ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায়
আমরা ফ্রিজ ব্যবহার করি খাবার সংরক্ষণ করার জন্য, বিশেষ করে মাছ, মাংস বা অন্যান্য খাদ্য জাতীয় দ্রব্য। কিন্তু ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায় বা পদ্ধতিগুলি কি হতে পারে, তা কি আমরা জানি।
আমাদের দেশে পবিত্র ঈদ-উল আযহার সময় মাংস সংরক্ষণ করার প্রয়োজন দেখা দেয় এবং এ সময়টাতেই বেশিরভাগ মানুষ ফ্রিজ ক্রয় করে থাকে। কিন্তু ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায় কি বা কীভাবে রাখলে তার সঠিক পুষ্টিগুণ বজায় থাকবে, সে বিষয়ে আমরা কোন জ্ঞান অর্জন করিনা।
পোস্ট সূচিপত্র: ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায় (The correct way to store meat in the Refrigerator)
ভূমিকা
ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক নিয়মাবলী
ফ্রিজে টাটকা মাংস কিভাবে সংরক্ষণ কীভাবে করা যায়
মাংস কতোদিন পর্যন্ত সংরক্ষেণ করবেন?
ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায় না জানলে যা হবে
ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায় - পরিশেষে
ভূমিকা:
ফ্রিজে মাছ বা মাংস রাখার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম জানাটা অবশ্যই জরুরী। কেননা যে জিনিসটা আমরা ফ্রিজে রাখছি তা কতোদিনের জন্য, চাপাচাপি করে রাখা হচ্ছে কিনা, কত ডিগ্রি সেলসিয়াসে খাদ্যগুলি রাখছি ইত্যাদি বিষয়গুলি অবশ্যই জানতে হবে। যদি পরিকল্পনায় থাকে এক বছর রাখবো তাহলে অবশ্যই ফ্রিজের তাপমাত্রা মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে হবে। আবার যদি পাঁচ থেকে ছয় মাস মতো রাখতে চাই, তাহলে ফ্রিজের তাপমাত্রা মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি সেলাসিয়ামের মধ্যে হতে হবে। সুতরাং এরকম জানা-অজানার অনেক বিষয় আছে, যা আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পারবো।
ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক নিয়মাবলী:
* ফ্রিজে মাংস রাখার আগে ফ্রিজটি ভালোভাবে পরিস্কার করে নিতে হবে। কারণ আগের সংরক্ষিত মাছ বা মাংসের গন্ধ নতুন মাছ বা মাংসের মধ্যে হতে পারে।
* অবশ্যই মাংস ধুয়ে কখনোই ফ্রিজে রাখবেন না। তাহলে এর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রক্ত মুছে বা ঝরে যাওয়ার পর তা ফ্রিজে রাখুন।
* নিজের সচেতনতার লক্ষ্যে যদি সম্ভব হয় তাহলে ফ্রিজে প্যাকেটজাত করার সময় সেই পলিথিনে তারিখ লিখে রাখতে পারেন, যা দেখে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন: কি কি খাবার খেলে শরীরে রক্ত বাড়ে? - কোন ফল খেলে শরীরে রক্ত উৎপন্ন হয় - কোন সবজি খেলে রক্ত হয়
* আপনার মাংসটি যদি কোরবানির হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা তিন থেকে চার ঘন্টা পর ফ্রিজে রাখতে হবে। কেননা এ সময়ে মাংসটি গরম ও শক্ত থাকে। ফলে মাংসটি যখন নরম হয়ে যাবে সে সময়ে ফ্রিজে রাখতে পারেন।
* যে মাংসগুলি আপনি ফ্রিজে রাখছেন, তা অবশ্যই মোটা পলিথিনের মধ্যে রাখতে হবে, তা না হলে একেকটি প্যাকেট অন্যটির সাথে আটকে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি একটি প্যাকেট রাখার পর মোটা কাগজের টুকরা দিয়ে তারপর অন্য প্যাকেটটি রাখতে পারেন।
* ফ্রিজে যে কোন জিনিস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অবশ্যই নতুন ও পরিস্কার প্যাকেট ব্যবহার করবেন। যদি পুরাতন বা আগের ব্যবহৃত কোনো পলিথিন বা প্যাকেট ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনার সংরক্ষিত খাদ্যটি গন্ধ হয়ে যাবে।
* ফ্রিজে মাংস রাখার পর যদি তাপমাত্রা কমিয়ে দেন, তাহলে মাংস তাড়াতাড়ি জমবে।
* একটা বিষয় খেয়াল করবেন, মাংস রাখার পর ঘন ঘন ফ্রিজের দরজা খুলবেন না।
* ফ্রিজে মাংস রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাংসের প্যাকেটগুলো শুইয়ে রাখবেন না, খাড়া করে রাখুন, কারণ এতে আপনি একসঙ্গে অনেকগুলো মাংস ফ্রিজে রাখতে পারবেন।
* খেয়াল করবেন, যখন মাংসগুলি প্যাকেটজাত বা মোটা পলিথিনের মধ্যে রাখছেন, তখন সেই পলিথিনের মুখ বাধার আগে যথাসম্ভব বাতাস বের করে নিন।
* ফ্রিজের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি ফারেনহাইটে আছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিন। কারণ এতে মাংসের প্যাকেট হতে বড় বরফের স্ফটিক গঠিত হবে না।
মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো করা যাবেনা:
* বেশির ভাগ মানুষই ফ্রিজ থেকে মাংসের প্যাকেট বের করে তা ভিজিয়ে রাখেন এবং সেখান হতে পরিমাণ মতো মাংস বের করে নিয়ে আবার তা ফ্রিজে ঢুকিয়ে দেন। এটি কখনোই করা যাবেনা, কারণ এতে মাংসের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং ফ্রিজে তা বেশিদিন রাখা যায় না সর্বোপরি পচনও ধরতে পারে।
* রান্না করা খাবার এবং কাঁচা মাংস অবশ্যই একসঙ্গে ডিপে রাখা যাবে না।
আরও পড়ুন: জাঙ্ক ফুড কি - জাঙ্ক ফুডের ক্ষতিকর দিকসমূহ
* মনে রাখবেন, মাংস ছাড়াতে গরম পানি ব্যবহার না করাই ভালো। ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে তা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে রাখুন। প্রয়োজনে আগের রাতে বের করে তা ভিজিয়ে রাখতে পারেন।
* ফ্রিজে কাঁচা মাংস রাখার পর ঘন ঘন ফ্রিজ খোলা যাবে না।
ফ্রিজে টাটকা মাংস কিভাবে সংরক্ষণ কীভাবে করা যায়:
সাধারণত ফ্রিজে মাংস রাখতে হলে অবশ্যই তা ০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা মাইনাস ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখলে তা জমাট বেঁধে বরফ হয়ে যাবে। এর ফলে মাংসে উৎপাদিত ক্ষতিকর ইষ্ট, ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণুগুলো মারা যায়। অর্থাৎ যে এনজাইমগুলোর কারণে মাংস বা খাবারগুলি নষ্ট হয়ে যায় সেগুলো অনেকটাই ধীর হয়ে যায় এবং মাংস ভালো থাকে।
মাংস কতোদিন পর্যন্ত সংরক্ষেণ করবেন?
সাধারণত নিয়মানুযায়ী মাস রাখলে তা ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত রাখা যায়। তবে মাংসের পুষ্টিমান বজায় রাখতে খাসি বা গরুর মাংস ৭ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত আবার রান্না করা গরুর মাংস এক মাস ও ২-৩ মাসের বেশি মুরগির কাঁচা মাংস ফ্রিজে রাখা উচিত নয়।
ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায় না জানলে যা হবে:
আমেরিকান এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট এর তথ্য মতে সাধারণত ফ্রিজে মাংস রাখলে ২ ধরণের অণুজীব জন্মাতে পারে। যেমন-
১) প্যাথোজেনিক মাইক্রোবস (মানব দেহে রোগ সৃষ্টিকারী অণূজীব) এবং
২).স্পয়লেজ মাইক্রোবস (খাবারের পুষ্টিগুণ বিনষ্টকারী ব্যাকটেরিয়া)
এক. প্যাথোজেনিক মাইক্রোবস (মানব দেহে রোগ সৃষ্টিকারী অণূজীব): ফ্রিজে যদি কাঁচা মাংস রক্ত পরিস্কার করে না ধুয়ে রাখলে এবং নির্ধারিত তাপমাত্রা অনুসরণ না করার ফলে তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় এবং দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে থাকে। এর ফলে কাঁচা মাংসে জন্মানো সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো মানেুষের শরীরের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক ঝুঁকি বয়ে আনে।
দুই. স্পয়লেজ মাইক্রোবস (খাবারের পুষ্টিগুণ বিনষ্টকারী ব্যাকটেরিয়া) : এই ধরণের ব্যাকটেরিয়াগুলো মাংসের স্বাদ, গন্ধ, রঙ ও গঠন নষ্ট করে দেয়। আসলে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো খুব অল্প সময়েই মাংস নষ্ট করে ফেলে।
ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায়- পরিশেষে:
আসলে ফ্রিজে আমার যে শুধু মাছ ও মাংস রাখি তা কিন্তু নয়, আমরা অনেকেই ফল রাখি, তরকারি রান্না করে তা রাখি। কিন্তু ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায় আমরা বুঝতে পারিনা। একটা বিষয় খেয়াল করবেন, অনেকেই আছেন, যারা ব্যস্ততার কারণে তরকারি রান্না করে ফ্রিজে রাখেন এবং সেই তরকারি কিন্তু তারা অনেকদিন পর্যন্ত খেয়ে থাকেন। কিন্তু প্রত্যেকটি জিনিসের একটা মাত্রা থাকে। আর এটা জানা থাকলে তা আমাদের জন্য শুভ হয়ে উঠেনা। সাধারণত ফ্রিজ পরিস্কার করার জন্য লেবু পানি ব্যবহার করতে হয়, এতে করে যেমন ফ্রিজের মধ্যে কটু গন্ধ চলে যায় আবার ফ্রিজও পরিস্কার থাকে।
আরও পড়ুন: স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার
সুতরাং আজকের ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায় বিষয়ক আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসে তাহলে তা অন্যদের মাঝে শেয়ার করবেন। পরিশেষে ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায় বিষয়ক বর্ণনাতে দীর্ঘক্ষণ যুক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url