ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে
ডিম আমাদের সকলের নিকট অতিপ্রিয় একটি খাদ্য এবং একে বলা হয় সুপার ফুড। কিন্তু এই ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে সেটা জানতে হবে।
আসলে ডিম আমরা বিভিন্ন প্রক্রিয়া করে খেয়ে থাকি, ভাজি, সেদ্ধ, হাফ বয়েল, ফুল বয়েল, মামলেট, পোচ, তরকারীর সাথে রান্না করে। প্রকৃতপক্ষে অনেক খাদ্য আছে, যা আমরা মুখরোচক করে খেয়ে থাকি, কিন্তু তার ফলে সেই খাদ্যের প্রকৃত ভিটামিন থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে থাকি। সুতরাং আজকের আলোচনায় শুধুমাত্র ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে সেই বিষয়টিই জানার চেষ্টা করি।
পোস্ট সূচিপত্র: ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে (How eating eggs can be beneficial)
ডিমের পুষ্টিগুণাবলীসমূহ
বয়স ভেদে প্রতিদিন কয়টা ডিম খাওয়া যেতে পারে
ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে
সেদ্ধ ডিমের উপকারিতাসমূহ
কাঁচা ডিম খাওয়া ভালো/খারাপ
ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে-পরিশেষে
ডিমের পুষ্টিগুণাবলীসমূহ:
সাধারণত একটি ডিমের ওজন হয়ে থাকে ৫০ গ্রামের মতো। আর এই ৫০ গ্রাম ডিম থেকে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন আমরা পেয়ে থাকি।
আরও পড়ুন: ঝটপট ঘরেই বানিয়ে ফেলুন চিকেন টিকিয়া
এ ছাড়াও ওমেগা-৩, জিঙ্ক, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন ডি ও বি, ফোলেট, রিবোফ্লাবিন, প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি।
বয়স ভেদে প্রতিদিন কয়টা ডিম খাওয়া যেতে পারে:
- সাধারণত যাদের বয়স ৩৫ বছর, তাদের প্রতিদিন ১টি করে ডিম খাওয়াই যুক্তিযুক্ত। এক্ষেত্রে ইচ্ছে করলে তারা ২-৩টি করে ডিমও খেতে পারবেন, তবে অবশ্যই তা কুসুম ছাড়া।
- আবার যাদের বয়স ৪০ বছরের বেশি, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে সতর্কতার জন্য সপ্তাহে ৪ দিন ডিমের কুসুমসহ এবং ৩ দিন ডিমের কুসুম ছাড়া শুধুমাত্র সাদা অংশটি খেতে পারেন।
- তবে যারা অ্যাথলেটর বা জিম করেন তারা দিনে অন্তত ৭-৮টা পর্যন্ত ডিম খেতে পারবেন, তবে অবশ্যই তা কুসুম ছাড়া। কারণ ডিমের সাদা অংশে থাকে অ্যালবুমিন নামক উপাদান, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে জেনে রাখা ভালো যে, ডিমের কুসুমে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে।
ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে:
ডিম সেদ্ধ: আসলে সেদ্ধ ডিম খাওয়া শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। কারণ এটিতে কোন তেল বা মসলা ব্যবহৃত হয় না। সাধারণত ডিম যদি ৩-৪ মিনিট সেদ্ধ করে খাওয়া যায়, তাহলে এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া থেকে যেতে পারে, তাই অন্তত ৭-৮ মিনিট পর্যন্ত ডিম সেন্ধ করে খাওয়াটিাই সবচেয়ে বেশি ভালো এবং শরীরের জন্য উপকারী। আবার অনেকে ১০-১২ মিনিট পর্যন্ত ডিম সেদ্ধ করেও খেয়ে থাকে।
তবে একথা সত্য যে, সঠিক উপায়ে যদি ডিম রান্না করা যেতে পারে, তাহলে ডিমের পুষ্টিগুণ কিন্তু অনেকাংশেই বেড়ে যেতে পারে। যেমন-অনেক সময় শিশুরা সেদ্ধ ডিম খেতে চাইনা। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য ডিমের সঙ্গে বিভিন্ন সবজি যদি ভাজা করা হয় অথবা পনির, চিজ এবং ১ কাপ দুধ যোগ করে যদি বেক করা হয়, তাহলে সেটি খেতেও সুস্বাদু হয় এবং তা উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাদ্য হিসেবে পরিগণিত হয়।
সেদ্ধ ডিমের উপকারিতাসমূহ:
- সাধারণত সিদ্ধ ডিমে থাকে কোলিন নামক উপাদান, যা আমাদের মস্তিস্কের স্বাস্থ্য ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে।
