ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ

সাধারণত ধুমপানে অভ্যস্ত হওয়া ব্যক্তির নিকট ধুমপান পরিত্যাগ করা খুবই ঝামেলা ও চ্যালেঞ্জিং হলেও, কিভাবে ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ রপ্ত করা যায় তা জানতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর সারাবিশ্বে প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ ধুমপানজনিত কারণে মারা যায়। যার মধ্যে ৭ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি ধুমপানজনিত কারণে এবং ১.৩ মিলিয়ন মানুষ পরোক্ষ ধুমপানের শিকার হয়ে মারা যায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব ধুমপান পরিত্যাগ করাই উত্তম। সুতরাং আজকে ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ গুলো কি কি হতে পারে তা নিম্নের আলোচনা থেকে জানতে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ (Effective strategies to Quit Smoking)
সিদ্ধান্ত গ্রহণ
সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করুন
ধুমপানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবকিছু সরিয়ে ফেলুন
মনে আশা সঞ্চার করুন
নিজেকে ব্যস্ত করে তুলুন
অধুমপায়ী বন্ধু বাড়াতে হবে
চা-কফি-মিষ্টি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য পরিহার
মুখ খালি রাখা যাবেনা
খাবারের ধরণ পরিবর্তন
মেডিটেশন ও যোগাসন করা
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ
ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ-পরিশেষে

সিদ্ধান্ত গ্রহণ:

ধুমপান ছাড়ার অন্যতম প্রধান কাজ হলো আগে নিজে সিদ্ধান্ত নিন যে, কেন ধুমপান ছাড়া আপনার জন্য জরুরি। এরপর হচ্ছে কি কারণে ধুমপান ত্যাগ করতে চান- নিজ ইচ্ছায়, অন্য কারও অনুরোধে, কথার কথা হিসেবে না শারীরিক বা মানসিক কোন সমস্যা তৈরী হওয়ার কারণে।

সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করুন:

ধুমপান ছাড়তে হলে অবশ্যই আপনাকে একটি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। অনেক সময় হঠাৎ করে সিগারেট ছেড়ে দেয়া অনেক কঠিন মনে হয়, সেজন্যই একটি রুটিন তৈরি করে সিগারেটের সংখ্যা কমাতে চেষ্টা করুন।

আরও পড়ুন: স্ট্রোক প্রতিরোধে খেতে পারেন যে সমস্ত খাবার

কারণ সঠিক পরিকল্পনাটিই আপনাকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে তুলবে। অর্থাৎ হঠাৎ করে ছেড়ে দেয়ার চেয়ে আগে থেকে প্রস্তুতি নিলে সেটি সাফল্যের সম্ভাবনা শতকতা ৫০ ভাগ বেড়ে যায়। এ ছাড়াও নিজের প্রতি যদি আস্থা বা বিশ্বাস না আনতে পারেন, তাহলে অবশ্যই কাউন্সেলিং বা কুইন-নাইন সেবার সাহায্য নিতে পারেন।

ধুমপানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবকিছু সরিয়ে ফেলুন:

অর্থাৎ সিগারেটের সাথে সম্পৃক্ত যেমন-লাইটার, অ্যাশট্রে সবকিছুই নিজের বাসা, গাড়ি এবং অফিস থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। যে সমস্ত স্থানে আপনি ধুমপান করতেন এমন স্থানগুলো এড়িয়ে চলুন। যতটা সম্ভব ধুমপান সংশ্লিষ্ট পরিবেশ ও গন্ধ যাতে আপনার নিকট না আসে সেদিকে সতর্ক থাকুন। পরিচিত ব্যক্তি বিশেষ করে যারা আপনার সঙ্গে ধুমপান করতো তাদের সঙ্গ এড়িয়ে চলুন। এক্ষেত্রে হয়তো আপনার খারাপ লাগতে পারে, তবে এই ভেবে মনকে প্রবোধ দিন যে, আমি সাময়িকভাবে তাদের সঙ্গ পরিত্যাগ করছি, সিগারেটের প্রতি আসক্তি কমে গেলেই আবার তাদের সঙ্গে চলতে পারবো। এক্ষেত্রে যখন আপনার ধুমপানের ইচ্ছে হবে, তখন বিকল্প হিসেবে চিনি ছাড়া গাম, গাজর ইত্যাদি খেতে পারেন।

মনে আশা সঞ্চার করুন:

ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ এর ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেই হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়েই ধুমপান পরিত্যাগ করেছে, আবার কেউ কেউ ধীরে ধীরে তাতে সফল হয়েছে। মনে রাখবেন, সবার মানসিক পরিমাপ এক রকম হয় না। সবথেকে বড় বিষয় হলো ব্যর্থতা থেকেই শিক্ষা নিতে হয় নতুন পথচলার। আসলে ধুমপান ছাড়ার সময় থেকে বিশেষ করে কয়েক সপ্তাহ শরীরে নিকোটিনের প্রতি প্রচন্ড আকাঙক্ষা কাজ করে। মুখ টক হয়ে যায়, ক্ষুধা কম লাগে, গ্যাসে পেট ফুলে যায়, অনেক সময় ডিহাইড্রেশনও শুরু হয়ে যায়, প্রচন্ড একটা মানসিক অস্থিরতাও শুরু হয়। আসলে আসক্তি জয় করতে হলে মনের আশাবাদ এবং দৃঢ় সংকল্পই হবে আপনার প্রধান শক্তি। সেক্ষেত্রে আপনাকে মনে করতে হবে যে, আপনি কোন মহৎ কাজ বা উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই এমনটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নিজেকে ব্যস্ত করে তুলুন:

