কিসমিস ভেজানো পানি খালি পেটে কেন খাবেন
মূলত কিসমিস ভেজানো পানি খালি পেটে কেন খাবেন এর পুষ্টিগুণাবলী কি কি হতে পারে, কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক, কিশমিশ ভেজানো পানি পানের উপকারিতা ও অপকারিতাগুলি কি কি, ইত্যাদি জানতে নিচের লেখাগুলো পড়তে থাকুন।
কিশমিশ মূলত তৈরি হয় শুকনো আঙুর থেকে। অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর শুকনো এই ফলটিতে রয়েছে অসাধারণ সব উপকারিতা, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
পেজ সূচিপত্র: কিসমিস ভেজানো পানি খালি পেটে কেন খাবেন
কিসমিস ভেজানো পানি খালি পেটে কেন খাবেন
কিশমিমের পুষ্টিগুণাবলী
কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া ঠিক
কিশমিশ ভেজানো পানি পানের উপকারিতাসমূহ
কিসমিস ভেজানো পানি পানের অপকারিতা
পরিশেষে
কিসমিস ভেজানো পানি খালি পেটে কেন খাবেনঃ
খালি পেটে কিসমিস ভেজানো পানি খেলে শরীরে অনেক উপকার সাধিত হয়। অনেকেই আছেন, যারা সকালে খালি পেটে কোন না কোন স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করে থাকেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলো কিসমিস ভেজানো পাানি। সাধারণত কিসমিস ভেজানো পানি পানে শরীরে যে নানারকম উপকার হয়ে থাকে তা নিম্নের আলোচনা থেকে জানতে পারবেন। তবে এখন থেকে চেষ্টা করবেন সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন এই কিসমিস ভেজানো পানি পান করতে পারেন। যেমন-
শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ
অর্থাৎ সকালে খালি পেটে কিসমিস ভেজানো পানি পান করলে হজম ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটেব এবং সেইসঙ্গে দূর হবে কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা। সাধারণত যাদের হজমজনিত সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যায় ভুগতে থাকে, তাদের জন্য কিসমিস ভেজানো পানি অতি উপকারী ও ফলদায়ক।
হাইড্রেশনজনিত সমস্যা সমাধানেঃ
সব সময়ই শরীরে হাইড্রেশন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে কিসমিস ভেজানো পানি পানে শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া পানির ঘাটতি পূরণ হয়। তাই, সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন আপনি যদি খালি পেটে কিসমিস ভেজানো পানি পান করতে পারেন, তাহলে এ ধরণের সমস্যার সমাধান খুব সহজ ভাবেই সমাধান সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ
হার্টের জন্য উপকারীঃ
সাধারণত হার্টের সমস্যা দেখা দেয়, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টরলের কারণে। আর কিসমিস ভেজানো পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। তাই এক্ষেত্রে কিসমিস ভেজানো পানি পান করলে, তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করতে সহায়তা করে থাকবে।
রক্তস্বল্পতা দূর হয়ঃ
বর্তমানে অনেকেই শরীরে রক্ত স্বল্পতাজনিত সমস্যাই ভুগে থাকেন। অর্থাৎ যাদের রক্তস্বল্পতাজনিত সমস্যা বিদ্যমান, তাদেরকে নিয়মিত কিসমিস ভেজানো পানি করতে হবে। অর্থাৎ কিসমিস ভেজানো পানি পানের কারণে শরীরে রক্ত তৈরি হবে এবং রক্তস্বল্পতার সমস্যাও দূর হবে অনায়াসেই।
কিডনি ও লিভার সুস্থ্য থাকেঃ
সাধারণ নিয়মিত কিসমিস ভেজানো পানি পান করলে, তাতে করে কিডনি ও লিভারের কার্যকারিতা ভালো থাকে। অর্থাৎ সকালে খালি পেটে যদি এক গ্লাস কিসমিস ভেজানো পানি পান করতে পারেন, তাহলে তাতে করে কিডনি ও লিভারের সুস্থ্যতা অনেকাংশেই বেড়ে যাবে।
কিশমিমের পুষ্টিগুণাবলীঃ
কিশমিশে রয়েছে আয়রন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান, ভিটামিন সি ও ই, মিনারেল, খনিজ, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।
কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া ঠিকঃ
