দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান

ইতিহাস ও সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ দিনাজপুর জেলা। বর্তমানে রংপুর বিভাগের আওতাধীন দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান গুলি ইতিহাস সমৃদ্ধ, মনোরম এবং সৌন্দর্যে ভরপুর।
ইতিহাস এর প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১৭৮৬ সালে দিনাজপুর জেলাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। নানান ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম হলো-কান্তজীর মন্দির, দিনাজপুর রাজবাড়ী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, স্বপ্নপুরী, রামসাগর, নয়াবাদ মসজিদসহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ।

পোস্ট সূচিপত্র: দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান (Tourist places in Dinajpur)
কান্তজীর মন্দির
রামসাগর
দিনাজপুর রাজবাড়ী
নয়াবাদ মসজিদ
ঘুঘুডাংগা জমিদার বাড়ি
সুরা মসজিদ
স্বপ্নপুরী পিকনিকট স্পট
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
লিচু বাগান
দীপশিখা মেটি স্কুল
নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান
দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান-পরিশেষে

কান্তজীর মন্দির:

দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহ্যবাহী বা ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছে এই কান্তজির মন্দিরটি। এই মন্দিরের শিলালিপি হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, মহারাজা প্রাণনাথ রায় জীবনের শেষ সময়ে এসে অর্থাৎ ১৭২২ সালে এই মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্ত তিনি মৃত্যুবরণ করার পর তার পুত্র মহারাজা রামনাথ রায় পুনরায় এটি ১৭৫২ সালে নির্মাণাদি সম্পন্ন করেন। সেই সময়ে মন্দিরটির উচ্চ ছিল ৭০ ফুট। পরবর্তীতে ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পের কারণে অনেকগুলি চূড়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর উচ্চতা দাঁড়ায় ৫০ ফুট।

আরও পড়ুন: রাজশাহী জেলার দর্শনীয় স্থান কোনগুলো

মন্দিরটি টেরাকোটায় নির্মিত অপূর্ব সুন্দর এক স্থাপত্য। এর বাইরে দেয়াল জুড়ে রয়েছে রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। বলাবাহুল্য পুরো মন্দিরটি প্রায় পনেরো হাজারের মতো টেরাকোটা রয়েছে। নিচতলায় সবগুলো প্রবেশ পথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। তবে নিচতলায় ২১টি, দ্বিতীয় তলায় ২৭টি এবং তৃতীয় তলায় মাত্র ৩টি করে খিলান রয়েছে।

রামসাগর:

বলাবাহুল্য যে, দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে জনপ্রিয় রামসাগর দিঘিীটি। ৪,৩৭,৪৯২ (চার লাখ সাঁইত্রিশ হাজার চারশত বিরানব্বই) বর্গমিটার এবং ১০ মিটার গভীরতার রামসাগর দিঘীটি অন্যতম ভ্রমণের এক নিরিবিলি প্রকৃতির যেন হাতছানি। ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, পলাশী যুদ্ধের কিছু পূর্বে মহারাজা রামনাথ রায় রাজ্যে বসবাসকৃত আশেপাশের প্রজাদের জলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এই দিঘীটি খনন করান। পরবর্তীতে মহারাজা রামনাথের নামানুসারেই এই দিঘীটির নামকরণ হয় রামসাগর দিঘী। উল্লেখ্য যে, অনেকেই রামসাগর নাম শুনে মনে করে থাকে এটি কোনো সাগরের নাম, কিন্তু আসলে তা নয়। রামসাগর দিঘী হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং একটি কৃত্রিম দিঘী। রামসাগর দিঘী ভ্রমণ করতে গেলে দেখবেন, সেখানে একটি মিনি চিড়িয়াখানা রয়েছে, যাতে বানর, অজগর, হরিণ এবং শিশুদের জন্য রয়েছে পশু-পাখির মূতি দিয়ে গড়া একটি শিশু পার্ক। পিকনিক করার জন্য রয়েছে ৭টি পিকনিক স্পট, প্রয়োজনে এখানে সাঁতারও কাটার ব্যবস্থা আছে এবং সেইসঙ্গে ক্যাম্প করে পূর্ণিমার সুধাসদন উপভোগ করতে চাইলে সে ব্যবস্থাও রয়েছে।

দিনাজপুর রাজবাড়ী:

