ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ

আপনি যদি দিনের শুরুটা ভালো পুষ্টিকর খাবার দিয়ে শুরু করতে চান, তাহলে খাদ্য তালিকায় ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ দিয়ে শুরু করতে পারেন।
অর্থাৎ সকালবেলা নাস্তার সাথে ভেজা বাদাম, কিশমিশ ও ডুমুর রাখতে পারেন। কারণ ভেজা চিনাবাদাম অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর, যা আপনার শারীরিক অনেক সমস্যার সমাধান করে থাকে। সেজন্যই ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ জানতে নিচের বর্ণনাটি পড়তে থাকুন।

পোস্ট সূচিপত্র: ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ (Nutritional properties of soaked peanuts)
ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী
ভেজানো চিনা বাদামের উপকারিতা
চিনাবাদাম বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে
ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ-পরিশেষে

ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী:

সাধারণত আমরা হরহামেশাই চিনা বাদাম খেয়ে থাকি। বিশেষ করে কোন জায়গায় ঘুরতে গেলে, পার্কে, আড্ডায়, বাড়ীতে নানা স্থানে। আবার এও ঠিক যে, বাদাম খেলে নাকি হার্টের সমস্যা অনেকটাই দূরে থাকে।

আরও পড়ুন: স্ট্রোক প্রতিরোধে খেতে পারেন যে সমস্ত খাবার

যাইহোক, এই ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ গুলো হলো-প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ই, বি১ ও বি২, খনিজ (ম্যাগনেসিয়াম, কপার, আয়রন ও ক্যালসিয়াম), স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড) ইত্যাদি।

ভেজানো চিনা বাদামের উপকারিতা:

হার্টের জন্য উপকারী: হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আপনি প্রতিদিন ভেজানো চিনাবাদাম খেতে পারেন। কারণ তাতে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং এই বাদামের খোসার কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমে যায়। আর শরীরের মেটাবলিজম রেটও খুব ভালো থাকে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা: ভেজানো চিনাবাদামে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন ও ফাইবার থাকার কারণে পেট ভরা লাগে এবং তার ফলে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের আগ্রহ কম হয়ে যায়, যা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এবং চোখের জন্য উপকারী: অর্থাৎ নিয়মিত ভেজানো চিনাবাদাম খাওয়ার ফলে স্মৃতিশক্তির বৃদ্ধি ঘটে থাকে। এ ছাড়াও যাদের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল বা চোখের ওপর অনেক প্রেসার পড়ে বিশেষ করে তাদের ক্ষেত্রে ভেজানো চিনাবাদাম অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এককথায় স্মৃতিশক্তি শক্তিশালীসহ দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্কার করে।
হজম নিয়ন্ত্রণে সহায়তা: যাদের হজমজনিত সমস্যা আছে, তাদের ভেজানো চিনাবাদাম খেলে হজমশক্তি ভালো হয়। কারণ চিনাবাদাম একটি ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধ: অর্থাৎ ভেজানো চিনাবাদাম খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিকেলের ক্ষতিকারন প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে থাকে।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ভেজানো চিনাবাদামে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে এবং বিভিন্ন সংক্রমণও দ্রুত সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়াও দীর্ঘকাল ধরে ভাইরালজনিত কাশি থেকে মুক্তি পেতে ভেজা চিনাবাদাম খাওয়াটা জরুরী।
কোমর ব্যথার উপশম: সাধারণত যারা কোমরজনিত ব্যথায় ভুগে থাকেন, তাদের গুড়ের সাথে ভেজানো চিনাবাদাম খেলে বিশেষ করে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত সহায়ক: সাধারণত ভেজানো চিনাবাদামে ভিটামিন ই ও ক্যারোটিন থাকায়, তা ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: আসলে ভেজানো চিনাবাদামে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকায় তা শরীরের রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

