ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন কেন প্রয়োজন

আজকে ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন কেন প্রয়োজন, সেইসাথে কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে, ডায়াবেটিস রোগ হলে কি কি সমস্যা হতে পারে বা বেড়ে গেলে কি করা উচিত ইত্যাদি বিষয়ে জানতে নিচের পরামর্শগুলো পড়তে হবে।
ডায়াবেটিস-রোগীর-পায়ের-বিশেষ-যত্ন-কেন-প্রয়োজন
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর হিসাব অনুযায়ী ২০৩০ সালে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হবে ৩৬৬ মিলিয়ন।

পেজ সূচিপত্র: ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন কেন প্রয়োজন

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন কেন প্রয়োজন
কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে
ডায়াবেটিস রোগ হলে কি কি সমস্যা হতে পারে
হঠাৎ করে ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে কি করা উচিত
পরিশেষে

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন কেন প্রয়োজন

পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথিঃ অনেক সময় স্নায়ুবিক ক্ষতি পায়ের স্নায়ু অনুভূতির ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কারণ অনুভূতি কমে যাওয়ার ফলে পায়ে কোন ধরনের ব্যথা বা চাপ অনুভূত হয় না। ঠিক এ সময়টাতে পায়ে যদি কোন ফোসকা বা ছোটখাট ক্ষত সৃষ্টি বা কোন ধরণের আঘাত পেলেও সেটার ব্যাপারে সচেতন হওয়া যায় না, যেটা পরবর্তীতে অনেক বড় ক্ষতে পরিণত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে।

আলসারের ঝুঁকির প্রবণতা বাড়েঃ ডায়াবেটিস হলে সাধারণত স্নায়ুজনিত ক্ষতিসহ শরীরের রক্ত প্রবাহ দুবল হওয়ার কারণে আলসার (অর্থাৎ খোলা ক্ষত) এর ঝুঁকির প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে যদি নিরাময়ের উদ্যোগ বা সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা না হয় এবং সর্বোপরি বিলম্বে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করলে তা দ্রুত সংক্রমিত হয়ে পায়ের কিছু (যেমন-আঙুল) অংশই কেটে ফেলার প্রয়োজন দেখা দিয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ ভিটামিন ডি ও ই একসাথে খাওয়া যাবে কি

পেরিফেরাল ভাস্কুলাল ডিজিজ : এ ছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তনালী অনেক সময় ব্লক হয়ে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার ঝুঁকির প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে যেকোনো ক্ষতই দ্রুত সারাতে বাধাগ্রস্তের সৃষ্টি হয়।

হাইপারগ্লাইসেমিয়াঃ অনেক সময় রক্তে অতিরিক্ত শর্করার উপস্থিতি ঘটলে, তা যে কোন ক্ষতই দ্রুত সারাতে বাধা সৃষ্টি করে থাকে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব তা কমানোর প্রচেষ্টা থাকতে হবে।

গুরুতর জটিলতা প্রতিরোধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণঃ আসলে ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের যত্ন না নিলে বা খেয়াল না রাখলে ছোটখাট সমস্যা থেকে বড় আকার ধারণ করতে পারে, যার পরিণাম হতে পারে- গ্যাংগ্রিন, পায়ের টিস্যু নষ্ট হয়ে যাওয়া অথবা পা কেটে ফেলে দেয়া। সারা বিশ্বে এই ডায়াবেটিসজনিত অমনোযোগিতা অথবা গুরুত্ব না দেয়ার কারণে প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে অঙ্গ হারানোর ঘটনা ঘটে থাকে।

কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারেঃ

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের কী উপায়ে পায়ের যত্ন নেয়া যেতে পারে তার কিছু পরামর্শ নিম্নে বর্ণিত হলো :

সাধারণত ডায়াবেটিস রোগদের নিয়মিত নখ কাটতে হয়। বিশেষ করে পায়ের নখ যাতে বড় না হয়, কারণ এতে নানা ধরনের ঝুঁকি থাকে।

ধুমপানজনিত অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ধুমপানের অভ্যাস থাকলে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে বাদ দেয়ার প্রচেষ্টা করতে হবে।

মাসে, ছ’মাসে না হলেও বছরে অন্তত একবার পায়ের জন্য বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার দেখান। যদি পা’য়ে চলতে ফিরতে কোন অস্বাভাবিকতা দেখা দিরে অবশ্যেই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

আসলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে সবথেকে যেটি বেশি খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো পা সব সময় পরিস্কার ও ইনফেকশন মুক্ত থাকে।

অনেক সময় জুতা পরার কারণে অথবা অন্য কোন কারণে পায়ের চামড়া শক্ত হয়ে কড়া পরে বা সামান্য ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের কখনোই খালি পায়ে হাঁটা উচিত নয়, হোক সেটা বাগান, কিংবা সমুদ্র সৈকত বা বিলাসবহুল কোন স্থানসমূহ। কারণ কোন কারনে খালি পায়ে হাঁটার ফলে যদি কোন কাঁটা বা কোনকিছু পায়ের মধ্যে ঢুকে যায়, তাহলে তা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীদের সবসময় স্বাভাবিক ভাবে বসতে হয়। কোন স্থানে দীর্ঘক্ষণ বসে যদি পায়ের উপরে পা দিয়ে বসে থাকা যায়, তাহলে সেটা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকলে তা রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

