পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ (All the tourist places and names of Chittagong Hill Tracts)
বেশীর ভাগ ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণের জায়গা হলো চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি। তবে আজকের আর্টিকেলে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ জানবো।
চট্টগ্রাম জেলাকে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে প্রাচ্যের রানী হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই শহরে রয়েছে অনেক সুন্দর ও প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান যা পর্যটকদের নিবিড় আকর্ষণে আবদ্ধ করে। কি কি সুন্দর ও দর্শনীয় স্থান তা জানতে পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ লেখাটি পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র: পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ
পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ
বায়োজিদ বোস্তামির মাজার
সাহেব বিবি মসজিদ
মসজিদ-ই সিরাজ উদ দৌলা
চন্দ্রনাথ পাহাড়
ভাটিয়ারী লেক
বোয়ালিয়া ট্রেইল
পারকি সমুদ্র সৈকত
খেজুরতলী বীচ
জাম্বুরি পার্ক
পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ-পরিশেষে
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় কোন না কোন সৌন্দর্য/দর্শনীয় স্থান রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে সবথেকে বেশী দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থান আছে সিলেট, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও চট্টগ্রাম জেলাসমূহে। মজার বিষয় হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলায় এতো বেশী সৌন্দর্য স্থান রয়েছে যে, সবগুলো ভালো করে দেখতে তা প্রায় ১-৩ মাস লাগতেই পারে। সুতরাং চট্টগ্রাম জেলার আকর্ষনীয় ও দর্শনীয় স্থানগুলি কি কি? তা নিম্নে বর্ণিত হলো:
পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ:
আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ, (আন্দর কিল্লায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও রয়েছে), সীতাকুন্ড ইকো পার্ক, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, বায়োজিদ বোস্তামীর মাজার, চন্দ্রনাথ পাহার ও মন্দির, মহামায়া লেক, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, সাহেব বিবি মসজিদ, চেরাগি পাহাড়, ছাগলকান্দা ঝর্ণা, নন্দীরহাট জমিদার বাড়ি, খেজুরতলী বীচ, লেকভিউ আইল্যান্ড, রাংগুনিয়া কোদালা চা বাগান, মহামুনি বৌদ্ধ বিহার, চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেষ্ট্রি, বাটালি হিল, চালন্দা গিরিপথ, কালুরঘাট ব্রীজ, কুমারীকুন্ড, ঝরঝরি ঝর্ণা, খৈয়া ছরা ঝর্ণা, কুমিরা ঘাট সীতাকুন্ড,নজরুল স্কয়ার, বাটালি হিল, চালন্দা গিরিপথ, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য, ফয়েজ লেক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত, লালদিঘী, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, প্রজাপতি পার্ক, হাজারিখিল অভয়ারন্য, বাঁশখালী ইকোপার্ক, সোনাইছড়ি ট্রেইল, জাম্বুরি পার্ক, নাপিন্তছড়া ঝর্ণা ও ট্রেইল, বাওয়াছড়া লেক, পারকি সমুদ্র সৈকত, বোয়ালিয়া ট্রেইল, হরিনমারা হাটুভাংগা ট্রেইল, ক্যাফে ২৪ পার্ক, হালদা নদী, সন্দীপ, মন্দাকিনী শিব মন্দির, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, রেলওয়ে জাদুঘর, স্বাধীনতা কমপ্লেক্স, সুপ্তধারা ধর্ণা, সহস্রধরা ঝর্ণা, সিআরবি শিরীষতলা, ডিসি হল, ভাটিয়ারী লেক, জাতিতাত্ত্বিক যাদুঘর, মসজিদ-ই-সিরাজ উদ দৌলা, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, পারকি সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি। উপরোক্ত দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে নিম্নে কয়েকটি দর্শনীয় স্থানসমূহের বর্ণনা প্রদত্ত হলো:
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত:
পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ এর মধ্যে চট্টগ্রাম শহর থেকে মা্ত্র ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। পতেঙ্গা সী বিচে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এ ছাড়াও কাছাকাছি আরও কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন-প্রজাপতি পার্ক, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাঁটি, শাহ আমানত বিমান বন্দর ইত্যাদি।
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ:
পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ হিসেবে এই মসজিদটি ১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে মোঘল আমলে নির্মিত হয়। কথিত আছে, শায়েস্তা খা’র ছেলে উমেদ খাঁ আন্দরকিল্লা তথা চট্টগ্রাম জয় করে এবং পরবর্তীতে সম্রাহ আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদটির তিন গম্বুজের মধ্যে একটি দেয়াল পোড়ামাটির এবং অন্য তিনটি পাথরের।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে মোট কয়টি নদী আছে? পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী কোনটি?