দিনাজপুর জেলার রাজবাড়ী বা জমিদার বাড়িটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে অন্যতম। ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১৬০৮ খ্রি. হতে ১৯৫১ খ্রি. এর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৫১ খ্রি. জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত এই রাজবাড়িটি ছিল দিনাজপুর জেলার ঐশ্বর্যের প্রতীক। রাজবাড়িটি দিনাজপুর শহরের উত্তর-পূর্ব দিকে রাজারামপুর গ্রামের নিকটে রাজবটিকা এলাকায় অবস্থিত। তবে এটি রাজবাড়ী বলা হলেও ঐতিহাসিক পটভূমির আলোকে বলা যায় এটি ছিল একটি জমিদার বাড়ী। উল্লেখ্য যে, এই রাজবাড়ী বা জমিদার বাড়ীর সর্বশেষ জমিদার ছিলেন জগদীশনাথ, যিনি ১৯৬২ খ্রি. কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। এই রাজবাড়ীর উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলি হলো: রাণী মহল, আয়না মহল, কুমার মহল, আতুর ঘর, আটচালা ঘর, লক্ষ্মী ঘর, রাণী পুকুর, চাঁপাতলার দিঘী, কালীয়া জিউ মন্দির এবং ঠাকুর ঘর। এই রাজবাড়ী হতে তৎকালীন ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলি ঢাকা জাতীয় জাদুঘর এবং দিনাজুর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

নয়াবাদ মসজিদ:

নয়াবাদ মসজিদটিও একটি ইতিহাস সমৃদ্ধ দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান হিসেবে স্বীকৃত। দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কাহারোল উপজেলার ঢেপা নদীর পশ্চিম কোলঘেঁষে অবস্থিত নয়াবাদ মসজিদটি। মসজিদের প্রধান দরজার উপর স্থাপিত ফলক হতে জানা যায় এটি ১৯৭৩ খ্রি. সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজত্বকালের সময়ে নির্মিত। ধারণা করা হয়, ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কান্তনগর মন্দির নির্মাণের সময় পশ্চিমা দেশ থেকে আগত কিছু মুসলমান স্থপতি এবং অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন এবং তাদের প্রয়োজনার্থেই এই মসজিদটি তারা নির্মাণ করেন। ৩টি গম্বুজ এবং ৪টি অষ্টভূজাকৃতির মিনারের এই মসজিদের বিপরীত পাশে প্রবেশের জন্য রয়েছে ৩টি দরজা। মসজিদের নকশায় অসংখ্য টেরাকোটায় খচিত লতা-পাতা ও ফুলের ছবি রয়েছে। ১.১৫ বিঘা জমির উপরি নির্মিত এই নয়াবাদ মসজিদটির পাশেই একটি কবর রয়েছে, যার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এটি কোন মসজিদ নির্মাণ শ্রমিকের হবে।

ঘুঘুডাংগা জমিদার বাড়ি:

ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ঘুঘুডাঙ্গার প্রাচীন নাম ছিল একবারপুর। তথাকথিত উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতের জলপাইগুড়ির অধিবাসী নবীর মোহাম্মদ ব্যবসায়িক কারণে এই একবারপুরে আসেন এবং এখানকার অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে তিনি মুগ্ধ হন। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, এখানেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করবেন। নবীর মোহাম্মদের মৃত্যুর পর তার পুত্র মোহাম্মদ চৌধুরী এই এলাকায় জমিদারী ক্রয় করে জমিদার বাড়ীর ভিত্তি স্থাপন করেন। ১৯৫০ খ্রি. জমিদারী প্রথা বিলুপ্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত এখানকার জমিদারীর অবস্থার প্রভাবশালী ছিল। অর্থাৎ ভঙ্গুরাকৃত এই জমিদার বাড়িটি দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

আরও পড়ুন: বগুড়া জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য - বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা এই জমিদার বাড়ীতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাক বাহিনীর সৈন্যরা এই ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়িতে বোমা হামলা চালায়। এর ফলে জমিদার বাড়ীর অনেক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায় এবং সেই সময় তারা এই জমিদার বাড়ীতে লুটপাট চালিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র, যেমন-১০১ ভরি ওজনের একটি কই মাছ, রুপার বাটযুক্ত ছাতা ও হাত পাখা, রুপার বিশাল লাঠি, বিভিন্ন তামার হাড়িসহ নানাবিধ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। তবে তাদের চোখের আড়াল ছিল একটি সোনার চেয়ার, যা জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

সুরা মসজিদ:

সুরা মসজিদটি দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট ইউনিয়নে অবস্থিত। মসজিদের নাকমরকণ নিয়ে বিভিন্ন রকম মতবিরোধ দেখা যায়। কেউ বলেন, সুরা মসজিদ, কেউ বলেন, মুঘল আমলে বাংলার সুবেদার শাহ সুজা এই মসজিদ নির্মাণ করেন বলে এটি শাহ সুজা মসজিদ। আবার অনেকো কাছে এটি সৌর মসজিদ। অনেকেই এই মসজিদটিকে আসমানি বা গায়েবি মসজিদও বলে থাকেন। যাইহোক মসজিদের স্থাপত্য দেখে ধারণা করা হয়, ১৬ শতকে হোসেন শাহীর শাসনামলে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি প্রধানত ২টি অংশে বিভক্ত। মূল নামাজ কক্ষ এবং বারান্দা। মূল নামাজ ঘরের ছাদে অর্ধগোলাকার গম্বুর দ্বারা আবৃত। মসজিদের ভেতরে কিবলা দেয়ালে ৩টি পাথরের তৈরি অংলকৃত মেহরাব রয়েছে। এই মসজিদের নামাজ কক্ষের চারকোণে ৪টি এবং বারান্দায় ২টি পাথরের বুরুজ আছে।

স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট:

দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার আফতাবগঞ্জে প্রায় ৪০০ একর জমির উপর নির্মিত সুন্দর নকশাকৃত স্বপ্নপুরী পার্কটি। অপরূপ সব নান্দনিক কলাচিত্রে সমৃদ্ধ দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান বা ভ্রমণের স্থান হিসেবে স্বপ্নপুরী অন্যতম। বলাবাহুল্য স্বপ্নপুরীতে রাত্রি যাপনের জন্য বিভিন্ন নাম সম্বলিত ৫টি কটেজ রয়েছে। প্রাকৃতিক নৈসর্গে আবর্ত নানারকম পশু-পাখির কৃত্রিম প্রতিকৃতি, কৃত্রিম লেক, ঝর্ণা, পাহাড়, মাটির কুটির, বিভিন্ন ভাস্কর্য, ডাকবাংলো, শিশুদের জন্য রয়েছে নানারকম রাইড, দোলনা, চিড়িয়াখানা, ফুলবাগিচা, ঘোড়ার রথ, খেলামঞ্চ, শিশুপার্ক, উদ্যান, নানারকম বৈচিত্রপূর্ণ গাছগাছালি সহ অসংখ্য ঘোরার জায়গা সমূহ। বিশালাকার এই পার্কটি কোনমতেই একদিকে সম্পূর্ণটা ঘোরা সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, স্বপ্নপুরীতে বিভিন্ন চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তা ছাড়াও খাবার ব্যবস্থার জন্য আছে বিভিন্ন ধরনের ভাড়া চুলা, হাঁড়ি-পাতিলসহ ডেকোরেশনের যাবতীয় জিনিসপত্র। স্বপ্নপুরীতে রাত্রিযাপন করলে নিরাপত্তাজনিত কোন সমস্যা নেই, কারণ এখানকার কর্তৃপক্ষের রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়:

১৯৭৬ সালে কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও ২০০২ সালে এটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেসে স্বীকৃতি লাভ করে। তেভাগা আন্দোলনের জনক হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামকরণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়। ১৩০ একর আয়তনের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে প্রশস্ত খেলার মাঠ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, টিএসসি, লাইব্রেরি, শহীদ মিনার, ক্যান্টিন, জিমনেশিয়াম, মেডিকেল সেন্টার, প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন  সহ লাল-সাদা ইটের সমন্বয়ে তৈরি দৃষ্টিনন্দন ভবন, শিশুপার্ক, ডি-বক্স চত্বর ইত্যাদি। দিনাজপুর গেলে ঘুরে আসতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আবৃত হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

লিচু বাগান:

দিনাজপুর জেলা লিচুর জন্য বিখ্যাত। এখানকার ১৩টি উপজেলায় ৩১২৮টির বেশি বাগানে ব্যাপক লিচুর চাষ হয়ে থাকে। এই লিচুর বাগান দেখতে হলে আপনাকে গ্রীষ্মের মধুমাস হিসেবে পরিচিত জ্যৈষ্ঠ মাসে দিনাজপুরে যেতে হবে। প্রতিটি লিচু বাগানে থোকায় থোকায় লিচু যা দেখার জন্য দূরদূরান্ত লোক সমাগম ঘটে। দিনাজপুরের উল্লেখযোগ্য লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি ও কাঁঠালী লিচু উল্লেখযোগ্য। যদি কখনো লিচুর সময় দিনাজপুর জেলায় আগমন করেন, তাহলে এখানকার প্রধান লিচুর বাজার পৌরসভা নিউমার্কেট থেকে টাটকা ও ফ্রেশ লিচু খেতে পারবেন বা পরিবারের জন্য নিয়ে যেতে পারেন।