সাধারণত কিসমিস ভেজানো পানি সকালে খালি পেটে খাওয়াই সবথেকে উপকারী হিসেবে ধরা হয়। ১ গ্লাস পানিতে ৪ ভাগের ১ ভাগ বা একমুঠো কিশমিশ ভালো করে ধুয়ে সারারাত অর্থাৎ ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে খেতে হবে। মিশ্রিত পানি খাওয়ার পরে ভেজানো কিশমিশগুলোও খেয়ে নিতে পারেন, কারণ এতে শরীরে অতিরিক্ত আঁশ ও পুষ্টি থাকে।
কিশমিশ ভেজানো পানি পানের উপকারিতা সমূহঃ
- কিসমিস ভেজানো পানি পানে হজমশক্তির বৃদ্ধি ঘটে। ভেজানো কিসমিস হজমের সমস্যা উন্নত করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায় এবং পেট পরিস্কার রাখে।
- কিসমিস মিশ্রিত পানি আয়রনের একটি উৎস। অর্থাৎ যাদের আয়রনজনিত ঘাটতি রয়েছে, তাদের জন্য এটা অত্যন্ত উপকারী।
- শরীরের রক্ত স্বাভাবিককরণ বা ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে পটাশিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ সকালে খালি পেটে কিসমিসের পানি হতে পারে পটাসিয়ামের উৎস।
- লিভার সুস্থ্য রাখতে কিসমিস পানি পান করা যেতে পারে। কারণ লিভার আমাদের শরীরকে ডিটক্সিফাই করে থাকে। তাই কিসমিস ভেজানো পানি পানের মাধ্যমে শরীর থেকে টক্সিন দূর হয়ে শরীর সুস্থ্য রাখতে সহায়থা করে থাকে।
- কিশমিশে পলিফেনল, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনলিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল দূর করে। আর এতে করে কোষের ক্ষয়রোধ হয় এবং বয়সজনিত সমস্যা ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
- কিশমিশে থাকা ভিটামিন সি ও ই ত্বকে কোলাজেন তৈরি করে ত্বকের ক্ষত মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটা সত্য যে, নিয়মিত কিসমিসের পান করলে ত্বক হয় উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর।
- নিয়মিত কিসমিস পানি পানে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। অর্থাৎ কিসমিসে থাকা পটাশিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে থাকে।
- রক্ত স্বল্পতা বা রক্ত শূন্যতায় নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ নিয়মিত কিসমিস খেলে এর মধ্যে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। সর্বোপরি এর মধ্যে আছে তামা, যা রক্তে লাল রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
- শরীরকে দুষণমুক্ত বা সুস্থ্য রাখতে নিয়মিত ভেজানো কিসমিস বা কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়া যেতে পারে। এতে করে শরীরকে দুষণমুক্ত বা সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে থাকে।
- দাঁতের সমস্যা প্রতিরোধে নিয়মিত কিসকিস ভেজানো পানি পান করা যেতে পারে, কেননা কিশমিশের পানি রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল ও ওলিয়ানোলিক অ্যাসিড, যা জীবাণু থেকে দাঁত রক্ষা করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে
- মানসিক প্রশান্তি বা গভীর ঘুমের জন্য কিশমিশে থাকা আয়রন যথেষ্ট উপকারী। অর্থাৎ নিয়মিত কিশমিশ খাওয়ার ফলে শরীর হতে অবসাদ দূর হতে পারে, আর এ কারণে মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়।
- সাধারণত শিশুদের বুদ্ধির বিকাশের ক্ষেত্রে কিশমিশ দারুণ কাজ করে থাকে। কারণ কিশমিশে থাকা বোরন উপাদান যে কোন কাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করে থাকে।
- এ ছাড়াও কিশমিমে থাকা ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য তা অত্যন্ত উপকারী।
- কিশমিশে প্রচুর আয়রন থাকায় তা মানুষের অনিদ্রা দুর করতে সহায়তা করে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে অন্তত ২টি করে কিশমিশ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
- কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যার ফলে অন্ধত্ব প্রতিরোধেও এটি সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়াও কিশমিশে থাকা ফাইবার লিভার থেকে কোলেস্টেরল দূর করতে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