বায়োজিদ বোস্তামির মাজার:
পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ এর মধ্যে বায়োজিদ বোস্তামির মাজারটি ১৮৩১ সালে পাহাড়ের উপরের দিকে সমাধিটি আবিস্কৃত হয়। এই মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এবং সেখানে রয়েছে একটি দিঘী। মূলত এই দিঘীতে প্রায় বিরল প্রজাতির ২০০-৩৫০ প্রজাতির কাছিম রয়েছে যা পর্যটকদের দারুণ আকর্ষণ করে থাকে।
সাহেব বিবি মসজিদ:
পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ আছে তার মধ্যে সাহেব বিবি মসজিদটি উল্লেখযোগ্য। যা প্রায় আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই ,মসেজিদে প্রবেশের জন্য প ফুট চওড়া একটি উঁচু ফটক রয়েছে এবং ১টি গম্বুজ, ৮টি পিলার, ৩টি দরজা ও ২টি জানালা রয়েছে।
মসজিদ-ই সিরাজ উদ দৌলা:
পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ এর মধ্যে আন্দরকিল্লা এবং চকবাজার চৌরাস্তার মধ্যে অবস্থিত মসজিদ-ই সিরাজ উদ দৌলা মসজিদটি অপরূপ সুন্দর একটি মসজিদ। যা, ১৮৭০ সালে লখনৌ এবং মুম্বাই থেকে আর্কিটেক্ট এনে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যার খচিত নকশা দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হবেন।
চন্দ্রনাথ পাহাড়:
পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ রয়েছে তার মধ্যে একটি চন্দ্রনাথ পাহাড়। সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য একটি তীর্থস্থান এবং এটি সীতাকুন্ড বাজার থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই পাহাড়টির উচ্চতা ১১৫২ ফুট, যার উঠার পথে ছোট্ট একটি ঝর্ণা দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া পাহাড়ে উঠতে মোটামুটি ১-২ ঘন্টার মত লাগে।
ভাটিয়ারী লেক:
চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটর দূরে যা প্রায় ২০ মিনিটের দূরত্বে ভাটিয়ারী লেক অবস্থিত। পাহাড়ের পাদদেশে জমে থাকা পানির দ্বারা সৃষ্ট প্রাকৃতিক বৈচিত্রে ভরপুর ভাটিয়ারী লেকের স্বচ্ছ পানি, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত গলফ কোর্স ও ভাটিয়ারী সান সেট পয়েন্টে সূর্যাস্তের দৃশ্য নিমিষেই মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই লেকটি দেখতে অনেকটা সাপের মত আঁকা-বাঁকা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ১২টি সেরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল
বোয়ালিয়া ট্রেইল:
পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ এর মধ্যে বোয়ালিয়া ট্রেইলটি চট্টগ্রামের মিরসরাইতে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এর চারদিকে ঘন জঙ্গলে ঘেরা, উঁচু-নিচু আঁকাবাঁকা পথ এবং পিচ্ছিল পথ। বোয়ালিয়া ঝর্ণার ২টি অংশ আছে, ১ম অংশে সুন্দর বোয়ালিয়া ঝর্ণা এবং ২য় অংশে রয়েছে সুন্দর ঝিরিপথ, পালাকাটা খুম বা শুকরমারা ঝর্ণা, উঠান ঢাল, অমরমানিক্য ঝর্ণা এবং নয়াতিখুম ঝর্ণার দেখা পাওয়া যায়।
পারকি সমুদ্র সৈকত:
চট্টগ্রা্ম শহর থেকে মাত্র এক থেকে দেড়ঘন্টার দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত পারকি সমুদ্র সৈকতটি। এটিকে অনেকেই পারকির সী বিচ নামেও অভিহিত করে থাকে। এর একদিকে ঝাউবনের সবুজের সমারোহ আর আরেকদিকে নীলাভ সমুদ্রের জলরাশি ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষিত করে।
খেজুরতলী বীচ:
চট্টগ্রাম শহরের ষ্টীলমিল বাজার থেকে অটোবাইক কিংবা রিকশাযোগে ১০ মিনিটেই যাওয়া যায় এই বীচে। এটি সৌন্দর্যের দিক থেকে অসাধারণ একটি বীচ। তবে সত্যিকারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে খুব ভোরবেলা অথবা পড়ন্ত বিকেলের দিকে গেলেই বোঝা যায় এর সৌন্দর্যরূপ।
জাম্বুরি পার্ক:
পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের এস এম মোরশেদ সড়কে অবস্থিত আধুনিক জাম্বুরি পার্ক। এই পার্কে রয়েছে প্রায় ৬৫ প্রজাতির ১০ হাজার গাছ, যা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও দৃষ্টিনন্দন লেক, বর্ণিল জলের ফোয়ারা, সন্ধ্যায় আলো আধারীর মেলবন্ধনে সৃষ্ট দৃশ্যের অবতারণাকালে পার্কটি আরও বেশি মোহনীয় ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। প্রায় ৮ হাজার ফুট সবুজ ঘাসে মোড়া রাস্তা যা পার্কটিকে এক অসাধারণ বৈচিত্রে পরিপূর্ণ করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ-পরিশেষে:
আসলে চট্টগ্রাম জেলায় যতগুলি দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার সবগুলো সত্যিকার অর্থে উপভোগ করতে গেলে আমার মনে হয়, খুব কম করে হলেও ১-৩ মাস সময় লেগে যেতে পারে। যাইহোক আজকের পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ বিষয়ক আলোচনায় চট্টগ্রাম জেলার নানা ভ্রমণের স্থান সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। আশা করি তা ভ্রমণপিপাসুদের কিঞ্চিৎ সহযোগিতা করবে।
সবশেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ বিষয়ক আর্টিকেলে যদি কোন মন্তব্য/মতামত থাকে তাহলে আমাদের কমেন্টস বক্সে তা জানাতে পারেন। আসলে ভ্রমণ করার আগে একটি সুষ্ঠ পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। যেমন ধরুন-যেখানে যাবেন তার উদ্দেশ্য, কি কি দেখবেন বা কোথায় কোথায় ঘুরবেন? আপনি যেখানে উঠবেন সেখান থেকে আপনার দর্শনীয় স্থানগুলো কত দূরে বা কত নিকটে? সবথেকে বড় বিষয় আপনার সময় কতদিন? তাই ভ্রমণের আগে অবশ্যই একটি সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ বিষয়ক আর্টিকেলে আপনার দীর্ঘ সময় যুক্ত থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url