ঘামাচি কেন হয় - ঘামাচি কমানোর উপায়

অসহ্য গরমে ঘামাচির বিরক্তিকর অণুভূতি আমার মনে হয় সবারই জানা। কিন্তু এই ঘামাচি কেন হয় বা ঘামাচি কমানোর উপায় কি সে সম্পর্কে আমরা জানবো।
আসলে ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অনেকে অনেক কিছু করে থাকে। কারণ এই বিষয়টি এমন এক ধরণের সমস্যা যা, অনেক সময় আমাদের অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হয়। সুতরাং, ঘামাচি কেন হয় - ঘামাচি কমানোর উপায় কি, তা জানতে আজকের আর্টিকেলটি পড়তে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: ঘামাচি কেন হয় - ঘামাচি কমানোর উপায়

ঘামাচি কি?

ঘামাচি এক ধরণের চর্মরোগ। আসলে ঘামাচি শব্দটি ঘাম বা গায়ের ঘর্ম থেকে এসেছে। ঘামাচি সাধারণত গরমের সময় আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বা ত্বকে লাল বর্ণ ধারণ করে ফুসকুড়ির ন্যায় প্রকাশ পায়, সেটিই হলো ঘামাচি বা হিট র‌্যাশ। তবে শিশুদের সবচেয়ে বেশি ঘামাচি হয়। আর ঘামাচি হলে প্রচন্ড চুলকায় সেইসঙ্গে গরমে শরীর ঘামলে জ্বালাও অনুভূত হয়।

ঘামাচি কেন হয় বা ঘামাচি হওয়ার কারণ কি?

ঘামাচি কেন হয় বা ঘামাচি হওয়ার কারণ কি বলতে, সাধারণত আমাদের ত্বকের নিচে ঘর্মগ্রন্থি আছে, যেখানে স্টেফ এপিডারমাইডিস নামক ধরণের জীবাণু থাকে। গরমের সময় শরীরে ঘাম বেশি হয়। আমাদের শরীরে ময়লা, ধুলোবালি বা যে কোন কারণেই হোক এই ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে সেখান থেকে ঘাম নিঃসৃত হতে পারে না। এর ফলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা প্রদাহ বেড়ে যায়। তখন লাল গোটা গোটা ফুসকুড়ির মত ঘামাচি দেখা দেয়।

ঘামাচি কোথায় বেশি হয় :

সাধারণত শরীরের যেসব জায়গা বেশি ঘামে, যেমন-বগল, হাঁটু বা কনুইয়ের ভাঁজে ঘামাচি বেশি হয়। এছাড়াও পিঠে, ঘাড়ের আশেপাশেও হয়ে থাকে। তবে শিশুদের ডায়াপার পরার স্থানে, মুখে এবং মাথায়ও ঘামচি হয়ে তাকে।

ঘামাচি কমানোর উপায় বা কিভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে :

  • সাধারণত যারা বেশি ঘামে, তাদের যত দ্রুত সম্ভব ঘামে ভেজা পোশাক পরিবর্তন করে নরম কাপড়, তোয়াল বা রুমাল দিয়ে মুছে নিতে হবে।
  • শরীর পরিস্কার রাখার জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে সম্ভব হলে দিনে দুইবার গোসল করতে হবে। তবে গোসল করার ক্ষেত্রে কম ক্ষারযুক্ত বা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করাটাই শ্রেয়।
  • যেসব স্থানে ঘামাচি হয় তা কখনোই নখ দিয়ে চুলকানো বা আঁচড়ালে ইনফেকশন হতে পারে। মনে রাখবেন, ঘামাচি স্থানে ঠান্ডা পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থান মুছে দিলে ঘামাচি অনেকাংশে কমে যায়।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে ঘামাচি কমাতে চাইলে বিশেষ করে গরমের সময়ে শিশুদের ডায়াপার না পরানোই ভালো। তাতে ঘামাচি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • ঘামাচির হাত হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য গরমের সময়ে বিশেষ করে ঢিলেঢালা এবং পাতলা সুতির পোশাক পরাটা বুদ্ধিমানের কাজ
  • গরমের সময় আপনার বসবাস এবং নিজের কাজের জায়গা যাতে খোলামেলা ও বাতাস চলাচল করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও ফ্যানের নিচে বা এসিতে থাকলে ঘামচি কম হয়। তবে অতিরিক্ত সময় এসিতে থাকা বা ফ্যানের নীচে থাকাটাও কিন্তু শরীরের জন্য ক্ষতি।

আরও পড়ুন: অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ ও চিকিৎসা সেবা - অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে কী করণীয়

