কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক

কিশমিশকে বলা হয় স্বর্গীয় ফল। কিন্তু এই কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক তা জানতে হবে।
কিশমিশ মূলত তৈরি হয় শুকনো আঙুর থেকে। অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর শুকনো এই ফলটিতে রয়েছে অসাধারণ সব উপকারিতা, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এই শুকনো ফলটি বিভিন্ন রন্ধন প্রণালীতে ব্যবহার ছাড়াও তা ভিজিয়ে রেখেও খাওয়া যায়। তাই এই কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক তা জানতে নিচের লেখাগুলো পড়তে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক (When is it okay to drink Raisin Soaking Water?)
কিশমিমের পুষ্টিগুণাবলীসমূহ
কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক
কিশমিশ ভেজানো পানি পানের উপকারিতাসমূহ
কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক-পরিশেষে

কিশমিমের পুষ্টিগুণাবলীসমূহ:

কিশমিশে রয়েছে আয়রন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান, ভিটামিন সি ও ই, মিনারেল, খনিজ, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।

কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক:

সাধারণত কিসমিস ভেজানো পানি সকালে খালি পেটে খাওয়াই সবথেকে উপকারী হিসেবে ধরা হয়। ১ গ্লাস পানিতে ৪ ভাগের ১ ভাগ বা একমুঠো কিশমিশ ভালো করে ধুয়ে সারারাত অর্থাৎ ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে খেতে হবে। মিশ্রিত পানি খাওয়ার পরে ভেজানো কিশমিশগুলোও খেয়ে নিতে পারেন, কারণ এতে শরীরে অতিরিক্ত আঁশ ও পুষ্টি থাকে।

কিশমিশ ভেজানো পানি পানের উপকারিতা সমূহ:

  • কিসমিস ভেজানো পানি পানে হজমশক্তির বৃদ্ধি ঘটে। ভেজানো কিসমিস হজমের সমস্যা উন্নত করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায় এবং পেট পরিস্কার রাখে।

আরও পড়ুন: ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ

  • কিসমিস মিশ্রিত পানি আয়রনের একটি উৎস। অর্থাৎ যাদের আয়রনজনিত ঘাটতি রয়েছে, তাদের জন্য এটা অত্যন্ত উপকারী।
  • শরীরের রক্ত স্বাভাবিককরণ বা ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে পটাশিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ সকালে খালি পেটে কিসমিসের পানি হতে পারে পটাসিয়ামের উৎস।
  • লিভার সুস্থ্য রাখতে কিসমিস পানি পান করা যেতে পারে। কারণ লিভার আমাদের শরীরকে ডিটক্সিফাই করে থাকে। তাই কিসমিস ভেজানো পানি পানের মাধ্যমে শরীর থেকে টক্সিন দূর হয়ে শরীর সুস্থ্য রাখতে সহায়থা করে থাকে।
  • কিশমিশে পলিফেনল, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনলিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেল দূর করে। আর এতে করে কোষের ক্ষয়রোধ হয় এবং বয়সজনিত সমস্যা ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
  • কিশমিশে থাকা ভিটামিন সি ও ই ত্বকে কোলাজেন তৈরি করে ত্বকের ক্ষত মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটা সত্য যে, নিয়মিত কিসমিসের পান করলে ত্বক হয় উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর।
  • নিয়মিত কিসমিস পানি পানে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। অর্থাৎ কিসমিসে থাকা পটাশিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে থাকে।
  • রক্ত স্বল্পতা বা রক্ত শূন্যতায় নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ নিয়মিত কিসমিস খেলে এর মধ্যে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। সর্বোপরি এর মধ্যে আছে তামা, যা রক্তে লাল রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • শরীরকে দুষণমুক্ত বা সুস্থ্য রাখতে নিয়মিত ভেজানো কিসমিস বা কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়া যেতে পারে। এতে করে শরীরকে দুষণমুক্ত বা সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে থাকে।
  • দাঁতের সমস্যা প্রতিরোধে নিয়মিত কিসকিস ভেজানো পানি পান করা যেতে পারে, কেননা কিশমিশের পানি রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল ও ওলিয়ানোলিক অ্যাসিড, যা জীবাণু থেকে দাঁত রক্ষা করতে পারে।

আরও পড়ুন: সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে

  • মানসিক প্রশান্তি বা গভীর ঘুমের জন্য কিশমিশে থাকা আয়রন যথেষ্ট উপকারী। অর্থাৎ নিয়মিত কিশমিশ খাওয়ার ফলে শরীর হতে অবসাদ দূর হতে পারে, আর এ কারণে মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়।
  • সাধারণত শিশুদের বুদ্ধির বিকাশের ক্ষেত্রে কিশমিশ দারুণ কাজ করে থাকে। কারণ কিশমিশে থাকা বোরন উপাদান যে কোন কাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করে থাকে।
  • এ ছাড়াও কিশমিমে থাকা ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য তা অত্যন্ত উপকারী।
  • কিশমিশে প্রচুর আয়রন থাকায় তা মানুষের অনিদ্রা দুর করতে সহায়তা করে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে অন্তত ২টি করে কিশমিশ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
  • কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যার ফলে অন্ধত্ব প্রতিরোধেও এটি সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়াও কিশমিশে থাকা ফাইবার লিভার থেকে কোলেস্টেরল দূর করতে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • কিশমিশে অ্যান্টি ব্যাক্টোরিয়াল উপাদান থাকায় তা মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে থাকে।

কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক-পরিশেষে:

কিশমিশ ভেজানো পানি খেতে পারলে তা পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করে। বিশেষ করে যাদের খুবই বেশি কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাদেরকে ওষুধের বদলে নিয়মিত কিশমিশ ভেজানো পানি খেতে পারেন, দ্রুতই সুফল পাবেন। আশাকরি, আজকের কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক, কিভাবে খাওয়া যেতে পারে, এর উপকারিতা, নানা গুণাবলী ইত্যাদি সবকিছুই জানতে ও বুঝতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন: শুটকি মাছ শরীরের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর?

যদি উপরোক্ত আজকের কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক বিষয়ক আলোনাটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। যদিও কিশমিশ আমরা নানাভাবে খেয়ে থাকি, তথাপি বিশেষ কিছু নিয়ামানুযায়ী যদি তা খাওয়া হয়, তাহলে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেকাংশেই বেড়ে যেতে পারে। পরিশেষে আজকের আজকের কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক বিষয়টিতে যদি আপনারদের কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। সবশেষে কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি এবং সম্পৃক্ততার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url