলে হাড়জনিত সমস্যা, মাইগ্রেন, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ তৈরি, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে। তাই সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে বিষয়ে আপনার কোন মূল্যবান পরামর্শ/মন্তব্য করতে চাইলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। লালন ফকিরের গানের ছন্দে বলা যেতেই পারে, ‘সময় গেলে সাধন হয় না’। অর্থাৎ সকালের নাস্তা সকালেই করতে হবে, বিকেলে বা দুপুরে নই। পরিশেষে আজকের সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ এবং সেইসঙ্গে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url