ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কেন প্রয়োজন - কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে
সাধারণত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে পায়ের সমস্যাই বেশী হয়ে থাকে। তাই আজকে ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কেন প্রয়োজন - কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে তা জানার চেষ্টা করবো।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর হিসাব অনুযায়ী ২০৩০ সালে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হবে ৩৬৬ মিলিয়ন। আসলে একজন ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্কতার সাথে পায়ের যত্ন নিতে হয়, কেননা কোন কারণে পায়ে যদি কেটে যায় বা ক্ষত হয়, অথবা পায়ের কেটে যাওয়া অংশটিকে অবহেলা বা উদাসীনতার চোখে দেখা যায়, তাহলে পরবর্তীতে সেখান থেকে সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গিয়ে হতে পারে অনেক বড় কিছু। চলুন আমরা ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কেন প্রয়োজন - কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে এ সম্পর্কে জেনে নিই :
পোস্ট সূচিপত্র: ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কেন প্রয়োজন - কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে
ভূমিকা
ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কেন প্রয়োজন
কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে
ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কেন প্রয়োজন - কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে-পরিশেষে
ভূমিকা:
অধিকাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শতকরা ১০ শতাংশেরও বেশি মানুষ পায়ের সমস্যার ঝুঁকিতে থাকে। এ ছাড়াও প্রতি বছর সারা বিশ্বে ১০-১৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের পায়ে আলসার হয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীদের পা অ্যাম্পুট করা ছাড়া উপায় থাকে না। তাই, অবশ্যই আমাদের ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কেন প্রয়োজন বা কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে সেগুলো জানা খুবই জরুরী।
ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কেন প্রয়োজন:
পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি : অনেক সময় স্নায়ুবিক ক্ষতি পায়ের স্নায়ু অনুভূতির ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কারণ অনুভূতি কমে যাওয়ার ফলে পায়ে কোন ধরনের ব্যথা বা চাপ অনুভূত হয় না। ঠিক এ সময়টাতে পায়ে যদি কোন ফোসকা বা ছোটখাট ক্ষত সৃষ্টি বা কোন ধরণের আঘাত পেলেও সেটার ব্যাপারে সচেতন হওয়া যায় না, যেটা পরবর্তীতে অনেক বড় ক্ষতে পরিণত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন : ভিটামিন ডি ও ই একসাথে খাওয়া যাবে কি
পেরিফেরাল ভাস্কুলাল ডিজিজ : এ ছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তনালী অনেক সময় ব্লক হয়ে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার ঝুঁকির প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে যেকোনো ক্ষতই দ্রুত সারাতে বাধাগ্রস্তের সৃষ্টি হয়।
হাইপারগ্লাইসেমিয়া : অনেক সময় রক্তে অতিরিক্ত শর্করার উপস্থিতি ঘটলে, তা যে কোন ক্ষতই দ্রুত সারাতে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।
আসলে ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের যত্ন না নিলে বা খেয়াল না রাখলে এ রকম ছোটখাট সমস্যা থেকে বড় আকার ধারণ করতে পারে, যার পরিণাম হতে পারে- পায়ে ঘা বা আলসার, গ্যাংগ্রিন, পায়ের টিস্যু নষ্ট হয়ে যাওয়া অথবা পা কেটে ফেলে দেয়া।
কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে:
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে তার কিছু পরামর্শ নিম্নে বর্ণিত হলো :
- নিয়মিত নখ কাটতে হবে।
- ধুমপানজনিত অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে।
- মাসে, ছ’মাসে না হলেও বছরে অন্তত একবার পায়ের জন্য বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার দেখান।
- খেয়াল রাখতে হবে পা, যেন সব সময় পরিস্কার ও ইনফেকশন মুক্ত থাকে।
- যদি কোন কারণে পায়ের চামড়া শক্ত হয়ে কড়া পড়ে যায়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- কখনোই খালি পায়ে হাঁটবেন না, হোক সেটা বাগান, কিংবা সমুদ্র সৈকত বা বিলাসবহুল কোন স্থানসমূহ।
- কখনোই পায়ের ওপর পা তুলে বসবেন না। কারণ পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকলে তা রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
- ভালোভাবে পায়ের সাথে লাগে বা ফিট হয় এমন ধরনের জুতা পড়ুন। কখনোই চাপাচাপি বা ঘষাঘষি করতে হয়, এমন ধরনের জুতা পরবেন না। কারণ, যে সমস্ত জুতা/ স্যান্ডেল পায়ে ঠিকমত লাগেনা বা ফিট হয়না, সেগুলো পরার কারণে পায়ে কড়া পড়ে, যার থেকে ঘা বা আলসার এমনকি নখেরও সমস্যা হতে পারে। অর্থাৎ, নরম সোলের জুতা বা ডক্টর সোল পড়তে হবে।
আরও পড়ুন : কীভাবে অফিসের কাজে মনোযোগ বাড়ানো যেতে পারে - কাজে মনোযোগ বাড়ানোর যত কৌশল
- এ ছাড়াও উঁচু হিল, গোড়ালি বা আঙুল উন্মুক্ত জুতা বা পাদুকা ব্যবহার করবেন না। জুতা শুষ্ক রাখুন এবং পরার আগে পরীক্ষা করে নিন ভেতরে ক্ষতিকারক কিছু আছে কি না।
- সম্ভব হলে কুসুম কুসুম গরম পানি ও সাবান (তরল হলে ভালো হয়) দিয়ে আপনার পা অন্তত ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখার পর তা পরিস্কার কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছে শুষ্ক করে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন, যাতে আঙুলের ফাঁকগুলি যেন শুষ্ক থাকে। এরপর সম্ভব হলে আর্দ্রতা রক্ষাকারী লোশন ব্যবহার করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করবেন না।
- শীতের সময় পা ফাটলে বড়জোর ভেসলিন বা ক্রিম লাগান। প্রয়োজনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন, তবে পায়ের আঙুলের ফাঁকে ব্যবহার করা উচিত নয়।
ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কেন প্রয়োজন - কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে-পরিশেষে:
বর্তমানে এই অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, গুরুত্ব না দেয়া বা উদাসীনতা, প্রক্রিয়াজতকরণ খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত এবং সর্বোপরি বংশগত কারণে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে এবং সেইসঙ্গে বাড়ছে নানা জটিলতা। তাই আজকে, ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কেন প্রয়োজন অথবা কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে- এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন : হাত পা অবশ হওয়ার কারণ কী? - হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি?
যাইহোক, ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কেন প্রয়োজন এবং কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে সম্পর্কিত বিষয়ে যদি আপনাদের কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আজকের আলোচনাটি যদি আপনার কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই তা শেয়ার করতে পারেন। সবশেষে আজকের এই ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কেন প্রয়োজন এবং কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে বিষয়ক আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url