- কিশমিশে অ্যান্টি ব্যাক্টোরিয়াল উপাদান থাকায় তা মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
কিসমিস ভেজানো পানি পানের অপকারিতাঃ
কিসমিস ভেজানো পানিতে শরীরের অনেক উপকার সাধিত হয়, ঠিক তেমনি এতে রয়েছে নানারকম অপকারিতাও। অর্থাৎ হজমের সমস্যা বিশেষ করে পেট ফাঁপা বা গ্যাস, অ্যাল্যার্জিজনিত সমস্যা এবং সর্বোপরি কিসমিসে থাকা ধুলাবালি এবং ময়লার কারণে শরীরে দেখা দিতে পারে নানা ধরণের রোগ ব্যধিসমূহ। যেমন-
ধূলাবালি জনিত ময়লাঃ অর্থাৎ কিসমিস ভেজানো পানিতে অস্বাস্থ্যকর, নোংরা ধুলাবালি লেগে থাকতে পারে, যা না দেখেই ভিজিয়ে দিয়ে এবং তা যদি সকালে খালি পেটে খাওয়া হয়, তাহলে শরীরের জন্য সেটা অত্যন্ত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
শরীরের ওজন বৃদ্ধিঃ সাধারণত কিসমিসে প্রাকৃতিক চিনি এবং ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকায়, তা যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয়, তাহলে সেটার কারণে শরীরের ওজন বৃদ্ধি ঘটতে পারে। তাই কিসমিস স্বাস্থ্যের জন্য উপকার বয়ে আনলেও অতিরিক্ত গ্রহণ বা খাওয়ার ফলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়েঃ আসলে কিসমিসে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশি থাকে, যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তা ক্ষতিকাল অর্থাৎ এক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা যদি বেশি পরিমাণে খান, তাহলে তা রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে নানারকম স্বাস্থ্যঝুঁকি ঘটতে পারে।
হজমজনিত সমস্যাঃ অর্থাৎ অতিরিক্ত পরিমাণে ভেজানো পানি খেলে তাতে করে হজমের নানারকম সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। কারণ কিসমিসে রয়েছে অতিরিক্ত ফাইবার। যার ফলে অতিরিক্ত কিসমিস গ্রহণের ফলে পেট ফাঁপা, গ্যাস বা ডায়রিয়া হতে পারে।
দাঁতের ক্ষয়ঃ যদিও আমরা জানি, যে কোন মিষ্টি অথবা অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে দাঁতের সমস্যা বা দাঁতের ক্ষয় হয়ে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে কিসমিসে যেহেতু প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশি, যার কারণে তা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে দাঁতের নানাবিধ ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যেতে পারে।
কিসমিস ভেজানো পানি খালি পেটে কেন খাবেন-পরিশেষেঃ
কিশমিশকে বলা হয় স্বর্গীয় ফল। আর এই কিশমিশ ভেজানো পানি খেতে পারলে তা পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করে। বিশেষ করে যাদের খুবই বেশি কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাদেরকে ওষুধের বদলে নিয়মিত কিশমিশ ভেজানো পানি খেতে পারেন, দ্রুতই সুফল পাবেন। আশাকরি, আজকের কিসমিস ভেজানো পানি খালি পেটে কেন খাবেন, কিভাবে খাওয়া যেতে পারে, এর উপকারিতা ও অপকারিতাসহ নানা গুণাবলী ইত্যাদি সবকিছুই জানতে ও বুঝতে পেরেছেন।
আরও পড়ুনঃ শুটকি মাছ শরীরের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর?
যদি উপরোক্ত আজকের কিসমিস ভেজানো পানি খালি পেটে কেন খাবেন বিষয়ক আলোনাটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। যদিও কিশমিশ আমরা নানাভাবে খেয়ে থাকি, তথাপি বিশেষ কিছু নিয়ামানুযায়ী যদি তা খাওয়া হয়, তাহলে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেকাংশেই বেড়ে যেতে পারে। পরিশেষে আজকের আজকের কিসমিস ভেজানো পানি খালি পেটে কেন খাবেন বিষয়টিতে যদি আপনারদের কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। সবশেষে কিসমিস ভেজানো পানি খালি পেটে কেন খাবেন আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি এবং সম্পৃক্ততার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url