দীপশিখা মেটি স্কুল:

দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে বর্তমানে দীপশিখা মেটি স্কুলটি দেখে আসতে পারেন। দীপশিখা স্কুলটি দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মোঙ্গলপুর ইউনিয়নের রুদ্রপুর গ্রামে অবস্থিত। এই স্কুলটি মূলত রুদ্রপুর গ্রামের অনগ্রসর শিশু-কিশোরদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। দীপশিখা নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ১৯৯৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মান ও অস্ট্রিয়ার ১০ জন ছাত্র এবং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৯ শ্রমিকের সমন্বয়ে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই মাটির স্কুলটি তৈরী হয়। স্কুলটির নির্মাণ শৈল্পীর জন্য এর খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি নির্মাণে মূলত ব্যবহার করা হয়েছে মাটি, খড়, বাঁশ, দড়ি, কাঠ ইত্যাদি। এর ভিত ছাড়া কোথাও কোন ইটের ব্যবহার নেই, প্রথম তলায় ছাদ হিসেবে বাঁশ বিছিয়ে এব বাঁশের চাটাই দিয়ে তার উপরে মাটির আবরণ দেয়া হয়েছে। তবে সব উপরে বৃষ্টি পানির জন্য টিন ব্যবহার করা হয়েছে। ২০০৭ সালে দীপশিক্ষঅ মেটি স্কুলকে আগা খাণ আর্কিটেকচার আওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান:

অত্যন্ত মনোরম ও প্রাকৃতিক পরিবেশে বিদ্যমান দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানটি ঘুরে আসতে পারেন। দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত প্রায় ৫১৮ হেক্টরের এই বনটি, যা ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর হিসেবে জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। স্থানীয়দের মতে, রত্নাকর দস্যু সিদ্ধিলাভের পর এই বনেই বাল্মিকী মুনিরূপে খ্যাতি লাভ করেন। তারা এও দাবী করেন, এখানে রয়েছে দেবী সীতার কোট বৌদ্ধবিহার, যাকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছিলো ভগবান শিবের কৈলাশবাস আর মা সীতার বনবাসের গল্প। তবে যাইহোক বনের মাঝখানে প্রায় ৬০০ একরের আশুরার বিল ছিল যা দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে এই বিলের উপরে নির্মাণ করা হয়েছে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় কাঠের ব্রীজ।

দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান-পরিশেষে:

ভ্রমণ পিপাসু তারা সুযোগ পেলেই বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। আমাদের এই ছোট্ট দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের ফলে অনেক ঐতিহাসিক স্থানই আজ ভগ্নপ্রায়। যারা অর্থ বিত্তবান তারা দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করে থাকেন, কিন্তু অনেকেই তা পারেন না। কিন্তু বিষয়টি যদি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে দেখি। মনে করুন, আপনি যে কোন পেশায়ই কর্ম করে থাকেন, আপনি ঠিক করেছেন সামনে বড় কোন উৎসবে আপনি পাহাড়ে বেড়াতে যাবেন বা সমুদ্রে বেড়াতে যাবেন। কিন্তু সেখানে যেতে তো অনেক খরচ এবং নিশ্চয়ই একা যাবেন না। সেক্ষেত্রে আপনি যদি প্রত্যেক মাসে একটি নির্দিষ্ট অর্থ ব্যাংক অথবা এমন একটি জায়গায় রাখবেন যেখান থেকে আপনি হঠাৎ করেই তুলতে পারবেন না। এভাবে প্রতি মাসে আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করেন, তাহলে অবশ্যই আপনার পাহাড় বা সমুদ্র দেখা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন: নওগাঁ জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

যাইহোক আজকের দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান বিষয়ক আর্টিকেলটি কেমন লাগলো, তা আমাদের কমেন্টস করে জানাতে পারেন। যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। পরিশেষে আজকের আলোচনায় দীর্ঘক্ষণ যুক্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ও সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url