- নিয়মানুযায়ী সেদ্ধ করা ডিম খেতে পারলে তা শরীরের মধ্যে থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।
- সেদ্ধ ডিম ওজন কমাতে সহায়তা করে থাকে এবং এতে বাড়তি কোন চর্বি নেই।
আরও পড়ুন: কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক
- অসুস্থ্য, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগীদের জন্য সেদ্ধ ডিম তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং উপকারী।
- ডিমের পোচ: ডিমের পোচও শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী, তবে তা অল্প তেল ব্রাশ করে, যদি তা ওয়াটার পোচ করা যায় অথবা চামচে স্টিমের মাধ্যমে পোচ করা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি হবে অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। কারণ অতিরিক্ত তেলে দিয়ে ডিমের পোচ তৈরি করলে, যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের প্রদাহ শুরু হতে পারে।
- ডিম ভাজা: ভাজা ডিমের স্বাদে অনেক বৈচিত্রতা আসে, তাই বেশির ভাগ মানুষই ভাজা ডিম পছন্দ করে থাকেন। কিন্তু এই ভাজা ডিমের পুষ্টিগুণ বা উপকারিতা বৃদ্ধি করে যদি এটা খাওয়া যায়, তাহলে তা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকার বয়ে আনে। যেমন-পিয়াজ, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, টমেটো বা মাখন ইত্যাদি সম্পৃক্ত করে যদি ডিম ভাজা যায়, তাহলে এর উপাদানসমূহ দেহে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সরবরাহ করে থাকে। এ ছাড়াও ভাজা ডিমে ফসফরাসের পরিমাণ বেশি থাকায় তা, হাড় ও দাঁতকে মজবুত রাখতে সহায়তা করে থাকে।
- আবার ডিম ভাজার ক্ষেত্রে যদি সয়াবিন তেলের বদলে অলিভ অয়েল অথবা ঘি ব্যবহার করা যায়, তাহলে সেটি স্বাস্থ্যের জন্য উপাকারী।
- যদি ডিম ভাজার সঙ্গে পালং শাক, টমেটো, পনির যোগ করা যায়, তাহলে ডিমের পুষ্টিগুণ অনেকাংশেই বেড়ে যায়।
- তবে ভাজা ডিম সয়াবিন তেলে ভাজার কারণে তাতে প্রচুর ট্রান্সফ্যাট থাকে। আর এই ট্রান্সফ্যাট হৃদরোগ ও শরীরের স্থূলতার ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
কাঁচা ডিম খাওয়া ভালো/খারাপ:
অনেকেই বেশি পুষ্টির আশায় কাঁচা ডিম খেয়ে থাকে। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই সঠিক নয়। অর্থাৎ কাঁচা ডিমে এভিডিন নামক এক ধরনের প্রোটিন থাকে, যা শরীরে বায়োটিনকে কাজ করতে বাধা দেয়। আর এর ফলে ত্বক ও চুলের ক্ষতি হতে পারে।
ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে-পরিশেষে:
আসলে ডিম এমন একটি খাদ্য, যেটা যে কোন সময়েই খাওয়া যায়। তবে সকালের নাস্তার সঙ্গে একটি ডিম খেলে তাতে দীর্ঘক্ষণ ধরে পেট ভরা থাকে এবং সারাদিনের প্রয়োজনীয় এনার্জি এর থেকেই পাওয়া যায়। আজকের আলোচনায় ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে তা আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন: যেসব বদভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে
যাইহোক ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে বিষয়ের আলোকে যদি আপনাদের কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আপনি যদি রাত্রে একটি সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন, তাহলে ঘুমের হরমোন অর্থাৎ মেলাটোনিনের উৎপাদন বেড়ে যায়, যা ঘুমের জন্য খুবই উপকারী। আবার এই ডিম দিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যও তৈরি করা হয়, ঠিক তেমনি উন্মুক্ত বা খোলা স্থানে বিক্রিত বিভিন্ন ভাজাপোড়াতেও ডিমের ব্যবহার হয়ে থাকে। পরিশেষে আলোচ্য ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে বিষয়টি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। আর সবশেষে ডিম কিভাবে খেলে তা উপকারে আসতে পারে আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url