লিভার সিরোসিস কেন হয়? লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায়
আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত একটি অঙ্গ হলো লিভার। আর তাই লিভার সিরোসিস কেন হয়? লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে।
লিভার আমাদের শরীরের মধ্যে অনেক ধরণের কাজ করে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো হজমে সহায়তা, রক্ত পরিশোধনে সহায়তা এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি নিঃসৃত করে থাকে। সুতরাং এই লিভার সিরোসিস কেন হয়? লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায় কি ইত্যাদি জানতে নিচের লেখাটি পড়তে হবে।
পোস্ট সূচিপত্র: লিভার সিরোসিস কেন হয়? লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায় (Why does liver cirrhosis occur? Ways to avoid liver cirrhosis)
লিভার সিরোসিস কেন হয়?
লিভার সিরোসিসের উল্লেখযোগ্য কারণ
লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায়
লিভার সিরোসিস কেন হয়? লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায়-পরিশেষে
লিভার সিরোসিস কেন হয়?
মূলত লিভার সিরোসিস লিভারের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণে হয়ে থাকে। আর এই ক্ষতির ফলে লিভারের সুস্থ্য টিস্যুগুলি ধীরে ধীরে দাগযুক্ত টিস্যুরূপে প্রতিস্থাপিত হয়, আর তার ফলে লিভারের স্বাভাবিক টিস্যুগুলি তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং মানব শরীরে গুরুত্বর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
লিভার সিরোসিসের উল্লেখযোগ্য কারণ:
অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে তা সরাসরি লিভারের উপর প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ নিয়মিত বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারনে লিভারের কোষ ধ্বংস হয়ে যায় এবং এভাবেই ধীরে ধীরে সিরোসিস তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পেতে কি খাওয়া যেতে পারে
শরীরে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসসমূহ লিভাবে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করলে তা দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণের সৃষ্টি করে, আর এ রকম সমস্যা থেকে তা সিরোসিসের দিকে ধাবিত হতে থাকে।
দীর্ঘমেয়াদী ওষুধের ব্যবহার:
কিছু কিছু ওষুধের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের কারণে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে আর এর ফলে সিরোসিস হতে পারে।
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ:
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ এবং অনিয়মিত খাদ্যাভাসের কারণে লিভারে চর্বি জমে থাকে। আর এই প্রক্রিয়া যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তাহলে তা সিরোসিসে রূপ নিতে থাকে।
রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে থাকা:
সাধারণত যে সমস্ত ব্যক্তি রং, দ্রাবক, গ্যাস এবং রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে কাজ করে থাকেন, তাদের লিভার কিন্তু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ফলাফল হলো লিভার সিরোসিস।
অতিরিক্ত স্থুলতা:
সাধারণত অতিরিক্ত স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হতে পারে, যা লিভারের প্রদাহ বাড়ানোর ফলে তা সিরোসিসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
জেনেটিক্যালি রোগ:
অনেক সময় বংশগত কারণেও লিভার সিরোসিস হতে পারে। অর্থাৎ হেমোক্রোমাটোসিস বা উইলসন রোগের মত কিছু জেনেটিক্যালি রোগও লিভার সিরোসিসের কারণ হতে পারে।
লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায়:
আসলে লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে, হেপাটাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াও নিজেদের সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা।
আরও পড়ুন: মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায়
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া:
অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া বলতে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণের রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি করা এবং অতিরিক্ত ফাস্টফুড জাতীয় খাদ্য ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করা।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সেবন:
বর্তমানে আমরা সবাই ডাক্তার এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ অনেক সময় শরীরে নানারকম ব্যাথাজনিত সমস্যা (গ্যাসের ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, গা ব্যাথা, বমি বমি ভাব, সর্দি-কাশি, জ্বর ইত্যাদি) শুরু হলে আমরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নিজেই যে ঔষধটা ভালো মনে হয় তা খেয়ে ফেলি। এটা একদমই করা যাবে না। কারণ কোন ঔষধের কি সাইড ইফেক্ট আছে তা একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষুধই সেবন করা ঠিক নয়।
হেপাটাইটিস রোগের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা:
অর্থাৎ হেপাটাইটিস বি ও সি আসলে ভাইরাস জাতীয় অসুখ, যা লিভার সিরোসিসের জন্য অন্যতম কারণ। তাই এই ধরণের সংক্রমণগুলি থেকে রক্ষা পেতে হলে নিরাপদ যৌন সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে (প্রয়োজনে কনডম ব্যবহার) এবং যে কোন টিকা বা ইনজেকশন বা রক্ত নেয়া থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
অর্থাৎ যাদের লিভার রোগের ঝুঁকি আছে বা যাদের লিভার রোগ আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
লিভার সিরোসিস কেন হয়? লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায়-পরিশেষে:
আসলে লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায় বা লিভারকে সুস্থ্য রাখতে বিভিন্ন ধরণের সবজি খেতে হবে। যেমন-সবুজ শাকসবজি (পালংশাক, আরগুলা ইত্যাদি) এবং ক্রসিফেরাস সবজি যেমন-ব্রুকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সরিষার শাক ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এতে করে লিভারের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
এ ছাড়াও বিট, গাজর, পেঁয়াজ ও রসুন বেশী বেশী করে খেতে হবে। আশাকরি লিভার সিরোসিস কেন হয়? লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায় কি তা উপরের আলোচনা থেকে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক খাদ্যগুলি কী কী?
যাইহোক লিভারকে ভালো রাখতে আমরা লেবু, আদা, হলুদ, পুদিনা পাতা, শসা ইত্যাদি উপাদানগুলি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি এবং সেইসঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস, সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস ইত্যাদি। আজকের লিভার সিরোসিস কেন হয়? লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায় বিষয়ক আর্টিকেল সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। বর্ণিত আজকের লিভার সিরোসিস কেন হয়? লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায় বিষয়ে আপনাদের দীর্ঘক্ষণ অংশগ্রহণ/উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
বি.দ্র.: উপরে বর্ণিত লিভার সিরোসিস কেন হয়? লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায় বিষয়ক আর্টিকেলটি সচেতনতা ও পরামর্শমূলক, কোন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নই।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url