আরও পড়ুন: ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়

হাড়ের গঠনে সহায়তা: চিনাবাদামে আছে ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস যা হাড়ের মজবুত গঠন এবং শক্তিশালীকরণে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মস্তিস্কের কার্যকারিতায় সহায়তা: ভেজানো চিনাবাদামে নিয়াসিন ও ভিটামিন বি৬ থাকে, যা মস্তিস্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি সহ স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে থাকে এবং আলঝেইমার রোগেরও ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
গ্যাস বা অ্যাসিডিটি হ্রাস: অর্থাৎ যারা অধিকাংশ সময়ে গ্যাস বা অ্যাসিডিটিজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাদের জন্য এই ভেজানো চিনাবাদাম খেলে উপকৃত হতে পারবেন। কারণ এতে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম ও তামা। তবে যদি খালে পেটে এই চিনাবাদাম খেতে পারেন, তাহলে গ্যাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

চিনাবাদাম বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে:

প্রকৃতপক্ষে চিনাবাদামকে আমরা বিভিন্ন ভাবে খেয়ে থাকি। যেমন-
  • ভাজা চিনাবাদাম,যা আমরা সচরাচর খেয়ে থাকি।
  • সাধারণত স্যান্ডউইচ, টোস্ট বা ফলের সাথে খাওযার জন্য চিনাবাদামের মাখন খাওয়া যেতে পারে।
  • অল্প ভেজে বা সিদ্ধ করে চিনাবাদামকে স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
  • ভাত বা রুটির সাথে ভর্তা হিসেবে চিনাবাদাম খাওয়া যেতে পারে।
  • পিঠা, কেক বা বিস্কুট তৈরিতে চিনা বাদামের গুঁড়ো ব্যবহার করে তা খাওয়া যেতে পারে।
  • চিনাবাদামের তেল সাধারণত রান্না ও ভাজার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • সালাদের উপকরণ হিসেবে কাঁচা চিনাবাদাম সবুজ সালাদে মিশিয়েও তা খাওয়া যেতে পারে।
  • চিনাবাদাম সাধারণত নাড়ুসহ অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় দব্যের সঙ্গে মিশ্রিত করেও তা ব্যবহার করা যেতে পারে।

ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ-পরিশেষে:

মূলত চিনাবাদামের উৎপত্তি হিসেবে ধরে নেয়া হয় দক্ষিণ আমেরিকা অর্থাৎ ব্রাজিল এবং পেরুর অঞ্চল থেকে। আর ভারতীয় উপমহাদেশে চিনা বাদামের আগমন ঘটে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে। আবার এই চিনা বাদামকে অনেকেই পিনাট হিসেবেও চিনে থাকেন। আসলে আমরা সচরাচর এই চিনা বাদামটি খুব স্বাভাবিক ভাবেই খেয়ে থাকি। কিন্তু যদি ভিজিয়ে রেখে খাওয়া যায়, তাহলে তার পুষ্টিগুণও যে শতগুণে বেড়ে যায়, এটা হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা। তাই আজকের ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ আশাকরি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন: দৈনন্দিন ব্যবহৃত কিছু ইংরেজি শব্দ আছে, যেগুলি সচরাচর ব্যবহৃত হয়ে থাকে

প্রকৃতপক্ষে বাদাম হচ্ছে একটি অর্গানিক খাবার। তাই আমরা যে কোন সময়ই তা খেতে পারি। কিন্তু ভেজা চিনা বাদামও যে এমন অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর, অর্থাৎ তা যদি সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে খেতে পারি, তাহলে তা শরীরের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। যাইহোক আজকের আর্টিকেলে ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ সম্পর্কে আপনাদের কোন মূল্যবান পরামর্শ বা মন্তব্য করতে চাইলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং সেইসঙ্গে আজকের প্রতিপাদ্য ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ সম্পর্কিত বিষয়ে আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। উপরোক্ত পরামর্শগুলি যদি ভালো লাগে তাহলে তা অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url