  • ঘামাচি রোধক অনেক ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মনে রাখবেন, পাউডার ব্যবহার করার আগে অবশ্যেই শরীর ভালো করে মুছে ফেলতে হবে যাতে ঘাম না থাকে। এক্ষেত্রে অ্যান্টিসেপটিক লোশন, হোম রেমিডি এবং অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
  • এ ছাড়াও রোধ করতে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বাজারে পাওয়া যায়, যেমন-বোরো প্লাস, গোল্ড বন্ড ও লোশন, ওয়াইল্ড স্টোন কুল ট্যাল্ক, ডুড বডি পাউডার ইত্যাদি।
  • শারীরিক কসরৎ বা ব্যায়ামের পরই অবশ্যই গোসল করতে হবে।
  • গরমের সময় ঠাণ্ডা ও শুকনো পরিবেশে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে ঘামাচি কমানো যায় :

সতুরাং চলুন, আমরা জেনে নিই, ঘামাচি কেন হয় - ঘামাচি কমানোর উপায় বা ঘরোয়া উপায়সমূহ সম্পর্কে:

বরফ : বরফ ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় । বরফ একটি পরিস্কার কাপড়ে পেঁচিয়ে ঘামাচির স্থানগুলোতে ৫-১০ ধরে রাখুন। এতে করে ঘামাচি মরে যাবে।
নিমপাতা : নিমপাতাও ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে কাজ করে। যেমন-এক মুঠ নিমপাতা ২ কাপ পানিতে ২০ মিনিট ধরে সিদ্ধ করে, সেই পানি ঠান্ডা করার পর একটি পরিস্কার কাপড় দিয়ে ঘামাচির স্থানগুলোতে ৫-১০ মিনিট ধরে লাগাতে পারেন/ঘষতে পারেন। এবাবে দিনে ৪-৫ বার করা যেতে পারে।
লেবুর রস : ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে দিনে ৩/৪ গ্লাস লেবুর রস মিশ্রিত পানি পান করুন।
ফিটকিরি : ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় এর সমাধান হিসেবে ফিটকিরি মিশ্রিত পানি পরিস্কার কাপড় দিয়ে ভিজিয়ে ঘামাচির স্থানে লাগিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর গোসল করলে উপকার পাবেন।

আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে শীর্ষ ১০টি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান

শসা : শসা পাতলা করে কেটে ঘামাচির স্থানে ৩০ মিনিট রাখুন এবং এরপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটাও ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আদা : আদা ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আদা পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে এবং এরপর পানি ঠান্ডা হলেই তা পরিস্কার নরম কাপড় দিয়ে ঘামাচির জায়গাগুলোতে লাগাতে পারেন।
তরমুজ : ঘামাচি কমানোর উপায় হিসেবে তরমুজ খাবার পর, তরমুজের পাল্প বের করে ঘামচিতে লাগালে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
বেসন : বেসন ও পানি মিশ্রিত করে একটি পেস্ট তৈরী করতে হবে, তারপরে সেই পেস্টটি ঘামাচির স্থানগুলোতে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী:

  • গরমে ঘামাচি হলে কী করবেন
  • ঘামাচি কী ও কেন হয়
  • কেন ঘামাচি হয়
  • কোথায় বেশি হয়
  • গরমে শিশুর যত্নে করণীয়
  • কি দিলে ঘামাচি কিভাবে দূর করা যায়?
  • ঘামাচির ভালো পাউডার কি?
  • ঘামাচি থেকে মুক্তির উপায়
  • মুখের ঘামাচি দূর করার উপায়
  • ঘামাচি পাউডার কোনটা ভালো
  • ঘামাচি হওয়ার কারণ কি

ঘামাচি কেন হয় - ঘামাচি কমানোর উপায় -পরিশেষে:

এছাড়া আমাদের আর্টিকেলগুলোর মান উন্নয়নে আপনার যাবতীয় মন্তব্য, তথ্য এবং পরামর্শ আমাদেরকে অবশ্যই দিতে পারেন। সাধারণত যারা রৌদ্রে বেশি ঘোরাফিরা করে বা রৌদ্রেই বেশী কাজ করে থাকে এমন ব্যক্তিদের ঘামাচি হওয়ার প্রবণতাটা থাকে বেশী। তবে যেহেতু আমাদের দেশ মৌসুমী বায়ু নির্ভরশীল সেক্ষেত্রে গরমকালে বা বিশেষ করে প্রচন্ড গরমের সময় এই ঘামাচি হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায়

আসলে ঘামাচি হলে তা কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে কমানো যায় বা প্রতিরোধ কিভাবে করা যেতে পারে, সাধারণত কোথায় ঘামাচি বেশি হয়ে থাকে, ঘামাচি হওয়ার কারণসমূহ কি ইত্যাদি সামগ্রিক বিষয়ে আপনাদের একটি ধারণা/পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। আমরা আশা করবো, আজকের ঘামাচি কেন হয় - ঘামাচি কমানোর উপায় বিষয়ক আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয়ই অজানা অনেক তথ্য সম্পর্কে অবহিত হতে পেরেছেন এবং প্রয়োজন মনে করলে তা অন্যদের সাথেও শেয়ার করতে পারেন। পরিশেষে আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে সেই পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url