আসলে অলস সময়ে ধুমপানের ইচ্ছা তীব্রভাবে জাগ্রত হয়। তাই, নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, যেগুলো আপনার মনকে অন্যদিকে ঘোড়াবে এবং সিগারেট গ্রহণের সুযোগ আসবে না। সম্ভব হলে হাঁটাহাঁটি, বইপড়া অথবা এমন কোন শখ বেছে নিতে পারেন যেটা আপনার মনকে প্রশান্ত করবে। আবার অনেক সময় বাসায় কোন পোষা প্রাণী রাখতে পারেন, যাকে পরিচর্যা বা সময় দিতেই আপনার সিগারেটের আগ্রহ থেকে দূরে থাকতে পারবেন।

অধুমপায়ী বন্ধু বাড়াতে হবে:

সিগারেট ছাড়ার পর সম্ভব হলে অধুমপায়ী অর্থাৎ যারা ধুমপান করেন না এমন বন্ধুদের সময় কাটাতে পারেন। তাদের সাথে কথা বললে আপনি অনুপ্রাণিত হবে এবং সিগারেট খাওয়ার আগ্রহ বা ইচ্ছা কমে যাবে।

চা-কফি-মিষ্টি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য পরিহার:

যেহেতু সিগারেটে নিকোটিন থাকে, আর নিকোটিনের সম্পৃক্ততা থাকে মিষ্টির সাথে, সেক্ষেত্রে মিষ্টি জাতীয় খাদ্যগুলি পরিহার করতে পারেন। অর্থাৎ যদি চা পানের পর সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে চা পরিহার করাই উত্তম।

আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপে ডিলিট হওয়া মেসেজ দেখা

অর্থাৎ যে সময়ে আপনি চা পান করতেন, সেই সময়ে চা না খেয়ে অন্য কোন সময় এবং চেষ্টা করবেন মিষ্টি ছাড়া বা লিকার চা খাওয়ার। প্রয়োজনে চিনি ছাড়া গ্রিন-টি খেতে পারেন। সিগারেট ছাড়ার কিছুদিনের মধ্যে অবশ্যই কোন মিষ্টি না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কপি শপ, চায়ের দোকান ইত্যাদি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।

মুখ খালি রাখা যাবেনা:

সিগারেট ছাড়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো, মুখকে সবসময় ব্যস্ত রাখা। অর্থাৎ সিগারেটের বদলে চুইংগাম, চকলেট, বাদাম, ফল এমনকি ঘন ঘন পানি পান করুন। মূলত যখনই আপনি অন্যকিছু খেতে থাকবেন, তখন ধুমপানের তীব্র আকাঙক্ষাটাও কমে যাবে। আসলে এই পরিবর্তনটা ছোট হলেও সিগারেট ছাড়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

খাবারের ধরণ পরিবর্তন:

ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ এর মধ্যে খাদ্যাভাসে সামান্য পরিবর্তন আনতে হবে। অর্থাৎ ফাস্টফুড, ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল কিন্তু ধুমপানের ইচ্ছাটা বাড়িয়ে দেয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, দুধ, ফলমুল বা সবজি খেলে ধুমপানের স্বাদ ও আকর্ষণ অনেকটা কমে যায়। এ ছাড়াও নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণও শরীরকে অনেকটা শক্তি যুগিয়ে থাকে।

মেডিটেশন ও যোগাসন করা:

মনকে সুস্থির, শান্ত এবং দৃঢ় সংকল্প গ্রহণে প্রয়োজনে যোগ ব্যায়াম, যোগাসন এবং বিভিন্ন রকম মেডিটেশন করা যেতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ:

অর্থাৎ আপনি অনেকবার সিগারেট ছাড়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা কাউন্সিলরের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয় পরামর্শ বা যুক্তিযুক্ত ট্রিটমেন্ট দিতে পারবেন, যাতে আপনি সিগারেটের নেশা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।

ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ-পরিশেষে:

আসলে সিগারেট ছাড়া কঠিন হলেও তা অসম্ভব কিছু না। মনের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি বা সংকল্প, ধৈর্য্যধারণ এগুলোই মূল বিষয়। তাই আজকে এই ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ এর বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে, আশাকরি তা বুঝতে পেরেছেন। সিগারেট ছাড়তে হলে একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সিগারেট ছাড়লে যে সাময়িক সমস্যাগুলো তৈরি হবে তার জন্য আপনি মরে যাবেন না। শুধু একটু ধৈর্য্য, ইচ্ছা বা মহৎ কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই আপনি সিগারেট খাওয়া বাদ দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন: তেজপাতার নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাবলী

যাইহোক উপরোক্ত ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ এর বিষয়ে আপনাদের যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ইসলাম ধর্মে সিগারেট খাওয়াকে হারাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে-অর্থাৎ, ধুমপান বিভিন্ন রোগের কারণ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হারাম।...“নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না।” [বাকারা: ১৯৫]। আবার বলা হয়েছে, তামাক নেশা দ্রব্যের অন্তর্ভূক্ত। কম হোক বা বেশী হোক সকল প্রকার নেশা দ্রব্য ইসলামে হারাম। [সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, অধ্যায়ঃ ৩০, হাদীস নংঃ ৩৩৯৩]। বলা হয়েছে, ধুমপানের মধ্যে রয়েছে জাহান্নামী খাদ্যের বৈশিষ্ট্য। “এটা তাদের পুষ্টিও যোগাবেনা ক্ষুধাও নিবারণ করবেনা।” [সুরা আল-গাশিয়াহঃ ৭]।

তাই আজকের ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ-এর আলোচনাটি যদি আপনার পছন্দ হয়, তাহলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। পরিশেষে আলোচ্য ধুমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশলসমূহ বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ সম্পৃক্ততা ও উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url