শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কি করা যায়
শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কি করা যায় তার উপায় হিসেবে ধরে নেয়া যায় এর কারণ, লক্ষণসমুহ এবং কিভাবে ক্লান্তিসমূহ দূর করা যায় ইত্যাদি বিষয়সমূহকে। আর এতদ বিষয়ে জানতে নিচের পরামর্শগুলো পড়াটা খুবই প্রয়োজনীয়।
দীর্ঘক্ষণ ধরে অফিসে কাজ এবং বাড়ীতে এসে নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় একটা পর্যায়ে শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কি করা যায়
শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কি করা যায়
ক্লান্তির কারণসমূহ
ক্লান্তির লক্ষণসমুহ
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত
পরিশেষে
শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কি করা যায়ঃ
শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কি করা যায় বলতে অনেকেই আছে, যারা সকালের নাস্তা ঠিকমত করেনা বা নাস্তা না করার প্রবণতা। আসলে সকালের এই নাস্তাটা ঠিকমত বা সময়মত না করার ফলে শরীর দ্রুত এনার্জি হারিয়ে ফেলে, ফলে তখন শরীরে ক্লান্তিভাব দেখা দেয়। তাই সকালের নাস্তাটি অবশ্যই স্বাস্থ্যকর হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।
শরীরে পানির অভাব দেখা দিলেও ক্লান্তিবোধ বা দুর্বলতা লাগতে পারে, অর্থাৎ শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে পড়ে। তাই সুস্থ্য থাকতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুসের দৈনিক ১০-১২ গ্লাস পানি খাওয়া জরুরি। তবে অনেক সময় ক্লান্তিবোধ দেখা দিয়ে এক গ্লাস পানি পান করুন, দ্রুত এনার্জি ফিরে আসবে।
যারা সাধারণত সারাদিন একটানা কাজের পর যদি পায়ে যন্ত্রণা অনুভব করেন বা শরীরে জোর পাচ্ছেন না, তাদের গরম ঠান্ডা পানির মধ্যে সামান্য একটু লবণ দিয়ে তাতে পা ভিজিয়ে রাখুন। অর্থাৎ এভাবে যদি ১০ মিনিট বুটবাথ করলে শরীরের ক্লান্তি অনেকাংশে কমে যাবে।
শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করতে বাদাম খেতে পারেন। কারণ বাদামে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, যা শরীরে দ্রুত এনর্জি ফিরিয়ে দিতে সহায়তা করে থাকে। মনে করুন, আপনি দীর্ঘক্ষণ ধরে একলা বসে আছেন অথবা একটি কাজ দীর্ঘক্ষণ ধরে করছেন, এতে ক্লান্তিভাব আসতে পারে। এ রকম অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি যদি কিছু বাদাম খোসা ছিড়িয়ে খেতে পারেন, তাহলে এতে আপনার শরীরের ক্লান্তিভাবটা অনেকটাই উপশম হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সারাদিন বসে কাজ করেন, তাদের অন্তত দিনে ১০ থেকে ২০ মিনিট হাঁটা উচিত, যা শরীরকে ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করবেন। আসলে এক নাগাড়ে বা দীর্ঘক্ষণ ধরে কোন কাজ করা উচিত নয়, এতে করে আপনার শরীরে ক্লান্তিভাব অর্থাৎ আপনার ঘুম আসতে পারে, যা শোভনীয় নাও হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে
অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে। অর্থাৎ ঘুমের ৬ ঘন্টা আগে যদি কেউ কফি পান করে, তাহলে তার ঘুমের বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই পর্যাপ্ত ঘুন না হলে শরীরে ক্লান্তিবোধ দেখা দিতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে ১ জন নারীর শরীরে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে আয়রনের ঘাটতি দেখা যায়। এ কথা সত্য যে, শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলে ক্লান্তিভাব আসতে পারে। তবে শরীরের ক্লান্তিভাব কাটানোর জন্য ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। যেমন-কমলা, লেবু, জাম্বুরা, আঙ্গুর ইত্যাদি।
