ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

ডেউয়া ফলটি গ্রামাঞ্চলে অত্যন্ত পরিচিত হলেও শহরাঞ্চলে এটি একটি অপরিচিত ফল। আজকে এই ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে।
অঞ্চলভেদে এই ফলটির নামকরণও অনেক। যেমন-ঢেউয়া, ডেউফল, ডেলোমাদার, ঢেউফল, বটবেল, ডেউয়া ইত্যাদি। এই ফলটি খেতে অনেক সুস্বাদু এবং অনেক গুণাবলী সমৃদ্ধ। তাই এই ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা জানতে নিচের লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্র: ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা (Nutritional values ​​and benefits of eating Daua Fruit)
ডেউয়া ফলের পুষ্টিগুণাবলী
ডেউয়া ফলের উপকারিতাসমূহ
ডেউয়া ফলের অপকারিতাসমূহ
ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-পরিশেষে

ডেউয়া ফলের পুষ্টিগুণাবলী:

একটি ১০০ গ্রাম ডেউয়া ফলে রয়েছে:
খনিজের পরিমাণ: ০.৮ গ্রাম
আমিষের পরিমাণ: ০.৭ গ্রাম
শর্করা রয়েছে: ১৩.৩ গ্রাম
ক্যালসিয়াম রয়েছে: ৫০ গ্রাম
ভিটামিট বি১ রয়েছে: ০.০২ মিলিগ্রাম
ভিটামিট বি২ রয়েছে: ০.১৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিট সি রয়েছে: ১৩৫ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম রয়েছে: ৩৪৮.৩৩ মিলিগ্রাম
খাদ্যশক্তি রয়েছে: ৬৬ কিলো ক্যালরি
লৌহ রয়েছে: ০.৫ মিলিগ্রাম

ডেউয়া ফলের উপকারিতাসমূহ:

  • বমি বমি ভাব দূর হওয়া: কোন কারণে যদি শরীরের মধ্যে বমি বমি ভাব উৎপন্ন হয়, তাহলে ডেউয়া ফল খেলে তা দ্রুত সেরে যায়। এ ছাড়াও অত্যাধিক তৃষ্ণা নিবারণেও কাজ করে ডেউয়া ফল।

আরও পড়ুন: ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা কি কি?

  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি: ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা হিসেবে এটি নিয়মিত খেলে তাতে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ঘটে এবং অতিরিক্তি পিপাসা দূর হয়।
  • মুখের রুচি ফেরাতে: অর্থাৎ মুখের রুচি আনতে ২-৩ চামচ ডেউয়ার রস এবং সঙ্গে একটু লবণ ও গোল মরিচের গুড়া মিশিয়ে দুপুরবেলা ভাত খাওয়ার আগে খেলেই মুখে রুচি ফিরে আসে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে: যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা আছে বা গ্যাসের কারণে পেট ব্যথা করে, তাদের জন্য ডেউয়া ফল অত্যন্ত চমৎকার কাজ করে থাকে।
  • মেদ হ্রাস করতে: ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা হিসেবে এটি শরীরের অতিরিক্ত মেদভুঁড়ি কমাতে ডেউয়া ফলের রস ১ থেকে দেড় চামচ পানিতে মিশিয়ে যদি প্রতিদিন একবার করে ১ মাস খাওয়া যায়, তাহলে শরীরের মেদভুঁড়ি কমাতে তা সাহায্য করে থাকে।
  • রক্তশূন্যতা রোধে সহায়তা: প্রকৃতপক্ষে ডিউয়া ফলে উচ্চমাত্রার আয়রন থাকায় তা হিমোগ্লোবিন উৎপন্নে সহায়তা করে থাকে। যার কারণে ডেউয়া ফল শরীরের রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। সাধারণত নারীদের পিরিয়ডজনিত কারণে রক্তের সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে, তাদের জন্য এ ফলটি অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা: আসলে ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা বলতে এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিব্যাকটোরিয়াল উপাদান থাকায় তা মুখের মধ্যে অবস্থিত জীবাণু ধ্বংস করে দাঁতের ব্যথা এবং মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সহায়তা করে থাকে।
  • ত্বক ও চুলের যত্নে অত্যন্ত কার্যকর: ডিউয়া ফলে ভিটামিন এ ও সি থাকায় তা ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। পাশাপাশি ভিটামিন ও খনিজ থাকার কারণে তা চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে থাকে।
  • দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়: অর্থাৎ যারা চোখের সমস্যয় ভুগে থাকেন, তারা নিঃসন্দেহে এই ডেউয়া ফল খেতে পারেন। কারণ এই ফলে থাকা ভিটামিন ১ দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা ছাড়াও রাতকানা রোগের আশঙ্কাও কমাতে সহায়তা করে থাকে।
  • সানস্ট্রোক ঝুঁকি রোধ: যদি মরিচ, লবণ এবং চিনি দিয়ে ডেউয়ার ভর্তা খেতে পারেন, তাহলে সানস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যাবে।
  • স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা: ডেউয়া ফলে থাকা পটাশিয়াম রক্ত চলাচরে সহায়তা করে থাকে, যার ফলে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

