মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায়

চুল পড়ার অন্যতম কারণ হলো মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, অর্থাৎ বিভিন্ন ধরণের এই সমস্যাগুলো সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায়, তা জানতে হবে।
মূলত ঘন ঘন চুল পড়া, তেলচিটচিটে ভাব, চুলকানি, খুশকি, ফলিকুলাইটিস, সোরিয়াসিস ইত্যাদি সমস্যাগুলোর অন্যতম কারণই হলো মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, আর এই সমস্যা সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায়, তা জানতে নিচের লেখাটি পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্র: মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় (Scalp problems, what steps can be taken to solve them?)
ভূমিকা
স্ক্যাল্প কয় ধরণের হয়ে থাকে
মাথার স্ক্যাল্পের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যবলী
স্ক্যাল্পে সমস্যা সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায়
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত
মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায়-শেষকথা

ভূমিকা:

আমরা অনেকেই জানি যে, একেকজনের ত্বকের ধরণ অন্যজনের নিকট থেকে যেমন আলাদা হয়ে থাকে। ঠিক তেমনই মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা-র প্রকৃতিও ভিন্ন হতে পারে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা সাধারণত যেটা সচরাচর করে থাকি, তা হলো মুখের ত্বকের জন্য নানারকম প্রসাধনী, প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে সেগুলি ব্যবহার করে থাকি।

আরও পড়ুন: মেথির নানা উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুন

কিন্তু মাথার ত্বকের জন্য আমরা কতটুকু সময় দিই বা প্রসাধনী ব্যবহার করি? শুধু তেল দেয়া, শ্যাম্পু করা ব্যস! তাতেই কি সব হয়ে যায়-‘না’। আসলে চুল পড়ার সমস্যা সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় হিসেবে সর্বাগ্রে আপনার মাথার ত্বকের ধরণ বুঝতে হবে যে, সেটা শুষ্ক না তৈলাক্ত না অন্যকিছু।

স্ক্যাল্প কয় ধরণের হয়ে থাকে:

সাধারণভাবে স্ক্যাল্পকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-স্বাভাবিক স্ক্যাল্প, তৈলাক্ত স্ক্যাল্প এবং শুষ্ক স্ক্যাল্প।

মাথার স্ক্যাল্পের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যবলী:

  • স্বাভাবিক স্ক্যাল্প বা ত্বক : এ ধরনের ত্বকে সিবাশিয়াস গ্ল্যান্ড কম থাকার কারণে অতিরিক্ত তেলতেলে হয়না। ফলে খুশকি ও শুষ্কতা হয়ে থাকে।
  • তৈলাক্ত স্ক্যাল্প বা ত্বক: এ ধরণের ত্বকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হয়ে থাকে এবং খুবই ময়লা টানে, যার কারণে এই ধরণের স্ক্যাল্পে সাধারণত রোপকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং খুশকীর সমস্যা বেশি দেখা যায়। সবসময় চুল নেতিয়ে পড়ে এবং তেল চিটচিটে ভাব লেগেই থাকে।
  • শুষ্ক স্ক্যাল্প বা ত্বক: সাধারণত শুষ্ক স্ক্যাল্প বা ত্বকে চুলকানির সমস্যা বেশি দেখা যায়। এর কারণ অবশ্য হতে পারে, ঠান্ডা আবহাওয়া, অতিরিক্ত শ্যাম্পুর ব্যবহার অথবা স্বাস্থ্যগত সমস্যা। তবে এ ধরণের ত্বকেই বেশি বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।

স্ক্যাল্পে সমস্যা সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায়:

  • মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা এর জন্য প্রতিদিন অন্তত চুল ভেজানো যাবেনা। কারণ তাতে চুলের ন্যাচারাল ওয়েল নষ্ট হতে পারে এবং চুল অতিরিক্ত রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন গোসল করা বা চুল ভেজাতে হবে।
  • স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি ঘটে এবং চুলেরও স্বাস্থ্য বৃদ্ধি ঘটে থাকে। তাই নিয়মানুযায়ী স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করতে হবে। তবে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ মাথার ত্বক সুস্থ রাখার সবচেয়ে প্রিয় পদ্ধতি। আর তাছাড়া সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন নিয়মানুযায়ী স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করতে পারেন।
  • চুলের জন্য সর্বদা হালকা ধরনের হেয়ার প্রোডাক্টস ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ চুলের প্রয়োজনানুযায়ী বিশেষ করে সালফেটমুক্ত হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস ব্যবহার করাই উত্তম।
  • চুলের যত্নে সবসময় সঠিক শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা অতীব জরুরি। তবে মনে রাখতে হবে যে, শ্যাম্পু কিন্তু সবসময় মাথার স্ক্যাল্পে আর কন্ডিশনার সবসময় চুলের ডগায় ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত শ্যাম্পুও বেশ ভালো। আর তাছাড়া সমপরিমাণ ব্রাউন সুগার, ওটস এবং হেয়ার কন্ডিশনার একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করতে পারেন স্ক্র্যাব।