শরীরে যদি ভিটামিন-বি এর ঘাটতি দেখা দিলে ক্লান্তিবোধ লাগতে পারে। তাই সাধারণত যাদের এই ধরণের সমস্যা রয়েছে, তাদের শরীরের ঘাটতি পূরণে ওট, তেলযুক্ত মাছ, মুরগী ইত্যাদি খাবারগুলি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
শরীরের ক্লান্তি দূর করতে প্রয়োজনে মেডিটেশনও করা যেতে পারে। অর্থাৎ নানাপ্রকার যোগাসনও রয়েছে, যা নিয়মিত চর্চা করার ফলে শরীরের অনেক সমস্যাই দূর হতে পারে। শুধু তাই নয়, শরীরের বিভিন্ন সমস্যার জন্যই নিয়মিত মেডিটেশন বা যোগাসন করলে স্বাস্থ্য ও মন দুটোই ভালো থাকে।
কাজের প্রতি বিরক্ত না হয়ে একটি পরিকল্পনা করুন। অর্থাৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করলে তাতে মানসিক চাপ বা বিরক্তি অনেকাংশেই কমে যায়। কারণ মানসিক চাপ বা বিরক্তি আপনার ক্লান্তিবোধকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই যতটা সম্ভব এ ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন।
অতিরিক্ত ধুমপান সেবনও ক্লান্তির কারণ হতে পারে। তাই সম্ভব হলে ধুমপান পরিত্যাগ করুন অথবা ধুমপান কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। অনেকে আছেন, যারা অনেক রাত জেগে কাজ করে থাকে, অনেকে রাত জেগে মোবাইল বা টিভি দেখে থাকে, আবার অনেকেই অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দেন। আর এসব ক্ষেত্রে যাদের ধুমপান করার অভ্যাস রয়েছে তারা অতিরিক্ত ধুমপান করে থাকেন। ফলে তাদের শরীরে ক্লান্তিবোধের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
ক্লান্তির কারণসমূহঃ
সাধারণত শরীর ক্লান্ত লাগার দুই ধরনের কারণ হতে পারে, ১) লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর এবং ২) মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা। অর্থাৎ লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর হিসেবে যেমন-পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে স্বল্পতা, ঘুমের অভাব, শারীরিক মুভমেন্ট, একঘেয়েমিপনা, অ্যালকোহল বা মাদকাসক্তিতে আসক্ত, নির্দিষ্ট ঔষধ সেবন ইত্যাদি। আর মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যায়, যেমন-বিভিন্ন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, বিষণ্ণতা ও মৌসুমী আবেগজনিত, ব্যাধিসমূহ ইত্যাদি।
ক্লান্তির লক্ষণসমুহঃ
যদি এমনটা হয় যে, আপনার পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করার পরেও শরীরে ক্লান্তি বা দুর্বলতার অনুভূতি হচ্ছে, তাহলে সেটাই শাররিক ক্লান্তি হিসেবে দেখা দেয়। যেমন দীর্ঘক্ষণ আপনি কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে আছেন বা বিশ্রাম গ্রহণ করছেন অথবা অপেক্ষা করছেন। এমন ধরণের অবস্থাও কিন্তু শারীরিক ক্লান্তির লক্ষণ হতে পারে।
মনোযোগের সমস্যা, স্মৃতিশক্তির সমস্যা ও জ্ঞানের সমস্যাজনিত কারণগুলি মানসিক অবসাদ থেকে সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ আপনি দীর্ঘক্ষণ ধরে একাগ্রচিত্তে কোন কিছুতে মনোনিবেশ করেছেন বা কোন বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে জ্ঞান আরোহণের চেষ্টা করছেন এমন ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হতে পারে, যা আপনার ক্লান্তির লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন, চিরতার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাসমূহ
একই ধরণের একঘেয়েমিপনা দৈনন্দিন কাজ করার জন্য এনার্জি বা উৎসাহের অভাবজনিত কারণগুলি অনুপ্রেরণা হ্রাসমূলক। অর্থাৎ প্রতিদিনের একই ধরণের কাজের চাপ মানুষকে ক্লান্ত ও অনুৎসাহী করে তোলে যা শারীরিক ক্লান্তির লক্ষণসমূহ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।