ভালোভাবে পায়ের সাথে লাগে বা ফিট হয় এমন ধরনের জুতা পড়ুন। কখনোই চাপাচাপি বা ঘষাঘষি করতে হয়, এমন ধরনের জুতা পরবেন না। কারণ, যে সমস্ত জুতা/ স্যান্ডেল পায়ে ঠিকমত লাগেনা বা ফিট হয়না, সেগুলো পরার কারণে পায়ে কড়া পড়ে, যার থেকে ঘা বা আলসার এমনকি নখেরও সমস্যা হতে পারে। অর্থাৎ, নরম সোলের জুতা বা ডক্টর সোল পড়তে হবে।

আরও পড়ুনঃ কীভাবে অফিসের কাজে মনোযোগ বাড়ানো যেতে পারে - কাজে মনোযোগ বাড়ানোর যত কৌশল

এ ছাড়াও উঁচু হিল, গোড়ালি বা আঙুল উন্মুক্ত জুতা বা পাদুকা ব্যবহার করবেন না। জুতা শুষ্ক রাখুন এবং পরার আগে পরীক্ষা করে নিন ভেতরে ক্ষতিকারক কিছু আছে কি না। তবে সাধারণত চিকিৎসকের ডক্টর সোল ব্যবহার করতে বলেন, কারণ ডক্টর সোল শুধুমাত্র ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যই পরীক্ষিত এবং ভালো।

সম্ভব হলে কুসুম কুসুম গরম পানি ও সাবান (তরল হলে ভালো হয়) দিয়ে আপনার পা অন্তত ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখার পর তা পরিস্কার কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছে শুষ্ক করে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন, যাতে আঙুলের ফাঁকগুলি যেন শুষ্ক থাকে। এরপর সম্ভব হলে আর্দ্রতা রক্ষাকারী লোশন ব্যবহার করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করবেন না।

শীতের সময় পা ফাটলে বড়জোর ভেসলিন বা ক্রিম লাগানো যেতে পারে। প্রয়োজনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যাবে, তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে পায়ের আঙুলের ফাঁকে ব্যবহার করা না করা হয়।

ডায়াবেটিস রোগ হলে কি কি সমস্যা হতে পারেঃ

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন কেন প্রয়োজন বিষয়ক আর্টিকেলে বলা যেতে পারে যে, অধিকাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শতকরা ১০ শতাংশেরও বেশি মানুষ পায়ের সমস্যার ঝুঁকিতে থাকে। এ ছাড়াও প্রতি বছর সারা বিশ্বে ১০-১৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের পায়ে আলসার হয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীদের পা অ্যাম্পুট করা ছাড়া উপায় থাকে না। সাধারণত ডায়াবেটিস হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের মতো হৃদরোগ, কিডনি নষ্ট, চোখের দৃষ্টিশক্তি হারানো, স্নায়ুজনিত সমস্যা, পায়ের সমস্যাসহ ত্বক, দাঁত, অনেকের যৌন সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, গর্ভধারণে মা ও শিশুর উভয়ের ঝুঁকি হয়ে যায়। তবে উপরোক্ত সমস্যাগুলির মধ্যে বেশিরভাগ সমস্যায় পড়তে হয় পা নিয়ে। তাই একজন ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্কতার সাথে পায়ের যত্ন নিতে হয়, কেননা কোন কারণে পায়ে যদি কেটে যায় বা ক্ষত হয়, অথবা পায়ের কেটে যাওয়া অংশটিকে অবহেলা বা উদাসীনতার চোখে দেখা যায়, তাহলে পরবর্তীতে সেখান থেকে সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গিয়ে হতে পারে অনেক বড় কিছু। অর্থাৎ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে শরীরের নানাবিধ সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে অথবা ডায়াবেটিস আছে, তাদেরকে অত্যন্ত সুনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হয়। মোটকথা সুনিয়ন্ত্রিত এবং সঠিকভাবে নিয়মানুযায়ী মেনে চললে ভালো থাকা যায়।

হঠাৎ করে ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে কি করা উচিতঃ

যদি কখনো হঠাৎ করে ডায়াবেটিস বেড়ে যায় তাহলে নিকটস্থ কোন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করাটা সবথেকে বুদ্ধিমানের কাজ। যদি এমনটা হয় যে, কাছাকাছি কোন চিকিৎসক না থাকে তাহলে তাৎক্ষণিক প্রতিকার হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করতে হবে এবং সেইসঙ্গে চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হওয়াটা খুবই জরুরী। সাধারণত হঠাৎ করে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। তাই তাৎক্ষণিকভাবে চিনি বা চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে বেশি বেশি করে পানি পান করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন কেন প্রয়োজন-পরিশেষে:

বর্তমানে এই অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, গুরুত্ব না দেয়া বা উদাসীনতা, প্রক্রিয়াজতকরণ খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত এবং সর্বোপরি বংশগত কারণে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে এবং সেইসঙ্গে বাড়ছে নানা জটিলতা। তাই আজকে, ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন কেন প্রয়োজন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন : হাত পা অবশ হওয়ার কারণ কী? - হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি?

যাইহোক, ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন কেন প্রয়োজন সম্পর্কিত বিষয়ে যদি আপনাদের কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আজকের আলোচনাটি যদি আপনার কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই তা শেয়ার করতে পারেন। সবশেষে আজকের এই ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন কেন প্রয়োজন বিষয়ক আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।