আরও পড়ুন: চুলের রুক্ষতা দূর করবেন যেভাবে

  • আপনার চুলের যত্নে সপ্তাহে অন্তত ২ দিন হালকা উষ্ণ তেল স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে করে স্ক্যাল্প ও চুল আরও স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে।
  • চুলের যত্নে প্রতিদিন এক্সফোলিয়েট করাটা অত্যন্ত জরুরি। ঘরোয়া উপাদানের মাধ্যমে অর্থাৎ বাড়িতেই স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েট তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে স্ক্যাল্পে জমাকৃত ময়লা দূর হবে এবং স্ক্যাল্প হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যকর।
  • মাথার স্ক্যাল্পের সুস্থতার জন্য মাসে অন্তত একবার অয়েল ট্রিটমেন্ট করতে হবে। এক্ষত্রে পারলার বা বাসায় যে কোন স্থানেই এটি করতে পারেন। সাধারণত অয়েল ট্রিটমেন্ট করলে স্ক্যাল্পের অয়েল গ্রন্থিগুলোকে উজ্জীবিত করে থাকে, এর ফলে স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি ঘটে ও ত্বক সুস্থ্য থাকে। এক্ষেত্রে আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে একটি পেস্ট তৈরি করতে পারেন। এজন্য পাকা অ্যাভোকাডোর সঙ্গে অর্ধকাপ নারিকেল তেল এবং ১ টেবিল চামচ অলিভ ওয়েল মিশিয়ে তা ভালোভাবে নেড়ে পেস্ট তৈরি করে মাথার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত:

  • স্ক্যাল্পে গুরুতব প্রদাহ শুরু হলে, অর্থাৎ শুষ্কতার সাথে লালভাব, ফোলাভাব বা ব্যথা থাকে।
  • ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করেও যদি স্ক্যাল্পের সুস্থতা দূর না হয় অথবা তা সপ্তাহব্যাপী চলমান থাকে।
  • স্ক্যাল্পের সংক্রমনের লক্ষণগুলি যদি এমন হয়, যেমন-পুঁজ, ক্রাস্টিং, মাথার ত্বক থেকে পানি পড়া ইত্যাদি।
  • এ ছাড়াও শুষ্ক মাথার ত্বকের কারণে যদি উল্লেখযোগ্য হারে চুল পড়ে বা মাথায় চুল পাতলা হয়ে যায় সেক্ষেত্রে।

মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায়-শেষকথা:

মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা এর ক্ষেত্রে আগে লক্ষণগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। অর্থাৎ সঠিক কারণ বা লক্ষণগুলি না বুঝলে সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় বা যেতে পারে তা ঠিক হবে না। আসলে মেলাসিজিয়া হচ্ছে এক ধরনের অণুজীব, আবার এটি এক ধরনের ছত্রাক। এই মেলাসিজিয়া আমাদের মাথার স্ক্যার্পের গোড়ায় বসবাস করে। যখন মাথার ত্বক থেকে সিবাম নামক এক ধরণের তেল নির্গত হয়ে থাকে, যেটি আমাদের চুল সুন্দর রাখে ও সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলে। অর্থাৎ এই মেলাসিজিয়া সিবামের এ তেল খেয়েই বেঁচে থাকে। এবারে মেলাসিজিয়া সিবাম তেলের উপরে এনজাইম প্রয়োগ করার ফলে তা ভেঙে ফেলে মেলাসিজিয়ার খাওয়ার উপযোগী করে তোলে। আর মেলাসিজিয়া যে অংশটি খায়না, সেগুলি জমাট বেধে মাথার ত্বকে ঢুকে যেতে চায় আর এর ফলেই মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা সৃষ্টি হয়, যেমন-মাথায় চুলকানি ও জ্বলুনি।

আরও পড়ুন: ফ্রিজে সবজি-মসলা রাখার সঠিক নিয়ম কি?

যাইহোক মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় বিষয়ক বিভিন্ন সমাধানগুলি উপরে বর্ণিত হয়েছে। আশাকরি তা বুঝতে পেরেছেন। আসলে স্ক্যাল্প জাতীয় সমস্যার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া প্রতিকার করাই উত্তম। আর এক্ষেত্রে প্রকৃত বা সঠিক সমাধান পাওয়া যেতে পারে অভিজ্ঞ বিউটিশিয়ান অথবা সম্পর্কিত চিকিৎসকের নিকট। তবে স্ক্যাল্প পরিস্কার রাখতে ঘন ঘন চুল আঁচড়াতে হবে তবে চিরুনিটা যদি কাঠের হয়। তাই মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় সম্পর্কিত বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং সেইসঙ্গে উপকৃত হলে তা অন্যদের শেয়ারও করতে পারেন। সবশেষে আজকের মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় বিষয়ক আর্টিকেলে আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url