ঘুমের অসুবিধা বা ব্যাঘাত অথবা ঘুমের পরে অস্থির বোধ করা। আসলে একজন মানুষের অন্ততপক্ষে প্রতিদিন ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। কিন্তু কোন কারণে যদি এই ঘুমের ব্যতায় ঘটে থাকে বা অতিরিক্ত মানসিক অস্থিরতা বা অন্য যে কোন কারণে ঘুমের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে সেটিও আপনার ক্লান্তির একটি লক্ষণ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।
শারীরিক পরিশ্রম না থাকায় শরীরে পেশীর ব্যথা বা অস্বস্তিভাব। অনেকেই আছেন, যারা কোন রকম শারীরিক পরিশ্রম করতে চান না, আবার অনেকের শারীরিক সমস্যা যেমন-শরীরে ব্যথা বা অন্য কোন শারীরিক সমস্যার কারণে শরীরে অস্বস্তিভাব থাকে, এক্ষেত্রে তা ক্লান্তির লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়, কারণ এগুলোর প্রভাবে পরবর্তীতে তাদের খুব সহজেই ক্লান্তিভাব এসে যায়।
সাধারণত অফিসের কাজের অতিরিক্ত চাপে প্রথমেই দেখা দেয় মন খারাপের বিষয় এরপর বাড়ে অস্থিরতা আর উদ্বেগ। অর্থাৎ এ ধরণের সমস্যায় বাড়ে মানসিক অস্থিরতা এবং এক পর্যায়ে চলে আসে কাজের প্রতি বিরক্তি ভাব।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিতঃ
যখন দেখবেন এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে আপনার ক্লান্তিবোধ অব্যাহত আছে, তখন অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অতীব জরুরী। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো কিছু ক্ষেত্রে ক্লান্তি নিম্নে বর্ণিত যে কোন একটির সাথে গুরুতর শারীরিক স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে হতে পারে। যেমন-শ্বাসকষ্ট বা কাশি, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, মলদ্বারে রক্তক্ষরণ, রক্ত বমি হওয়া, বুকের আশেপাশে ব্যথা অনুভব ইত্যাদি।
শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কি করা যায়-পরিশেষেঃ
মূলত একজন মানুষের কর্মজীবন এবং ব্যক্তি জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। সাধারণত যারা চাকুরী করেন, তাদের একটা সময়ানুযায়ীই চলতে হয়। কারণ সবথেকে বড় বিষয় হলো দায়বদ্ধতা। এক্ষেত্রে যদি এমনটা হয় যে, কর্ম শেষে বাড়িতে ফিরে অনেক রাত পর্যন্ত মোবাইল ব্যবহার, টিভি দেখা, গান শুনা, তাহলে তো সকালে উঠতে দেরী হবে অথবা সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠলেও অফিসে গিয়ে কাজের চাপে আসে বিরক্তি, ক্লান্তিসহ নানারকম সমস্যা। তাই শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কি করা যায় বিষয়টি সম্পর্কে উপরোক্ত আলোচনায় যা বর্ণনা করা হয়েছে, যা আশাকরি তা বুঝতে পেরেছেন।
আরও পড়ুনঃ ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? এটা কি কোন অসুখের লক্ষণ?
যাইহোক, আজকের শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কি করা যায় বিষয়ক আলোচনাটি যদি আপনার নিকট গ্রহণযোগ্য মনে হয়, তাহলে তা অবশ্যই অন্যদের শেয়ার করবেন। প্রয়োজনে ক্লান্তিভাব এড়াতে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের একটি ছোট ছোট ঘুম দিয়ে নিতে পারবেন। অর্থাৎ শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কি করা যায় বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে তা জানাতে পারেন। মনে রাখতে হবে যে, উচ্ছৃঙ্খল বা পরিকল্পনাহীন জীবন-যাপন কখনোই সাফল্যের উচ্চ সিঁড়ি অতিক্রম করতে পারে না। সবশেষে আজকের আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ যুক্ত থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url