আরও পড়ুন: লিভার সিরোসিস কেন হয়? লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায়

  • পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে: পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে হলে ডেউয়া ফল খেতে পারেন। কারণ এই ফলে থাকা ফাইবার পরিপাকন্ত্রকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে থাকে। সাধারণত বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডেউয়া ফল খেতে পারেন। আবার ডেউয়া ফলের বীজ শুকিয়ে গুড়া করেও খেতে পারেন, এতে করে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।

ডেউয়া ফলের অপকারিতাসমূহ:

  • অ্যালার্জিজনিত সমস্যা: অনেকের এই ডেউয়া ফলের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, বিশেষ করে ফোলাভাব, চুলকানি এবং শ্বাসকষ্টিজনিত সমস্যা তীব্রতর হতে পারে। তাই যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে ডেউয়া ফল খাওয়াতে বিরত থাকতে হবে।
  • অ্যাসিডিটি ও বদহজমে সমস্যা: মূলত ডেউয়া ফল হচ্ছে চক-মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তা অ্যাসিডিটি এবং বদহজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা: সাধারণত যাদের হজম প্রক্রিয়া দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে ডেউয়া ফল খাওয়ার ফলে অনেকের পেটে অস্বস্তি বা গ্যাস হতে পারে।
  • বিশেষ কোন রোগে আক্রান্ত: অর্থাৎ সাধারণত যারা নির্দিষ্ট কোন রোগ বা শারীরিক সমস্যায় বিদ্যমান, তাদের ডেউয়া ফল খাওয়া উচিত হবে কি না, তা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
  • ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে: যেহেতু ডেউয়া ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে থাকে, তাই যদি কেউ ডায়াবেটিস আক্রান্ত থাকেন, সেক্ষেত্রে ডেউয়া ফল সীমিত আহার গ্রহণ করাই উত্তম।
  • স্তন্যদান করার সময়: অর্থাৎ গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য ডেউয়া ফল খুবই সতকর্তার সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত, আর তা না হলে এড়ানো উচিত।
  • রক্ত পাতলা ভাবের ঝুঁকি বাড়ে: ডেউয়া ফলে ভিটামিন কে থাকায়, তা রক্ত জমাট বাধতে সহায়তা করে থাকে। কিন্তু আপনি যদি রক্ত পাতলা হওয়ার ওষুধ সেবন করেন, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডেউয়া ফল গ্রহণ করতে পারেন।

ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-পরিশেষে:

মনে রাখবেন, ডেউয়া ফল একটি স্বাস্থ্যকরজনিত ফল হলেও তা পরিমিত পরিমাণে খাউয়াই ভালো। তবে অনেকের আবার শারীরিক নানা অসুস্থতা বা বিশেষ কোন সমস্যায় থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক। সুতরাং যাইহোক, আজকের ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন: সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে

আসলে ডেউয়া ফলের অপকারিতাসমূহগুলো সম্ভাব্য তবে তা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ ডেউয়া ফল খাওয়ার পরে যদি কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভূত হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যাইহোক, ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা বিষয়ক আলোচনায় যদি কোন মন্তব্য বা মূল্যবান কোন পরামর্শ প্রদান করতে চান, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। পরিশেষে আজকের ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা কি কি, এর অপকারিতাসমূহ কি কি ইত্যাদি জানতে দীর্ঘসময় আর্টিকেলে সংযুক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।